প্রচ্ছদ / ওয়াকফ/মসজিদ/ঈদগাহ / বিদআতি ইমামের পিছনে নামায পড়া ও শরয়ী মসজিদ প্রসঙ্গে

বিদআতি ইমামের পিছনে নামায পড়া ও শরয়ী মসজিদ প্রসঙ্গে

প্রশ্ন:

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!

শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব!

আমার অফিসের ইমাম সাহেব বিদআতি। যেমন তিনি ইয়া নবী সালামু আলাইকা বলেন। কিয়াম করেন। তাবলীগ জামাত অপছন্দ করেন। বিধায় আমি ওনার পিছনে নামায পড়ি না। যাহোক। এটা অফিসের মসজিদ। কিন্তু আজান হয় শুধুমাত্র অফিসের ভিতরে। আজান এর আওয়াজ বাহিরে যায় না। শুধু অফিসের জন্য। কিন্তু বাহিরের কেউ নামায পড়তে আসলে তাকে নামায পড়তে দেয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে,

এটা কি শরয়ী মসজিদ?

এ ইমামের পিছনে নামায না পড়ে নিজেরা জামাত করলে সহীহ হবে?

মসজিদে নামায আদায় করলে পাচশত গুণ বেশি সওয়াব হয় এটা কি এ মসজিদের বেলায় প্রযোজ্য?

সাইফ।

ঢাকা, বাংলাদেশ।

জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

মৌলিকভাবে আপনার প্রশ্ন দু’টি। যথা-

১-বেদআতি ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়েজ কি না?

২-শরয়ী মসজিদ কাকে বলে?

১ নং এর উত্তর

বেদআতি দুই ধরণের। যথা-১-বিদআতে “মুকাফফিরাহ”তথা এমন বিদআত যা কুফর পর্যন্ত পৌঁছায়। যেমন-নবীজী সাঃ কে হাজির নাজির বিশ্বাস করা, ভাল-মন্দ ফায়সালা করার মালিক বিশ্বাস করা। এরকম বিদআতির পিছনে নামায পড়া জায়েজ নয়। ইক্তিদা করলে নামায হবেনা।
২-বিদআতে “মুফাসসিকাহ”তথা এমন বেদআতি কর্ম যা গোনাহ পর্যন্ত পৌঁছায়। যেমন উরস করা। নবীকে হাজির নাজির বিশ্বাস না করে কিয়াম করা, কবরে আজান দেয়া ইত্যাদি। তাহলে উক্ত ব্যক্তির পিছনে ইক্তিদা করা মাকরুহে তাহরিমী। পড়লে নামায হবে। কিন্তু নামায মাকরুহে তাহরিমী হবে।

তাই আলাদা নামায পড়াই উত্তম হবে।

 

فى بدائع الصنائع – وَهَلْ تَجُوزُ الصَّلَاةُ خَلْفَهُ قال بَعْضُ مَشَايِخِنَا إنَّ الصَّلَاةُ خَلْفَ الْمُبْتَدِعِ لَا تَجُوزُ
وَذُكِرَ في الْمُنْتَقَى رِوَايَةٌ عن أبي حَنِيفَةَ أَنَّهُ كان لَا يَرَى الصَّلَاةَ خَلْفَ الْمُبْتَدِعِ وَالصَّحِيحُ أَنَّهُ إنْ كان هَوًى يُكَفِّرُهُ لَا تَجُوزُ وَإِنْ كان لَا يُكَفِّرُهُ تَجُوزُ مع الْكَرَاهَةِ (بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع-كتاب الصلاة، فَصْلٌ وَأَمَّا بَيَانُ من هو أَحَقُّ بِالْإِمَامَةِ-1/387)

প্রামান্য গ্রন্থাবলী:

১. বাদায়েউস সানায়ে’-১/৩৮৭
২. ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৮৪
৩. ফাতওয়ায়ে শামী-২/২৯৯-৩০১
৪. আল বাহরুর রায়েক-১/৬১০-৬১১
৫. আন নাহরুল ফায়েক-১/২৪২

২ নং এর উত্তর

মসজিদে শরয়ী বলা হয়, যে স্থানটিকে মসজিদের জন্য আলাদা করে দিয়ে জনসাধারণের নামাযের সুযোগ করে দেয়া হয়। সেই সাথে ব্যক্তি মালিকানা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে উক্ত মসজিদে প্রবেশের জন্য রাস্তাও আলাদা করে দেয়া হয়। তাহলে উক্ত স্থানে অন্তত একবার সাধারণ জনগণের কেউ নামায পড়লেই তা মসজিদ হয়ে যাবে কিয়ামত পর্যন্তের জন্য।

মসজিদ হয়ে যাবে মসজিদের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত। তবে নিচের অংশ বাড়ি ঘর বা নিজের ব্যবহারের জন্য রেখে উপর তলা থেকে মসজিদ সাব্যস্ত করলেও শরয়ী মসজিদ হয়ে যাবে উক্ত স্থানটি। মসজিদের উপরের অংশ আর ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।

তবে যদি মসজিদের উপরের অংশকেও নিজের ব্যক্তিগত কাজের রেখে শুধু নিচ তলা বা মাঝখানের তলাকে মসজিদ বানানো হয়, তাহলে সে স্থানটি মসজিদে শরয়ী হবে না। বরং এটি নামায ঘর হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এখানে নামায পড়লে মসজিদে নামায পড়ার ফযীলতপ্রাপ্ত হবে না।

فى الفتاوى الشامية- وحاصله أن شرط كونه مسجدا أن يكون سفله وعلوه مسجدا لينقطع حق العبد عنه لقوله تعالى { وأن المساجد لله } (الفتاوى الشامية –كتاب الوقف، مطلب فى احكام المسجد، 6/547)

وفيه ايضا-لأنه مسجد إلى عنان السماء وكذا إلى تحت الثرى كما في البيري عن الإسبيجابي(الفتاوى الشامية –كتاب الصلاة، باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها، مطلب فى احكام المسجد، 2/428)

وفى الفتاوى الهندية-ولو كانت الأرض متصلة يرغب الناس في استئجار بيوتها وتكون غلة ذلك فوق غلة الزرع والنخيل كان للقيم أن يبني فيها بيوتا فيؤاجرها  (الفتاوى الهندية –كتاب الوقف، الباب الخامس في ولاية الوقف 2/414)

প্রামান্য গ্রন্থাবলী:

১.সূরাজীন-১৮

২.ফাতওয়ায়ে শামী-৬/৫৪৭-৫৪৮

৩.ফাতওয়ায়ে শামী-২/৪২৮

৪. ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-২/৪১৪

৫.ফাতহুল কাদীর-৬/২১৮-২১৯

৬.আল বাহরুর রায়েক-৫/৪২১

৭. খানিয়া আলা হামিশিল হিন্দিয়া-৩/৩০০

৫. ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২১/৪২৮-৪৩০, ৪২৬

এ মূলনীতির আলোকে আপনি নিজেই বের করে নিতে পারবেন উক্ত স্থানটি মসজিদে শরয়ী হয়েছে কি না?

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. আবু সাইদ ইবন মুখতার

    🙂
    খুব ভাল্লাগলো উত্তরটা পড়ে! প্রশ্নকর্তাকেও ধন্যবাদ !

  2. আল্লাহ , তুমি লুৎফর হুজুর দাঃ বাঃ কে দীর্ঘজীবী কর ।

Leave a Reply to Rezaul Karim Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *