প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / মযি বের হলে রোযার হুকুম এবং হস্তমৈথুনের গোনাহ থেকে বাঁচার উপায় কী?

মযি বের হলে রোযার হুকুম এবং হস্তমৈথুনের গোনাহ থেকে বাঁচার উপায় কী?

প্রশ্ন

আসসালামুআলাইকুম।

শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব গত কয়েকদিন আগে আমি একটি নফল রোযা রাখি। রাখার পর বিকেলের দিকে যখন ফেসবুক এ বসি তখন আমার চোখের সামনে অনিচ্ছাকৃতভাবে খুব বাজে দৃশ্য আসতে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে আমি পূর্বে অনেক গুনাহের কাজে লিপ্ত ছিলাম।  কিন্তু আল্লাহু পাকের অশেষ রহমতে আমি জেনারেল শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও অনেক কম(১৫) বছর বয়সে হেদায়াত পাই দাওয়াত ও তাবলীগ এর মেহনত এর উসিলায়। এখন আমার বয়স ১৬। আমি আল্লাহ্‌র রহমতে এখন আগের সমস্ত গুনাহ যেমন গিটার বাজানো, গান শোনা, ইত্যাদি কাজ ছেড়ে দেই, ঠিক ছেড়ে দেই বললে হবে না, আল্লাহু আমার ওপর রহম করে আমাকে দিয়ে ছাড়িয়ে নেন। আমি কোনো বেগানা নারীর দিকে দৃষ্টি দেই না। আমি আমার নজর হেফাযত করতে সক্ষম।

কিন্তু রমযানের পর থেকে যখন ফেসবুকে বসি আর কুদৃষ্টি হয়। আমার প্রথম নজরে খরাপ লাগলেও আস্তে আস্তে একটা নারীর দিকে আমার নজর পরে এবং আমি এরপর স্ক্রিন থেকে দ্রুত তার ছবি সরাতে গেলেও আর নফসের খারাবির কারনে আর পারিনা।

এমতাবস্থায় আমি বুঝতে পারি যে আমার উপর আস্তে আস্তে শয়তান কাবু করতেসে। তাই আমি সাথে সাথে ফেসবুক থেকে বের হয়ে যাই এবং তওবা করি আর কোনদিন ফেসবুক চালাবো না।

কারন চালাতে গেলেই বদনজরি হয়। তারপর আমার লজ্জাস্থান উত্তেজিত হয়ে আমার হস্তক্ষেপ ছাড়াই কিছুটা সাদা অংশ বের হয় এবং সেদিন আমি রোজাদার ছিলাম( নফল)।

আমার প্রশ্ন হলো আমার মনে খুব খারাপ  চিন্তা আসে এবং হস্তমৈথুন করার প্রবল আগ্রহ হয় এমতাবস্থায় কি করণীয়?

আমি কিভাবে যৌন ক্ষমতা প্রয়োগের প্রবল আগ্রহ কে কমাবো এবং খারাপ চিন্তা থেকে মুক্ত হব?

এবং আমার লজ্জাস্থান থেকে উক্ত সাদা অংশ যা বের হয় তা কী?

আমার ঐ নফল রোযা কি ভেংগে যাবে? আর ভেঙ্গে গেলে কী করনীয়? ( রোযাটা শাওয়াল এর ৬ রোযার ২ য় টি ছিল)।

zajakumullah khairan.

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উত্তেজনার প্রাথমিক সময়ে বীর্যপাতের আগে সাদা ধরণের পাতলা যে বস্তুটি বের হয় এর নাম ‘মযি’। মযি বের হলে রোযা ভঙ্গ হয় না।

তাই মযি বের হওয়ায় আপনার উক্ত রোযাটি কাযা করতে হবে না। আপনার রোযাটি হয়ে গেছে।

سُئِلَ جَابِرُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ رَجُلٍ نَظَرَ إِلَى امْرَأَتِهِ فِي رَمَضَانَ فَأَمْنَى مِنْ شَهْوَتِهَا، هَلْ يُفْطِرُ؟ قَالَ: «لَا، وَيُتِمُّ صَوْمَهُ» (المصنف لابن ابى شيبة، رقم الحديث-9480

قَوْلُهُ وَكَذَا إذَا نَظَرَ إلَى امْرَأَةً) بِشَهْوَةٍ إلَى وَجْهِهَا أَوْ فَرْجِهَا كَرَّرَ النَّظَرَ أَوْ لَا لَا يُفْطِرُ إذَا أَنْزَلَ (فتح القدير، كتاب الصوم، باب ما يوجب القضا والكفارة-2/329، كذا فى الهندية، كتاب الصوم، الباب الرابع فيما يفسد الصوم ومالا يفسد

(قَوْلُهُ: أَوْ احْتَلَمَ أَوْ أَنْزَلَ بِنَظَرٍ) أَيْ لَا يُفْطِرُ لِحَدِيثِ السُّنَنِ «لَا يُفْطِرُ مَنْ قَاءَ، وَلَا مَنْ احْتَلَمَ، وَلَا مَنْ احْتَجَمَ» وَلِأَنَّهُ لَمْ يُوجَدْ الْجِمَاعُ صُورَةً لِعَدَمِ الْإِيلَاجِ حَقِيقَةً، (البحر الرائق، كتاب الصوم، باب ما يفسد الصوم وما لا يفسده-2/475

 

ইন্টারনেট আমাদের চারিত্রিক অধঃপতনের জন্য বহুলাংশেই দায়ী।

খারাপ চিন্তা থেকে বাঁচার জন্য কয়েকটি পরামর্শ!

জরুরী কোন প্রয়োজন ছাড়া নেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

সক্ষমতা থাকলে বিয়ে করে ফেলুন।

নাটক, সিনেমা দেখা ও গান শোনা থেকে বিরত থাকুন।

পত্রিকার বিনোদন পাতা দেখা বা রাস্তার নারী সম্বলিত বিলবোর্ড দেখা থেকে বিরত থাকুন। সামনে পড়লে দ্রুত চোখ নত করে নিন।

সর্বদা আখেরাতকে ভয় করুন। যেকোন সময় আপনার মৃত্যু হতে পারে। আপনি রবের সামনে কী অবস্থায় যেতে চান? এ বিষয়টি মনের মাঝে গেঁথে রাখুন।

কেউ না দেখুক, আমার রব আমাকে দেখছেন। আমার দুই কাঁধের ফেরেস্তা আমার সব কাজের স্বাক্ষী হয়ে থাকছেন। এই বিশ্বাসটি বদ্ধমূল করুন।

নূরের পবিত্র ফেরেশতার সামনে অশ্লীল কাজ কিভাবে করছি? তারা আমার বিরুদ্ধে হাশরের ময়দানে বিচার দায়ের করবে। এই আকীদাটি মনের মাঝে গেঁথে রাখুন।

যে নারীর ছবি দেখে উত্তেজনা অনুভব করছেন, তাকে নিজের বোন ভাবতে শিখুন। নিজের বোনকে দেখে কোন বেগানা পুরুষ এমন অশ্লীল চিন্তা করলে নিজের কেমন লাগবে ভাবুন।

হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ, মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ, ইমাম গাজালী রহঃ, হাকীম আখতার সাহেব রহঃসহ বড়দের লিখিত ইসলাহী বই বেশি বেশি পড়ার অভ্যাস করুন।

দাওয়াত ও তাবলীগের মসজিদওয়ারী সকল কাজে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিন।

১০

রাতে আগে আগে ঘুমিয়ে যান। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস করুন। দিনের বেলা না ঘুমিয়ে দৈনন্দিন কাজে, চাকুরীতে, ডিউটিতে ব্যস্ত থাকুন। তাহলে রাতে ঘুম দ্রুত আসবে।

ইনশাআল্লাহ উপরোক্ত কাজগুলো করলে খারাপ চিন্তা আসবে না। আল্লাহ তাআলা আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …