প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / চল্লিশ লাখ টাকা ঋণ থাকা অবস্থায় বার ভরি স্বর্ণের উপর যাকাত আসবে কি?

চল্লিশ লাখ টাকা ঋণ থাকা অবস্থায় বার ভরি স্বর্ণের উপর যাকাত আসবে কি?

প্রশ্ন

আমার ১২ভরি স্বর্ন আছে কিন্তু আমাদের ৪,০০,০০০ [চার লক্ষ টাকা] টাকা ঋণ আছে। আমাদের কোনো জমানো টাকা নেই। আমাদের যাকাত কি আসবে?

প্রশ্নকর্তা- সাফরিনা রহমান।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার কাছে থাকা স্বর্ণটি কোন ধরণের তা উল্লেখ করেননি। তা উল্লেখ করা দরকার ছিল।

বর্তমান বাজারে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি প্রতি দাম হল ৫০ হাজার ৯৭১ টাকা।

আর ২১ ক্যারেট স্বর্ণ ভরি প্রতি ৪৮ হাজার ৬৯৭ টাকা।

এবং ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ ভরি প্রতি ৪৩ হাজার ৬২৩ টাকা।

ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের ভরি ২৬ হাজার ৪১৮ টাকা।

এ হিসেবে আপনার কাছে থাকা ১২ ভরি স্বর্ণের মূল্য হচ্ছেঃ

২২ ক্যারেট হিসেবে ৬,১১,৬৫২/=[ছয় লাখ এগার হাজার ছয়শত বায়ান্ন টাকা]।

২১ ক্যারেট হিসেবে ৫,৮৪,৩৬৪ [পাঁচ লাখ চুরাশী হাজার তিনশত চৌষট্টি টাকা]।

১৮ ক্যারেট হিসেবে ৫,২৩,৪৭৬ [পাঁচ লাখ তেইশ হাজার চারশত ছিয়াত্তর টাকা]।

সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ হিসেবে ৩,১৭,০১৬ [তিন লক্ষ সতের হাজার ষোল টাকা]।

উপরোক্ত হিসেবে অনুপাতে যদি আপনার কাছে থাকা র্স্বর্ণটি সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ না হয়, তাহলে উক্ত ঋণ থাকার পরও আপনার উপর যাকাত আবশ্যক হবে।

এক্ষেত্রে ঋণ বাবদ ৪ লাখ টাকা বাদ দিয়ে বাকি মূল্যের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ তথা শ’তে আড়াই টাকা হিসেবে যাকাত আদায় করতে হবে।

عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده أن امرأة أتت رسول الله صلى الله عليه و سلم ومعها ابنة لها وفي يد ابنتها مسكتان غليظتان من ذهب فقال لها ” أتعطين زكاة هذا ؟ ” قالت لا قال ” أيسرك أن يسورك الله بهما يوم القيامة سوارين من نار ؟ ” قال فخلعتهما فألقتهما إلى النبي صلى الله عليه و سلم وقالت هما لله عزوجل ولرسوله

অনুবাদ- আমর বিন শুয়াইব থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিন [দাদা] বলেনঃ এক মহিলা তার কন্যাসহ রাসূল সাঃ এর খিদমতে উপস্থিত হন। তার কন্যার হাতে মোটা দুই গাছি স্বর্ণের চুড়ি [কাঁকন] ছিল। তিনি [রাসূল সাঃ] তাকে বললেনঃ তোমরা কি এটার যাকাত আদায় কর? মহিলা বলেনঃ না। রাসূল সাঃ বলেনঃ তুমি পছন্দ কর যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের কাঁকন পরিধান করান? রাবী বলেনঃ একথা শুনে মেয়েটি তার হাত থেকে তা খুলে নবী করীম সাঃ এর সামনে রেখে দিয়ে বললঃ এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫৬৩, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭৭৯৯, সুনানুল কুবরা লিননাসায়ী, হাদীস নং-২২৫৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২০০৫}

عن عبد الله بن شداد بن الهاد أنه قال دخلنا على عائشة زوج النبي صلى الله عليه و سلم فقالت ” دخل علي رسول الله صلى الله عليه و سلم فرأى في يدي فتخات ( خواتيم كبار ) من ورق فقال ” ما هذا يا عائشة ” ؟ فقلت صنعتهن أتزين لك يارسول الله قال ” أتؤدين زكاتهن ؟ ” قلت لا أو ماشاء الله قال ” هو حسبك من النار

হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ ইবনুল হাদ থেকে বর্ণিত। তিন বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর স্ত্রী হযরত আয়শা রাঃ এর খেদমতে উপস্থিত হই। তখন তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার তাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান। তিনি বলেন, হে আয়শা! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উদ্দেশ্যে রূপচর্চা করার জন্য তা বানিয়েছি। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি এর যাকাত পরিশোধ করে থাক? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহ পাকে যা ইচ্ছে ছিল। রাসূল সাঃ বললেনঃ তোমাকে দোযখে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫৬৫, সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১২৩৩, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৭৩৩৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৯৭৪, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১৪৩৭}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস