প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
আমি নাসির
আমার অনলাইনে বিভিন্ন লোকদের সাথে কথা, তর্কবিতর্ক হয়,তার মধ্যে নাস্তিকেরা রয়েছেন।
একজন নাস্তিক দাবী করেছেন, রাসূল সাঃ এর ২/৪ বছরের বড় হামজা রাঃ, কিন্তু উভয়ের পিতা একই দিনে বিয়ে করেন, বিয়ের তিনমাস পর আব্দুল্লাহ সিরিয়ায় চলে যান, আর ফিরে আসেন নি, তাহলে রাসূল সাঃ এর চেয়ে হামজা রাঃ ৩ মাসের বড় হবে, ২/৪ বছরের বড় হয় কিভাবে? আব্দুল্লাহ তো সিরিয়াতেই মারা যায়, ৫৭০/৭১ খ্রিস্টাব্দে, তাহলে রাসূল সাঃ এর জন্ম হলো কিভাবে, তিনার পিতা তো আব্দুল্লাহ নয়? (নাউজুবিল্লা)
এমনটাই ছিল, নাস্তিকের প্রশ্ন,,,
আমি এই প্রশ্নের উত্তর কোর’আন হাদীসের আলোকে থেকে জানতে চাচ্ছি?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
একই দিনে বিয়ের বর্ণনাটি সহীহ নয়!
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতা এবং হযরত হামজা রাঃ এর পিতা একই দিনে বিয়ে করেন এ বর্ণনাটি সহীহ নয়। কোন বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাবে এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
বরং বর্ণনাটি পাওয়া যায় তাবক্বাতুল কুবরা লিইবনে সা’দ গ্রন্থে। যে বর্ণনাটি সনদের বিচারে অশুদ্ধ।
কারণ, একই মজলিসে নবীজীর পিতা আব্দুল্লাহ এবং হামযার পিতা আব্দুল মুত্তালিব বিয়ে করেছিলেন মর্মে যে বর্ণনা পাওয়া যায়, সেটির বর্ণনাকারী হলেন, মুহাম্মদ বিন আমর বিন ওয়াকিদ আলওয়াকিদী আলআসলামী আবূ আব্দুল্লাহ আলমাদানী।
তার ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কিরামের মন্তব্য নিম্নরূপ!
ক) ইমাম বুখারী রহঃ বলেন,
قَال البُخارِيُّ : الواقدي مديني سكن بغداد، متروك الحديث، تركه أَحْمَد، وابن نمير، وابن المبارك، وإسماعيل بن زكريا
ওয়াকিদী মাদানী বাগদাদে বসবাস করতো। সে মাতরূকুল হাদীস তথা হাদীস বর্ণনায় পরিত্যাজ্য ব্যক্তি। তাকে পরিত্যাগ করেছেন ইমাম আহমাদ, ইবনে নুমাইর, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক এবং ইসমাঈল বিন যাকারিয়া। [তাহযীবুল কামাল-২৬/১৮৫-১৮৬, রাবী নং-৫৫০১]
খ) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ বলেন, সে মিথ্যুক। [তাহযীবুল কামাল-২৬/১৮৬, রাবী নং-৫৫০১, সিয়ারু আলামিন নুবালা-৫/১৬২, রাবী নং-১৪৮৫]
গ) ইমাম ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহঃ বলেন, সে হাদীস বর্ণনায় বিশ্বস্ত নয়। [তাহযীবুল কামাল-২৬/১৮৭, রাবী নং-৫৫০১]
ঘ) আবূ হাতিম রহঃ বলেন, ওয়াকিদী মাতরূকুল হাদীস। [আলজরহু ওয়াত তাদীল, রাবী নং-৯২]
ঙ) আলী ইবনুল মাদীনী রহঃ বলেন, আমি ওয়াকিদীর হাদীস বর্ণনা, ইতিহাস বর্ণনা এবং কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট নই। [তাহযীবুল কামাল-২৬/১৮৭, রাবী নং-৫৫০১]
চ) ইমাম মুসলিম রহঃ বলেন, সে মাতরূকুল হাদীস। [তাহযীবুল কামাল-২৬/১৮৮, রাবী নং-৫৫০১]
ছ) ইমাম নাসায়ী বলেন, সে বিশ্বস্ত নয়। [তাহযীবুল কামাল-২৬/১৮৮, রাবী নং-৫৫০১, আলকুনা-৬৪]
তিনি আরো বলেন, ওয়াকিদী হাদীস জাল করতো। [আলমুগনী লিজযুআফা-২/৬১৯, রাবী নং-৫৮৬১]
আমাদের কাছে অনির্ভরযোগ্য ও অবিশ্বস্ত সূত্রে বর্ণিত কোন কথা প্রমাণ্য নয়। বরং আমাদের কাছে দলীল হল, কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস। সেই সাথে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত ঐতিহাসিক বর্ণনা।
তবে যদি কোন অবিশ্বস্ত সূত্রেও সঠিক ইতিহাস হয়ে থাকে, তবে তা প্রয়োজনে গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু কোন অমূলক কথা কিছুতেই অবিশ্বস্ত সূত্রের ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত হয় না।
সুতরাং হযরত হামযা রাঃ পিতা আব্দুল মুত্তালিব ও নবীজীর পিতা আব্দুল্লাহর বিবাহ একই মজলিসে হয়েছিল একথা সঠিক সূত্রে প্রমাণিত নয়।
আব্দুল্লাহর বিয়ের আগেই হামযা রাঃ এর জন্ম হয়েছিল!
সঠিক তথ্য হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতা আব্দুল্লাহর বিবাহের কয়েক বছর আগেই হযরত হামজা রাঃ এর জন্ম হয়েছিল।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব যখন যমযমের কূপ খনন করেন, তখন তার হারিস নামক সন্তান ছাড়া কেউ ছিল না। তখন তিনি মান্নত করলেন যে, যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে দশটি পুত্র সন্তান দান করেন, আর তারা যুবক হয়ে আমার শক্তি বৃদ্ধি করে, তাহলে এক ছেলেকে আল্লাহর রাহে কুরবানী করবো।
যখন তার দশ সন্তান পূর্ণ হয়, তখন তাদের মাঝে হযরত হামযাও ছিলেন।
এর একথা সকল সীরাত গ্রন্থকার এবং ইতিহাসবীদগণ একমত যে, নবীজীর পিতা হযরত আব্দুল্লাহকে মান্নত হিসেবে কুরবানী দেবার ঘটনাটি তাকে বিয়ে দেবার আগেই সংঘটিত হয়েছে। [দ্রষ্টব্য, আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-২/২৪৪]
মান্নত পূর্ণ করার মুহুর্তে হযরত হামযা ছাড়া দশ ছেলে পূর্ণ হয় না। আর তখনতো আব্দুল্লাহর বিয়েই হয়নি।
সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত হামযা রাঃ সমবয়স্ক হবেন কিভাবে?
তাই হযরত হামযা রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুই বা চার বছরের বড় হওয়া মোটেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
কয়েকটি প্রমাণ পেশ করছিঃ
১
لَمَّا رَأَى عَبْدُ الْمُطَّلِبِ قِلَّةَ أَعْوَانِهِ فِي حَفْرِ زَمْزَمَ. وَإِنَّمَا كان يحفر وحده وابنه الحارث وهو بِكْرُهُ. نَذَرَ لَئِنْ أَكْمَلَ اللَّهُ لَهُ عَشَرَةَ ذُكُورٍ حَتَّى يَرَاهُمْ أَنْ يَذْبَحَ أَحَدَهُمْ. فَلَمَّا تَكَامَلُوا عَشَرَةً. فَهُمُ: الْحَارِثُ وَالزُّبَيْرُ وَأَبُو طَالِبٍ وَعَبْدُ اللَّهِ وَحَمْزَةُ وَأَبُو لَهَبٍ وَالْغَيْدَاقُ وَالْمُقَوَّمُ وَضِرَارٌ وَالْعَبَّاسُ. جَمَعَهُمْ ثُمَّ أَخْبَرَهُمْ بِنَذْرِهِ وَدَعَاهُمْ إِلَى الْوَفَاءِ لِلَّهِ بِهِ. فَمَا اخْتَلَفَ عَلَيْهِ مِنْهُمْ أَحَدٌ وَقَالُوا: أَوْفِ بِنَذْرِكَ وَافْعَلْ مَا شِئْتَ. فَقَالَ: لِيَكْتُبْ كُلُّ رَجُلٍ مِنْكُمُ اسْمَهُ فِي قِدْحِهِ. فَفَعَلُوا. فَدَخَلَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ فِي جَوْفِ الْكَعْبَةِ وَقَال لِلسَّادِنِ: اضْرِبْ بِقِدَاحِهِمْ. فَضَرَبَ. فَخَرَجَ قَدَحُ عَبْدِ اللَّهِ أَوَّلُهَا. وَكَانَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ يُحِبُّهُ.
فَأَخَذَ بِيَدِهِ يَقُودُهُ إِلَى الْمَذْبَحِ وَمَعَهُ الْمُدْيَةُ. فَبَكَى بَنَاتُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ. وَكُنَّ قِيَامًا. وَقَالَتْ إِحْدَاهُنَّ لأَبِيهَا: أَعْذِرْ فِيهِ بِأَنْ تَضْرِبَ فِي إِبِلِكَ السَّوَائِمِ الَّتِي فِي الْحَرَمِ.
فَقَالَ لِلسَّادِنِ: اضْرِبْ عَلَيْهِ بِالْقِدَاحِ وَعَلَى عَشْرٍ مِنَ الإِبِلِ. وَكَانَتِ الدِّيَةُ يَوْمَئِذٍ عَشْرًا مِنَ الإِبِلِ. فَضَرَبَ. فَخَرَجَ الْقَدَحُ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ. فَجَعَلَ يَزِيدُ عَشْرًا عَشْرًا. كُلُّ ذَلِكَ يَخْرُجُ الْقَدَحُ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ حَتَّى كَمَلَتِ الْمِائَةُ. فَضَرَبَ بِالْقِدَاحِ فَخَرَجَ عَلَى الإِبِلِ.
فَكَبَّرَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ وَالنَّاسُ مَعَهُ. وَاحْتَمَلَ بَنَاتُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أَخَاهُنَّ عَبْدَ اللَّهِ. وَقَدَّمَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ الإِبِلَ فَنَحَرَهَا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ. (الطبقات الكبر لابن سعد-1/72، البداية والنهاية-2/244)
যখন আব্দুল মুত্তালিব যমযম কুপ খননের সহযোগী কম দেখতে পেলেন। তিনি একা এবং তার একমাত্র ছেলে হারেস মিলে কুপ খনন করছিলেন। তখন তিনি মান্নত করলেন যে, যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে দশটি ছেলে সন্তান দান করেন তার যুবা বয়সে পৌছলে আমি তাদের একজনকে আল্লাহর রাহে কুরবানী করবো। তারপর যখন দশ ছেলে পূর্ণ হয়। তারা হলেন, হারেস, যুবায়ের, আবু তালেব, আব্দুল্লাহ, হামযা, আবু লাহাব, গাইদাক, মুকাওয়াম, যিরার, আব্বাস।
আব্দুল মুত্তালিব সকল সন্তানকে একত্র করে নিজের মান্নতের কথা জানালেন। মান্নতটি পূর্ণ করার জন্য সন্তানদের কাছে আবেদন করলেন। তখন কোন সন্তানই মান্নত পূর্ণ করাতে বাঁধা দেননি। বরং সকলেই বলে উঠলেন যে, আপনি আপনার মান্নত পূর্ণ করুন এবং যা ইচ্ছে হয় করুন। আমরা রাজি আছি। আব্দুল মুত্তালিব সকল পুত্রের নাম পাত্রে লিখে ফেলতে বললেন। তা’ই করা হল। তারপর আব্দুল মুত্তালিব বাইতুল্লাহর সামনে গমণ করলেন। সাদিনকে বললেন, পাত্র থেকে নাম উঠাও। সাদিন নাম উঠালো তো প্রথম নামই আসল আব্দুল্লাহর। যাকে আব্দুল মুত্তালিব অত্যাধিক মোহাব্বত করতেন।
তারপর আব্দুল মুত্তালিব তাকে কুরবানী করার জন্য মাযবাহে রওনা হলেন। আব্দুল মুত্তালিবের মেয়েরা সেখানেই দাঁড়ানো ছিলেন। তারা কান্না করতে লাগলেন। একজন বলে উঠলেন যে, এ কুরবানীর বদলে ভিন্ন সূরত বের করুন। সেটি হল, হারামের সীমানায় আপনার যে উট আছে, সেগুলোর সাথে আব্দুল্লাহর লটারী করুন।
আব্দুল মুত্তালিব বললেন, আব্দুল্লাহর সাথে দশ উটকে লটারী করাও। তখনো আব্দুল্লাহর নামই উঠল। আব্দুল মুত্তালিব দশ উট করে বৃদ্ধি করতে লাগল। কিন্তু বারংবার আব্দুল্লাহর নামই উঠতে লাগল। অবশেষে যখন উটের সংখ্যা একশত হয়ে গেল, তখন উটের নাম উঠল। এ দৃশ্য দেখে আব্দুল মুত্তালিব আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিয়ে উঠলেন। সাথে সাথে উপস্থিত সবাই তাকবীর দিলেন। আব্দুল মুত্তালিবের মেয়েরা আব্দুল্লাহকে নিয়ে চলে গেল। আর আব্দুল মুত্তালিব সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে উটগুলোকে কুরবানী করলেন। [তাবক্কাতে ইবনে সা’দ-১/৭২, আরবী, ১/১০৬-১০৭ উর্দু]
২
قَالَ ابْنُ إِسْحَاقَ: وَكَانَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ، فِيمَا يَزْعُمُونَ، نَذَرَ حِينَ لَقِيَ مِنْ قُرَيْشٍ مَا لَقِيَ عِنْدَ حَفْرِ زَمْزَمَ، لَئِنْ وُلِدَ لَهُ عَشَرَةُ نَفَرٍ ثُمَّ بلغُوا مَعَه حَتَّى يمنعوه لَيَذْبَحَن أَحَدَهُمْ لِلَّهِ عِنْدِ الْكَعْبَةِ.
فَلَمَّا تَكَامَلَ بَنُوهُ عَشَرَةً.
وَعَرَفَ أَنَّهُمْ سَيَمْنَعُونَهُ، وَهُمُ: الْحَارِثُ، وَالزُّبَيْرُ، وَحَجْلٌ، وَضِرَارٌ، وَالْمُقَوَّمُ، وَأَبُو لَهَبٍ، وَالْعَبَّاسُ، وَحَمْزَةُ، وَأَبُو طَالِبٍ، وَعَبْدُ اللَّهِ،
ইবনে ইসহাক বলেন, যমযম খননের সময় আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে মান্নত করলেন যে, যদি তার দশটি ছেলে হয়, আর তারা যুবক হয়ে তার সহযোগী হবার বয়সে পৌঁছে, তাহলে তিনি তাদের একজনকে আল্লাহর জন্য কাবার সামনে কুরবানী দিবেন। অবশেষে তার দশ পুত্র পূর্ণতা পেল। তারা হলেন, হারেস, যুবায়ের, হাজাল, যিরার, মুকাওয়াম, আবূ লাহাব, আব্বাস, হামযা, আবূ তালেব, আব্দুল্লাহ। [আসসীরাতুন নাবাবিয়্যাহ, ইবনে কাসীরকৃত-১/১৭৪]
৩
قَالَ ابْنُ إِسْحَاقَ: ثُمَّ انْصَرَفَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ آخِذًا بِيَدِ ابْنِهِ عَبْدِ اللَّهِ فَمَرَّ بِهِ – فِيمَا يَزْعُمُونَ – عَلَى امْرَأَةٍ مِنْ بَنِي أَسَدِ بْنِ عَبْدِ الْعُزَّى بْنِ قُصَيٍّ وهي أم قتال أُخْتُ وَرَقَةَ بْنِ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ الْعُزَّى بْنِ قُصَيٍّ وَهِيَ عِنْدَ الْكَعْبَةِ فَنَظَرَتْ إِلَى وَجْهِهِ فَقَالَتْ أَيْنَ تَذْهَبُ يَا عَبْدَ اللَّهِ؟ قَالَ مَعَ أَبِي قَالَتْ لَكَ مِثْلُ الْإِبِلِ الَّتِي نُحِرَتْ عَنْكَ وَقَعْ عَلَيَّ الْآنَ.
قَالَ أَنَا مَعَ أَبِي وَلَا أَسْتَطِيعُ خِلَافَهُ وَلَا فِرَاقَهُ فَخَرَجَ بِهِ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ حَتَّى أَتَى وَهْبَ بْنَ عَبْدِ مَنَافِ بْنِ زُهرة بْنِ كِلَابِ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبِ بْنِ لُؤَيِّ بْنِ غَالِبِ بْنِ فِهْرٍ وَهُوَ يَوْمَئِذٍ سَيِّدُ بَنِي زُهْرَةَ سِنًّا وَشَرَفًا فَزَوَّجَهُ ابْنَتَهُ آمِنَةَ بِنْتَ وَهْبٍ وَهِيَ يَوْمَئِذٍ سَيِّدَةُ نِسَاءِ قَوْمِهَا فَزَعَمُوا أَنَّهُ دَخَلَ عَلَيْهَا حِينَ أُمْلِكَهَا مَكَانَهُ فَوَقَعَ عَلَيْهَا فَحَمَلَتْ مِنْهُ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ইবনে ইসহাক বলেন, ঐতিহাসিকদের মতে, অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব পুত্র আব্দুল্লাহর হাত ধরে বনু আসাদ ইবনে আব্দুল উযযা ইবনে কুসাই এর এক মহিলার নিকট গমন করেন। মহিলাটি হলো ওয়ারাকা বিন নওফেলের বোন। তার নাম ছিল উম্মে কিতাল। সে সময়ে সে কা’বার নিকট অবস্থান করছিল। আব্দুল্লাহকে দেখে সে বলল, আব্দুল্লাহ! তুমি যাচ্ছো কোথায়? আব্দুল্লাহ বললেন, আমি আবার সাথে যাচ্ছি। মহিলা বলল, যদি তুমি এই মুহুর্তে আমার সাথে মিলিত হতে সম্মত হও, তাহলে আমি তোমার বদলে যে সংখ্যক উট জবাই করা হয়েছে, সে সংখ্যক উট তোমাকে দিব। জবাবে আব্দুল্লাহ বললেন, আমি আমার আব্বার সঙ্গে আছি। তাকে ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া বা তার মতের বাইরে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আব্দুল্লাহকে নিয়ে আব্দুল মুত্তালিব ওয়াবহ বিন আব্দে মানাফ, ইবনে যুহরা ইবনে কিলাব বিন মুররা বিন কা’ব বিন লুওয়াই বিন গালিব বিন ফিহর এর নিকট যান। ওহাব বিন আব্দে মুররা তখন বয়স ও মর্যাদায় বনু যুহরার সর্দার ছিল। আলাপ আলোচনার পর তার কন্যা আমিনার সাথে আব্দুল্লাহর বিবাহ হয়ে যায়। আমিনাও ছিলেন, তার সম্প্রদায়ের মহিলাদের নেত্রী। ঐতিহাসিকদের মতে বাড়িতে নিয়ে আসার পর আমিনার সঙ্গে আব্দুল্লাহর বাসর হয়। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গর্ভে আসেন। [আলবিদায়াওয়াননিহায়া-, ইফাবা-২/৪৬৬, উয়ূনুল আছার, ইবনে সাইয়িদুন্নাছকৃত-১/২৯, সীরাতে ইবনে হিশাম-১/১৫৬, আলমুনতাজিম ফী তারীখিল মুলুকি ওয়াল উমাম, ইবনুল যাওজীকৃত-২/২০০]
উপরোক্ত বর্ণনার মাধ্যমে পরিস্কার বুঝা যায় যে,
ক) হযরতে হামযাসহই আব্দুল মুত্তালিবের দশ সন্তানের মান্নত পূর্ণ করার সুযোগ তৈরী হয়।
খ) নবীর পিতা আব্দুল্লাহর বিয়ের আগেই হযরতে হামযা শক্ত সামর্থবান বয়সে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
সুতরাং হযরতে হামযা রাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বয়সে কয়েক বছরের বড় হবেন এটাইতো স্বাভাবিক।
নবীজী ও হামযার দুধমাতা একজন হন কিভাবে?
দুধমাতা একজন হবার জন্য একই সময়ে দুধ পান করা শর্ত নয়। দুই ভাই একই মায়ের দুধ পান করেন, যিনি বড় তিনি আগে পান করেন। তখনো ছোট ভাই জন্মগ্রহণই করেনি।
সুতরাং হযরত হামযা রাঃ যে মহিলার দুধ পান করেছেন আগে, পরবর্তীতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করার পর তারই দুধ পান করেছেন। দুগ্ধভাই হবার জন্য একই সময়ে দুধ পান করা জরুরী নয়।
সুতরাং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হামযা রাঃ দুগ্ধভাই হবার কথা সামনে এনে উভয়ের বয়স সমান হবার দাবী করা বাস্তবতা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারাই সম্ভব। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি এমন দাবী করতে পারে না।
একটি প্রশ্ন
নাস্তিকটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতা বিষয়ে যে জঘন্য উক্তি করেছে, যদি তা সত্য হতো, তাহলে নবীজীর জানের দুশমন তৎকালিন আরবের লোকেরা কেন অভিযোগ করেনি?
সে সময়কার আরবের লোকেরা নবীকে, পাগল বলেছে, গণক বলেছে, যাদুকর বলেছে, কবি বলেছে। ইত্যাদি নানাভিদ অপপ্রচার করেছে। কিন্তু নবীজীর জন্ম বিষয়ক কোন দোষ থাকলে তারা কেন তা প্রকাশ করেনি?
অথচ কাফের থাকা অবস্থায়ও আবূ সুফিয়ান নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে রোমক সম্রাটের সামনে নবীজীর বংশীয় শ্রেষ্ঠত্ব এবং পবিত্রতা স্পষ্ট শব্দেই জানিয়েছে।
أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ أَبَا سُفْيَانَ بْنَ حَرْبٍ أَخْبَرَهُ: أَنَّ هِرَقْلَ أَرْسَلَ إِلَيْهِ فِي رَكْبٍ مِنْ قُرَيْشٍ، وَكَانُوا تُجَّارًا بِالشَّأْمِ فِي المُدَّةِ الَّتِي كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَادَّ فِيهَا أَبَا سُفْيَانَ وَكُفَّارَ قُرَيْشٍ، فَأَتَوْهُ وَهُمْ بِإِيلِيَاءَ، فَدَعَاهُمْ فِي مَجْلِسِهِ، وَحَوْلَهُ عُظَمَاءُ الرُّومِ، ثُمَّ دَعَاهُمْ وَدَعَا بِتَرْجُمَانِهِ، فَقَالَ: أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا بِهَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟ فَقَالَ أَبُو سُفْيَانَ: فَقُلْتُ أَنَا أَقْرَبُهُمْ نَسَبًا، فَقَالَ: أَدْنُوهُ مِنِّي، وَقَرِّبُوا أَصْحَابَهُ فَاجْعَلُوهُمْ عِنْدَ ظَهْرِهِ، ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ: قُلْ لَهُمْ إِنِّي سَائِلٌ هَذَا عَنْ هَذَا الرَّجُلِ، فَإِنْ كَذَبَنِي فَكَذِّبُوهُ. فَوَاللَّهِ لَوْلاَ الحَيَاءُ مِنْ أَنْ يَأْثِرُوا عَلَيَّ كَذِبًا لَكَذَبْتُ عَنْهُ. ثُمَّ كَانَ أَوَّلَ مَا سَأَلَنِي عَنْهُ أَنْ قَالَ: كَيْفَ نَسَبُهُ فِيكُمْ؟ قُلْتُ: هُوَ فِينَا ذُو نَسَبٍ،
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ সুফিয়ান ইবনু হরব তাকে বলেছেন, বাদশাহ হিরাকল একবার তাঁর কাছে লোক পাঠালেন। তিনি কুরাইশদের কাফেলায় তখন ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান ও কুরাইশদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্ধিবদ্ধ ছিলেন। আবূ সুফিয়ান তার সঙ্গীদের সহ হিরাকলের কাছে এলেন এবং তখন হিরাকল জেরুযালেমে অবস্থান করছিলেন। হিরাকল তাদেরকে তাঁর নিকটে ডাকলেন। তার পাশে তখন রোমের নেত্রীস্থানীয় ব্যাক্তিগন উপস্থিত ছিল। এরপর তাদের কাছে ডেকে নিলেন এবং দোভাষীকে ডাকলেন।
তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, এই যে ব্যাক্তি নিজেকে নাবী বলে দাবী করে — তোমাদের মধ্যে বংশের দিক দিয়ে তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় কে? আবূ সুফিয়ান বললেন, আমি বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়। তিনি বললেন, তাঁকে আমার খুব কাছে নিয়ে এস এবং তাঁর সঙ্গীদেরও কাছে এনে পেছনে বসিয়ে দাও। এরপর তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাদের বলে দাও, আমি এর কাছে সে ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো, সে যদি আমার কাছে মিথ্যা বলে, তবে সাথে সাথে তোমরা তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রকাশ করবে। আবূ সুফিয়ান বলেন, আল্লাহ্র কসম! তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে-এ লজ্জা যদি আমার না থাকত, তবে অবশ্যই আমি তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম।
এরপর তিনি তাঁর সম্পর্কে আমাকে প্রথম প্রশ্ন যে করেন তা হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশমর্যাদা কেমন?’ আমি বললাম, তিনি আমাদের মধ্যে অতি সম্ভ্রান্ত বংশের। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭, ইফাবা-৬]
এ হাদীসের একটু পর এসেছেঃ
فَقَالَ لِلتَّرْجُمَانِ: قُلْ لَهُ: سَأَلْتُكَ عَنْ نَسَبِهِ فَذَكَرْتَ أَنَّهُ فِيكُمْ ذُو نَسَبٍ، فَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِي نَسَبِ قَوْمِهَا.
তারপর তিনি দোভাষীকে বললেন, তুমি তাকে বল, আমি তোমার কাছে তাঁর বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তুমি তার জওয়াবে উল্লেখ করেছ যে, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের। প্রকৃতপক্ষে রাসূল গণকে তাঁদের কওমের উচ্চ বংশেই প্রেরণ করা হয়ে থাকে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭]
ফাতহুল বারীতে আসছেঃ
قَالَ كَيْفَ حَسَبُهُ فِيكُمْ قَالَ هُوَ فِي حَسَبِ مَا لَا يَفْضُلُ عَلَيْهِ أَحَدٌ قَالَ هَذِهِ آيَةٌ
রোম সম্রাট বললেন, মুহাম্মদের বংশ মর্যাদা কেমন? তখন আবু সুফিয়ান বলেন, তিনি বংশীয় মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে এতো উচ্চতায় রয়েছেন যে, তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। সম্রাট বললেন, এটা নবী হবার একটি আলামত। [ফাতহুল বারী-৮/১৬৩, ৮/২১৭]
যদি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রে বা পরিবারে সামান্য পরিমাণ কলংকের দাগ থাকতো, তাহলে অবশ্যই তা আবূ সুফিয়ান রোম সম্রাটের সামনে উপস্থাপন করতো। কিন্তু জানের দুশমন হবার পরও নবীর বংশ ও পরিবারের পবিত্রতার কথা পরিস্কার শব্দে জানিয়েছেন।
আরবের কোন ব্যক্তি নবীজীর পরিবার ও বংশ নিয়ে কোন প্রকার দুর্নাম করেছে বলে ইতিহাস পাওয়া যায় না।
কিন্তু বর্তমান কতিপয় খৃষ্টান ও নাস্তিকরা চরম নিকৃষ্ট মনোবৃত্তির পরিচয় দিয়ে এ বিষয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টির পায়তারা করছে। সৃষ্টিকূলের শ্রেষ্ঠতম মানবের নিষ্কলুষ চরিত্র নিয়ে যারা কালিমা লেপনের অপচেষ্টা করছে, আল্লাহ তাআলা তাদের হিদায়াত দান করুন। নতুবা তাদের ধ্বংস করে দিন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com
মাশাআল্লাহ! আহলে হক টিমের প্রতিটি কার্যক্রমকে আল্লাহ তাআলা কবুল করে নিন..। ❤ ameen..!
নিম্নোক্ত কথাটি আলোচনায় আসার দরকার ছিলো ।
“কারণবশত দ্বিতীয়বার কূট খননের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিলো” ।
অনেকে ভাবতে পারে, কূপ তো আগেই তৈরি করা ছিলো ।
অনেক কিছু জানা গেল
নাস্তিকরা এ সমস্ত আর্গুমেন্ট পায় কোত্থেকে? কারা এসব গোঁজামিল টাইপের আপত্তি এসব নির্বোধ পোলাপাইন গুলোর হাতে সাপ্লাই করে জাহান্নামের টিকেট ধরিয়ে দিচ্ছে!? আল্লাহ তুমি রক্ষা কর।