প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / প্রসঙ্গ শবে বরাতঃ সহীহ হাদীসের নামে হাদীসের বিরুদ্ধে অবস্থানের চিত্র

প্রসঙ্গ শবে বরাতঃ সহীহ হাদীসের নামে হাদীসের বিরুদ্ধে অবস্থানের চিত্র

প্রশ্ন:

From: মীর্যা আজম

Subject: Mazhab
Country : Bangladesh
Mobile :

Message Body:

কিছু আহলে হাদীস নামধারীরা শবে বরাত অস্বিকার করে। তাদের আপনাদের সাইটে দেয়া নিম্নের হাদীসটি দেখানোর পর তারা বলে যে, এটা বুখারী মুসলিম বা সিহাহ সিত্তার কিতাবে নেই। তাই এ হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি?

হাদীসটি হল-

 عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن )

অনুবাদ-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪}

 

জবাব

بسم الله الرحمن الرحيم

শবে বরাত সম্পর্কে উপরোল্লিখিত হাদীসটি সহীহ। কোন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিস এটাকে দুর্বল বা জাল বলেন নি। এরকম সহীহ সরীহ হাদীসকে কেবল হাদীস অস্বিকারী দলই করতে পারে। নবী প্রেমিক কোন মুসলমান পারে না। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম উক্ত হাদীসের ব্যাপারে কী বলেন-

الراوي: معاذ بن جبل المحدث: الهيثمي – المصدر: مجمع الزوائد – الصفحة أو الرقم: 8/68
خلاصة حكم المحدث: رجاله ثقات

الراوي: معاذ بن جبل المحدث: المنذري – المصدر: الترغيب والترهيب – الصفحة أو الرقم: 2/132
خلاصة حكم المحدث: [إسناده صحيح أو حسن أو ما قاربهما]

لراوي: معاذ بن جبل المحدث: الألباني – المصدر: صحيح الترغيب – الصفحة أو الرقم: 1026
خلاصة حكم المحدث: حسن صحيح 

الراوي: معاذ بن جبل و أبو ثعلبة الخشني و عبدالله بن عمرو بن العاص و أبو موسى الأشعري و أبو هريرة و أبو بكر الصديق و عوف بن مالك و عائشة المحدث: الألباني – المصدر: السلسلة الصحيحة – الصفحة أو الرقم: 1144
خلاصة حكم المحدث: صحيح بمجموع طرقه

الراوي: أبو موسى الأشعري المحدث: الألباني – المصدر: السلسلة الصحيحة – الصفحة أو الرقم: 1563
خلاصة حكم المحدث: ذكر له شواهد

الراوي: أبو موسى الأشعري المحدث: الألباني – المصدر: تخريج مشكاة المصابيح – الصفحة أو الرقم: 1258
خلاصة حكم المحدث: قوي بغيره

الراوي: كثير بن مرة المحدث: البوصيري – المصدر: إتحاف الخيرة المهرة – الصفحة أو الرقم: 3/84
خلاصة حكم المحدث: مرسل، وله شاهد

لراوي: عبدالله بن عمر المحدث: المنذري – المصدر: الترغيب والترهيب – الصفحة أو الرقم: 3/392
خلاصة حكم المحدث: إسناده لين

الراوي: عبدالله بن عمرو بن العاص المحدث: الهيثمي – المصدر: مجمع الزوائد – الصفحة أو الرقم: 8/68
خلاصة حكم المحدث: فيه ابن لهيعة وهو لين الحديث وبقية رجاله وثقوا‏‏

الراوي: – المحدث: الهيتمي المكي – المصدر: الزواجر – الصفحة أو الرقم: 2/43
خلاصة حكم المحدث: إسناده لين

الراوي: عبدالله بن عمرو بن العاص المحدث: أحمد شاكر – المصدر: مسند أحمد – الصفحة أو الرقم: 10/127
خلاصة حكم المحدث: إسناده صحيح

الراوي: أبو ثعلبة الخشني المحدث: الألباني – المصدر: تخريج كتاب السنة – الصفحة أو الرقم: 511
خلاصة حكم المحدث: صحيح

কথিত আহলে হাদীসরা আসলে  আহলে হাদীস নামধারী হলেও মূলত মুনকিরীনে হাদীস তথা হাদীস অস্বিকারকারী। ওদের ঈমান মূলত রাসূল সাঃ এর হাদীসের উপর নয় বরং ওদের বানানো শর্তের উপর-

কথিত আহলে হাদীসের ঈমান নবীর উপর নাকি শর্তের উপর?

“কাফেররা নবীর উপর বিশ্বাস রাখেনি, রেখেছে তাদের দাবিকৃত বিষয়ের উপর। এমনিভাবে আপনারা মন থেকে এই কথা দূরিভূত করে দিন যে, গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের ঈমান নবী সাঃ এর উপর। কখনোই নয়। বরং তাদের ঈমান হল তাদের ইমামদের শিখানো শর্তের উপর।

যেমন কাফেররা নবী সাঃ কে বলত যে, ‘যা আমরা বলছি, তা আল্লাহ তায়ালা থেকে বলিয়ে নাও। অথবা আল্লাহ তায়ালা থেকে করিয়ে নাও। যদি এমন করতে পার তাহলে তা মানব। নতুবা নয়। এমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসরা  একটি বিষয় উত্থাপন করে দেয়, আর বলে যে, এর হুবহু শব্দ আল্লাহর নবী সাঃ থেকে বলিয়ে নাও। অথবা তা বুখারী মুসলিমে উল্লেখ দেখাও। তাহলে আমরা মানব। নতুবা নবীজী সাঃ এছাড়া যা কিছু নিজে বলেছেন তা আমরা মানবনা”।

প্রিয় ভাইয়েরা! একবার খেয়াল করে দেখুন।গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের আপনি যতই সহীহ হাদীস দেখান না কেন।ওদের শর্ত অনুযায়ী না হলে তারা তা মানবে না।বলবে, বুখারীতে দেখাও, মুসলিমে দেখাও।নতুবা সিহাহ সিত্তায় দেখাও।নুতবা মানব না।যদিও হাদীসটি সহীহ হয়।

এর মানে এই দাঁড়ায় যে, ওরা যেন নবীজী সাঃ কে পরামর্শ দিচ্ছে যে, আপনি যদি এরকম শব্দে হাদীস বলেন, আর তা ইমাম বুখারী বা ইমাম মুসলিম বা সিহাহ সিত্তায় স্থান পায় তাহলে আমরা মানব, নতুবা আপনার কথা ডাষ্টবিনে নিক্ষেপ করব” নাউজুবিল্লাহ।

একটি প্রশ্ন

বুখারী মুসলিম আর সিহাহ সিত্তার হাদীস আমলযোগ্য আর বাকি সকল হাদীস যা রাসূল সাঃ থেকে সহী সনদসহ এসেছে তা পরিত্যাজ্য এমন একটি সহীহ হাদীস দেখাতে বলুন। শুধুমাত্র একটি হাদীস যেখানে রাসূল সাঃ বলেছেন যে, সিহাহ সিত্তার হাদীসই আমলযোগ্য আর বাকি সব হাদীস পরিত্যাজ্য নাউজুবিল্লাহ।

যদি না পারে তাহলে দৃঢ় বিশ্বাস করে নিন-এ দলটি মূলত মুনকিরীনে হাদীস তথা হাদীস অস্বিকারকারী দল। যারা আহলে হাদীস নাম ধারণ করে রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত লাখো হাদীস যা সিহাহ সিত্তায় স্থান পায়নি তা অস্বিকার করে খোদ রাসূল সাঃ এর বাণীকে অস্বিকার করে বেআদবী করছে। ইহুদী খৃষ্টানরা আমাদের নবীকে মানে না। মানে না রাসূল সাঃ এর পবিত্র বাণীকেও। ঠিক তেমনি কথিত আহলে হাদীস নামধারীরাও সিহাহ সিত্তাহ ছাড়া বাকি সকল হাদীস অগ্রাহ্য বলে রাসূল সাঃ এর এক বিশাল হাদীস ভান্ডারকে অস্বিকার করে একই কাজ করছে। পার্থক্য হল-ইহুদী খৃষ্টানরা নিজেদের মুসলমান দাবি করে না, আর কথিত আহলে হাদীসরা নিজেদের মুসলমান দাবি করে।

এবার আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন, প্রকাশ্য শত্রু বেশি ভয়ংকর না বন্ধুবেসী শত্রু বেশি ভয়ংকর?

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *