প্রশ্ন
আসসালামুআলাইকুম।
হাযরাত আমি একজন আমেরিকা প্রবাশি। এখানে আমাদের মাসজিদ এর ইমাম লা মাজহাবি। এখানে হালাল হারাম উভয় প্রকার গোস্ত বাজারে পাওয়া যায়। উনি ফাতোয়া দিসেন যে এখানে সাভাবিক যে গোস্ত পাওয়া যায়, যেটা আমরা হালাল বলি না ওইটা নাকি মুসলমান দের খাওয়া জায়েয। উনি দলিল পেশ করেন সুরাহ বাকারাহ তে আল্লাহ বিসমিল্লাহ ছাড়া খাইতে নিষেধ করলেও পরে সুরাহ মাইদায় বলছেন আহলে কিতাব দের থেকে খাওয়া যাবে।
এই দেশ যেহেতু আহলে কিতাব অর্থাৎ বেশি ভাগ ক্রিস্তিয়ান ও ইয়াহুদী তাই এই দেশ এ বাজার এ পাওয়া যায় যে গোস্ত, যে গোস্তের উৎস জানা যায় না, তা খাওয়া যাবে এই ভেবে যে আহলে কিতাব এটাকে জবেহ করছে আর ওদের থেকে খাওয়া যাবে।
ঊনি বুখারি শারিফ এর একটা হাদিস এর কথা বলেন যেখানে আয়েশা (রাযি) নাকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসালামকে অজানা উৎস থেকে আসা গোস্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকি না জানা সত্ত্বেও সেগুলা খেতে বলেন।
তাই উনি বলেন যদি ও আমরা জানি না এই গোস্ত কোথা থেকে এসেছে, আহলে কিতাব এর দেশ তাই আমরা এগুলা খাইতে পারি। এইখানে উলামা রা এই গোশত কে হারাম বল্লেও কেউ উনার মত দলিল দিয়ে বুঝাইতে না পারায় অনেক মুসলমান উনার কথায় বিভ্রান্ত হয়ে এগুলা খাচ্ছে।
মেহেরবানি করে কুরান ও সাহিহ হাদিস এর দলিল দিয়ে সঠিক উত্তর দিয়ে এখানকার পথহারা অসহায় প্রবাশি উম্মাত এর উপকার করবেন। যতটা শীঘ্র সম্ভব উত্তর দিলে উপকৃত হব। লিখনির ভুলের জন্য মাফ করবেন। জাযাকাল্লাহ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبكاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কোন মুসলমানও যদি ইচ্ছেকৃত আল্লাহর নাম ছাড়া কোন পশু জবাই করেন, তাহলে তার জবাইকৃত গোস্ত খাওয়া জায়েজ নয়। ভুলে হলে ভিন্ন কথা।
সেখানে কোন আহলে কিতাবী ইচ্ছেকৃত আল্লাহর নাম ছাড়া পশু জবাই করলে তা খাওয়া যে হারাম হবে এতে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।
কুরআন বা হাদীসে কোথাও একথা উদ্ধৃত হয়নি যে, আল্লাহর নাম ছাড়া আহলে কিতাব কোন পশু জবাই করলে তা খাওয়া যাবে। বরং স্পষ্ট শব্দে কুরআনের একাধিক আয়াত ও হাদীসে ঘোষণা করা হয়েছে, আল্লাহর নাম ছাড়া জবাইকৃত পশু খাওয়া যাবে না।
উক্ত মাওলানা সাহেবের দলীল সম্পূর্ণই ঠিক আছে। কিন্তু যে খ্রিষ্টানদের উপর তা ফিট করেছেন তা সম্পূর্ণই গলদ এবং ভুল।
যারা সত্যিকার আহলে কিতাব তাদের জবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েজ। কোন সন্দেহ নেই। কারণ, আহলে কিতাবীরা আল্লাহকে এক স্বীকার করে থাকেন। এবং আল্লাহর নাম নিয়েই পশু জবাই করে থাকেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বর্তমান আহলে কিতাব দাবীদাররাও কি আল্লাহ তাআলাকে এক স্বীকার করেন? আল্লাহর নামে পশু জবাই করেন?
অবশ্যই না। বরং বর্তমানের অধিকাংশ আহলে কিতাব নামধারী খ্রিষ্টান ও ইহুদীরা আল্লাহর অস্তিত্বই মানে না। অনেকে স্রষ্টা একাধিক বিশ্বাস করেন।
আর নিশ্চিতরূপে তারা জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নেয় না। তাহলে বর্তমান এসব আহলে কিতাবীর জবাইকৃত পশু কিভাবে জায়েজ হতে পারে?
আর আল্লাহর নাম ব্যতিত যে পশু জবাই করা হয়,তা খেতে পবিত্র কুরআনে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
আর হাদীসে যে আহলে কিতাবীদের জবাইকৃত পশুর গোস্ত খাবার অনুমতি এসেছে, তারা জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম নিতো।
সুতরাং হাদীসে বর্ণিত আহলে কিতাবীর বিধানকে বর্তমান নাস্তিক বা মুশরিক প্রকৃতির আহলে কিতাবীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়।
এ কারণে আমাদের দৃঢ় বক্তব্য হল, বর্তমান আহলে কিতাবী নামধারী খ্রিষ্টান বা ইহুদীদের জবাইকৃত পশুর গোস্ত খাওয়া জায়েজ নয়। কারণ তারা পশু জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম নিয়ে পশু জবাই করে না।
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ ۗ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰ أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ ۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ [٦:١٢١
যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় নি, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ করা গোনাহ। নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে-যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে। {সুরা আনআম-১২১}
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ [١٦:١١٥]
অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা জবাই কালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। {সূরা নাহল-১১৫}
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ [٢:١٧٣
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। {সূরা বাকারা-১৭৩}
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌ ۗ [٥:٣
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। {সূরা মায়িদা-৩}
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، ” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقِيَ زَيْدَ بْنَ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ بِأَسْفَلِ بَلْدَحٍ، قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الوَحْيُ، فَقُدِّمَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُفْرَةٌ، فَأَبَى أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا، ثُمَّ قَالَ زَيْدٌ: إِنِّي لَسْتُ آكُلُ مِمَّا تَذْبَحُونَ عَلَى أَنْصَابِكُمْ، وَلاَ آكُلُ إِلَّا مَا ذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ،
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ এর কাছে ওহী নাজিল হবার আগে জায়েদ বিন নুফাইল এর সাথে আসফালি বালদাহ নামক স্থানে সাক্ষাৎ হয়। তখন রাসূল সাঃ এর সামনে দস্তরখান বিছানো হয়। [আর কিছু গোস্ত উপস্থিত করা হয়] রাসূল সাঃ তা খেতে অস্বিকৃতি জানালেন। তারপর জায়েদ বলেন, আমি সে প্রাণী খাই না, যা তোমরা মুর্তির নামে জবাই কর। আমি শুধু ঐ প্রাণীই ভক্ষণ করি যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে। {বুখারী, হাদীস নং-৩৮২৬, ৩৬১৪}أَفَنَذْبَحُ بِالقَصَبِ؟ فَقَالَ: ” مَا أَنْهَرَ الدَّمَ وَذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ فَكُلْ
আমরা কি বাঁশের কঞ্চি দিয়ে প্রাণী জবাই করতে পারি? তখন রাসূল সাঃ জবাবে বলেন, যে প্রাণীর রক্ত প্রবাহিত করা হয়, আর তাতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, তা খাও। {বুখারী, হাদীস নং-৩০৭৫,২৯১০, ৫৪৯৮,৫১৭৯}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]