প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / “তোরে আমি মন থেকে তালাক দিয়া দিছি” বলার দ্বারা কী তালাক পতিত হয়?

“তোরে আমি মন থেকে তালাক দিয়া দিছি” বলার দ্বারা কী তালাক পতিত হয়?

প্রশ্ন

আমার স্ত্রী বেশ কিছুদিন যাবৎ বাবার বাড়ি আমার মতের সাথে মিল না খাকার কারণে।
( অর্থাৎ সে পড়ালেখা করতে চায় সেটা আমি চাচ্ছি না।)
গত কয়েক দিন আগে আমার সাথে ফোনে ঝগড়া হয়।
আমি রাগের মাথায় তাকে কয়েকটা কথা বলি;
1/ তুই ঈদের আগে আমারে তালাক দিবি।
2/ তোরে আমি ফোনে তালাক দিমু।
3/ তোরে আমি তালাক দিমু।
4/ খোদার কসম কইরা কইলাম সই তো দূরের কথা তোরে আমি ভাতেও খাওয়ামু না।
( উল্লেখ্য সে বাবার বাড়ি যাওয়ার পর তাকে আনার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তার শর্ত হল,তাকে কাগজে লিখিত আনতে হবে। যা আমি রাজি ছিলাম না।)
5/ তোরে আমি মন থেকে তালাক দিয়ে দিছি।
6/ তুই যদি পড়ালেখা করছ তুই তালাক।
( উল্লেখ্য সে এখনো পাড়ালেখা করছে।)

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

“তোরে আমি মন থেকে তালাক দিয়ে দিছি” বলার দ্বারা এক তালাকে রেজয়ী হয়েছে।

তারপর আবার “তুই যদি পড়ালেখা করছ তুই তালাক” বলার পরও যেহেতু আপনার স্ত্রী পড়ালেখা করছে, তাই আপনার স্ত্রীর উপর আরো এক তালাক হয়ে মোট দুই তালাকে রেজয়ী পতিত হয়ে গেছে।

তালাক দেবার পর থেকে ইদ্দত শেষ হবার আগেই স্ত্রীকে ফেরত আনার সুযোগ রয়েছে। কোন কিছুই করতে হবে না। শুধু মৌখিকভাবে বা স্ত্রীকে নিজের ঘরে তুলে নিলেই হবে।

কিন্তু  ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত  হয়ে গেলে নতুন করে বিয়ে করে ঘরে তুলতে হবে। বাকি পরবর্তীতে আর মাত্র এক তালাকের মালিক থাকবে স্বামী।

وفى الأصل فى باب الطلاق: إذا قال لامرأته “قد طلقتك” أو قال “انت طالق قد طلقتك امس” وهو كاذب كان طلاقا فى القضاء، وفى الصغرى: فى أمالى أبى يوسف رحمه الله: إذا قال لها “قد طلقتك” أو قال لها أنت طالق” ……… وان لم يرد الخبر عما مضى واراد الكذب فهى طالق فى القضاء وفيما بينه وبين وبه (الفتاوى التاتارخانية، كتاب الطلاق، فصل فيما يرجع إلى صريح الطلاق-4/401)

(وَتَنْحَلُّ) الْيَمِينُ (بَعْدَ) وُجُودِ (الشَّرْطِ مُطْلَقًا) لَكِنْ إنْ وُجِدَ فِي الْمِلْكِ طَلُقَتْ (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب التعليق-4/609)

فى الفتاوى الهندية-إذا كان الطلاق بائنا دون الثلاث فله أن يتزوجها في العدة وبعد انقضائها وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة وثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا (الفتاوى الهندية-1/472-473)

فى الفتاوى الهندية- وَإِذَا طَلَّقَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ تَطْلِيقَةً رَجْعِيَّةً أَوْ تَطْلِيقَتَيْنِ فَلَهُ أَنْ يُرَاجِعَهَا فِي عِدَّتِهَا رَضِيَتْ بِذَلِكَ أَوْ لَمْ تَرْضَ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ (الفتاوى الهندية-1/470، هداية-2/394)

اذا اضافه إلى الشرط وقع عقيب الشرط (الفتاوى الهندية-1/420)

উপদেশ!

স্ত্রী কোন খেলনার বস্তু নয়। নয় বাঁদী বা দাসী। স্ত্রীও একজন মানুষ। সম্মান পাবার যোগ্য। তার যথাযথ মর্যাদা দিতে শিখুন। ভালবাসুন। ভালবাসা দিয়ে বিষয়গুলো সমাধান করতে চেষ্টা করুন। মাথা গরম করে কোন সমাধান করতে যাওয়া বোকামী।

স্ত্রীর সাথে সামান্য মনোমালিন্য হলেই তালাকের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাওয়া শিশুসূলভ মানসিকতা। এহেন মানসিকতা পরিহার করতে হবে। সংসার ভাঙ্গা নয়, গড়তে শিখুন। আগলে রাখতে চেষ্টা করুন। কোন কিছু ভাঙ্গা সহজ, গড়া সহজ নয়।

তিনটি হাদীস খেয়াল করুনঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خلقا، وخياركم خياركم لنسائهم

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে পূর্ণতর মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার আচারণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীদের কাছে উত্তম। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪১৭৬}

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মাঝে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪, তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২}

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ» أَوْ قَالَ: «غَيْرَهُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিনা নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, সে তার এক কাজকে নাপছন্দ করলে তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। {মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৯}

আল্লাহ তাআলা আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …