প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / কুরআন ও হাদীস থাকতে পীর ধরতে হয় কেন?

কুরআন ও হাদীস থাকতে পীর ধরতে হয় কেন?

প্রশ্ন

কয়েক দিন দরে ফেইসবুক এ একটা কথা বার বার সমালোচনা হয়, আমি সবার কাছে একটা প্রশ্ন করি,যার নাম সুনলে হাত পায়ের পশম খারিরে যায়।বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানি(র:) তিনি কি পীর চিলেন না? যদি তিনি পীর হয়ে থাকেন তাহলে আমার পীর ধরা যাবে কিনা?,আর আহেলে হাদিস নাম ধারি তারা বলে ইসলামে পীরের বিধান বলতে কিছু নাই।যদি কুরাআন হাদিস এ না থাকলে তাহলে আমার পীর ধরবো কেনো? কুরাআন হাদিস এর আলোকে আমাকে ব্যাখ্যা করে

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

কুরআন ও হাদীস থাকতে পীরের কাছে যাবো কেন?

এ প্রশ্নটি যারা করেন, তারা পীরের অর্থই জানেন না। দ্বিতীয় চরম মুর্খ হবার কারণে উপরোক্ত কথাটি সমাজে প্রচার করে থাকেন।

আসলে পীর মানে হল মুরুব্বী। বয়স্ক। মানে যিনি অভিজ্ঞ। অর্থাৎ কিভাবে আল্লাহকে পাওয়া যাবে? কিভাবে আমল করলে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যাবে? কিভাবে চললে দ্বীনের উপর আমল সহজ হবে? শরীয়তের পূর্ণ পাবন্দ হওয়া যাবে?

ইত্যাদি বিষয়ে যিনি অভিজ্ঞ? আর সেই অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট যিনি তার উস্তাদ তথা শায়েখ থেকে পেয়েছেন তিনিই হলেন পীর বা শিক্ষক।

এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে, কুরআন ও হাদীস থাকতে তা শিখার জন্য উস্তাদের কাছে যেতে হবে কেন? মাদরাসায় ভর্তি হবে কেন?

আমরা উক্ত ব্যক্তিকে কি বলবো?

বলবো, বেটা! কুরআন ও হাদীসে কি আছে, তার সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য এ বিষয় যিনি ভাল করে জেনেছেন, তার কাছে যেতে হয়। তার কাছে থেকে শিক্ষা নিতে হয়। তারপর উক্ত উস্তাদ যদি আমাকে সার্টিফিকেট দেয় যে, আমি তা শিখতে পেরেছি। তখন সেখান থেকে মুজাহাদা মেহনত করে পড়াশোনা করে, পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বের হবার পর আমারও আবার কুরআন ও হাদীস পড়ানোর যোগ্য বলে কাজ করার অধিকার হয়।

একই অবস্থা পীর মুরিদীর। একজন পীর তিনি শিক্ষক। তিনি আল্লাহকে পাওয়ার পথ সম্পর্কে সমধিক অবগত। তিনি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। শরীয়ত কিভাবে তবিয়তে পরিণত করতে হয়, এ বিষয়ে একজন হন অভিজ্ঞ। তাই আল্লাহভোলা মানুষগুলো তার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে যায়। যেন সে কুরআন ও হাদীস বুঝার জন্য মাদরাসায় ভর্তি হয়। উস্তাদের কাছে গমণ করে।

তারপর পীর সাহেব তার মুরীদকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। যেন উস্তাদ তার ছাত্রকে কুরআন ও হাদীস বুঝার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

আরো সহজ ভাষায় বললে-

মাদরাসা হল, কুরআন ও হাদীস বুঝার একটি থিউরীক্যাল মাধ্যম। আর পীর সাহেবের খানকাহ হল কুরআন ও হাদীসের উপর আমল শিখার প্র্যাক্টিক্যাল মাধ্যম।

মাদরাসায় যিনি শিক্ষা প্রদান করেন, তার নাম হল টিচার, মুআল্লিম, শিক্ষক উস্তাদ। তেমনি কুরআন ও হাদীসের উপর আমল প্রশিক্ষণ দাতার নাম হল পীর, মুর্শীদ।

মাদরাসার শিক্ষার্থীর নাম হল, ছাত্র। তালেবুল ইলম। ষ্টুডেন্ট। আর পীর সাহেবের খানকার শিক্ষার্থীল নাম হল মুরীদ।

পীর মুরীদের আসল  হাকীকত যদি কোন ব্যক্তি জানে, তাহলে কোন ব্যক্তি “কুরআন ও হাদীস থাকতে পীর ধরবো কেন?” এমন মুর্খতাসূলভ প্রশ্ন করতেই পারে না। কারণ এটি পুরোটাই আহমকী প্রশ্ন।

যেমন “কুরআন ও হাদীস থাকতে, তা শিখার জন্য উস্তাদের কাছে যাবো কেন?” প্রশ্নটি একটি আহমকী ও বোকামীসূলভ প্রশ্ন।

তবে এক্ষেত্র্রে জেনে রাখা উচিত যে, যেমন দ্বীন শিখা আবশ্যক। তেমনি দ্বীনের উপর সহীহ পদ্ধতিতে আমল করাও আবশ্যক।

এখন কোন ব্যক্তি যদি উস্তাদের কাছে না গিয়ে, মাদরাসায় ভর্তি না হয়ে দ্বীন শিখে ফেলতে পারে, তাহলে তার যেমন মাদরসায় ভর্তি হবার, উস্তাদের কাছে যাবার দরকার নেই। কারণ তার মূল উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেছে।

তেমনি কোন ব্যক্তি যদি পীর তথা মুর্শীদের কাছে না গিয়েই সে তার আত্মশুদ্ধি করে ফেলতে পারে, তাহলে তার জন্য কোন পীর বা মুর্শীদের কাছে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ পীর বা মুর্শীদের কাছে যাবার যে প্রয়োজনীয়তা যে উদ্দেশ্যে ছিল তা তার অর্জিত হয়ে গেছে।

বাকি রইল আব্দুল কাদীর জিলানী রহঃ ছিলেন কি না? পীর মানে শিক্ষক। এ শিক্ষক মূলত পূর্বসূরী সমস্ত বড় উলামায়ে কেরামই ছিলেন। হযরত আব্দুল কাদীর জিলানী রহঃ পীর ছিলেন না, এমন অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য যারা প্রদান করেন, তারা আব্দুল কাদীর জিলানী রহঃ রহঃ এর নিজের লেখা “গুনিয়াতুত তালেবীন” কিতাবটি পড়লেই আশা করি সেই  ভুল ভেঙ্গে যাবে।

যে ব্যক্তি আব্দুল কাদীর জিলানী রহঃ এর নিজের লেখা “গুনিয়াতুত তালেবীন” নামক গ্রন্থটিও দেখেনি, তার  জন্য এ মহান মনীষী সম্পর্কে মন্তব্য করার কি অধিকার থাকতে পারে?

গুনিয়াতুত তালেবীন গ্রন্থের ২য় খন্ডের শেষ দিকের আলোচনাগুলো দেখলেই পরিস্কার হয়ে যাবে।

১১ নং অধ্যায়ের কয়েকটি শিরোনাম দেখলেই আমাদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। যেমন-

১-মুরীদের আদাব।

২-ইরাদা, মুরীদ ও মুরাদ।

৩-মুতাসাওয়িফ এবং সূফী।

৪-সুলুকের পথে প্রাথমিক ব্যক্তিদের জন্য আবশ্যকীয় বিষয়াবলী।

ইত্যাদি, ইত্যাদি।

তাছাড়া হযরতের লেখা “আদাবুস সুলুক ওয়াত তাওয়সসুল ইলা মানাজিলিল মুলুক” নামক গ্রন্থটি দেখলেই হবে। যে গ্রন্থটি পীর মুরীদীর আদাবের উপর লিখিত।

তিনি পীর না হলে এসব আলোচনা তিনি কেন করলেন তার কিতাবে?

শেষ কথা!

কারো যদি নিজে নিজে কুরআন ও সুন্নাহ অনুপাতে স্বীয় আত্মশুদ্ধি হয়ে যায়, তাহলে কোন পীর বা শিক্ষকের কাছে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। যদি না হয়, তাহলে পীর বা শিক্ষকের কাছে গিয়ে স্বীয় নফসের শুদ্ধায়ন করা আবশ্যক।

বাকি উস্তাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে যেমন আমরা দেখি উক্ত বিষয়ে শিক্ষক নিজে প্রাজ্ঞ কি না? তেমনি দ্বীনী শরীয়ত অনুসরণে মনকে আত্মাশুদ্ধি করতে গিয়ে অবশ্যই ভাল করে যাচাই করতে পীর সাহেব নিজের আত্ম শুদ্ধ করেছেন কিনা?

এর সহজ পথ হল, পীর সাহেব কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অভিজ্ঞ কিনা?

তিনি সুন্নাতের পাবন্দ কি না?

তার চেহারা, তার আখলাক, তার পরিবার, তার আমল, তার জীবনের বাঁকে বাঁকে সুন্নাতের অনুসরণ আছে কি না?

তিনি দুনিয়াবিমুখ কিনা?

তাকে কোন আল্লাহ ওয়ালা উস্তাদ বা পীর পীর মুরিদী তথা শিক্ষকতা করার অনুমোদন প্রদান করেছেন কি না?

পর্দাসহ যাবতীয় শরীয়তের মাসায়েলের কঠোর পাবন্দ কি না?

ইত্যাদি সমস্ত বিষয় দেখতে হবে। যদি কোন একটি বিষয়েও তাকে গাফেল দেখা যায়, তাহলে এমন পীর বা শিক্ষকের কাছে শিখতে যাওয়া, নিজের ঈমান আমলকে ধ্বংস করার শামিল হবে।

তাই দেখে শুনে, যাচাই করে পীরের কাছে যাওয়া উচিত।

দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, রাজারবাগী, সুরেশ্বরী, ফরীদপুরী, এনায়েতপুরী, চন্দ্রপুরী, কামাল্লার ভন্ড পীর, মাইজভান্ডারী, কেল্লাবাবা, খাজাবাবা, রেজভী, এসব ভন্ড ও ঈমানবিধ্বংসী পীরের কাছে গেলে আখেরাত ধ্বংস হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

তাই পীর ধরার ক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। স্থানীয় হক্কানী কওমী মাদরাসা পড়ুয়া বড় কোন আলেমের পরামর্শে পীর ধরতে যান। নিজে নিজে পন্ডিতী করে ভন্ড পীরের খপ্পরে পরে নিজের দ্বীন ও ঈমান ধ্বংস করবেন না।

জাযাকুমুল্লাহ।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *