প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / যৌন চাহিদা নিবারণে সেক্সডল বা সেক্সটয় ব্যবহারের শরয়ী বিধান

যৌন চাহিদা নিবারণে সেক্সডল বা সেক্সটয় ব্যবহারের শরয়ী বিধান

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।

আমি আব্দুল্লাহ, গাজীপুর থেকে।

আমার প্রশ্নঃ সেক্সটয় বা সেক্সডল নিয়ে।

মুহতারাম, বর্তমান বিশ্বে সেক্সডল নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। অনেকে এটাকে মেয়েদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। কেউ বলছে এর দ্বারা ধর্ষণ কমে যাবে।

সেক্সডল হল একপ্রকার পুতুল যেটাকে হুবহু মেয়েদের গুণাবলী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এবং মেয়েলি যেই সমস্ত স্পর্ষকাতর অঙ্গ আছে, ওই পুতুলকেও সেই ভাবে বানানো হয়েছে।

এখন আমার প্রশ্ন হল,, কেউ যদি ঐ পুতুল কিনে সেটা মেয়েদের মত ব্যবহার করে তাহলে এর দ্বারা জিনা করার গুনাহ হবে কিনা? বা এটা ব্যবহার করা জায়েজ হবে কিনা?

বিঃদ্রঃ এর বিপরীত টাও আছে। অর্থাৎ মেয়েদের জন্যও আছে, পুরষের লিঙ্গের মত এক ধরণের পুতুল, যার দ্বারা মেয়েরা তাদের আকাঙ্ক্ষা পুর্ণ করতে পারে।

দয়া করে জানালে অনেক উপকৃত হব।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

এভাবে যৌন চাহিদা পূর্ণ করা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম। এর দ্বারা কয়েকটি মারাত্মক হারাম কাজ করা হচ্ছে।

প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরী করা এবং তা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম।

কিন্তু এক্ষেত্রে সেক্সডল বা সেক্সটয় এর মাধ্যমে মানবাকৃতি তৈরী ও ব্যবহার করে তা চরমভাবে লঙ্ঘণ করা হয়।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ.

প্রতিকৃতি তৈরিকারী শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে।’ -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫০

আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَيُقَالُ لَهُمْ : أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ.

ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩

আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘(ফতহে মক্কার সময়) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল্লাহয় বিভিন্ন প্রতিকৃতি দেখলেন তখন তা মুছে ফেলার আদেশ দিলেন। প্রতিকৃতিগুলো মুছে ফেলার আগ পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করেননি।’ -সহীহ বুখারী হা. ৩৩৫২

যৌন চাহিদা মিটানোর একমাত্র রাস্তা হল, শরীয়ত অনুমোদিত নারীর সাথে তা নিবারণ করা। এছাড়া অন্যত্র বা অন্য পন্থায় যৌন চাহিদা মিটানো নিষিদ্ধ।

কিন্তু সেক্সডল বা সেক্সটয় দ্বারা শরীয়তের এ বিধানটি লঙ্ঘিত হয়।

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ [٢٣:٥] إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ [٢٣:٦]  فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ [٢٣:٧]

এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে। [সূরা মু’মিনূন-৫-৭]

وَالْأَقْرَبُ لِقَوَاعِد مَذْهَبِنَا عَدَمُ الْحِلِّ، لِأَنَّ تَصَوُّرَ تِلْكَ الْأَجْنَبِيَّةِ بَيْنَ يَدَيْهِ يَطَؤُهَا فِيهِ تَصْوِيرُ مُبَاشَرَةِ الْمَعْصِيَةِ عَلَى هَيْئَتِهَا، (رد المحتار، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى النظر واللمس-6\372، دار الفكر بيروت)

এটি ধর্ষণকে হ্রাস করবেতো দূরে থাক। এসব ধর্ষণ ও  ইভটিজিং এর পথকে সুগম করে দেয়।  

কারণ,

ক) এসব যৌন উদ্দীপক নারী চেহারা বিশিষ্ট্য পুতুলগুলোর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারীর মনে নারীকে শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্যই মনে করবে। যা তাকে নারীদের উত্যাক্ত করতে প্রলুব্ধ করবে।

খ) কৃত্রিমভাবে যৌন ক্ষুধা পরিপূর্ণ নিবারিত কখনোই হতে পারে না। তাই এসব ব্যবহারকারীকে ধর্ষণে আরো বেশি উৎসাহ প্রদান করবে।

এভাবে সমাজে ধর্ষণ ও ইভটিজিং এর প্রবণতা বাড়বে বৈ কখনোই কমবে না।

জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে আসছেঃ

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে আমেরিকায়। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটিতে ধর্ষণের শিকার নারীর পরিসংখ্যান ৯১% এবং ৮% পুরুষ। অপর একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, এ দেশে ছয় জন নারীর মধ্যে এক জন ধর্ষণের শিকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন ধর্ষণের শিকার। এই দেশে ১৪ বছর বয়স থেকেই ধর্ষণের মত অপরাধের প্রবণতা তৈরি হয় শিশু মনে। 

ব্রিটেনে চার লাখ মানুষ প্রতিবছর ধর্ষণের মত ঘটনার শিকার হন এদেশে। প্রতি পাঁচ জন মহিলার মধ্যে একজন করে ধর্ষণের শিকার হন।

জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে দুই লাখ ৪০ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর জার্মানিতে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয় ৬৫ লাখ ৭ হাজার, ৩৯৪।

প্রতি বছরে ফ্রান্সে ধর্ষণের শিকার হন অন্তত ৭৫ হাজার নারী।

প্রতি ১৭ জনের মধ্যে এক জন নারী কানাডায় ধর্ষণের শিকার হন।

[দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ইং]

 ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশটির প্রতি চার নারীর একজন এবং প্রতি ছয় পুরুষের একজন ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে চিলড্রেন এসিসমেন্ট সেন্টারের আরেক গবেষণায়৷ [সূত্র, একুশে টিভি অনলাইন, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮ ইং]

উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ষণের মাত্রা দিনদিন বৃদ্ধি হচ্ছে। অথচ যৌনতা সেখানে ডালভাত। তারপরও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মত ওপেন সেক্সের রাষ্ট্রে স্কুলগামী শিশুরাও এতো যৌন নির্যাতিত কেন?

সুতরাং বুঝা গেল, এসব সেক্সডল ধর্ষণ কমাবেতো দূরে থাক ভয়ানক আকারে বৃদ্ধিই করবে।

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [٢٤:١٩]

যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।  [সূরা নূর-১৯]

পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনাচার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ছেলে মেয়ের বিবাহের মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক বন্ধন তৈরী হয়। এসব সেক্সডলের মাধ্যমে সেই সামাজিক বন্ধন তীব্র আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হস্তমৈথুনের কারণে ডাক্তারদের বক্তব্য অনুপাতে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়। সেক্সডল ব্যবহারের দ্বারা মূলত হস্তমৈথুনই করা হয়ে থাকে।

যার ফলে ব্যবহারকারী ধীরে ধীরে যৌন অনুভূতিহীন হয়ে পড়ার তীব্র শংকা থাকে।

অথচ শরয়ী বিধান হল, সামর্থবান ব্যক্তি বিবাহ করবে। সক্ষম না হলে রোযা রাখবে।

قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا، فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কিছু যুবক ছিলাম যাদের কিছুই ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৬৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪০০]

সেক্সডলের মাধ্যমে বেগানা নারীকে কল্পনা করে যিনার কল্পনা করা হয়। যা এক প্রকার যিনা।

যা থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলিমের আবশ্য কর্তব্য।

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল,ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয়  এবং মিথ্যা পরিণত করে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা একথা পরিস্কার যে, এসব সেক্সডল ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। যেমন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা নিষিদ্ধ। তেমনি সামাজিক স্থিতিশীলতা ও পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার জন্য এ ঘৃণ্যতার বিরুদ্ধে সকল নাগরিকের সোচ্চার থাকা কর্তব্য।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

One comment

  1. অল্প সময়ের ভিতরেই এ পোস্ট তুলনামূলক বেশি লোক পড়েছে ।

Leave a Reply to Yusuf Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *