প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / টেক্সটাইল ফ্যাক্টরীর বর্জ্য পরিশোধনে সরকারী আইন মানা কি জরুরী? বর্জ্য অপসারণে শরয়ী বিধান কী?

টেক্সটাইল ফ্যাক্টরীর বর্জ্য পরিশোধনে সরকারী আইন মানা কি জরুরী? বর্জ্য অপসারণে শরয়ী বিধান কী?

প্রশ্ন

কয়েকজন একটি টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। তাদের  কাজ হল বর্জ্য পানি পরিশোধন করা। তাদের  পরিশধনের প্লান্টটি আয়াতনে ছোট  ও ক্ষমতা কম হওয়ায় তারা সবসময় এটি চালাতে পারে না। হয়ত ২৪ ঘণ্টার জায়গায় ১২ ঘণ্টা চলে। তারপরেও যতক্ষণ চলে পানির গুনাগুন যে রকম থাকা দরকার পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী তাই থাকে। তারপরেও সাবধানতার জন্য তারা গুনাগুন গুলো যেরকম থাকে তার চেয়ও অনেক কম লেখে যাতে তারা অনর্থক লাখ লাখ টাকা জরিমানা না করে। উল্লেখ্য, উক্ত খাতাটি  পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকেরা যখন আসে তাদেরকে দেখাতে হয়।  তারা আরেকটি বড় প্লান্ট করছে। কিন্তু সেটা হতে ৬ মাস সময় লাগবে। আমার প্রশ্ন হলঃ

১. তাদের  বেতন হালাল হচ্ছে কিনা?

২. তাদের  এই কাজে এই মিথ্যা বলা বা লিখা ঠিক কিনা?

৩. ইসলামী আইনে সরকারি এসব নিয়ম মানা কি?

৪. ফ্যাক্টরির এসব পানি কোথায় ফেলবে?

৫. ইসলামী হুকুম অনুসারে পরিবেশের আধুনিক এসব মাসালা কি হবে?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখা ইসলামী শরীয়তের একটি আইন। নিজের বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর বস্তুগুলো নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখার শিক্ষা সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে পাওয়া যায়।

সুতরাং যেসব বর্জ্য বা দূষিত পানি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা মানুষের নাগালের বাইরে ফেলে দেয়াই ইসলামের বিধান।

দূষিত বর্জ্যকে পরিশোধন করা এটা বর্জ্য দূরে ফেলে দেবারই আধুনিক সংস্করণ। সুতরাং এ কর্মটি যথাযথভাবে করতে হবে।

আর সররকারি যেসব আইন মানুষের উপকারার্থে করা হয়েছে। যাতে শরয়ী কোন বিধান লঙ্ঘিত হয়নি, এসব আইন মান্য করা দেশে  বসবাসকারী নাগরিকের জন্য কর্তব্য। এর ব্যত্যয় করা যাবে না।

যেহেতু সরকারী আইন এবং শরয়ী বিধিমালা অনুপাতে বর্জ্য পরিশোধন করা আপনাদের দায়িত্ব ছিল। তা সঠিকভাবে না করা অবশ্যই অন্যায় ও গর্হিত অপরাধ।

তবে সাধ্যানুপাতে চেষ্টা করার পরও যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে এতে করে কর্মচারী বা সংশ্লিষ্টদের কোন গোনাহ হবে না। তাদের বেতন ভাতা গ্রহণেও কোন শরয়ী নিষেধাজ্ঞা নেই।

বাকি সঠিক তথ্য না লিখে মিথ্যা তথ্য লিখা একটি গোনাহের কাজ। তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

কিন্তু এর কারণে বেতনকে হারাম বলার সুযোগ নেই।


قوله تعالى- وَاجْتَنِبُواْ قَوْلَ الزُّورِ  [الحج-30

 এবং মিথ্যা কথা থেকে বাঁচো। {সূরা হজ্জ্ব-৩০}

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا (صحيح مسلم، كتاب الايمان، باب قَوْلِ النَّبِىِّ – صلى الله تعالى عليه وسلم – « مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا، رقم الحديث-294)

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে আমার উম্মতের উপর অস্ত্র উঁচু করে সে আমার উম্মতভূক্ত নয়, আর যে আমাদের সাথে ধোঁকাবাজী করে, সেও আমার উম্মতভূক্ত নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৪১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৮৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৭৯৭, মুসনাদে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭২১}

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِطَرِيقٍ، وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ عَلَى الطَّرِيقِ، فَأَخَّرَهُ فَشَكَرَ اللهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ

 আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন সে রাস্তার উপর একটি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ তার এই ভাল কাজটি পছন্দ করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং, ১৯১৪, ইফাবা-৬৪৩১]

عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِذَا مَرَّ أَحَدُكُمْ فِي مَسْجِدِنَا، أَوْ فِي سُوقِنَا، وَمَعَهُ نَبْلٌ، فَلْيُمْسِكْ عَلَى نِصَالِهَا بِكَفِّهِ، أَنْ يُصِيبَ أَحَدًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ مِنْهَا بِشَيْءٍ» أَوْ قَالَ «لِيَقْبِضَ عَلَى نِصَالِهَا»

আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন হাতে বর্শা নিয়ে আমাদের মসজিদে আসে কিংবা আমাদের বাজারে গমন করে সে যেন এর ধারালো দিকটা নিজের হাতের তালু দ্বারা আগলে রাখে। নয়তো তা দ্বারা কোন মুসলমানের (দেহে) আঘাত লাগতে পারে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন তার ফলক (ধারালো অংশ) নিয়ন্ত্রণে রাখে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬১৫, ইফাবা-৬৪২৭]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَقَدْ رَأَيْتُ رَجُلًا يَتَقَلَّبُ فِي الْجَنَّةِ، فِي شَجَرَةٍ قَطَعَهَا مِنْ ظَهْرِ الطَّرِيقِ، كَانَتْ تُؤْذِي النَّاسَ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জান্নাতে এক ব্যক্তিকে একটি ঘরে বেড়াতে (আনন্দ উপভোগ করতে) দেখেছি। একটি গাছের কারণে যেটি সে রাস্তার উপর থেকে কেটে অপসারণ করেছিল, যেটি লোকদের কষ্ট দিত। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯১৪, ইফাবা-৬৪৩৩]

والأجر يطيب وإن كان السبب حراما، (رد المحتار، كتاب الاجارة، باب الإجارة الفاسدة-9/62

لان طاعة الإمام فيما ليس بمعصية فرض، (الدر المختار مع الشامى-6/416

وفى الشامية: طاعة الإمام فيما ليس بمعصة واجبة، (رد المحتار-3/53

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

অগ্রীম বাসা ভাড়ার উপর বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ মুহতারাম, অমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে বাড়ি ভাড়া নেই। ভাড়া নেওয়ার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস