প্রচ্ছদ / সমকালিন প্রসঙ্গ / “পদবী” ট্রেন্ড ও “শরঈ সম্পাদনা”র কুহেলিকা

“পদবী” ট্রেন্ড ও “শরঈ সম্পাদনা”র কুহেলিকা

আগে কেউ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কোন বই লেখলে তার ভূমিকা আর অভিমত লিখাতেন নিজের প্রিয় কিছু আলেমদের দিয়ে। তাদের কেউ বইটি পড়ে মতামত দিত, কেউ না পড়েই দিত। এই ধাঁচটা পুরাতন হয়ে যাওয়ায় এখন এসেছে নতুন ট্রেন্ড। উদ্দেশ্য, অধিক হারে পাঠক আকৃষ্ট করা। নতুন ট্রেন্ডের নাম “শরঈ সম্পাদনা”। আপনি নির্ঘুম রাত কাটানোর জন্যে কিছু লিখতে গিয়ে বেশ কয়েকটি রচনা প্রস্রব করে বসলেন? ওকে, এবার কয়েকজন শায়খের কাছে দিয়ে বলুন এর শরঈ সম্পাদনা করে দিতে, সাথে কিছু হাদিয়া তোহফা। ব্যস! হয়ে গেল একটি চমকপ্রদ গ্রন্থ; যার বিজ্ঞাপনে বড় বড় করে লেখা থাকবেঃ শরঈ সম্পাদনা- অমুক শায়খ।

আমার কাছে একজন এসেছিল তার বইটি শরঈ সম্পাদনা করে দেয়ার জন্যে। আমি বললাম- আপনি কি এখানে শরিয়তের কথা লিখেছেন? উনি বললেন- সবটা না, কিছু কিছু কথা এসে গেছে। আবার জিজ্ঞেস করলাম- ঐ কিছু কিছু কি নিজের থেকে লিখেছেন নাকি আলেমদের বই ঘেটে লিখেছেন? বললেন- বই ঘেটেই লিখেছি। আমি তখন বললাম- তাহলে উনাদের হুবহু কথা যদি এনেই থাকেন তাহলে এতে সম্পাদনা করার সাহস আমার নেই।

কিছুদিন আগে এক বিদাতী বক্তার ওয়াজ দেখলাম, একটা কথা বলেন, তারপর স্টেজে বসা তার উস্তাদ তথা প্রধান অথিতিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- আমি ভুল বলে থাকলে আমার হুজুর আছেন, উনি শুধরে দিবেন। কে শুধরে দিবে কার কথা? স্টেজে বসা তিনিও বিদাতী। এই হলো ওয়াজী শরঈ সম্পাদনার উদাহরণ।

লিখুন, আলেমদের থেকে পরামর্শ নিয়েই লিখুন। গ্রহণযোগ্য আলেমদের লিখিত পুস্তক থেকে রেফার করে লিখুন। লেখার পর শরঈ সম্পাদনার সীল ছাপ্পর মেরে আপনার লিখিত কথার জন্য একজন আলেমকে দায়ী করার অর্থ নেই। বিদাতী থেকে হাদিয়া নেয়া বক্তা যেমন বিদাতের বিরুদ্ধে বলতে পারেনা, লেখকের হাদিয়া গ্রহীতা শরঈ সম্পাদকও চায় না লেখকের মন ভাঙতে।

আরেক ট্রেন্ড চালু হয়েছে “শায়খ” সম্বোধন। রিকশাওয়ালাকে ‘মামা’ ডাকা আর বন্ধুকে ‘বস’ ডাকার সাথে আলেমদেরকে ‘শায়খ’ ডাকায় কোন তফাৎ নেই। মামা ছিল আপনার মায়ের ভাই, এখন সেটা আপনি বসালেন রিকশার চালকের উপর। ‘বস’ মূলত কোন প্রধানকে ডাকা হতো, এখন সেটা বাজারের মুড়ি। এরদোগানকে এখন ‘আমীরুল মু’মিনীন’ ডাকা শুরু হয়েছে। এসব কি প্রকৃত আমীরুল মু’মিনীন ওমর (রা) এর সাথে বেয়াদবির শামিল নয়?

‘শায়খ’ পদবি ছিল এবং আছে যারা হাদীসের বুৎপত্তি অর্জন করেছেন তাদের জন্যে। যারা হাদীসশাস্ত্রে অনুপম, হাদীসের হাফেজ। এখন সেটা গুগল স্কলারদের জন্যে অহরহ ব্যবহার করে আমরা প্রকৃত ‘শায়খুল হাদীস’দেরকে কি ছোট করছি না? একইভাবে, ‘আহলে হাদীস’ পদবি ছিল একমাত্র তাদের জন্যে যারা হাদীসের অতলান্তিক গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। এখন অবস্থা এমন দাড়িয়েছে, যে লোকটা সকালে মাযহাবীদের গালি দিল বিকেল থেকেই সে আহলে হাদিস।

যতই নতুন পদবি বের করা হোক না কেন, ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার আর গুগল স্কলারদেরকে প্রকৃত আলেমদের কাতারে চোরাগলি দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া সম্ভব না। শরঈ সম্পাদনার পলিথিন দিয়ে দ্বীন বিরোধী পেরেকগুলো ঢাকা বোকামী। “খলিফাতুল মুসলিমীন” এর মহান আমানত কার গায়ে লাগাচ্ছেন এর জবাব দিতে হবে রোজ হাশরে।

Saeedul Mostafa
0Shares

আরও জানুন

বিশ্বকাপঃ কী লাভ কী ক্ষতি?

আবদুল্লাহ মাসুম গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দশম আসরের উদ্বোধন হলেও একে ঘিরে উন্মাদনা শুরু …