প্রচ্ছদ / জায়েজ নাজায়েজ / খরচ কম করে বেশি খরচের ভাউচার দিয়ে টাকা গ্রহণের হুকুম কী?

খরচ কম করে বেশি খরচের ভাউচার দিয়ে টাকা গ্রহণের হুকুম কী?

প্রশ্ন

বরাবর
তালিমুল ইসলাম ইনিস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার (মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী হুজুর)
প্রশ্ন:-   সরকারী চাকুরীজীবীরা কখনো কখনো সরকারী কাজে সফর করেন অথবা পরিদর্শনে বের হন৷ এবং এতে কিছু যাতায়াত খরচ হয়৷ তারা এ খরচগুলো ভাউচারের মাধ্যমে সরকার থেকে উসুল করে নেন৷ এবং এক্ষেত্রে সাধারণত চাকুরির পদ অনুযায়ী খুব সহজেই বিল পাশ হয়ে যায় এবং চাকুরীজীবীরাও পদ অনুযায়ী ভাউচার তৈরি করে সরকারকে দেয়৷ সাধারণত কেউ নিজের পদ থেকে উন্নতমানের অথবা নিম্নমানের যাতায়াত খরচের ভাউচার সরকারকে দেয় না৷
অতএব জানার বিষয় হল, কোন চাকুরীজীবী যদি সরকারী সফরে (কিছু টাকা-পয়সার আশায় একটু কষ্ট সহ্য করে) নিজের পদ থেকে নিম্নমানের যাতায়াত করে কিন্তু ভাউচার তৈরি করার ক্ষেত্রে নিজ পদমর্যাদা সমমানের খরচ ভাউচারে  লিখে বিল পাশ করায়৷ তাহলে তার এ কাজটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ?? এবং আসল যাতায়াত খরচ থেকে পদমর্যাদা সমমান পর্যন্ত বাড়তি টাকা গ্রহন করা জায়েয হবে কি না??
দলিলসহ বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন৷
নিবেদক
মুহা.মাছুম বিল্লাহ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

এর সূরত দু’টি। যথা-

১-যদি কর্তৃপক্ষ যাতায়াতের টাকা দায়িত্বশীলকে মালিক বানিয়ে প্রদান করে থাকে। যাতায়াত খরচ কম হোক বা বেশি হোক, এর যিম্মাদার কর্তৃপক্ষ নয়। বরং কাজটি সম্পন্ন করা দায়িত্বশীলের দায়িত্ব। আর এজন্য যাতায়াত ভাড়া নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়।

২-কর্তৃপক্ষ যাতায়াত খরচ হিসেবেই টাকাটি প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ কোন কারণে খরচ বেশি হলে কর্তৃপক্ষ এর যিম্মাদার হয়।

উপরোক্ত দুই সূরতের মাঝে প্রথম সূরতে কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলকে যাতায়াত খরচ হিসেবে যে টাকা প্রদান করে থাকে, সেটির মালিক বানিয়ে দিয়ে থাকে। খরচের কমবেশির যিম্মাদার কর্তৃপক্ষ হয় না।

তাই এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তি খরচ কমিয়ে বাকি টাকা রেখে দেয়া তার জন্য বৈধ হবে।

আর দ্বিতীয় সূরতে যেহেতু সত্যিকার অর্থেই যাতায়াত খরচ হিসেবে টাকাটি প্রদান করে থাকে। বেশি খরচ হলে কর্তৃপক্ষ যিম্মাদার হয়। তাহলে বুঝা যাবে যে, টাকাটি শুধু যাতায়াত ভাড়া হিসেবেই প্রদান করা হয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে এর মালিক বানিয়ে দেয়া হয়নি। শুধু কাজটি সম্পন্ন করতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খরচের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

তাই এক্ষেত্রে খরচ কমিয়ে টাকা বেঁচে গেলে তা কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দিতে হবে।

উপরোক্ত দু’টি সূরত বুঝে আসলে আপনি নিজেই বুঝে নিতে পারবেন আপনার প্রশ্নটির উত্তর কী হবে?

যেহেতু প্রশ্নোক্ত সূরতে প্রথমে খরচ করতে বলা হয়, তারপর ভাউচার করতে বলা হয়, এর দ্বারা বুঝা যায় যে, কর্তৃপক্ষ টাকা শুধু যাতায়াত খরচ হিসেবে প্রদান করে। টাকাটির মূল্য মালিকানা প্রদান করে না। শুধু প্রয়োজনীয় খরচের মালিকানা প্রদান করে থাকে।

তাই উপরোক্ত সূরতে যাতায়াত খরচের চেয়ে বেশি টাকার ভাউচার করে টাকা গ্রহণ করা বৈধ হবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

নাপাক লুঙ্গি পরিধান করে ফরজ গোসল করলে শরীর ও লুঙ্গি পবিত্র হবে কি?

প্রশ্ন নাপাক কাপড়ে কি ফরজ গোসল করলে পাক হওয়া যায়? উত্তর بسم الله الرحمن الرحيم …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস