প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / রাসূল সাঃ এর রওজা কি আরশ থেকে শ্রেষ্ঠ ?

রাসূল সাঃ এর রওজা কি আরশ থেকে শ্রেষ্ঠ ?

আসসালামুআলাইকুম।

তাবলীগ জামাতের ফাজায়েলে হজ্জের নবম পরিচ্ছদের রওজায়ে পাক জেয়ারতের আদবএ র ১৮নং এ “যেই জায়গা হুযুর সাঃ এর শরীর মোবারকের সহিত মিলিত আছে,উহাআল্লাহ পাকের আরশ হইতেও শ্রেষ্ঠ,কা’বা হইতেও শ্রেষ্ঠ,কুরছি হতেওশ্রেষ্ঠ(নাউযুবিল্লাহ)” লেখা রয়েছে। মাওলানা জাকারিয়া রহঃ যে লেখা লিখেছেনতা কতটুকু সহীহ? কোরান হাদীসের দলীল সহকারে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।
আর এটা কি আকীদার কোনো বিষয়?হলে এক্ষেত্রে সহীহ আকীদা কি?

জবাব:

بسماللهالرحمنالرحيم

শায়েখ জাকারিয়া রহঃ এর বলা কথাটি সম্পূর্ণ সহীহ। এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আল্লাহ তাআলার পর রাসূল সাঃ এর মত মর্যাদাবান গোটা সৃষ্টি জগতে দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই তিনি যে স্থানে মিলে আছেন তাও শ্রেষ্ঠ স্থান। যেহেতু আল্লাহ তাআলা কোন স্থানের মুখাপেক্ষি নন, তাই তিনি কোন স্থানের সাথে লাগোয়া নন। যেহেতু আরশ-কুরসীর সাথে আল্লাহ তাআলা লাগোয়া নন, তাই আরশ কুরসী রাসূল সাঃ এর সাথে লাগোয়া জমির চেয়ে শ্রেষ্ট হতে পারে নি। যদি আল্লাহ তাআলা আরশ কুরসীর সাথে লাগোয়া হতেন, তাহলে তা রাসূল সাঃ এর সাথে লাগোয়া জমির চেয়ে শ্রেষ্ঠতর হতো এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যেহেতু স্থানের মুখাপেক্ষি নন। তিনি সকল বিষয় থেকে পবিত্র। তাই আরশ কুরসীতে লাগোয়া হওয়ার আল্লাহ তাআলার কোন প্রয়োজন নেই। এ কারণেই আরশ কুরসীর চেয়েও রাসূল সাঃ এর সাথে লাগোয়া জমিন শ্রেষ্ঠ।

আর কাবা নিশ্চয় রাসূল সাঃ থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ রাসূল সাঃ এর মর্যাদার তুলনায় কাবা কেন মর্যাদাপূর্ণ হবে? কি কারণে? কাবাতো একটি ঘর মাত্র। আর রাসূল সাঃ আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ এ মর্মে রাসূল সাঃ নিজেই হাদীসে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কাবা, বা আরশ কুরসী আল্লাহর পর সকল সৃষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠ একথা কোথাও আছে কি?

عَنِ الْمُطَّلِبِ بْنِ أَبِي وَدَاعَةَ، قَالَ: جَاءَ العَبَّاسُ، إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَأَنَّهُ سَمِعَ شَيْئًا، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: مَنْ أَنَا؟، فَقَالُوا: أَنْتَ رَسُولُ اللهِ عَلَيْكَ السَّلاَمُ. قَالَ: أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ فِرْقَةً، ثُمَّ جَعَلَهُمْ فِرْقَتَيْنِ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ فِرْقَةً، ثُمَّ جَعَلَهُمْ قَبَائِلَ، فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ قَبِيلَةً، ثُمَّ جَعَلَهُمْ بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا وَخَيْرِهِمْ نَسَبًا.

অনুবাদ-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ [একবার কোন কারণে] মিম্বরে দাঁড়িয়ে [সমবেত লোকদেরকে] জিজ্ঞেস করলেন-আমি কে? সাহাবীগণ বললেন-আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন তিনি বললেন-আমি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ। আল্লাহ তাআলা তামাম মাখলূক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত করেছেন [অর্থাৎ মানুষ বানিয়েছেন]। এরপর তাদেরকে দু’ভাগে [আরব ও অনারব] বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে [আরবে] রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এরপর সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।

{সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬}

 

এ হাদীসে লক্ষ্য করুন-রাসূল সাঃ কে সকল সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কাবা, আরশ, কুরসী কি আল্লাহর সৃষ্টি নয়? তাহলে রাসূল সাঃ আল্লাহর পর সবচে শ্রেষ্ঠ হলে তার সাথে লাগোয়া জমি কেন সবচে’ শ্রেষ্ঠ হবে না? যদি আল্লাহ তাআলা কোন জমির সাথে লাগোয়া হতেন, তাহলে সে জমি হতো আল্লাহর পর সবচে’ শ্রেষ্ঠ। যেহেতু আল্লাহ তাআলা কোন কিছুতে লাগোয়া হওয়া থেকে পাক, তাই আরশ কুরসী বা অন্য কিছু আল্লাহর পর নবীজী সাঃ থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। সুতরাং শায়েখ জাকারিয়া রহঃ এর এ বক্তব্যটি নিয়ে অযথা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন মানে হয় না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

নামাযে দুই পায়ের মাঝে কেমন ফাঁকা রাখবে? পাশের জনের সাথে কতটুকু দূরত্বে দাঁড়াবে?

প্রশ্ন আমরা দেখে থাকি একদল ভাইয়েরা নামাযের সময় এমনভাবে দাঁড়ায়, যার কারনে পাশে আর একজন …