প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
মুহতারাম, স্বাস্থ্য ভারী হওয়ায় ওজন কমানোর জন্য আমি ২৪ রমজান থেকে কিটো ডায়েট শুরু করার চেষ্টা করি। প্রতিদিন ইফতারিতে সাধারণত ছোলা-মুড়ি বা খিচুরি বা ভাত খাই। কিন্তু ২৩ রমজানের ইফতারিতে ডিম, বাদাম, সবজী খেয়েছি, পেট ভরেই খেয়েছিলাম। সেহেরীর সময় শরীর খুব খারাপ লাগছিল, বুঝতে পারছিলাম এখন স্বাভাবিক খাবার ছেড়ে কিটো ডায়েট অনুযায়ী খাওয়া শুরু করলে রোজা রাখতে সমস্যা হতে পারে। তাই ডায়েটের চিন্তা বাদ দিয়ে প্রতিদিনের মত ভাত খেয়ে নিই। পিপাসা লাগছিল বলে অন্যদিনের তুলনায় পানিও বেশি পান করেছিলাম।
সকালে সাড়ে ৬ টার দিকে ঘুম ভেঙে যায়। প্রচন্ড পিপাসা এবং অস্থির লাগছিল। বুক থেকে মুখ পর্যন্ত শুকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ হাটাচলা করি অবস্থা ভালো হওয়ার আশায়। কিন্তু অস্থিরতা এবং পিপাসা কমছিল না কিছুতেই। শেষে পানি না খেয়ে আর থাকতে পারিনি। পরের দিন অর্থাৎ ২৫ রমজানেও একই সমস্যা হয়। পিপাসা এবং অস্থিরতা। ফলে সেদিনের রোজাও ভাঙতে হয়েছে। ২৬ রোজায়ও ভয় লাগছিল যে রাখতে পারব কিনা, তাই শুরুতে নিয়ত করিনি। সাড়ে এগারোটার দিকে পরে নিয়ত করেছি এবং রোজা পূর্ণ করেছি।
এর আগেও একবার কিছুদিন কিটো ডায়েট করেছি আমি। কিন্তু এত খারাপ অবস্থা হবে তা বুঝতে পারিনি। আমার ধারণা ছিল কিছুটা কষ্ট হবে কিন্তু রোজা রাখতে সমস্যা হবেনা।
আমি বিষয়টা নিয়ে খুব অনুতপ্ত এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সাধ্যমত তওবা এস্তেগফার করছি। এখন যে দুই রোজা রাখতে পারিনি তার জন্য আমি কি করব? কাজা কাফফারা দুইটাই আদায় করতে হবে না শুধু কাজা করতে হবে? আর তৃতীয় দিনের রোজা কি সাড়ে এগারটায় নিয়ত করার দ্বারা আদায় হবে? যদি আদায় না হয় তাহলে কি করতে হবে?
(আমি ঠিক জানিনা আপনারা কিভাবে রিপ্লাই দেন। মেইলে রিপ্লাই দিলে আলহামদুলিল্লাহ্। আর যদি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন সেক্ষেত্রে পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
অপারগ অবস্থায় রোযা ভঙ্গ করার কারণে কাফফারা আবশ্যক হয় না। রমজান পরবর্তীতে শুধু কাযা আদায় করলেই হবে।
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ [٢:١٨٥]
কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। [সূরা বাকারা-১৮৫]
(أَوْ مَرِيضٍ خَافَ الزِّيَادَةَ) لِمَرَضِهِ وَصَحِيحٍ خَافَ الْمَرَضَ، وَخَادِمَةٍ خَافَتْ الضَّعْفَ بِغَلَبَةِ الظَّنِّ بِأَمَارَةٍ أَوْ تَجْرِبَةٍ أَوْ بِأَخْبَارِ طَبِيبٍ حَاذِقٍ مُسْلِمٍ مَسْتُورٍ …… (الْفِطْر) يَوْمَ الْعُذْرِ إلَّا السَّفَرَ كَمَا سَيَجِيءُ (وَقَضَوْا) لُزُومًا (مَا قَدَّرُوا بِلَا فِدْيَةٍ (الدر المختار، كتاب الصوم، فصل فى العوارض-3\403-404)
وكذا فى الفتاوى التاتارخانية-3\403، رقم-4697)
রমজানের রোযা শুদ্ধ হবার জন্য সুবহে সাদিকের আগেই রোযার নিয়ত করা বাঞ্ছনীয়। তবে দ্বিপ্রহরের আগে রোযার নিয়ত করে নিলেও রোযা শুদ্ধ হয়। [ইমদাদুল ফাতাওয়া-২/১৫৩]
স্মর্তব্য যে, দ্বিপ্রহর বলতে উদ্দেশ্য হল, সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মাঝামাঝি সময়।
২০২০ ঈসাব্দের রমজান মাসের ২৬ রমজানে ঢাকায় সুবহে সাদিক ছিল ৩.৪৪। আর সূর্যাস্ত ছিল ৬.৪০ মিনিট।
সেই হিসেবে প্রশ্নোক্ত তারিখের দ্বিপ্রহর ছিল সাড়ে দশটার দিকে প্রায়।
আর আপনি রোযার নিয়ত করেছেন সাড়ে এগারটার দিকে। যা দ্বিপ্রহার পেড়িয়ে যাবার পর হয়েছে। তা’ই আপনার উক্ত দিনের রোযাটি হয়নি।
তাই রমজান পরবর্তীতে এই রোযাটির কাযাও আপনার আদায় করতে হবে। তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না।
“ثلاثة” شرائط “النية” في وقتها في كل يوم “
قوله: “في وقتها” الوقت بالنسبة لأداء رمضان بعد الغروب إلى قبيل الضحوة (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-635)
حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ الْأَكْوَعِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ مِنْ أَسْلَمَ: ” أَذِّنْ فِي قَوْمِكَ أَوْ فِي النَّاسِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ: مَنْ أَكَلَ فَلْيَصُمْ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ وَمَنْ لَمْ يَكُنْ أَكَلَ فَلْيَصُمْ “ (مسند احمد، رقم الحديث-16526، صحيح ابن خزيمة، رقم الحديث-2092
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]