রমজানে রোজা না রাখলে গুনাহ নেই!
আল্লাহ মানুষকে কষ্ট দিতে চান না,পরিশুদ্ধ করতে চান।তাই তিনি ইসলামের ভিতরে যেকোন বাড়াবাড়িকে হারাম করেছেন ।সাওম না রাখার জন্য তিনি কাউকে জাহান্নামে দিবেন বা শাস্তি দিবেন এমন কথা কোর’আনে কোথাও নেই। (সওমের উদ্দেশ্য-১৪; লিখক-হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম)
প্রথমত, উক্ত বক্তব্য সরাসরি কুরআন-হাদীস পরিপন্থী ।
পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লহ ﷻ ইরশাদ করেনঃ
◾یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।(সূরা বাক্বারাহ-১৮৩)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে আল্লহ ﷻ রমজানের রোজাকে ফরজ ঘোষণা করেছেন ।রোজা দ্বীনের ৫ টি মূল ভিত্তির একটি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
◾ بُنِيَ الإِسْلامُ عَلَى خَمْسٍ : شَهَادَةِ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ، وَإِقَامِ الصَّلاةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ ، وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَان
“ইসলাম পাঁচটি রোকনের উপর প্রতিষ্ঠিত: এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল,নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ্জ আদায় করা এবং রমজান মাসে রোজা পালন করা।”(সহীহ বুখারী-৪৫১৫)
সুতরাং যে ব্যক্তি রোজা ত্যাগ করল সে ইসলামের একটি রোকন ত্যাগ করল এবং কবিরা গুনাতে লিপ্ত হল।কবিরা গুনাহের কারণে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
দ্বিতীয়ত, রোজা না রাখার শাস্তি সম্পর্কে শুধু কুরআনের আয়াত তলব করার উদ্দেশ্য কি? ইসলামের যাবতীয় হুকুম- আহকাম কি শুধু কুরআন থেকেই সাব্যস্ত হয়? হাদীস কি ইসলামী শরীয়ার দলিল নয়?
হাদীসের মধ্যে বিনা ওজরে রমজানের রোজা ত্যাগকারীদের ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে ।
আবুউমামা আল-বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
◾سمعت رسول الله ﷺ يقول : بينا أنا نائم إذ أتاني رجلان فأخذا بضبعيّ ( الضبع هو العضد ) فأتيا بي جبلا وعِرا ، فقالا : اصعد. فقلت: إني لا أطيقه . فقالا : إنا سنسهله لك. فصعدت حتى إذا كنت في سواء الجبل إذا بأصوات شديد، قلت : ما هذه الأصوات ؟ قالوا : هذا عواء أهل النار . ثم انطلق بي فإذا أنا بقوم معلقين بعراقيبهم ، مشققة أشداقهم ، تسيل أشداقهم دما ، قلت : من هؤلاء ؟ قال : هؤلاء الذين يفطرون قبل تحلة صومهم
আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি তিনি বলেনঃ একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এ সময় দুইজন মানুষ এসে আমার দুইবাহু ধরে আমাকে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেলো। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বললঃ পাহাড়ে উঠুন।আমি বললামঃ আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা বললঃ আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি।তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে লাগলাম এবং পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত উঠে গেলাম। সেখানে প্রচণ্ড চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এটা কিসের শব্দ? তারা বললঃ এটা জাহান্নামী লোকদের চিৎকার।
এরপর তারা আমাকে এমন কিছু লোকদের কাছে নিয়ে এল যাদেরকে পায়ের টাখনুতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের গাল ছিন্নবিন্ন, তা হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা হচ্ছে এমন রোজাদার যারা রোজা পূর্ণের আগে ইফতার করত।”(সহীহ ইবনে খুযাইমাহ-১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিব্বান -৭৪৯১)
এই শাস্তি হল তার জন্য যে রোজা রেখেছে; কিন্তু ইফতারের সময় হওয়ার পূর্বে ইচ্ছাকৃতভাবে ইফতার করে ফেলেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি মূলত রোজা-ই রাখেনি তার অবস্থা কি হতে পারে।
যারা হাদীসকে বাদ দিয়ে শুধু কুরআন থেকে দলিল গ্রহণ করতে চায় তাদের সম্পর্কে সচেতন করে দিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ
◾জেনে রাখো আমাকে কিতাব (কুরআন) এবং তার সাথে অনুরূপ একটি বস্ত্ত দেয়া হয়েছে। অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন কোন পেটপুরে খাদ্য গ্রহণকারী (প্রাচুর্যবান) ব্যক্তি তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ কর, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল আর তাতে যা হারাম পাবে তা হারাম মনে কর’ (আবুদাঊদ হা/৪৬০৫ ; মিশকাত হা/১৬২)।
অন্য হাদীসে এসেছে,
◾‘আমি যেন তোমাদের মধ্যে কাউকে এমন অবস্থায় না পাই যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং তার নিকট যখন আমার আদিষ্ট কোন বিষয় অথবা আমার নিষেধ সম্বলিত কোন কিছু (হাদীস) উত্থাপিত হবে তখন সে বলবে, আমি তা জানি না, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে আমরা যা পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব’ (আবুদাঊদ হা/৪৬০৪; মিশকাত হা/১৬৩)।
প্রিয় পাঠক! ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান সম্পর্কে এ ধরনের কুরআন হাদীস বহির্ভূত বক্তব্য প্রদান কি কোন সঠিক দলের বৈশিষ্ট্য হতে পারে?