প্রশ্ন
নাম-নূর ইসলাম নোয়াখালী,সোনাইমুড়ী।
এই ঘটনা কি সত্য সত্য হলে পুরো আলোচনা দিলে উপকৃত হবো! হযরত মুসা আঃ একবার আল্লাহ্ তায়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্! জান্নাতে আমার সাথে কে থাকবে? জবাবে বলা হলো,ওমুক কসাই !
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
ওয়ায়েজদের মুখে প্রচলিত এটি একটি বহুল প্রচলিত ঘটনা। যার বিস্তারিত বিবরণ হল,
একদা মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার কাছে মুনাজাত করে বললেন, হে আল্লাহ! জান্নাতে আমার সঙ্গী কে হবে? দুনিয়াতেই তার সাথে আমার সাক্ষাৎ করিয়ে দিন।
তখন জিবরাঈল আসলেন। এসে বললেন, হে মুসা! ওমুক কসাই হবে তোমার জান্নাতের সঙ্গী। যে ওমুক এলাকায় বসবাস করে। একথা শুনে মুসা আলাইহিস সালাম উক্ত কসাইয়ের দোকানে গেলেন।
এক যুবক কসাইকে দেখলেন গোস্ত বিক্রিতে মগ্ন। মুসা আলাইহিস সালাম গভীর মনযোগ দিয়ে লোকটির কাজকর্ম লক্ষ্য করতে লাগলেন। কিন্তু এমন কোন বিশেষ আমল নজরে আসল না, যার বদৌলতে কসাইটি নবীর সাথে জান্নাতে প্রবেশের মর্যাদা লাভ করতে পারে।
যখন সন্ধ্যা নেমে এল। তখন কসাইটি গোস্তের একটি থলে নিয়ে বাড়ীর দিকে রওনা হল। মুসা আলাইহিস সালাম উক্ত কসাইয়ের পিছু নিলেন। নিজের পরিচয় গোপন করে তার বাড়ীর মেহমান হবার আবেদন করলেন। কসাই রাজী হল।
কসাই বাড়ীতে আসার পর খাবার তৈরী করল। তারপর ঝুলন্ত একটি ঝুড়ি নামাল। যাতে একটি বৃদ্ধা ছিল। বৃদ্ধাকে ভাল করে গোসল করাল। তারপর তাকে নিজ হাতে খানা খাওয়াল। খানা শেষ হলে বৃদ্ধাকে আবার আগের স্থানে রেখে দিল। মুসা আলাইহিস সালাম লক্ষ্য করলেন উক্ত বৃদ্ধা বিড় বিড় করে কি যেন বলছে। যা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছিল না।
তারপর কসাই মুসা আলাইহিস সালামকে মেহমানদারী হিসেবে খানা পেশ করলেন। খানা শুরু করার আগেই মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ বৃদ্ধা কে? কসাই জবাব দিল, আমার মা। আমি তার খিদমাত করি।
মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা নিজের ভাষায় বিড় বিড় করে কী বলছে?
কসাই জবাব দিল, আমি যখনি মায়ের খিদমাত করি। তখন তিনি বলেন, “আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন, এবং তোমাকে জান্নাতে মুসা নবীর সঙ্গী বানান”।
মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে যুবক! আমি তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি, আল্লাহ তাআলা তোমার মায়ের দুআ কবুল করেছেন। আমি আল্লাহর কাছে জান্নাতে আমার সঙ্গী কে হবে তা জানতে চেয়েছিলাম। তখন আল্লাহ তাআলা তোমার কথা বলেছেন। আমি তোমার পরিচয়ের জন্য তোমার পিছু নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি তোমার মাঝে মায়ের খিদমাত ছাড়া কোন বিশেষ আমল খুঁজে পাইনি। এর মানে হল, মায়ের খিদমাতের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে জান্নাতে আমি মুসার সঙ্গী হবার নিয়ামত দান করেছেন।
এই হল, মোটামুটি ঘটনা। যা বিভিন্ন ব্যক্তির বয়ান ও বর্ণনা দ্বারা বিভিন্ন শব্দে জানা যায়।
সন্তানের জন্য মায়ের দুআ কবুল হয়। বিশুদ্ধ হাদীসে এমনটি এসেছে। সুতরাং সন্তানের জন্য বাবা মায়ের দুআ কবুল হয় এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন প্রকারের দুআ সন্দেহাতীতভাবে কবুল হয়। মজলুমের দুআ। মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানের জন্য জন্মদাতার দুআ। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৯০৫, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-১৫৩৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৯৯]
কিন্তু মানুষের মুখে মুখে, বক্তাদের বয়ানে বয়ানে মুসা আলাইহিস সালাম ও কসাই সম্পর্কিত রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করা উপরোক্ত ঘটনার কোন ভিত্তি নেই।
এটি ওয়ায়েজদের বানানো বানোয়াট গল্প ছাড়া কিছু নয়। তা’ই এ বানোয়াট গল্প বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকা জরুরী।
পিতা মাতার খিদমাত করার দ্বারা জান্নাতপ্রাপ্তি এবং তাদের দুআ কবুল হয় মর্মে অনেক হাদীস ও কুরআনের আয়াত রয়েছে। সেসব রেখে এসব বানোয়াট গল্প দ্বারা মা বাবার খিদমাত ও দুআ কবু লের ফযীলত বলা অনর্থক কাজ ছাড়া কিছু নয়।
পিতা মাতার খিদমাতের ফযীলত সম্পর্কিত সহীহ ফযীলত জানতে হলে দেখুন, ইমাম নববীকৃত ‘রিয়াজুস সালেহীন’। ইমাম মুনজিরীকৃত ‘আততারগীব ওয়াতত তারহীব’। ইমাম বুখারীকৃত ‘আলআদাবুল মুফরাদ’ ইত্যাদি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com