প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / সত্য ইমাম মাহদী ও ভণ্ড ইমাম মাহদী [১ম পর্ব]

সত্য ইমাম মাহদী ও ভণ্ড ইমাম মাহদী [১ম পর্ব]

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম কিয়ামতের পূর্ব মুহুর্তে আসবেন। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত। শুধু তাই নয়, ইমাম মাহদীর যাবতীয় গুণাবলী। আবির্ভাবের সময়কালের পূর্ণ বিবরণ হাদীসে ও আছারে সাহাবা ও তাবেয়ীগণের মাধ্যমে সূত্রসহ লিপিবদ্ধ করা আছে।

কিন্তু এরপরও যুগে যুগে কিছু ভণ্ড সুযোগসন্ধানী লোকেরা নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করে উম্মততে গোমরাহ করার অপচেষ্টা করেছে।

এখনো চলছে সেই ধারা। নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করে বাইয়াতের জন্য আহবান করছে কতক জাহিল লোক।

তাই এহেন মুহুর্তে সত্যিকার ইমাম মাহদীর পরিচয় জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই আমরা হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদীর পরিচয় ও তার আবির্ভাবকালীন অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

সেই সাথে ইমাম মাহদী হবার ভণ্ড দাবীদারদের হাদীসের অপব্যাখ্যা ও প্রতারণা সম্পর্কে দালিলিকভাবে তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ।

প্রথমে আমরা সত্য ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের হালাত সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিবো।

ইমাম মাহদীর নাম ও বংশ

নাম হবে মুহাম্মদ। পিতার নাম আব্দুল্লাহ। মায়ের নাম আমিনা। বংশ হবে কুরাইশের বনু হাশেমের আব্দুল মুত্তালিবের বংশে। শুধু তাই নয়, তিনি হযরত ফাতিমা রাঃ এর বংশ পরম্পরায় বংশে জন্ম নিবেন।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَوْ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا يَوْمٌ» – قَالَ زَائِدَةُ فِي حَدِيثِهِ: «لَطَوَّلَ اللَّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ»، ثُمَّ اتَّفَقُوا – «حَتَّى يَبْعَثَ فِيهِ رَجُلًا مِنِّي» – أَوْ «مِنْ أَهْلِ بَيْتِي» – يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي، وَاسْمُ أَبِيهِ اسْمُ أَبِي

আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দুনিয়ার মাত্র একদিনও অবশিষ্ট থাকে তবে আল্লাহ সেই দিনকে অত্যন্ত দীর্ঘায়িত করবেন এবং আমার থেকে অথবা আমার পরিজন থেকে একজন লোক আবির্ভূত করবেন, যার নাম ও তার পিতার নাম আমার ও আমার পিতার নামের সঙ্গে হুবহু মিল হবে। সে পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে যেরূপ তা যুলুমে পরিপূর্ণ ছিলো। আর সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসে বলেন, ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবে না, যতদিন পর্যন্ত আমার পরিবারের এক ব্যক্তি আরবে রাজত্ব না করবে, তার নাম হুবহু আমার নামই হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪২৮২]

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي، مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ»

হযরত উম্মে সালামা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “মাহদী আমার ঔরসজাত ফাতিমার বংশ থেকে হবে”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪২৮৪]

رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْمَهْدِيُّ مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহদী হবে ফাতিমার বংশে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪০৮৬]

عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ: قُلْتُ لِسَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، الْمَهْدِيُّ حَقٌّ هُوَ؟ قَالَ: «حَقٌّ» ، قَالَ: قُلْتُ: مِمَّنْ هُوَ؟ قَالَ: «مِنْ قُرَيْشٍ» ، قُلْتُ: مَنْ أَيِّ قُرَيْشٍ؟ قَالَ: «مَنْ بَنِي هَاشِمٍ» ، قُلْتُ: مَنْ أَيِّ بَنِي هَاشِمٍ؟ قَالَ: «مَنْ بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ» ، قُلْتُ: مَنْ أَيِّ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ؟ قَالَ: «مَنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ»

কাতাদা বলেন, আমি সাঈদ বিন মুসাইয়িবকে জিজ্ঞসা করলাম যে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাব কি সত্য?

সাঈদ-হ্যাঁ। সত্য।

কাতাদা-তিনি কাদের মধ্য থেকে হবেন।

সাঈদ- কুরাইশদের মধ্য থেকে হবেন।

কাতাদা- কুরাইশের কোন খান্দান থেকে হবেন?

সাঈদ- বনু হাশেম খান্দান থেকে।

কাতাদা-বনু হাশেমের কোন খান্দান থেকে হবেন?

সাঈদ- বনু আব্দুল মুত্তালিব থেকে।

কাতাদা- আব্দুল মুত্তালিবের কোন সন্তানদের বংশে হবেন?

সাঈদ- তিনি হযরত ফাতিমা রাঃ এর বংশে হবেন। [কিতাবুল ফিতান, বর্ণনা নং-১০৮২]

 

ইমাম মাহদীর বৈশিষ্ট্যাবলী

আবির্ভাবের পর বা বছর দুনিয়াতে থাকবেন

তার আবির্ভাবের পর সবাই এমন ধনী হবে যে, ইতোপূর্বে আর কখনো এতো সম্পদশালী ছিল না

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” يَكُونُ فِي أُمَّتِي الْمَهْدِيُّ إِنْ قُصِرَ فَسَبْعٌ، وَإِلَّا فَتِسْعٌ، فَتَنْعَمُ فِيهِ أُمَّتِي نِعْمَةً، لَمْ يَنْعَمُوا مِثْلَهَا قَطُّ، تُؤْتَى أُكُلَهَا وَلَا تَدَّخِرُ مِنْهُمْ شَيْئًا، وَالْمَالُ يَوْمَئِذٍ كُدُوسٌ، فَيَقُومُ الرَّجُلُ، فَيَقُولُ: يَا مَهْدِيُّ أَعْطِنِي، فَيَقُولُ خُذْ “

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মাহ্দী আমার উম্মাত থেকেই আবির্ভূত হবে। তিনি কমপক্ষে সাত বছর অন্যথা নয় বছর দুনিয়াতে অবস্থান করবেন। তার যুগে আমার উম্মাত অযাচিত প্রাচুর্যের অধিকারী হবে, ইতোপূর্বে কখনো তদ্রূপ হয়নি। পৃথিবী তার সর্বপ্রকার খাদ্যসম্ভার পর্যাপ্ত উৎপন্ন করবে এবং কিছুই প্রতিরোধ করে রাখবে না। সম্পদের স্তূপ গড়ে উঠবে। লোকে দাঁড়িয়ে বলবে, হে মাহ্দী! আমাকে দান করুন। তিনি বলবেন, তোমার যতো প্রয়োজন নিয়ে যাও। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪০৮৩]

তার আগমনে পৃথিবী ন্যায় ইনসাফে ভরপুর হবে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَهْدِيُّ مِنِّي، أَجْلَى الْجَبْهَةِ، أَقْنَى الْأَنْفِ، يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا، كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا، يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ»

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাহদী আমার বংশোদ্ভুত হবে, যার ললাট প্রশস্ত ও নাক উঁচু হবে। যিনি পৃথিবীকে আদ্‌ল-ইনসাফ দ্বারা এরূপ পূর্ণ করবেন, যেরূপ তা অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ ছিল। তিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪২৩৬]

এখানে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

৩ নং বৈশিষ্ট্য

জন্ম নিবেন মদীনা মুনাওয়ারায়। দাড়ি হবে ঘন। চোখ হবে ডাগর ডাগর। প্রশস্ত ললাট। সামনের দুই দাঁত অস্বাভাবিক ফর্সা হবে। চেহারায় তিল থাকবে। কাধে নবীজীর মোহরের মত আলামত থাকবে। হাতে থাকবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঝান্ডা। বয়স হবে ৩০ ও ৪০ এর মাঝামাঝি।

عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: «الْمَهْدِيُّ مَوْلِدُهُ بِالْمَدِينَةِ، مِنْ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاسْمُهُ اسْمُ أَبِي، وَمُهَاجِرُهُ بَيْتُ الْمَقْدِسِ، كَثُّ اللِّحْيَةِ، أَكْحَلُ الْعَيْنَيْنِ، بَرَّاقُ الثَّنَايَا، فِي وَجْهِهِ خَالٌ، أَقْنَى أَجْلَى، فِي كَتِفِهِ عَلَامَةُ النَّبِيِّ، يَخْرُجُ بِرَايَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ مِرْطٍ مُخْمَلَةٍ سَوْدَاءِ مُرَبَّعَةٍ، فِيهَا حَجَرٌ لَمْ يُنْشَرْ مُنْذُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَا تُنْشَرُ حَتَّى يَخْرُجَ الْمَهْدِيُّ، يَمُدُّهُ اللَّهُ بِثَلَاثَةِ آلَافٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ يَضْرِبُونَ وجُوهَ مَنْ خَالَفَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ، يُبْعَثُ وَهُوَ مَا بَيْنَ الثَّلَاثِينَ وَالْأَرْبَعِينَ»

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাহদী জন্ম নিবেন মদীনায়। নবীর বংশে। তার নাম হবে নবীর নামে। বাইতুল মাকদিসে হিজরত করবেন।

দাড়ি হবে ঘন। ডাগর কালো চোখ হবে। সামনে দুই খুবই সাদা হবে। চেহারায় তিলের চিহ্ন থাকবে। খাড়া নাক হবে। কাঁধে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলামত হবে। আবির্ভাবের সময় তার কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঝান্ডা থাকবে। যা হবে মখমলের পালকবিহীন কালো কাপড়ের চার কোণ বিশিষ্ট। তাতে এমন বন্ধন থাকবে, যার ফলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর থেকে তা খোলা যায়নি। ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের আগে তা খোলাও যাবে না। আল্লাহ তাআলা তাকে তিন হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করবেন। যার তার বিরোধীদের চেহারা ও পিছনে আঘাত করবেন। আবির্ভাবের সময় তার বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মাঝামাঝি হবে। [কিতাবুল ফিতান, বর্ণনা নং-১০৭৩]

পৃথিবীর দুই তৃতীয়ংশ মানুষ মারা যাবার পর তার আবির্ভাব হবে!

عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، قَالَ: لَا يَخْرُجُ الْمَهْدِيُّ حَتَّى يُقْتَلَ مِنْ كُلِّ تِسْعَةٍ سَبْعَةٌ “

ইবনে সিরীন রহঃ বলেন, প্রতি নয়জনে সাতজন যতক্ষণ পর্যন্ত না হত্যা করা হবে ততক্ষণ ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে না। [কিতাবুল ফিতান, বর্ণনা নং-৯৫৮]

عَلِيًّا، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ: «لَا يَخْرُجُ الْمَهْدِيُّ حَتَّى يُقْتَلَ ثُلُثٌ، وَيَمُوتُ ثُلُثٌ، وَيَبْقَى ثُلُثٌ»

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনভাগের একভাগ হত্যা করা, এবং এক তৃতীয়াংশের মৃত্যু এবং এক তৃতীয়াংশ জীবিত না থাকা পর্যন্ত ইমাম মাহদীর প্রকাশ ঘটবে না। [কিতাবুল ফিতান, হাদীস নং-৯৫৯]

তুর্কীদের শাসনামলে খলীফা মারা যাবে। তারপর দুর্বল খলীফা হবে। দুই বছর পরই জনগন তার বিদ্রোহী হবে। দামেশকের মসজিদের পশ্চিমে ভূমিধ্বস হবে। পশ্চিমারা মিশর আক্রমণ করবে। শাম থেকে তিনটি দলের আবির্ভাব হবে। এসব প্রকাশের আগে ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে না।

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: «عَلَامَةُ الْمَهْدِيِّ إِذَا انْسَابَ عَلَيْكُمُ التُّرْكُ، وَمَاتَ خَلِيفَتُكُمُ الَّذِي يَجْمَعُ الْأَمْوَالَ، وَيُسْتَخْلَفُ بَعْدَهُ ضَعِيفٌ فَيُخْلَعُ بَعْدَ سَنَتَيْنِ مِنْ بَيْعَتِهِ، وَيُخْسَفُ بِغَرْبِيِّ مَسْجِدِ دِمَشْقَ، وَخُرُوجُ ثَلَاثَةِ نَفَرٍ بِالشَّامِ، وَخُرُوجُ أَهْلِ الْمَغْرِبِ إِلَى مِصْرَ، وَتِلْكَ أَمَارَةُ السُّفْيَانِيِّ»

হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ বলেন, ইমাম মাহদীর আগমনের লক্ষণ হল। যখন তোমাদের উপর তুর্কীদের শাসন হবে। তোমাদের খলীফা মারা যাবে। যিনি অনেক সম্পদ একত্র করেছিল। আর তার পরবর্তীতে একজন দুর্বল ব্যক্তি খলীফা হবে। তারপর দুইবছর পরই তার বাইয়াত থেকে সবাই ফিরে যাবে। আর দামেশকের মসজিদের পশ্চিমে ভূমিধ্বস হবে। শাম থেকে তিনটি দলের প্রকাশ হবে। পশ্চিমারা মিশরের দিকে ধাবিত হবে। এগুলোই সুফয়ানী নিদর্শন। [কিতাবুল ফিতান, হাদীস নং-৯৬৩]

হজ্জ নিষিদ্ধ থাকবে। গোত্রে গোত্রে মক্কায় তীব্র লড়াই হবে। মীনায় এত খুনাখুনি হবে যে, জামারা পর্যন্ত রক্তের নালা বইতে থাকবে।

এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মদীনা থেকে পালিয়ে ইমাম মাহদী মক্কায় আসবেন। তিনি লুকিয়ে থাকতে চাইবেন এজন্য যে, যেন তাকে কেউ আমীর না বানায়। তাকে যেন কেউ চিনতে না পারে। তিনি নিজেকে কখনোই ইমাম মাহদী দাবী করবেন না। তিনি বাইয়াত করতে লোকজনকে বলবেনতো দূরে থাক। বরং বাইয়াত করাতে তিনি অস্বিকৃতি জানাবেন। তখন লোকজন তাকে বাধ্য করে বাইয়াত হবে।

তখন তার হাতে মাকামে ইবরাহীম ও রুকনে ইয়ামেনীর মাঝখানে লোকজন বাইয়াত হবে। বাইয়াতকৃতদের সংখ্যা হবে তিনশত তেরজন।

এ সংবাদ শুনে সিরিয়া ও ইরাক থেকে লোকজন দলে দলে তার হাতে বাইয়াত হতে আসবে।

অপরদিকে কুরাইশ বংশের কালব গোত্রের এক ব্যক্তি ইমাম মাহদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। তিন তাদের যুদ্ধ করতে তাদের সূচনীয়ভাবে পরাজিত করবেন। এ যুদ্ধ থেকে বিপুল পরিমাণ গনিমত অর্জিত হবে।

তারপর পুরো পৃথিবীতে ইসলামের শাসন কায়েম হবে।

ইমাম মাহদী আবির্ভাবের পর বেচে থাকবেন ৭ বা ৯ বছর। মৃত্যুর পর তার জানাযা মুসলমানগণ পড়াবেন।

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فِي ذِيِ الْقَعْدَةِ تَحَازُبُ الْقَبَائِلِ، وَعَامَئِذٍ يُنْتَهَبُ الْحَاجُّ، فَتَكُونُ مَلْحَمَةٌ بِمِنًى، فَيَكْثُرُ فِيهَا الْقَتْلَى، وَتُسْفَكُ فِيهَا الدِّمَاءُ حَتَّى تَسِيلَ دِمَاؤُهُمْ عَلَى عَقَبَةِ الْجَمْرَةِ، حَتَّى يَهْرُبَ صَاحِبُهُمْ، فَيُؤْتَى بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ فَيُبَايِعُ وَهُوَ كَارِهٌ، وَيُقَالُ لَهُ: إِنْ أَبَيْتَ ضَرَبْنَا عُنُقَكَ، فَيُبَايِعُهُ مِثْلُ عِدَّةِ أَهْلِ بَدْرٍ، يَرْضَى عَنْهُ سَاكِنُ السَّمَاءِ، وَسَاكِنُ الْأَرْضِ “

আমর বিন শুয়াইব তার পিতা তিনি তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, জিলক্বদ মাসে গোত্রে গোত্রে বিবাদ শুরু হবে। সে বছর হজ্ব নিষিদ্ধ থাকবে। মীনায় তীব্র লড়াই হবে। অধিকাংশ মানুষ তাতে মারা যাবে। প্রচুর রক্ত প্রবাহিত হবে। এমন কি রক্ত জামারা পর্যন্ত চলে আসবে। এ খুন চলতে থাকবে যতক্ষণ না মীনা থেকে লোকজন পালিয়ে যায়। তখন তিনি রুকনে ইয়ামিনী এবং মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে থাকবেন। তারপর তার হাতে বাইয়াত হবে লোকজন। যদিও তিনি অপছন্দ করেন। তখন তাকে বলা হবে, যদি তুমি বাইয়াত গ্রহণে অস্বিকৃতি জানাও তাহলে তোমাকে হত্যা করা হবে। তখন তিনি বদর সংখ্যক লোককে বাইয়াত করাবেন। তার উপর আসমান ও জমিনের অধিবাসীগণ সন্তুষ্ট হবেন। [কিতাবুল ফিতান, হাদীস নং-৯৮৬]

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَكُونُ اخْتِلَافٌ عِنْدَ مَوْتِ خَلِيفَةٍ، فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ هَارِبًا إِلَى مَكَّةَ، فَيَأْتِيهِ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ فَيُخْرِجُونَهُ وَهُوَ كَارِهٌ، فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ، وَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ مِنْ أَهْلِ الشَّامِ، فَيُخْسَفُ بِهِمْ بِالْبَيْدَاءِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، فَإِذَا رَأَى النَّاسُ ذَلِكَ أَتَاهُ أَبْدَالُ الشَّامِ، وَعَصَائِبُ أَهْلِ الْعِرَاقِ، فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ، ثُمَّ يَنْشَأُ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ أَخْوَالُهُ كَلْبٌ، فَيَبْعَثُ إِلَيْهِمْ بَعْثًا، فَيَظْهَرُونَ عَلَيْهِمْ، وَذَلِكَ بَعْثُ كَلْبٍ، وَالْخَيْبَةُ لِمَنْ لَمْ يَشْهَدْ غَنِيمَةَ كَلْبٍ، فَيَقْسِمُ الْمَالَ، وَيَعْمَلُ فِي النَّاسِ بِسُنَّةِ نَبِيِّهِمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَيُلْقِي الْإِسْلَامُ بِجِرَانِهِ فِي الْأَرْضِ، فَيَلْبَثُ سَبْعَ سِنِينَ، ثُمَّ يُتَوَفَّى وَيُصَلِّي عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ»

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জনৈক খলীফাহর মৃত্যুকালে মতানৈক্য সৃষ্টি হবে। এ সময় মদীনাবাসী জনৈক ব্যক্তি পালিয়ে মক্কায় চলে যাবে। মক্কাবাসীরা তার নিকট এসে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে আসবে এবং তারা রুকন ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে তার হাতে বাই‘আত করবে। অতঃপর তার বিরুদ্ধে সিরিয়া থেকে একটি সৈন্যবাহিনী পাঠানো হবে। এদেরকে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে দেখতে পাবে, তখন সিরিয়ার ধার্মিক ব্যক্তিগণ ও ইরাকবাসীদের কয়েকটি দল তার নিকট এসে রুকন ও মাকামের মাঝখানে তার হাতে বাই‘আত করবে। অতঃপর কুরাইশ বংশের জনৈক ব্যক্তির উদ্ভব হবে, কাল্‌ব গোত্র হবে তার মাতুল গোত্র।

সে তাদের মুকাবিলায় একটি বাহিনী পাঠাবে। যুদ্ধে মাহদীর অনুসারীরা কালব বাহিনীর উপর বিজয়ী হবে। এ সময় যারা কালবের গনীমাত নিতে উপস্থিত হবে না তাদের জন্য আফসোস! মাহদী গানীমাতের সম্পদ বণ্টন করবেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত অনুযায়ী মানুষের মাঝে কার্য পরিচালনা করবেন, আর ইসলাম সারা পৃথিবীতে প্রসারিত হবে। অতঃপর তিনি সাত বছর অবস্থান করার পর মারা যাবেন। আর মুসলিমরা তার জানাযার সালাত পড়বে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, কেউ কেউ হিশাম থেকে বর্ণনা করে বলেন, নয় বছর অবস্থান করবেন, আবার কেউ বলেন, সাত বছর। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪২৮৬, ইফাবা-৪২৩৭]

এই হল সংক্ষেপে সত্যিকার ইমাম মাহদীর পরিচয়। উক্ত পরিচয় ভালো করে বুঝে থাকলে বর্তমানে দাবী করা বিভিন্ন ভণ্ড মাহদীর প্রতারণা ও ধোঁকাবাজী সহজেই বুঝা যাবে ইনশাআল্লাহ।

আমরা পরবর্তী লেখায় বাংলাদেশে বের হওয়া জনৈক ভণ্ড মাহদীর মুখোশ খুলে দিবো ইনশাআল্লাহ।

চলবে ইনশাআল্লাহ

0Shares

আরও জানুন

নফল আদায়কারীর পিছনে কি ফরজ আদায়কারীর ইক্তিদা সহীহ হয়?

প্রশ্ন হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ নাকি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ইশার নামায পড়তেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *