প্রশ্ন
প্রিয় দীনি ভাই,
আসসালামু আলাইকুম, দয়া করে জানাবেন–
জুম্মার মুল খুতবার আগে বাংলায় যে খুতবা দেয়া হয়, সেটা শরীয়ত সম্মত কি না ?
অন্য কোন দেশে এভাবে খুতবা হয় কি না।
ধন্যবাদ,
জিএম রকি
ধানমন্ডি, ঢাকা।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
“জুমআর খুতবার আগে বাংলায় যে খুতবা দেয়া হয়” এ বাক্যটি ভুল।
কারণ, আমাদের মসজিদগুলোতে বাংলায় খুতবা দেয়া হয় না, বরং বাংলায় ওয়াজ-নসিহত করা হয়। খুতবাতো আরবীতেই দিতে হয়। দু’ই কারণে আমাদের মসজিদগুলোতে তা করা হয়। যথা-
১
জুমআর নামাযের নির্ধারিত সময় হবার এক দেড় ঘন্টা আগে মুসল্লিরা মসজিদে এসে একত্র হন। তখন অনেকেই গল্প গুজব করে গোনাহে লিপ্ত হয়, সেই কারণে খতীব সাহেব উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু আলোচনা করেন। যাতে করে সময়টা কাজে লাগে। যে মুসল্লিরা তা শ্রবণ করেন, তারাও জানেন যে, এটা জুমআর খুতবা নয়। তেমনি যিনি বয়ান করেন, সেই খতীব সাহেবও জানেন এটা জুমআর খুতবা নয়। এটি কেবলি মানুষ নামাযের নির্ধারিত সময়ের আগে মুসল্লিরা একত্রিত হওয়ায় সময়টি কাজে লাগানোর একটি প্রচেষ্টা মাত্র। সুতরাং এটিকে খুতবা বলে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই।
কেউ যদি এটাকে বিদআত বলতে চায়, তাহলে তার প্রথমে মসজিদে মুসল্লিরা একত্রিত হলে, তাদের উদ্দেশ্য বয়ান করা হারাম হওয়া প্রমাণ করতে হবে।
অথচ এমন কোন প্রমাণ কোন ব্যক্তি প্রমাণ করতে পারবে না। সুতরাং বুঝা গেল, জুমআর মূল খুতবার আগে বাংলায় যে বয়ান করা হয়, তা বিদআত নয়। নিষিদ্ধ নয়। আর সেটি খুতবাও নয়। যদি কেউ আলাদা খুতবা মনে করে, তাহলেই কেবল তা বিদআত হবে। অথচ এমনটি কেউ মনে করে না।
২
জুমআর মূল খুতবার আগে বয়ান করা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। আমরা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর অনুসরণে তা করে থাকি।
যেমনঃ
عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَقُومُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِلَى جَانِبِ الْمِنْبَرِ فَيَطْرَحُ أَعْقَابَ نَعْلَيْهِ فِي ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ يَقْبِضُ عَلَى رُمَّانَةِ الْمِنْبَرِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَقُولُ فِي بَعْضِ ذَلِكَ: وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فَإِذَا سَمِعَ حَرَكَةَ بَابِ الْمَقْصُورَةِ بِخُرُوجِ الْإِمَامِ جَلَسَ. هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ
অর্থ : আসেম (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, জুমু’আর দিন হযরত আবু হুরায়রা (রা.) জুতা খুলে মিম্বরের পাশে দাঁড়িয়ে মিম্বর ধরে বলতেন, আবুল কাসেম (সা.) বলেন, মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, সাদেক মাসদুক (সা.) বলেন, ধ্বংস আরবদের জন্য, ওই ফিতনার কারণে, যা নিকটবর্তী…। এরপর যখন ইমাম সাহেবের বের হবার আওয়াজ শুনতেন, তখন তিনি বসে যেতেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, ১/১৯০, হাদীস-৩৩৮)
عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَمَا زَالَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى خَرَجَ الْإِمَامُ
হযরত আবদুল্লাহ বিন বুছর (রা.) জুমু’আর দিন প্রথমে ওয়াজ করতেন। যখন খতীব খুতবার জন্য আগমন করতেন, তখন তিনি ওয়াজ বন্ধ করতেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, ১/২৮৮, হাদীস-১০১২)
হযরত তামীম দারী (রা.) হযরত উমর (রা.) ও হযরত উসমান (রা.)-এর যুগে খুতবার পূর্বে ওয়াজ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, ৩১/৩৩১, হাদীস-১৫১৫৭)
সুতরাং বুঝা গেল, আমাদের মসজিদগুলোর আমলটি বিদআত হবার প্রশ্নই উঠে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]