প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম .মাফ করবেন নাম বললাম না !আশা করছি হুজুর ভালো আছেন!
আমি অনেক বিপদে পরে আপনাকে লিখতে বসলাম.আমার বিয়ে হয় বছর হয়ে গেছে। আল্লাহকে মানার চেষ্টা করি এবং সুখী। একদিন আমার ওয়াইফ টিভি দেখার সময় আমি তাকে ভয় দেখানোর জন্য বলিঃ “এগুলো দেখা আমি পছন্দ করিনা। আমি রাগ করলে তালাকের পর্যায় যাবে।” তখন সে ও মজা করে বললো আমিও দেব। তখন আমি শুধু ভয় দেখানোর জন্য বললাম “দিলে দাও”! কিন্তু অন্তর থেকে বলি নাই। দুর্ভাগ্য সে মজা করে তিন বার তালাক তালাক তালাক বলেছে। তখন আমি এক হুজুর কে বলি উনি বলেছেনঃ না কিছু হয় নাই। চিন্তা করোনা। তখন আমরা আর কিছু ভাবি নাই এবং আগের মতোই থাকি। এখন তার পেটে চার মাসের বাচ্চা। কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে একটা বই পরে একটু ভয় লাগে আসলে আমরা কি জায়েজ অবস্থায় বসবাস করছি ???
যখন তাকে বলি সে বলে আমি কি মন থেকে বলেছি? শুধু রাগ করে বলেছি। আল্লাহতো দেখছে আমার মন। আর এ বিষয়ে তওবা করে এবং বলে বেশি কিছু বললে দূরে চলে যাবো।
আমার প্রশ্ন হলো কাবিন নামাই কখন কে কি লিখেছে আমি দেখি নাই, শুধু সাক্ষর দিয়েছি আমি।
আমি মন থেকে বলি নাই তালাক দাও। শুধু ভয় দেখানোর জন্য।
এখন আমার জন্য আল্লাহ কোন রাস্তা খোলা রেখেছে জানাবেন।
আমি এখন খুব কষ্টে থাকি কারণ কাজী আইন কোনো আইন না। আমি ভয় করি আল্লাহকে
সব কথা বিবেচনা করে জানাবেন আশা করছি আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন আমিন।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যদি কথোপথন ও অবস্থা হুবহু তা’ই হয়, যা প্রশ্নে বর্ণিত হয়েছে। তাহলে এক্ষেত্রে কোন তালাকই পতিত হয়নি। কারণ, স্ত্রী নিজে স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। বরং সে স্বামী কর্তৃক প্রাপ্ত তালাকের অধিকার বলে নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারে। সে নিজে তালাক দিতে পারে না।
অথচ প্রশ্নোক্ত সূরতে স্বামীর “তালাক দিয়ে দাও” কথার জবাবে স্ত্রী বলেছেঃ তালাক, তালাক, তালাক। নিজের উপর পতিত করার কথা বলেনি। বরং সে নিজে স্বামীকে তালাক দিচ্ছে। অথচ সে স্বামীকে তালাক দিতে পারে না। বরং নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারে। যদি স্ত্রী স্বামীর উপরোক্ত কথার জবাবে বলতো “আমি নিজের উপর এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক পতিত করে নিলাম” বা এ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করতো, তাহলেই কেবল তালাক পতিত হতো।
আর যদি তালাক হয়েও থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ এক তালাকে রেজয়ী হয়েছে। সুতরাং পরবর্তীতে স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকার দ্বারাই সেই তালাক বাদ হয়ে উভয়ে বৈধ স্বামী স্ত্রী হয়ে গেছে।
কারণ, যেহেতু স্বামীর কথার দ্বারা তালাকের নিয়ত ছিল না। কিন্তু শব্দটি স্পষ্ট হওয়ায় এর দ্বারা স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান করা হয়ে যাচ্ছে। তাই এর দ্বারা সর্বোচ্চ স্ত্রীকে এক তালাকের অধিকার প্রদান করা হয়। দুই বা তিন তালাক নয়। কারণ স্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করলে নিয়ত না করলে এক তালাক, নিয়ত করলে অধিক তালাক হতে পারে। যেহেতু এক্ষেত্রে স্বামীর নিয়ত ছিল না। তাই অধিকার দেয়া হয়েছিল এক তালাকের। তাই স্ত্রীর তিন তালাক পতিত করার দ্বারা কোন প্রভাব পড়বে না।
মোটকথা,
প্রশ্নোক্ত বর্ণনা সত্য হলে স্ত্রীর উপর কোন তালাকই পতিত হয়নি।
সতর্কতা স্বরূপ যদি ধরাও হয়, তালাক হয়েছে, তবু তালাক তিনটি হয়নি। বরং এক তালাকে রেজয়ী হয়েছিল। আর রেজয়ী তালাকের পর স্বামী স্ত্রী এক সাথে থাকলেই তালাকের কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে স্বামী শুধু দুই তালাকের মালিক থাকবে।
বিঃদ্রঃ
তালাক কোন ছেলেখেলা নয়। তা’ই এ বিষয় নিয়ে হাসি মজাক করা মোটেও উচিত নয়। রাগ উঠলে অনেক কথাই বলা যায়। এজন্য তালাক শব্দ উচ্চারণ করতে হবে কেন? তাই এমন শিশুসূলভ আচরণ থেকে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকতে হবে।
ومحله المنكوحة واهله زوج عاقل بالغ مستيقظ (الدر المختار مع رد المحتار-4/431، مجمع الانهر-2/4، النهر الفائق-2/310)
قَالَ لَهَا طَلِّقِي نَفْسَك وَلَمْ يَنْوِ أَوْ نَوَى وَاحِدَةً) أَوْ ثِنْتَيْنِ فِي الْحُرَّةِ (فَطَلَّقَتْ وَقَعَتْ رَجْعِيَّةً، (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب الامر باليد، فصل فى المشيئة-4/575)
واذا طلق الرجل امرأته تطليقة رجعية او تطليقتين فله ان يراجعها فى عدتها والرجعة ان يقول راجعتك او راجعت امرأتى يستحب ان يشهد على الرجعة شاهدين (هداية، كتاب الطلاق، باب الرجعة-2/394، الفتاوى الهندية-1/470
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]