প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ শব্দটি কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাস?

‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ শব্দটি কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাস?

প্রশ্ন

আশফাকুর ফাহিম

পার্বতীপুর,দিনাজপুর

প্রশ্নঃ রশিদ আহমাদ গঙ্গুহী (রহ.) তার ফতোয়ায়ে রশিদিয়াতে নাকি বলেছেন মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্য নাকি রাহমাতুল্লিল আলামীন বক্তব্যটি খাছ নয় এটা রেজাখানি বেরলভীরা বলে থাকে। এটা কতটুকু সত্য?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

ফাতাওয়া রশীদীয়াতে একটি প্রশ্নোত্তর আছে এ সংক্রান্ত।

প্রশ্নটি ছিল,

প্রশ্ন:

রাহমাতাল্লিল আলামীন শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে খাস নাকি অন্য কাউকেও তা বলা যাবে?

উত্তর:

রাহমাতাল্লিল আলামীন শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে খাস গুণ নয়, বরং অন্যান্য আউলিয়া, আম্বিয়া এবং হক্কানী উলামাগণও দুনিয়ার জন্য রহমাত হয়ে থাকেন। যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে সবচে’ শ্রেষ্ঠতর।

সুতরাং যদি অন্য কারো ক্ষেত্রে এ শব্দ ব্যাখ্যা সাপেক্ষে ব্যবহার করা হয়, তাহলে জায়েজ আছে। [ফাতাওয়া রশিদীয়া, কিতাবুল আকায়েদ-২৪৪]

বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য আমাদের আগে বুঝতে হবে যে, ‘খাস গুণ’ কাকে বলে? খাস গুণ বলা হয়, এমন গুণ যা কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছেই আছে। অন্য কারো মাঝে সেই গুণটি নেই।

যেমন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফাআতে কুবরার অধিকারী। এটি অন্য কোন নবীর মাঝে নেই। এটি নবীজীর খাস গুণ।

আমাদের নবী আরশ পর্যন্ত মেরাজ করেছেন। এটা নবীজীর খাস গুণ আর কোন নবীর মাঝে তা নেই।

আমাদের নবী সমগ্র জাহানের নবী। এটা নবীজীর খাস গুণ আর কোন নবীর মাঝে তা নেই।

আমাদের নবী সমস্ত নবীদের ইমামতী করেছেন। এটা নবীজীর খাস গুণ, তা আর কোন নবীর মাঝে নেই।

আমাদের নবী সমস্ত জাহানের জন্য রহমাত। এটি শুধু আমাদের নবীর সাথে খাস গুণ নয়, কারণ, জাহানের জন্য রহমাত অন্যান্য নবীগণও ছিলেন। পৃথিবীর জন্য রহমাত আল্লাহকে স্বীকারকারী মুসলমানও। কারণ, যতদিন আল্লাহর নাম থাকবে, ততদিন দুনিয়া টিকে থাকবে।

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ: اللهُ، اللهُ “

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ আল্লাহ বলা বন্ধ হবার আগে কিয়ামত সংঘটিত হবে না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৮, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২২০৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩৭২৯]

সেই হিসেবে প্রতিটি আল্লাহওয়ালা মুসলমান দুনিয়া টিকিয়ে রাখার জন্য রহমাত স্বরূপ।

তবে সবচে’ উঁচূ এবং সর্বোত্তম রহমাত আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার সমকক্ষ বা কাছাকাছি রহমাতের অধিকারী সৃষ্টিজীবের মাঝে আর কেউ নেই।

তাছাড়া নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপক অর্থে এবং সর্বব্যাপী রহমাত। কিন্তু এ পর্যায়ের রহমাতের স্তরে আর কোন সৃষ্টি উন্নিত হতে পারে না।

যেহেতু নবীজীই প্রকৃত ও যথার্থ রহমাতাল্লিল আলামীন। তাই নবীজীর সাথেই এ বিশেষণটি ব্যবহার করা উচিত। অন্য কারো ক্ষেত্রে এ শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

কিন্তু যদি কেউ ব্যাখ্যা সাপেক্ষে অন্য কোন নবী বা বুযুর্গ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে, তাহলে এটাও জায়েজ হবে। হারাম বা নিষিদ্ধ হবে না।

এই হল, ফকীহুন নফস রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ এর ফাতওয়ার মূল বিষয়।

সুতরাং এটিকে নিয়ে সমালোচনা করা দ্বীনে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক ছাড়া কিছু নয়।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *