প্রচ্ছদ / ঈমান ও আমল / ইবাদত কিভাবে করা উত্তম? প্রকাশ্যে না লুকিয়ে?

ইবাদত কিভাবে করা উত্তম? প্রকাশ্যে না লুকিয়ে?

প্রশ্ন

প্রকাশ্যে এবাদতের পাশাপাশি নিরবে এবং গোপনে এবাদতের গুরত্ব ইসলামে কতটা রয়েছে অথবা প্রকাশ্যে এবাদত এবং গোপনে এবাদতের মধ্যে কার গুরত্ব ইসলামে সব থেকে বেশি দয়া করে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবেন.

সুলতানুল আরেফিন
পশ্চিমবঙ্গ ,ভারত।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রধানতম বিষয় হল, আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে ইবাদত করা। দ্বিতীয়ত হল, ইবাদতটি সুন্নাত মুতাবিক করা।

তৃতীয়ত রিয়ামুক্ত তথা মানুষকে দেখানোর মানসিকতায় ইবাদত না করা।

প্রকাশ্যে ইবাদত বা অপ্রকাশ্যে ইবাদত এটা মুখ্য বিষয় নয়।

ইসলামের কিছু ইবাদত রয়েছে যেগুলো প্রকাশ্যে করতে হয়। যেমন-নামায মসজিদে এসে  জামাতের সাথে প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়। হজ্ব বাইতুল্লাহ গমণ করে প্রকাশ্যেই করতে হয়।

ঈদের নামায প্রকাশ্যেই আদায় করতে হয়। কুরবানী প্রকাশ্যেই প্রদান করতে হয়।

এছাড়া কিছু ইবাদত রয়েছে যা অপ্রকাশ্যে করা যায়। যেমন জিকির, তিলাওয়াত, নফল নামায, দান সদকা ইত্যাদি।

যে ইবাদত অপ্রকাশ্যে করা যায়, তা অপ্রকাশ্যে করাই সর্বোত্তম। আর যা লুকিয়ে করা যায় না, তা প্রকাশ্যেই করতে হবে।

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١]

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। [সূরা হুজুরাত-২১]

وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ [٧:٢٠٥]

আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না। [সূরা আরাফ-২০৫]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا كَانَ آخَرُ الزَّمَانِ صَارَتْ أُمَّتِي ثَلَاثَ فِرَقٍ: فِرْقَةٌ يَعْبُدُونَ اللَّهَ خَالِصًا، وَفِرْقَةٌ يَعْبُدُونَ اللَّهَ رِيَاءً، وَفِرْقَةٌ يَعْبُدُونَ اللَّهَ يَسْتَأْكِلُونَ بِهِ النَّاسَ، فَإِذَا جَمَعَهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالَ لِلَّذِي يَسْتَأْكِلُ النَّاسَ: بِعِزَّتِي وَجَلَالِي، وَمَا أَرَدْتَ بِعِبَادَتِي؟ قَالَ: وَعِزَّتِكَ وَجَلَالِكَ أَسْتَأْكِلُ بِهِ النَّاسَ. قَالَ: لَمْ يَنْفَعْكَ مَا جَمَعْتَ شَيْئًا تَلْجَأُ إِلَيْهِ، انْطَلِقُوا بِهِ إِلَى النَّارِ، ثُمَّ قَالَ لِلَّذِي كَانَ يَعْبُدُهُ رِيَاءً: بِعِزَّتِي وَجَلَالِي مَا أَرَدْتَ بِعِبَادَتِي؟ قَالَ: بِعِزَّتِكَ وَجَلَالِكَ رِيَاءَ النَّاسِ. قَالَ: لَمْ يَصْعَدْ إِلَيَّ مِنْهُ شَيْءٌ، انْطَلِقُوا بِهِ إِلَى النَّارِ، ثُمَّ يَقُولُ لِلَّذِي كَانَ يَعْبُدُهُ خَالِصًا: بِعِزَّتِي وَجَلَالِي مَا أَرَدْتَ بِعِبَادَتِي؟ قَالَ: بِعِزَّتِكَ وَجَلَالِكَ أَنْتَ أَعْلَمُ بِذَلِكَ مِنِّي أَرَدْتُ بِهِ ذِكْرَكَ وَوَجْهَكَ. قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي، انْطَلِقُوا بِهِ إِلَى الْجَنَّةِ»

হযরত আনাস বিন মালেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কিয়ামত সন্নিকটে হবে, তখন আমার উম্মত তিন ভাগে বিভক্ত হবে। একদল খালিসভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে। আরেক দল মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করবে। আরেকদল মানুষের কাছ থেকে হাদিয়া তুহফা পাবার জন্য ইবাদত করবে।

যখন তারা কিয়ামতের দিন একত্র হবে। মানুষ থেকে খাবার পাবার আশায় যে ইবাদত করতো, তাকে আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! তুমি আমার ইবাদত কী উদ্দেশ্যে করতে? সে বলবে, আপনার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! মানুষের হাদিয়া তুহফা পাবার আশায়। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তুমি যা কিছু  জমা করেছো এর কোন কিছুই তোমার উপকারে আসবে না। তুমি জাহান্নামের দিকে চলে যাও।

তারপর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর ইবাদত করতো, তাকে আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! তুমি কেন আমার ইবাদত করতে? সে বলবে, আপনার সম্মান ও ইজ্জতের কসম! আমি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করতাম। আল্লাহ বলবেন, তোমার কোন ইবাদত আমার পর্যন্ত পৌঁছেনি। তুমিও জাহান্নামে চলে যাও।

এরপর যে খালেস আল্লাহর জন্য ইবাদত করেছে তাকে আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! আমার ইবাদত করার দ্বারা তোমার কী মাকসাদ ছিল? সে বলবে, আপনার ইজ্জত ও সম্মানের কসম! এ বিষয়ে আপনিই আমার থেকে বেশি অবগত। আমি ইবাদত করেছি কেবলি আপনার সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আল্লাহ বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। তুমি জান্নাতে চলে যাও। [আলমু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৫১০৫, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-১৮৩৯৭]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …