প্রশ্ন
নাম : রাহাত কবির
অবস্থান : ঢাকা, বাংলাদেশ।
আতর ব্যবহারের হাকীকত কি? এর ফজিলত সম্পর্কে কোন হাদীস আছে?
বডি স্প্রে বা বোতলজাত পারফিউম স্প্রে ব্যবহার করা যাবে কি না? আতর এর সাথে এসবের পার্থক্য কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحمن
ফযীলত বলতে রাসূল সাঃ যা করেছেন, তা রাসূল সাঃ এর মোহাব্বতে করাই ফযীলতপূর্ণ। রাসূল সাঃ এর কাছে খুশবো খুবই পছন্দনীয় বিষয় ছিল। তাই হালাল খুশবো জাতীয় বস্তু ব্যবহার করা সুন্নত।
লক্ষণীয় আমরা ইচ্ছে করেই আতর শব্দ ব্যবহার করছি না। কারণ রাসূল সাঃ এর কাছে প্রিয় ছিল খুশবো। চাই তা যে প্রকারেরই হোক। শর্ত শুধু হালাল বস্তু দ্বারা বানানো হতে হবে। তাই আতর হোক বা বডি স্প্রে হোক, বোতলজাত পারফিউম হোক বা ফুলের ঘ্রাণ হোক সবই খুশবোতে শামিল। তাই আমভাবে খুশবো ব্যবহার করা সুন্নত। হালাল বস্তু দ্বারা বানানো হলেই হল।
হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” حُبِّبَ إِلَيَّ (2) النِّسَاءُ، وَالطِّيبُ
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ নারী ও খুশবো খুবই প্রিয়। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২২৯২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৮৭৯, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩৯৪০, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৫৭৭২, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-২৬৭৬, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪৮২}
বর্তমানে বডি স্প্রে বা পারফিউমে এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় মর্মে শুনা যায়। এক্ষেত্রে মাসআলা হল,
وَالْمُحَرَّمُ مِنْهَا أَرْبَعَةُ) أَنْوَاعٍ. (الْأَوَّلُ: الْخَمْرُ وَهِيَ النِّيءُ) ……. (مِنْ مَاءِ الْعِنَبِ إذَا غَلَى وَاشْتَدَّ وَقَذَفَ) أَيْ رَمَى (بِالزَّبَدِ) …….. (وَحُرِّمَ قَلِيلُهَا وَكَثِيرُهَا) بِالْإِجْمَاعِ…………… (وَ) الثَّانِي (الطِّلَاءُ) بِالْكَسْرِ (وَهُوَ الْعَصِيرُ يُطْبَخُ حَتَّى يَذْهَبَ أَقَلُّ مِنْ ثُلُثَيْهِ) وَيَصِيرُ مُسْكِرًا وَصَوَّبَ الْمُصَنِّفُ أَنَّ هَذَا يُسَمَّى الْبَاذَقَ، وَأَمَّا الطِّلَاءُ فَمَا ذَكَرَهُ بِقَوْلِهِ (وَقِيلَ مَا طُبِخَ مِنْ مَاءِ الْعِنَبِ حَتَّى ذَهَبَ ثُلُثَاهُ وَبَقِيَ ثُلُثُهُ) وَصَارَ مُسْكِرًا (وَهُوَ الصَّوَابُ) ……… (كَالْخَمْرِ) بِهِ يُفْتَى، (وَ) الثَّالِثُ (السَّكَرُ) بِفَتْحَتَيْنِ (وَهُوَ النِّيءُ مِنْ مَاءِ الرُّطَبِ) إذَا اشْتَدَّ وَقَذَفَ بِالزَّبَدِ، (وَ) الرَّابِعُ (نَقِيعُ الزَّبِيبِ، وَهُوَ النِّيءُ مِنْ مَاءِ الزَّبِيبِ) بِشَرْطِ أَنْ يَقْذِفَ بِالزَّبَدِ بَعْدَ الْغَلَيَانِ (وَالْكُلُّ) أَيْ الثَّلَاثَةُ الْمَذْكُورَةُ (حَرَامٌ إذَا غَلَى وَاشْتَدَّ) وَإِلَّا اتِّفَاقًا، وَإِنْ قَذَفَ حَرُمَ اتِّفَاقًا، وَظَاهِرُ كَلَامِهِ فَبَقِيَّةِ الْمُتُونِ أَنَّهُ اخْتَارَ هَاهُنَا قَوْلَهُمَا (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الأشربة، كرتاشى-6/448-452، زكريا-10/26-32)
যে সমস্ত এলকোহল খেজুর বা আঙ্গুর দ্বারা বানানো হয়নি, তেমন বস্তু নেশা না আসা পর্যন্তের জন্য ব্যবহার জায়েজ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর মতানুসারে। {ফাতহুল কাদীর-৮/১৬০, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/৪১২, আল বাহরুর রায়েক-৮/২১৭-২১৮, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৯}
বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, বর্তমানে এলকোহল খেজুর বা আঙ্গুর থেকে বানানো হয় না। তাই এটি ব্যবহার করা জায়েজ হবে। তবে যদি জানা যায় যে, এসব আঙ্গুর বা খেজুর থেকে বানানো হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ নয়।
আর হারাম কোন বস্তু যেমন শুকর ইত্যাদির যদি এমনভাবে রিফাইন করা হয় যে, এসবের কোন মৌলিকত্ব বাকি না থাকে, তাহলেও উক্ত বস্তু ব্যবহার করা জায়েজ আছে। আর যদি সেসব হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব বাকি থাকে, তাহলে উক্ত বস্তু যাতে মিশ্রিত করা হবে, তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। {নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালি-৮/১২}
أما (الخمر) إذا خلله بعلاج بالملح أو بغيره يحل عندنا (الفتاوى الهندية،كتاب الأشربة وفيه بابان الباب الأول في تفسير الأشربة والأعيان التي تتخذ منها الأشربة وأسماؤها وماهياتها وأحكامه-5/410
অনুবাদ-মদকে যখন লবন বা অন্য কিছু দ্বারা সির্কা বানিয়ে ফেলা হয়, তখন তা হালাল হয়ে যায়। {ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪১০, মাজমাউল আনহুর-৪/২৫১, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৮}
এ মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বুঝে নিন বিদেশী পণ্য ও বডি স্প্রে, পারফিউম, শেম্পু ইত্যাদি ব্যবহার করার বিধান। যদি ওসব বস্তুুতে খেজুর বা আঙ্গুরের তৈরী এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার জায়েজ নয়। নতুবা তা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে জায়েজ নয়। সম্ভাবনা না হলে জায়েজ।
আর যদি অন্য কোন হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়, আর মিশ্রিত করার আগে তাকে এমনভাবে প্রসেসিং করে যে, হারাম বস্তুটির মৌলিকত্ব বাকি থাকে না, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে, আর যদি মৌলিকত্ব বাকি থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।
যদি হারাম বস্তু মিশ্রিত করা হল কি না? জানা নেই। তাহলেও উক্ত পারফিউম, বডি স্প্রে ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।
في التتارخانية: من شك في إنائه أو في ثوبه أو بدن أصابته نجاسة أو لا فهو طاهر ما لم يستيقن، وكذا الآبار والحياض والجباب الموضوعة في الطرقات ويستقي منها الصغار والكبار والمسلمون والكفار؛ وكذا ما يتخذه أهل الشرك أو الجهلة من المسلمين كالسمن والخبز والأطعمة والثياب اهـ ملخصا.(رد المحتار، كتاب الطهارة، قبيل مطلب فى ابحاث الغسل-1/283، الفتاوى التاتارخانية، كتاب الطهارة، نوع آخر فى مسائل الشك-1/146، الأشباه والنظائر، القاعدة الثلاثة، اليقين لا يزول بالشك
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
আমি কোন এলকোহল যুক্ত খুশবু ইউজ করি না। সেটা যেই এলকোহল-ই হোক না কেন! কারন, এমন তো হতেও পারে যে এটাতে নেশাজাতীয় কিছু আছে অথবা এর এলকোহল খেজুর বা আঙ্গুরের দ্বারা প্রস্তুতকৃত।
আবার, বর্তমানে যেসব এলকোহলযুক্ত পারফিউম/বডি স্প্রে/ডিও ইত্যাদি পাওয়া যায় তার খুশবু অত্যন্ত তীব্র ও উগ্র হয়ে থাকে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। 🙁 এইরকম খুশবু লাগিয়ে বের হলে তা মহিলাদেরকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে। মৃদু সুগন্ধযুক্ত খুশবু ব্যবহার করাটা আমার ব্যক্তিগত অভ্যাস!
শাইখ লুতফর ফরায়েজী স্যারের এই বিষয়ে কোন পরামর্শ থাকলে জানাবেন, প্লিজ।
কার্বনের যৌগসমূহকে জৈব যৌগ বলা হয়।যেমন :অ্যালকোহল ।হাইড্রোজেন ও কার্বন দ্বারা গঠিত জৈব যৌগকে হাইড্রোকার্বন বলে।যেমন :মিথেন ।ফ্যাট চর্বি যুক্ত হাইড্রোকার্বনের অণুস্থিত কার্বন পরমাণুর সাথে যুক্ত হাইড্রোজেন পরমাণু যদি হাইড্রোক্র্রিল(-OH)মুলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় তাহলে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তাকে অ্যালকোহল বলা হয়।অর্থাৎ হাইড্রক্রিল মূলক্(-OH)যুক্ত যৌগ।যেমন -গ্লিসারল, মিথেন থেকে মিথানল।কোনো যৌগের শেষে যদি” অল” যোগ করা হয় তাহলে সেটা অ্যালকোহল।যেমন~মিথানল ,ইথানল।এসব জাতীয় যেসব যৌগ আছে সবই অ্যালকোহল।এখন যদি কোনো বডি স্প্রেতে উপরোক্ত উপকরণ থাকে যা খেজুর বা আঙ্গুরের দারা তৈরি তাহলে তা জায়েজ হবে না।আমি মনে করি সেন্ট, বডি স্প্রে না ব্যবহার করাই ভাল। জৈব যৌগের উপাদান চর্বি হিসেবে যদি শুকুরের চর্বি ব্যবহার করা হয় তাহলে তো সেটা সম্পূর্ণ নাজায়েজ।এই জন্য এসব দ্রব্য ব্যবহার করার সময় খুবই সতর্ক অবলম্বন করা দরকার।সেন্ট,বডি স্প্রে এগুলো সন্দেহ যুক্ত জিনিস ।আর সন্দেহ যুক্ত জিনিস না ব্যবহার করাই ভাল।আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিকটা বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন…….. (আমিন)