লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
“ইসলাম” নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেছে। সবচে’ বেশি অধিকার দিয়েছে। এটি কোন মুখরোচক স্লোগান নয়। জাজ্বল্যমান এক বাস্তব সত্য। নারী যখন ছিল কেবলি ভোগ্য পণ্য। শুধুই একজন দাসির সমতুল্য। ঠিক তখনি ইসলাম এল নারী জাতির জন্য আশির্বাদ হয়ে।
যেখানে ইহুদী খৃস্টান ধর্মের বিকৃত ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে নারীকে করেছে মিরাসি সম্পদ থেকে বঞ্চিত। করেছে নিকৃষ্ট প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। সেখানে ইসলাম নারীকে একদিকে দিয়েছে মেয়ে হিসেবে মর্যাদা ও পিতা থেকে মিরাস পাওয়ার অধিকার। দিয়েছে বোন হিসেবে মর্যাদা এবং ভাই থেকে মিরাস পাওয়ার অধিকার। দিয়েছে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা ও স্বামী থেকে মিরাসি সম্পদ পাওয়ার অলঙ্ঘনীয় অধিকার। “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত” বলে নারী জাতিকে যেমন দিয়েছে সম্মনের সর্বোচ্চ মাকাম তেমনি সন্তান থেকে মিরাস পাওয়ার অধিকার।
নারীর পূর্ণ জীবনের সুন্দর ব্যবস্থাপনা। শালীন ও সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার ইসলাম কতটা দিয়েছে তা এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। তাই সেদিকে যাচ্ছি না। বিধবা নারীকে ইসলাম কতটা মর্যাদা দিয়েছে, আর ইসলামের সুমহান নীতি অবলম্বন না করার কারণে বর্তমানে বিধবা নারীরা কতটা অসহায় জীবন যাপন করছেন এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য সেটিকে স্পষ্ট করে তোলা।
যে নারীর স্বামী মৃত, তাকে বিধবা বলা হয়। বৈধব্যের আরেক নাম যন্ত্রণা। এ কথা পৃথিবীর যে কোনো দেশের নারীর জন্যই প্রযোজ্য ও চিরন্তন সত্য।
ইহুদী ও খৃষ্ট ধর্মের বিকৃত ধর্মীয় গ্রন্থে বিধবাদের অধিকার চরমভাবে ক্ষুণœ করা হয়েছে। কয়েকটি উদাহরণ উদ্ধৃত করছি-
পুনঃ বিবাহ
বাইবেলে তালাক প্রাপ্তা নারীর পুনঃ বিবাহ সম্পর্কে স্ববিরোধী বক্তব্য বিরাজমান। বাইবেলে বলা হয়েছে: বিয়ে করার পরে যদি কেউ স্ত্রীর মধ্যে কোন দোষ দেখে তার উপর অসন্তুষ্ট হয় আর তালাক-নামা লিখে তার হাতে দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বিদায় করে দেয়, আর স্ত্রীলোকটি তার বাড়ি থেকে চলে গিয়ে যদি অনন্য কাউকে বিয়ে করে এবং তার দ্বিতীয় স্বামীও যদি পরে তাকে অপছন্দ করে তার প্রতি তা-ই করে, কিংবা সেই স্বামী যদি মারা যায়, তবে তার প্রথম স্বামী যে তাকে বিদায় করে দিয়েছিল, সে তাকে আর বিয়ে করতে পারবে না, কারণ সে নাপাক হয়ে গেছে।
এই রকমের বিয়ে ইশ্বর ঘৃণা করেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪ : ১-৪)। বিপরীতে বলা হয়েছে: বিধবা কিংবা স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে কিংবা বেশ্যা হয়ে যে নিজেকে নাপাক করেছে এমন কোন স্ত্রীলোককে বিয়ে করা চলবে না। (লেবীয় ২১: ১৪)
বাইবেলে বিধবার ক্ষেত্রে একদিকে বলা হচ্ছে বিবাহ করা নিষিদ্ধ। অপরদিকে তাদের সমুদয় সম্পদ স্বামীর জন্য সাব্যস্ত করে বিধবা নারীদের করে দেয়া হচ্ছে সর্বশান্ত। বাইবেলের মতে মৃতের স্ত্রী, মাতা, বোন, বিমাতা নারীর জ্ঞাতির সম্পত্তি পাবে না। তবে শর্ত সাপেক্ষে কন্যা সম্পত্তি পাবে, যা চূড়ান্তভাবে পুরুষের হাতেই চলে যায়।
লিখা হয়েছে- ‘কেউ যদি অপুত্রক হইয়া মরে, তবে তোমরা তাহার অধিকার (সম্পত্তি) তাহার কন্যাকে দিবে।’ (গণনা পুস্তক ২৭ : ৮)।
সুতরাং কি দাঁড়াল? যদি মেয়েটির কোন ভাই থাকে, তাহলে উক্ত মেয়ের কোন অংশ পিতা থেকে পাবে না।
বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) অনুযায়ী মহিলাকে উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার কারণে ইহুদী সমাজে বিধবারা হয় অত্যন্ত দরিদ্র ও অসহায়। স্বামীর আত্মীয় স্বজন তার খরচাদির ব্যবস্থা করলেও তার নিজের হাতে কোন শক্তি নেই তাদেরকে খরচে বাধ্য করার। বরং তাদের অনুগ্রহের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকে না। (ইশাইয়াঃ ৫৪/৪)
এজন্য ইসরাঈলে বিধবাগণ সমাজে সবচেয়ে নিম্ন শ্রেণীভুক্ত হয়ে থাকে।
কিন্তু বিধবাদের সমস্যার এখানেই শেষ নয়; বরং বাইবেলে (জেনেসিসঃ৩৮)
এসেছে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী সন্তানহীনা হলে স্বামীর ভাইয়ের সাথে বিবাহ বসবে যদিও সে বিবাহিত হয়। উদ্দেশ্য হল তার ভাইয়ের যেন সন্তান হয় এবং তার নাম মৃত্যুর পরেও সমাজে বেঁচে থাকে।
ইয়াহুযা আওনানকে বললেন: ‘তোমার ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে যাও, তাকে বিবাহ কর এবং তোমার ভাইয়ের বংশকে রক্ষা কর’। {জেনেসিসঃ ৩৮/৮}
বিধবা নারীকে এ বিবাহে দ্বিমত করার কোন অধিকার দেয়া হয়নি। তাকে শুধুমাত্র মৃত স্বামীর উত্তরাধিকার সম্পদের অন্তর্ভুক্ত মনে করা হয়। তার দায়িত্ব শুধু তার মৃত স্বামীর বংশ রক্ষা করা। আজও ইসরাঈলে এ প্রথাই চালু রয়েছে।
আর হিন্দু ধর্মমতে তো স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর বেঁচে থাকারই কোন অধিকার ছিল না। তাকে স্বামীর সাথে সতিদাহের নামে পুড়িয়ে ফেলা হতো। আর ইসলামপূর্ব আরবের প্রচলন ছিল, স্বামী মৃত্যুবরণ করলে বিধবা নারীকে স্বামীর পরিবারের মিরাস পণ্য বলে গণ্য করা হতো। বিধবা নারীর নিজের ইচ্ছায় কিছুই করার অধিকার ছিল না।
সেখানে ইসলাম বিধবা নারীদের কী পরিমাণ সম্মান ও ইজ্জত প্রদান করেছে তা বলাই বাহুল্য। কয়েকটি বিষয় নিচে উদ্ধৃত করা হল,
ইসলামে বিধবার পুনঃ বিবাহের অধিকার
নারীদের প্রতি ইসলামের মর্যাদাপূর্ণ শ্বাশ্বত বিধান লঙ্ঘনের কারণে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় বিধবা নারীদের বঞ্চনার চিত্র বেশ হতাশাজনক। বিধবা নারীরা পারিবারিক কাঠামোতে ভীষণভাবে অবহেলিত। সমাজে মানুষ হিসেবে যতটুকু মর্যাদা থাকার কথা তা তাদের নেই। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র নারীদের এই সমস্যা আরও বেশি। এক কথায় সমাজের বিধবা নারীরা মর্যাদাগতভাবে প্রচুর বৈষম্য ও নানা উৎপীড়নের শিকার। তারা বিভিন্ন কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ ও অযৌক্তিক প্রথাগত বাঁধার সম্মুখীন। এ বাঁধার কারণে তারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয়বার ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে পারে না। প্রায়ই দেখা যায়, অল্প বয়সে কোনো নারী বিধবা হলে সেই নারীর আবার বিয়ে দেওয়ার কথা অনেকে ভাবে না। ভাবে না তার নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্বের কথা। অথচ তারও নিজের জীবন বলে কিছু আছে। আসলে সমাজ ও পরিবারকেই তা ভাবতে হবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন। এখানে হীনমন্যতার কোনো অবকাশ নেই।
বিধবা নারীর বিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত বিষয়। ক্ষেত্রবিশেষে সামাজিক, জাতীয় ও ধর্মীয় প্রয়োজনে বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করা শ্রেয় এবং তা অগ্রাধিকারের দাবি রাখে। এ ক্ষেত্রে সবার চিন্তা করা প্রয়োজন যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর স্ত্রীদের মধ্যে হযরত আয়েশা (রা.) ব্যতিত অন্য সব স্ত্রী ছিলেন বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা।
রাসূলে কারীম (সা.) প্রথম বিয়ে করেন রাসূল (সা.) থেকে প্রায় অধের্ক বয়স বেশি ৪০বছর বয়স্কা বিধবা নারী আম্মাজান হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.) কে। খাদিজা (রা.) এর ইন্তেকালের পর ক্রমান্বয়ে দশজন নারীকে বিবাহ করেন। যাদের আটজনই ছিলেন বিধবা নারী। যথা-
১. হযরত হাফসা (রা.) ২. হযরত সওদা (রা.)। ৩. উম্মুল মাসাকীন হযরত জয়নব (রা.) ৪. হযরত উম্মে সালমা রাঃ ৫. হযরত জুআইরিয়া (রা.) ৬. হযরত উম্মে হাবীবা (রা.) ৭. হযরত মাইমুনা (রা.) ৮. হযরত সফিয়্যা (রা.)।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা, মানবিক কারণ, ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে তৎকালীন আরবের কুসংস্কার উচ্ছেদ করার জন্য এসব বিয়ে করেছিলেন।
বিধবা বিয়ে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারীমে নানাভাবে উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান
করা হয়েছে। ইসলাম বলে, বিধবা নারী দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারবে। ইসলাম কোনো বিধবাকে ঘৃণা বা অবজ্ঞার চোখে দেখে না। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের নিজেদের স্ত্রীদের রেখে যাবে, সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেরা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা (ইদ্দত পালন) করবে। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোনো পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’ {সূরা আল বাকারা : ২৩৪}
যে নারীটির সমগ্র নির্ভরশীলতার জায়গা ছিল তার স্বামী, সেই স্বামীর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া তাকে যেন অথৈ সাগরে ফেলে দেয়। স্ত্রী খড়কুটো আঁকড়ে ধরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন। হাল ধরেন সংসারের। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে পার করে দেন বছরের পর বছর। যেখানে একজন পুরুষের স্ত্রী মারা গেলে পরিবার ও সমাজের লোকদের আফসোস-সহানুভূতির সীমা থাকে না। বছর না ঘুরতেই তাকে বিয়ে করানোর তোড়জোড় চলে, তিনি যে বয়সেরই হোন না কেন। তাকে বিয়ে করায় পরিবার। একটু বয়স কম হলে তো কথাই নেই। সারাজীবন লোকটা থাকবে কী করে একা একা? সহানুভূতি সবার। পুরুষের একা থাকার কষ্টের চিন্তা সবার। কিন্তু কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে তার একা থাকা নিয়ে ছিটেফোঁটা চিন্তা নেই অনেকের। চিরন্তন ভাবনা: একা থাকায় নারীর আবার কষ্ট কিসের? ছেলেমেয়ে আছে না! ওদের মানুষ করতে সময় কোথা দিয়ে পার হবে, টেরও পাবে না। একটু বয়স হওয়া, সন্তান বড় হয়ে যাওয়া মায়েদের পুনর্বিবাহের কথা ভাবাতো রীতিমতো অপরাধ।
বিধবা নারীর বিয়ের ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনেরই বেশি আপত্তি লক্ষ্য করা যায়। বলা হয়, সন্তানরা বড় হয়ে যাচ্ছে, এখন এটা কীভাবে মানা যায়? আসলে এটা কোনো যুক্তিযুক্ত কথা নয়। বিধবা নারী তার জীবনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তিনি যদি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তা পূরণ করাই হবে যথার্থ কাজ। এখানে দেখতে হবে প্রয়োজন ও চাহিদা। বস্তুত প্রয়োজন ও চাহিদার কারণে এমন অনেক কাজই করতে হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে সামাজিক রীতিনীতি ও ভালোবাসা-বিরুদ্ধ মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে কাজটিকে সামাজিক রীতি ও ভালোবাসার সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হবে না। প্রয়োজনের সঙ্গে ভালোবাসা ও সামাজিক রীতির কিসের সংঘাত? এই প্রয়োজনের খাতিরেই তো হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পুনর্বিয়ে করেছিলেন এবং করেছিলেন তার সাহাবিরাও। কাজেই এটা তাদের সুন্নত। এতে আপত্তির কোনো অবকাশ নেই। বরং সুন্নত হিসেবে এ ব্যবস্থাকে সবার সাদরে গ্রহণ করা দরকার।
ইসলামে বিধবা নারীদের মর্যাদা
অনেক নারী এমন আছেন, যারা বিধবা হওয়ার পর দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণে আগ্রহী হন না। কষ্ট হলেও একাকী জীবন যাপন করার পথকেই বেছে নেন। তাদের জন্য সান্ত¦না ও আখেরাতের খুশখবরী জানিয়ে আশ্বস্ত করেছেন রাসূল (সা:)। হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا وَامْرَأَةٌ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ كَهَاتَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» وَأَوْمَأَ يَزِيدُ بِالْوُسْطَى وَالسَّبَّابَةِ امْرَأَةٌ آمَتْ مِنْ زَوْجِهَا ذَاتُ مَنْصِبٍ، وَجَمَالٍ، حَبَسَتْ نَفْسَهَا عَلَى يَتَامَاهَا
হযরত আউফ বিন মালিক আশজায়ী (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি এবং কষ্ট ও মেহনতের কারণে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মহিলা কিয়ামতের দিন দুই আঙ্গুলের মত নিকটবর্তী হবো। রাসূল (সা:) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় পাশাপাশি করে দেখালেন। তথা বংশীয় কৌলিন্য ও সৌন্দর্যের অধিকারিনী যে বিধবা নারী প্রয়োজন থাকা সত্বেও এতিম সন্তানদের লালন পালনের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়বার স্বামী গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৪৯}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” أَنَا أَوَّلُ مَنْ يُفْتَحُ لَهُ بَابُ الْجَنَّةِ، إِلَّا أَنَّهُ تَأْتِي امْرَأَةٌ تُبَادِرُنِي فَأَقُولُ لَهَا: مَا لَكِ؟ وَمَا أَنْتِ؟ فَتَقُولُ: أَنَا امْرَأَةٌ قَعَدْتُ عَلَى أَيْتَامٍ لِي
হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, আমিই ঐ ব্যক্তি যার জন্য সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। কিন্তু এক মহিলা এসে আমার আগে জান্নাতে যেতে চাইবে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো যে, তোমার কি হল? তুমি কে? তখন সে বলবে, আমি ঐ মহিলা যে স্বীয় এতিম বাচ্চার লালন-পালনের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছে [বিবাহ করা থেকে]। {মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৬৬৫১}
যেসব বিধবা বিয়ের যোগ্য বয়সের নয়, আবার তাদের কোন সন্তানও নেই। সেসব বিধবাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াকে অনেক বড় পূণ্যের কাজ বলে রাসূল (সা:) ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ، كَالْمُجَاهِدِ فِي
سَبِيلِ اللَّهِ، أَوِ القَائِمِ اللَّيْلَ الصَّائِمِ النَّهَارَ»
হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, বিধবা এবং মিসকিনের সহযোগিতাকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর ন্যায়, বা সর্বদা রাতে নামাযরত ও দিনের বেলা রোযাদার ব্যক্তির মতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০৩৮,৫৩৫৩}
এরকম আরো অসংখ্য হাদীস প্রমাণ করে প্রতিটি সামর্থবান ব্যক্তি বিধবা নারীদের যথাযথ সম্মান ও প্রয়োজনে সহযোগিতা করা উচিত। এটাই ইসলামের দাবি এবং মানবতার দাবি। আসলে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারীর শোকে কাতর হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। নিরাপদ আশ্রয় ও মানবিক মর্যাদা হারানোর কারণে সমাজ-সম্প্রদায়ে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণও তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। একজন বিধবা নারী তার উত্তরাধিকার সম্পত্তি, সন্তান, স্বামী, সংসার, দেনমোহর, নিরাপদে কাজ করা, সমাজের কাছে সাহায্য পাওয়া, সামাজিক মর্যাদাসহ সকল সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু তারা এই অধিকারগুলো পাচ্ছেন না। একজন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের মর্যাদা প্রয়োজন তা বিধবা হওয়ার মধ্য দিয়ে হারাতে হয় এবং রাষ্ট্রীয় কোনো প্রচেষ্টাও তাদের জন্য পরিলক্ষিত হয় না। পরিবার এবং সমাজে তাদের প্রতি যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সে কারণে তারা নিজেরাও নিজেদের গুরুত্বহীন বলে মনে করেন, ভাগ্যকে দায়ী করেন। এমতাবস্থায় বিধবা নারীদের চাহিদা মোতাবেক তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের আর্থিক, সামাজিক এবং মানসিক দুরবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, বিধবা মানেই অভিশাপ নয়। একথা আমাদের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। অসহায় বিধবাদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তির জন্যই জরুরী। তাই আসুন বিধবাকে অভিশাপ নয়। কাছে টেনে মায়ের, বোনের মর্যাদা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই। আল্লাহ তাআলা আমাদের বঞ্চিত নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি হাসিল করার তৌফিক দান করুন।