প্রশ্ন
অভিভাবক ছাড়া বিবাহ করা যাবে কি না? এ বিষয়ে আপনাদের সাইটে লিখিত একটি প্রশ্নোত্তর পড়লাম। মাশাআল্লাহ অনেক দলীলের আলোকে চমৎকারভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে দেবার জন্য আপনাদের জাযাকাল্লাহ। লেখাটির লিংক হলঃ https://ahlehaqmedia.com/3280-3/
উক্ত লেখাটি আমি শেয়ার করতেই এক আহলে হাদীস অভিযোগ করলেন যে, হযরত আয়শা রাঃ তার ভাতিজীকে অভিভাবক পিতার উপস্থিতি ছাড়াই বিবাহ দিয়েছেন এ সংক্রান্ত যে হাদীসটি পেশ করা হয়েছে মুয়াত্তা মালিক থেকে, সেক্ষেত্রে নাকি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন আপনারা।
উক্ত হাদীসে নাকি এমন আছে যে, পরবর্তীতে আয়শা রাঃ এর ভাই এসে বিবাহ ভেঙ্গে দিয়েছেন।
আসলে কি বিষয়টি এমনি?
বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আমরা আগেও বলেছি যে, প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে শরীয়ত সিদ্ধ দুইজন স্বাক্ষ্যির সামনে ইজাব কবুলের মাধ্যমে বিবাহ করলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
বাকি যদি গায়রে কুফুতে বিয়ে করে থাকে, তাহলে মেয়ে পক্ষের অভিভাবক এসে উক্ত বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে। গায়রে কুফুতে বিয়ে না করলে বিয়ে ভাঙ্গতে পারে না।
মাসআলাটি মাথায় রাখার পর এবার আমরা মুয়াত্তা মালিকে উদ্ধৃত পূর্ণ হাদীসটি দেখে নেইঃ
أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، زَوَّجَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمنِ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. وَعَبْدُ الرَّحْمنِ غَائِبٌ بِالشَّأْمِ. فَلَمَّا قَدِمَ عَبْدُ الرَّحْمن، قَالَ: وَمِثْلِي يُصْنَعُ هذَا بِهِ؟ وَمِثْلِي يُفْتَاتُ عَلَيْهِ؟.
فَكَلَّمَتْ عَائِشَةُ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. فَقَالَ الْمُنْذِرُ: فَإِنَّ ذلِكَ بِيَدِ عَبْدِ الرَّحْمنِ.فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمنِ: مَا كُنْتُ لِأَرُدَّ أَمْراً قَضَيْتِيهِ، فَقَرَّتْ حَفْصَةُ عِنْدَ الْمُنْذِرِ. وَلَمْ يَكُنْ ذلِكَ طَلاَقاً.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীণী আয়শা রাঃ আব্দুর রহমানের কন্যা হাফসাকে মুনযির ইবনে যুবায়ের এর নিকট বিবাহ দিলেন। আব্দুর রহমান ছিলেন তখন সিরিয়াতে [তিনি তাই এই বিবাহে অনুপস্থিত ছিলেন]। আব্দুর রহমান যখন সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন [এবং এই বিবাহের সংবাদ অবগত হলেন] তিনি বললেন, আমার মতো লোকের সাথে এটা করা হইল, আমার ব্যাপারে আমাকে উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হল। তারপর আয়শা রাঃ মুনযিন বিন যুবায়ের এর সাথে আলোচনা করলেন। মুনযির বললেন, আব্দুর রহমানের হাতেই এর [বিবাহ বহাল রাখা ও না রাখা] ক্ষমতা রয়েছে। আব্দুর রহমান বললেন, যে ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন আমি এটিকে রদ করবো না। তাই হাফসা মুনযিরের কাছেই রইলেন এবং এটি তালাক বলে গণ্য হয়নি। {মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং-২০৪০, ইফাবা, হাদীস নং-১৫}
এখানে আমরা কী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছি? এটাইতো আমাদের বুঝে আসছে না। বরং আমাদের কাছেতো এটাই পরিস্কার হচ্ছে যে, আমাদের উপর জালিয়াতির অভিযোগ করে মূলত তিনিই জালিয়াতির আশ্রয় নিলেন।
এ হাদীসে পরিস্কার যে, হযরত আয়শা রাঃ অভিভাবক ছাড়াই বিয়ে দিলেন।
অথচ তার থেকেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, অভিভাবক ছাড়া বিবাহ শুদ্ধ হয় না।
সুতরাং হযরত আয়শা রাঃ এর নিজের আমল উপরোক্ত হাদীসের উল্টো হওয়াই প্রমাণ করে “বিবাহ বাতিল” বলে যে হাদীস বর্ণিত সেটিতে সমস্যা আছে বা ব্যাখ্যা আছে।
যদি বিবাহ আসলেই বাতিল হতো, তাহলে হযরত আয়শা কিভাবে বিবাহ দিলেন?
আর যেহেতু নিয়ম হল, অভিভাবক ছাড়া বিয়ে যদি গায়রে কুফুতে হয়, তাহলে অভিভাবক আপত্তি তুলতে পারেন। সেই হিসেবে হযরত আব্দুর রহমান রহঃ সিরিয়া থেকে ফিরে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু মেয়ের জামাতার সাথে কথা বলে সেই আপত্তিও তুলে নিলেন। বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। যা প্রমাণ করে অভিভাবক ছাড়াই ইতোপূর্বের বিবাহ শুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত আব্দুর রহমান রহঃ এর আপত্তিটির দ্বারা তালাক হয়নি মর্মে হাদীসে পরিস্কার এসেছে।
যা আরো দীপ্তভাবে প্রমাণ করে যে, আগের কৃত বিবাহ শুদ্ধ ছিল। যদি বিবাহই শুদ্ধ না হয়, তাহলে তালাকের প্রশ্ন আসছে কেন?
তাহলে এ হাদীস অভিভাবকহীন বিবাহ শুদ্ধ হয় বক্তব্যের দলীল হিসেবে পেশ করে আমরা কিভাবে জালিয়াতির আশ্রয় নিলাম?
তবে আমরা একথা বারবারই বলেছি যে, অভিভাবক ছাড়া বিবাহ করা উচিত নয়। এতে সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় না সাধারণত। তাই অভিভাবকদের সম্মতিতেই বিবাহ হওয়া উচিত।
কিন্তু অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হয় না। বাতিল হয়ে যায়, একথার কোন ভিত্তি নেই। বরং বিবাহ হয়, এ মর্মের হাদীসগুলো পরিস্কার ও সহীহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]