প্রশ্ন
লা-মাযহাবীদের আরেকটি অভিযোগ হল, উলামায়ে দেওবন্দের আকিদা হল, তাদের আউলিয়ারা মরে না, বরং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর হন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালে কৃতার্থ হবো।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমে আমরা ঘটনাটি দেখে নেই।
“এক বুযুর্গ বলেন, আমি এক মুরীদকে গোসল দিয়েছি। সে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরে ফেলল। আমি বললাম, আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ছেড়ে দাও। আমি জানি যে, তুমি মারা যাওনি; এটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর মাত্র। সে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ছেড়ে দিল। [ উর্দু ফাযায়েলে আমাল, ২য় খন্ড, ফাযায়েলে সাদাকাত-৪৭৮, বাংলা ফাযায়েলে সাদাকাত-২য় খন্ড, ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ,৩৩১ পৃষ্ঠা]
উক্ত ঘটনাটি শাইখুল হাদীস জাকারিয়া রহঃ নিজের পক্ষ থেকে লিখেন নি। বরং আল্লামা ইয়াফেয়ী রহঃ এর কিতাব ‘রউজুর রাইয়্যাহীন’ কিতাব থেকে নকল করেছেন। যা উক্ত ঘটনা লিখার একটু পড়েই লিখা হয়েছে। দেখুন উর্দু ফাযায়েলে আমাল, ২য় খন্ড, ফাযায়েলে সাদাকাত-৪৭৮ পৃষ্ঠা, বাংলা ফাযায়েলে ফাযায়েলে সাদাকাত, ২য় খন্ড, ৩৩২ পৃষ্ঠা।
তাহলে উক্ত ঘটনার উপর সমালোচনা করতে হলে, প্রথমে সমালোচনা করতে হবে রউজুর রাইয়্যাহীন গ্রন্থের উপর। এবং উক্ত গ্রন্থের উপর। কিন্তু তা না করে ঢালাওভাবে উলামায়ে দেওবন্দের উপর অপবাদ কেন?
ইমাম ইয়াফেয়ী রহঃ [মৃত্যু ৭৬৮ হিজরী] উক্ত ঘটনাটি ‘রউজুর রাইয়্যীন’ কিতাবের ১৭০ নং পৃষ্ঠায় নকল করেছেন।
তাহলে নকলকারীর উপর অভিযোগ। কিন্তু যার থেকে নকল করা হল, তার উপর অভিযোগ নেই কেন?
শুধু কি তাই? শায়েখ জাকারিয়া রহঃ উক্ত ঘটনা নকল করার বহু আগেই উক্ত ঘটনা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ [মৃত্যু ৯১১ হিজরী] তার কিতাব ‘শরহুস সুদূর’ এর ২০৮ নং পৃষ্ঠায় নকল করেছেন।
এখন প্রশ্ন হল, ইমাম সুয়ুতী রহঃ, যার ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম, ইমাম, হাফেজ, তাজুল মুফাসসিরীন এবং ইমামুল মুহাদ্দিসীন বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন [আলআ’লাম লিযযুরকানী-৩/৩০১] তার উপরও একই পদ্ধতিতে অপবাদের ঝড় তুলতে পারবেন?
আরো শুনুন!
উক্ত ঘটনাটি ইমাম আবুল কাসেম ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ রহঃ [মৃত্যু ৫৩৫ হিজরী] তার কিতাব ‘সিয়ারুস সালাফে সালেহীন’ নামক কিতাবে সনদসহ বর্ণনা করেছেন। [সিয়ারুস সালাফে সালেহীন-১২৪৭]
সনদসহ বর্ণনাটির আরবী পাঠ!
أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ الْيَمَانِيُّ، أَخْبَرَنَا سَعِيدٌ الزَّنْجَانِيُّ، أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ الْحَنَّائِيُّ، أَخْبَرَنَا عَبْدَانُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ دَاوُدَ الدَّقِّيُّ، قَالَ: سَمِعْتُ أَحْمَدَ بْنَ مَنْصُورٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ السَّوُسِيَّ يَقُولُ: ” غَسَّلْتُ مُرِيدًا فَأَمْسَكَ إِبْهَامِي وَهُوَ عَلَى الْمُغْتَسَلِ، فَقُلْتُ: يَا بُنَيَّ خَلِّ يَدِي، أَنَا أَدْرِي أَنَّكَ لَسْتَ بِمَيِّتٍ، وَإِنَّمَا هِيَ نَقْلَةٌ مِنْ دَارٍ إِلَى دَارٍ فَخَلَّاهَا
সনদের রাবীগণ!
১- ইমাম ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ রহঃ।
২- ইসমাঈল আলইয়ামেনী রহঃ।
৩- সা’দ যানজানী রহঃ।
৪- আলী বিন মুহাম্মদ হান্নায়ী রহঃ।
৫- আবদান বিন উমর রহঃ।
৬- মুহাম্মদ বিন দাউদ আদদাক্কী রহঃ।
৭- আহমাদ বিন মানসূর রহঃ।
৮- আবু ইয়াকুব সুসী রহঃ।
এবার সনদের রাবীদের অবস্থা খেয়াল করুন!
১ ইমাম ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ রহঃ। মৃত্যু ৫৩৫ হিজরী।
তাকে ইমাম যাহাবী রহঃ হাফিজে কাবীর উপাধী দিয়েছেন।
ইমাম আবু মূসা রহঃ বলেন, তিনি হাফিজ, ইমামুল আইয়িম্মাহ, উস্তাদুল উলামা এবং জমানার আহলে সুন্নাতের আদর্শ ছিলেন। [তারীকুল ইসলাম লিযজাহাবী-১১/৬২৩-৬২৪]
২ ইসমাঈল আলইয়ামেনী রহঃ
তারীখে বাগদাদের ৬ষ্ঠ খন্ডের ২৯১ পৃষ্ঠায় তার জীবনী আনা হয়েছে। এবং তার থেকে সিক্কা রাবীগণ বর্ণনা করেছেন মর্মে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
ইমাম কাসিম বিন কুতলুবুগা রহঃ তাকে সিক্বা রাবীদের মাঝে গণ্য করেছেন। দেখুন ‘কিতাবুস সিক্বাত’ লিকাসিম বিন কুতলুবুগা-৮/১৩৪]
সুতরাং বুঝা গেল তিনিও গ্রহণযোগ্য রাবী।
৩ সা’দ যানজানী রহঃ।
মৃত্যু ৪৭১ হিজরী। যার ব্যাপারে ইমাম সাঈদ রহঃ বলেন, তিনি হাফিজ, মুত্তাকী এবং সিক্বা ছিলেন। [তারীখুল ইসলাম-১০/৩২৭]
নোটঃ
সিয়ারুস সালেহীন এর ছাপা কপিতে ‘সা’দ জানযানী’ এর স্থলে ‘সাঈদ যানজানী’ লিখা হয়েছে। যেটি কম্পোজকারীর ভুল।
কেননা, বিশুদ্ধ নাম হবে সা’দ যানজানী। আর তিনিই আলী বিন মুহাম্মদ হান্নায়ী থেকে বর্ণনা করেছেন।
কারণ হল, এই সিয়ারুস সালেহীন কিতাবের দুই স্থানে এই সনদ বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ ইমাম ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ, ইসমাইল আলইয়ামেনী থেকে, তিনি সা’দ যানজানী থেকে, তিনি আলী বিন মুহাম্মদ আলহান্নায়ী থেকে। [সিয়ারুস সালাফে সালেহীন-১২৪৪]
১২৪৫ নং পৃষ্ঠায় ও তা’ই। দেখুন [সিয়ারুস সালাফে সালেহীন-১২৪৫]
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, উভয় সনদেই যেহেতু ইসমাঈল ইয়ামেনী এবং আলী বিন মুহাম্মদ আলহান্নায়ী এর মাঝে সা’দ জানযায়ী বিদ্যমান রয়েছেন।
যা বুঝাচ্ছে, তার নাম সাদ যানজায়ী হবে। ১২৪৫ পৃষ্ঠায় কম্পোজকারীর ভুলের কারণে “ইয়া” তথা বাংলায় “ঈ” অতিরিক্ত এসে গেছে।
যাইহোক, বুঝা গেল, তিনি সা’দ যানজায়ী রহঃ। আর তিনি হাফিজ।
৪ আলী বিন মুহাম্মদ হান্নায়ী রহঃ
মৃত্যু ৪২৮ হিজরী। যাকে ইমাম যাহাবী রহঃ মুহাদ্দিস, হাফিজ এবং জাহেদ সাব্যস্ত করেছেন।
ইমাম আব্দুল আজীজ কাত্তানী রহঃ বলেন, তিনি সালেহ শায়েখ ছিলেন। [তারীখুল ইসলাম লিযজাহাবী-৯/৪৫০]
৫ আবদান বিন উমর রহঃ
তিনিও মকবুল রাবী। তার থেকেও দু’জন সিক্বা রাবী বর্ণনা করেছেন। একজন হলেন, আলী বিন মুহাম্মদ [মৃত্যু ৪২৮ হিজরী। যার কথা উপরে বর্ণিত হয়েছে।
আরেকজন হলেন হুসাইন বিন মুবাশশার রহঃ। মৃত্যু ৪৫৩ হিজরী। তিনিও সিক্কা রাবী। [তারীখে দিমাশক-১৪/৩২৮]
আবদান বিন উমর রহঃ এর বিবরণ তারীখে দামেশক গ্রন্থের ৩৭ নং খন্ডের ৩৫৫-৩৫৬ পৃষ্ঠায় বিদ্যমান।
সুতরাং বুঝা গেল, তিনিও মকবুল রাবী।
৬ আবু বকর মুহাম্মদ বিন দাউদ আদ্দাক্কী রহঃ
যার ব্যাপারে ইমাম যাহাবী রহঃ বলেন, তিনি সুফী ও জাহেদদের শায়েখ।
আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রহঃ বলেন, তিনি স্বীয় সময়কার বড় মাশায়েখ এবং তাদের মাঝে সবচে’ বড় উত্তম ব্যক্তিদের মাঝে গণ্য ছিলেন।
ইমাম খতীব বাগদাদী রহঃ বলেন, তিনি সুফীদের বড় শায়েখ ….. এবং কিরাতের হাফিজ ছিলেন।
আলী বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসান রহঃ বলেন, তিনি তার সময়কালের বড় আলেম ছিলেন। [তারীখে দামেশক-৫২/৪৩৫, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১৬/১৩৮]
তারীখে দামেশক!
সিয়ারু আলামিন নুবালা!
৭ আহমাদ বিন মানসূর রহঃ
যার কুনিয়্যাত আবুল আব্বাস। ইমাম কাসিম বিন কুতলুবুগা রহঃ তাকে সিক্বাত গ্রন্থে শামিল করেছেন। ইমাম যাহাবী রহঃ তাকে ইমাম এবং হাফিজ মন্তব্য করেছেন। [তারীখে দামেশক-৫২/৪৩৬, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১৬/৪৭২, সিক্বাত লিলকুতলুবুগা-২/১০৬]
তারিখে দামেশক
সিয়ারু আলামিন নুবালা
সিক্কাত লিলকুতলুবুগা
৮ আবু ইয়াকুব সুসী রহঃ
যিনি প্রসিদ্ধ সুফীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
উক্ত ঘটনাটি ইমাম আবুল কাসেম আব্দুল কারীম বিন হাওযানী কুশাইরী রহঃ [মৃত্যু ৪৬৫ হিজরী] স্বীয় কিতাব ‘আররিসালা লিলকুশাইরী’ নামক গ্রন্থে সনদসহ নকল করেছেন।
ইমাম কুশাইরী রহঃ এর ব্যাপারে ইমাম সুবকী রহঃ [মৃত্যু ৭৭১ হিজরী] বলেছেন, তিনি মুতলাকান ইমাম, ইমামুল আইয়িম্মাহ, শাইখুল মাশায়েখ এবং আইয়িম্মায়ে মুসলিমীন এর অন্তর্ভূক্ত।
ইমাম খতীব বাগদাদী রহঃ [মৃত্যু ৪৬৩ হিজরী] বলেন, তিনি সিক্কা। [তাবাক্বাতুল কুবরা লিসসুবকী-৫/১৫৩, তারীখে বাগদাদ-১১/৮৩]
তারীখে বাগদাদ
ইমাম কুশাইরী রহঃ উক্ত ঘটনার সনদ এই বর্ণনা করেছেনঃ
ইমাম কুশাইরী রহঃ, তিনি মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ সুফী রহঃ থেকে, তিনি হুসাইন বিন আহমাদ আলফার্সী রহঃ থেকে, তিনি আদদাক্কী রহঃ থেকে, তিনি আহমাদ বিন মানসূর রহঃ থেকে, তিনি আবু ইয়াকুব সুসী রহঃ থেকে বর্ণনা করেন।
দেখুন- আররিসালা লিলকুশাইরী-৫৯২]
আরেকটি সনদ। যে সনদে কুশাইরী রহঃ বর্ণনা করলেন। যা উক্ত ঘটনাকে আরো শক্তিশালী করছে।
মোটকথা হল, উক্ত ঘটনাটি বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত।
এবার লা-মাযহাবী বন্ধুদের কাছে আমাদের প্রশ্ন হল, আলোচিত ঘটনাটি বর্ণনার কারণে উলামায়ে দেওবন্দ ও শায়েখ জাকারিয়া রহঃ এর উপর যে ফাতওয়া আরোপ করা হয়, সেই একই ফাতওয়া কি তারা
ইমাম ইয়াফেয়ী [মৃত্যু ৭৬৮ হিজরী]
ইমাম সুয়ুতী রহঃ [মৃত্যু ৯১১ হিজরী]
ইমাম কুশাইরী রহঃ। [মৃত্যু ৪৬৫ হিজরী
ইমাম ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ [মৃত্যু ৫৩৫ হিজরী]
এর মত শায়েখদের বিরুদ্ধেও আরোপ করতে পারবেন?
শায়েখ জাকারিয়া রহঃ আলোচিত ঘটনা নকল করে অপরাধী হলে, এর আগে যারা তাদের কিতাবে উক্ত ঘটনা এনেছেন, তাদের উপর একই অভিযোগ কেন উত্থাপিত হবে না?
বিষয়টির খোলাসা
উক্ত ঘটনার দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, মৃত্যু মানেই সব একদম নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নয়। বরং রূহ শরীর থেকে আলাদা হয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হওয়া। এ কারণেই আমরা মৃত্যুকে ইন্তেকাল বলে থাকি। ইন্তেকাল অর্থ হল স্থানান্তর হওয়া। মৃত্যু মানেই একদম ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়। বরং ইন্তেকাল তথা স্থানান্তর হওয়া।
উপরোক্ত বক্তব্যই বিভিন্ন শব্দে অনেক শরীয়ত বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন। যেমন
১
জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ, [মৃত্যু ৯১১ হিজরী] {শরহুস সুদূর-১৪, আলহাওয়ী লিসসুয়ূতী-২/১৪৯}
২
ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ কুরতুবী রহঃ [মৃত্যু ৬৭১ হিজরী] {তাফসীরে কুরতুবী-৯/৪৬৬}
৩
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহঃ [মৃত্যু ৭৫১ হিজরী] {কিতাবুর রূহ-৩৬}
৪
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ, [মৃত্যু-৮৫৫ হিজরী] {উমদাতুল কারী-১২/২৫১]
৫
ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবী রহঃ, [মৃত্যু-৫৪৩ হিজরী] {আহকামুল কুরআন-২/৩৮৪}
৬
ইমাম আবূল ফযল ইরাকী রহঃ, [মৃত্যু ৮০৬ হিজরী] {তরহুত তাসরীব-৩/৩০৭]
৭
আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সালেহ রহঃ, [মৃত্যু ৯৪২ হিজরী] {সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ-১০/২৪০]
৮
আল্লামা সামসুদ্দীন আবুল আউন মুহাম্মদ বিন আহমাদ সালিম রহঃ, [মৃত্যু ১১৮৮ হিজরী] {লামেউল আনওয়ার-২/৩৯
৯
আল্লামা আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন মুস্তাফা আলখালুতী রহঃ, [মৃত্যু ১১২৭ হিজরী] {রূহুল বয়ান-৩/৪৬]
১০
ইমাম আহমাদ বিন ইবরাহীম আলকুরতুবী রহঃ। [মৃত্যু ৬৫৬ হিজরী] {আততাযকিরাহ লিলকুরতুবী-১১২}
উপরোক্ত মুহাক্কিকদের বক্তব্য দ্বারা একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, মৃত্যুর মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। বরং স্থানান্তর হয়।
যারা মৃত্যুর মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, বিশ্বাস করে, তারা ইলম ও হাকীকত সম্পর্কে জাহিল ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ রহঃ [মৃত্যু ১০১ হিজরী] বলেন,
عَن بِلَال بن سعد أَنه قَالَ فِي وعظه يَا أهل الخلود وَيَا أهل الْبَقَاء إِنَّكُم لم تخلقوا للفناء وَإِنَّمَا خلقْتُمْ للخلود والأبد وَإِنَّكُمْ تنقلون من دَار إِلَى دَار
হে লোক সকল! তোমাদের ধ্বংস করার জন্য জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সর্বদা থাকার জন্য। তোমরা কেবল এক স্থান থেকে অপর স্থানে স্থানান্ত হবে। [শরহুস সুদূর লিসসুয়ুতী-১৪, ১৯]
যদি ওলী আল্লাহরা মারা না গিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের মৃত কেন বলা হয়?
জবাব
আল্লাহ তাআলা নিজেই পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেনঃ
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ [٣:١٦٩
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনোই মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। [সূরা আলেইমরান-৩: ১৬৯]
এখন প্রশ্ন হল, যারা কতল হয়ে গেছে আল্লাহ তাআলা তাদের কিভাবে জিন্দা বলছেন?
এ প্রশ্নের যে জবাব আপনি দিবেন, সেই জবাব বুযুর্গদের এসব ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, যারা ফাযায়েলে সাদাকাতে নকল করা ঘটনা উদ্ধৃত করে শিরকের ফাতওয়া প্রদান করে, থাকেন, তারা হাকীকত সম্পর্কে অজ্ঞ জাহিল ছাড়া আর কিছু নয়।
অপবাদের কবলে ফাযায়েলে আমাল [পর্ব-৯] হযরত শিবলী রহঃ এর ঘটনার উপর অভিযোগের জবাব
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]