প্রশ্ন
From: মোস্তাফিজুর রহমান
বিষয়ঃ স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য বলি কবে ডিভোর্স কাগজ পাঠাবো বলো কবে পাঠাবো বলো এর দ্বারা কী স্ত্রী ডিভোর্স হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ
জনাব মুফতী হুজুর আসসালামু আলাইকুম,
আমি খুব পেরেশানিতে আছি ।
আমার বিয়ে হয় ০১/০৮/২০১৪ ইং তারিখে । আমার মা খুব কাছাকাছি বিয়ে দেয়।
আমার শশুর বাড়ি আমাদের দুই বাসা পড়ে ।
আমাদের একটি এক বছর তিন মাসের ছেলে সন্তান আছে।
বেশ সুখের সংসার।
তবে বাচ্চাটি দ্রুত নেওয়ায় আমার শশুর শাশুরি আমাদের পরিবারের প্রতি তখন থেকেই খুব নাখোষ।
২০১৬ ই রমজানে আমার মায়ের সাথে আমার শশুরের একটা ছোটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয় ।
ঘটনাটি হলোঃ
আমার স্ত্রীর ঐ সময় HSC practical পরীক্ষা চলছিলো।
যে দিন ঘটনাটি ঘটে সেদিন তার শেষ practical পরীক্ষা ছিলো
(বিঃদ্রঃ আমার স্ত্রী ঐ সময় HSC পরীক্ষা আমার শশুর বাড়ি থেকে দিয়ে ছিলো শুধু practical পরীক্ষা আমাদের বাড়ি থেকে দেয়)।
ঐ সময় বাচ্চাটির জ্বর ছিলো । ঐ দিন আমার স্ত্রীর আসতে একটু দেরি হয়। বাচ্চাটি ঘুম থেকে উঠে খুব কান্নাকাটি করে।
আমার মা বচ্চাটি নিয়ে আমার শশুর বাড়িতে যায় এবং আমার স্ত্রীর আসার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে।
(বিঃদ্রঃ আমার শ্বশুর চরম বদরাগী এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক যা আমরা পরবর্তিতে জানতে পারি।)।
বাচ্চাটি খুব কন্নাকাটি করছিলো। বাচ্চাটির কান্না নিয়ে আমার শশুর তাচ্ছিল্য ভাষায় আমার মাকে বলেঃ কই এত দিন বাচ্চাটা আমার বাড়িতে কান্নাকাটি করে নাই। আজ কই বাচ্চা রাখতে পারেন। বাচ্চার মাকে আপনার ছেলের মোবাইল কিনে দেওয়ার ক্ষমতাও হয় নাই ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ সময় আমার মাকে খুব অপমান করে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
আর আমার বাচ্চাটিকে আমার শ্বশুর রেখে দেয়। পরবর্তিতে ৩/৪ ঘন্টা পর বাচ্চাটি দিয়ে দেয়। এ সময় আমার স্ত্রী আমাদের বাড়িতে ছিলো।
এ জন্য আমার মা বাবা আমার স্ত্রীকে দুই মাস আমার শ্বশুর বাড়ি যেতে দেয় নি।
আমার স্ত্রী HSC পরীক্ষায় ২০১৬ সালে পাশ করে। আমার শ্বশুর বাড়ী থেকে ঐ দিন ফুফু শ্বাশুরি দিয়ে মিষ্টি পাঠায়।
কিন্তু আমার মা সেই মিষ্টি খায় না। আমার স্ত্রী এতে মন খারাপ করে।
এ দিকে আমার শ্বশুর তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে বড় ভায়ের দ্বারা আমার স্ত্রীকে জ্যাঠা শ্বশুরের বাড়িতে নিয়ে যায়।
আমার মা বাবা আমার স্ত্রী কে আনার জন্য তাদের বাড়িতে যায় কিন্তু আমার স্ত্রী তাদের সাথে আসে না।
আমি ঢাকাতে একটি Software Company তে চাকরি করি।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আমি আমার স্ত্রীকে আনার জন্য যাই কিন্তু আমার সাথেও সে আসে না। সে না আসায় আমি রাগ করে নিজের বাড়িতে চলে আসি।
দুই দিন পর আমার স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য মোবাইলে বলিঃ “কবে ডিভোর্স কাগজ পাঠাবো বলো? কবে পাঠাবো বলো?”
এ সময় আমার স্ত্রী কান্নাকাটি শুরু করে। আর বলেঃ “সব কিছু হয়েছে তোমার মায়ের জন্যে তোমার মায়ের জন্যে” ।
জনাব আল্লার কসম করে বলিঃ “আমি তোমাকে তালাক দিলাম বা ডিভোর্স দিলাম” এ কথা কখোনো বলিনি বা উচ্চারণ করিনি বা মনের মধ্যেও আনিনি।
শুধু ভয় দেখানোর জন্য বলি “কবে ডিভোর্স কাগজ পাঠাবো? বলো কবে পাঠাবো বলো ?”
এর মাধ্যমে কি আমার স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে? আমার শশুর বলে, আমার স্ত্রী নাকি এ কথা বলার দ্বারা তালাক হয়ে গেছে ।
তাই তার মেয়েকে আর আমাদের বাড়িতে আসতে দিবে না। তাই খুব পেরেশানিতে আছি ।
দয়া করে উত্তর দিলে আমি আমার পেরেশানি থেকে মুক্তি পেতাম।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যা লিখেছেন তা যদি সত্যি হয়, তাহলে এভাবে বলার দ্বারা কোন তালাক পতিত হয়নি। কারণ, “তালাক দিবো বা ডিভোর্স দিবো” বলার দ্বারা তালাক হয় না। বরং এটি তালাক দেবার একটি ওয়াদামাত্র। ওয়াদা দ্বারা কোন তালাক পতিত হয় না। সুতরাং আপনাদের স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক এখনো অবশিষ্ট আছে।
أنا اطلق نفسى لم يقع، لأنه وعد (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/559)
بخلاف كنم، لأنه استقبال فلم يكن تحقيقا بالتشكيك….. لو قال بالعربية: أطلق لا يكون طلاقا (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السابع فى الطلاق بالألفاظ الفارسية-1/384، جديد-1/452)
ولو قال: أطلقك لم يقع (سكب الأنهر-2/4)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]