প্রশ্ন
আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
জনাব আমরা জানি ইংরেজী ও বাংলা বার মাস সহ সাপ্তাহিক সাত দিনের নাম বিভিন্ন দেবতা ওগ্রহ নক্ষত্রের নাম অনূসারে নাম করণ করা হয়েছে ।এখন প্রশ্ন হল আরবী ১২ মাসের নাম করণ সম্পর্কে জানতে চাই ,তা কিসের ভিত্তিতে নাম করণ করা হয়েছে ।
এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া
মক্কা সৌদি আরব
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১. মহররম : এর অর্থ হারামকৃত, মর্যাদাপূর্ণ। যেহেতু এ মাসের মর্যাদার কথা বিবেচনা করে যুদ্ধবিগ্রহ হারাম বা নিষিদ্ধ মনে করা হতো, এ জন্য এ মাসকে মহররম বলা হয়। (গিয়াসুল লোগাত : ৪৫৭)
২. সফর : অর্থ খালি, শূন্য। মহররম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধে যাত্রা করত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। এ জন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় ‘সফর’।
৩. রবিউল আউয়াল : শাব্দিক অর্থ : বসন্তের শুরু। এ মাসের নামকরণ করা হয় বসন্তকালের শুরু লগ্ন হওয়ার কারণে। (রেসালায়ে নুজুম-২২৯)
৪. রবিউল আখের বা সানি : বসন্তকালের শেষ পর্যায়ে হওয়ায় এ মাসের নামকরণ করা হয় রবিউল আখের। (রেসালায়ে নুজুম-২২৯)
৫. জুমাদাল উলা : আরবি শব্দ, ‘জুমূদ’ অর্থ জমে যাওয়া, স্থবির হওয়া। যখন এ মাসের নাম রাখা হয়, তখন ছিল শীতের শুরুলগ্ন। যখন ঠাণ্ডায় সব কিছু জমে যেত। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘জুমাদাল উলা’।
৬ .জুমাদাল উখরা : শীতকালের শেষ লগ্নে গিয়ে এ মাসের নামকরণ করা হয় বলে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘জুমাদাল উখরা’।
৭. রজব : শাব্দিক অর্থ সম্মান করা। আরবরা এ মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ বলত এবং যথেষ্ট সম্মান করত। এ জন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘রজব’ বলে। (রেসালায়ে নুজুম-২৩০)
৮. শাবান : শাব্দিক অর্থ ছড়িয়ে দেওয়া, বিচ্ছিন্ন হওয়া। যেহেতু এ মাসে অসংখ্য কল্যাণ আর রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং হায়াত, মওত, রিজিক এবং তাক্বদিরের নানা বিষয় ফেরেশতাদের হাতে ন্যস্ত করা হয়, এ জন্য এ মাসের নাম রাখা হয়েছে ‘শাবান’। অথবা এ কারণে এ মাসের নাম ‘শাবান’ রাখা হয়েছে, আরবরা রজব মাসে যুদ্ধ নিষিদ্ধ থাকার পর এ মাসে যুদ্ধ করতে ছড়িয়ে পড়ত।
৯. রমজান : অর্থ জ্বালানো। যেহেতু এ মাসে বান্দার গুনাহ জ্বলেপুড়ে (মুছে) যায় অথবা গরমকালে এ মাসের নামকরণ করা হয়, এ জন্য এ মাসকে ‘রমজান’ বলা হয়। (ইবনে কাছির , খণ্ড ২, পৃ. ২৩৬)
১০. শাওয়াল : অর্থ ওঠানো। আরবরা এ মাসে শিকার করার উদ্দেশ্যে কাঁধে অস্ত্র ওঠাত, এ জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘শাওয়াল’। (ইবনে কাছির, খণ্ড ২, পৃ. ৩০০)
১১. জিলক্বদ : অর্থ বসে থাকা। আরবরা এ মাসে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকত (বসে থাকত), এ জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে ‘জিলক্বদ’ করে। (ইবনে কাছির, খণ্ড ২, পৃ. ২২৬)
১২. জুলহিজ্জাহ : হজের মাস বলে একে জিলহজ বলা হয়। (ইবনে কাছির, খণ্ড ২, পৃ. ২২৬)
[তথ্যগুলো মুফতী মুহাম্মদ মর্তুজা সংকলিত “আরবী মাসের মাসগুলোর নামকরণের কারণ” প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com