প্রচ্ছদ / ইলম/জ্ঞান/শব্দার্থ / “ফানাফিল্লাহ” এর কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক প্রমাণ উলামায়ে দেওবন্দ কিয়ামত পর্যন্ত দিতে পারবে না?

“ফানাফিল্লাহ” এর কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক প্রমাণ উলামায়ে দেওবন্দ কিয়ামত পর্যন্ত দিতে পারবে না?

%e0%a6%a6%e0%a6%9c%e0%a6%97%e0%a7%8bপ্রশ্ন

দেওবন্দীদের ভ্রান্ত আকিদার প্রমাণ নিচে দেয়া হল,
সকল দেওবন্দীদের জন্য চ্যালেঞ্জ রইল…. যে আমার দেয়া বিরুদ্ধে কোন কারেক্ট জবাব দিবেন।

কিয়ামত পর্যন্ত কেউ এর বিরুদ্ধে জবাব দিতে পারবে না, হোক সে লুৎফুর রহমান মুফতী বা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী।

এবং তোরা যে ফানাফিল্লাহ এর ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়া এর ফাতওয়া বয়ান করো, সেটা কি হাদীসে আছে?

ইবনে তাইমিয়া কি শরীয়ত নাকি সে হালাল, হারামের পার্থক্যকারী, নাকি সে সাহাবী? নাকি সে তাবেয়ী বা তাবে তাবেয়ী। কোনটি?

মুর্খের দল এবং ভন্ড দেওবন্দী আলেমরা কখনোই একটি সহীহ হাদীস দ্বারা ইবনে তাইমিয়া এর ফাতওয়া এর প্রমাণ দিতে পারবে না।
আর সকল সুফী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে পয়দা হয়ে আছে।

আল্লাহ আমাদের দেওবন্দীদের আকিদা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

প্রশ্নকারী- Enamul Haque

মেইল- [email protected]

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তাআলা আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন। হিদায়াতের উপর মৃত্যু দান করুন এ দুআর মাধ্যমে আপনার প্রশ্নের জবাবটি শুরু করছি।

প্রশ্ন করতে হয় জানার জন্য। নিজের মনের মাঝে একটি বিষয়কে বদ্ধমূল করে নিয়ে তারপর প্রশ্ন করলে আসলে প্রশ্ন করে কোন ফায়দা নেই। এতে করে অহেতুক সময়ই অপচয় হয়। ফায়দা হয় না।

আপনি যেভাবে লিখেছেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। তারপরও প্রশ্ন করার মানে কি?

যাইহোক, আমরা হক কথা বলে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কারো কটু কথায় আমরা সহজে বিরক্ত হই না আল্লাহর রহমাতে।

 

যে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এবং দৃঢ়তার সাথে ফায়সালা জানিয়েছেন যে, এর কোন প্রমাণ আমরা দেখাতে পারবো না, সেই “ফানাফিল্লাহ” শব্দটির আসল হাকীকত কি আপনি জানেন?

এটি একটি পারিভাষিক শব্দ। শব্দের একটি শাব্দিক অর্থ থাকে, আরেকটি পারিভাষিক অর্থ থাকে। প্রতিটি সাবজেক্টের আলাদা আলাদা পারিভাষিক অর্থ থাকে।

যে সাবজেক্টে ব্যবহৃত শব্দটি সম্পর্কে আপনি জানতে চাচ্ছেন, সেটির বিশেষজ্ঞদের কাছে এর ব্যাখ্যা জানা জরুরী। এক সাবজেক্টের পারিভাষিক শব্দের অর্থ আরেক সাবজেক্টের বিশেষজ্ঞ থেকে নিলে সমস্যা বাঁধবেই। আর মুর্খতাও বটে যে, শব্দটি নিব এক ডিপার্টমেন্ট থেকে, আর অর্থ নিবো আরেক ডিপার্টমেন্টের।

উদাহরণতঃ

“কালিমা” শব্দ।

আকিদা বিশেষজ্ঞদের কাছে কালিমা হল, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”।

নাহুবিদদের মতে কালিমা হল, কোন শব্দকে যার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই অর্থে তাকে ব্যবহার করা।

আর বাংলা সাহিত্য বিভাগে “কালিমা” শব্দের অর্থ হল, দোষ, ত্রুটি ইত্যাদি।

তাহলে দেখতে পাচ্ছেন, শব্দ একটি। কিন্তু তিন বিভাগে প্রবেশ করে, শব্দটির তিনটি অর্থ হয়ে যাচ্ছে।

নাহুবিদদের কাছে গালিও কালিমা। আবার আকিদা বিশেষজ্ঞদের কাছে বিসমিল্লাহ ও কালিমা নয়।

এখন কোন মুর্খ যদি নাহুবিদদের ব্যবহৃত কালিমা শব্দটি নিয়ে বলে নাহুবিদরা সবাই কাফির। কারণ তারা গালিকেও কালিমা বলে।

একথা বললে, আমরা উক্ত ব্যক্তিকে গণ্ড মুর্খই বলবো। কারণ সে এক সাবজেক্টের পারিভাষিক শব্দকে আরেক বিষয়ের পারিভাষিক শব্দের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। এটা মুর্খতা। চরম অজ্ঞতা।

দ্বীনে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। এর পূর্ণতার জন্য অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে।

যেমন বুখারী শরীফের ৫০ নং হাদীসে জিবরাঈলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ৩টি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে।

প্রথমে জিজ্ঞাসা করা হল, “ঈমান কী?”।

জবাবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আল্লাহর উপর, ফেরেশতার উপর, তার কিতাবের উপর, তার সাথে সাক্ষাতের উপর, তার রাসূলের উপর এবং কিয়ামতের পর পুনরুত্থানের উপর বিশ্বাস রাখার নাম ঈমান।

দ্বিতীয় বার জিজ্ঞাসা করা হয় “ইসলাম কী?”

জবাবে বলা হয়, আল্লাহর ইবাদত করা, তার সাথে কাউকে শরীক না করা, নামায কায়েম করা, যাকাত দেয়া, রমজানের রোযা রাখা।

তৃতীয়বার জিজ্ঞাসা করা হয়, “ইহসান কী?”

জবাবে বলা হয়, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাও, আর যদি তাকে দেখতে না পাও, তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০]

হাদীসটির আরবী পাঠ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: مَا الإِيمَانُ؟ قَالَ: «الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَبِلِقَائِهِ، وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ». قَالَ: مَا الإِسْلاَمُ؟ قَالَ: ” الإِسْلاَمُ: أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ، وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ “. قَالَ: مَا الإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»،

উক্ত হাদীসে খেয়াল করুন। প্রশ্ন তিনটি করা হয়েছে। এর মাঝে প্রথম প্রকার হল, আকিদা সম্পর্কিত। দ্বিতীয়টি আমল সম্পর্কিত। আর তৃতীয়টি তাসাওউফ সম্পর্কিত।

অর্থাৎ ঈমান ও মজবুত করতে হবে। সেই সাথে আমল সঠিকভাবে করতে হবে। সেই সাথে ইবাদত এমনভাবে করতে হবে, যেন ব্যক্তির সাথে আল্লাহর নিবিড় সম্পর্ক হয়। যেমন বান্দা সরাসরি আল্লাহকে দেখতে থাকে। কিংবা এতটুকু অনুভূত হয় যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন।

তাহলে উক্ত হাদীসে বিষয় তিনটি হয়ে গেল। আকিদা, দ্বিতীয় আমল, আর তৃতীয় হল তাসাওউফ।

তিনটি বিষয় তিনটি সাবজেক্টে রূপান্তরিত হল। আকিদা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নাম হল, ইলমে কালাম।

আমল তথা মাসায়েল সংক্রান্ত বিষয়ের নাম দেয়া হল “ইলমে ফিক্বহ”।

আর ইহসান সম্পর্কিত বিষয়ের নাম হল “ইলমে তাসাওউফ”।

ইলমে কালাম বিশেষজ্ঞদের বলা হয় “মুতাকাল্লিমীন”।

ইলমে ফিক্বহ বিশেষজ্ঞদের বলা হয়, “মুজতাহিদীন”।

ইলমে তাসাওউফ বিশেষজ্ঞদের বলা হয় “সুফিয়্যীন”।

এ তিনটি বিষয় একটি আরেকটির পরিপূরক। কোনটি অপরটির বিপরীত বা মুখালিফ নয়।

তিনটিই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা বুখারীর হাদীস দ্বারা পরিস্কার।

তো বুঝার সহজতার জন্য প্রতিটি সাবজেক্টেই বিশেষজ্ঞগণ কিছু পারিভাষিক শব্দ নির্ধারণ করেছেন। যা অনেক সময় অন্য সাবজেক্টের পারিভাষিক অর্থের সাথে মিলে না।

যেমন মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীসের হুকুম বুঝার সহজতার জন্য “সহীহ, জঈফ, মুনকার, মুদাল্লাছ, হাসান লিজাতিহী, হাসান লিগাইরিহী, সহীহ লিজাতিহী, সহীহ লিগাইরিহী” ইত্যাদি পারিভাষিক শব্দ আবিস্কার করেছেন।

এসব কিছুই পারিভাষিক শব্দ। শুধু অনুবাদ পড়লেই মুহাদ্দিসগণ এর দ্বারা কি বুঝাচ্ছেন, তা বুঝা সম্ভব নয়।

তাই এসব পারিভাষিক শব্দের ব্যখ্যা বুঝতে হবে তাদের থেকেই। শব্দ দেখেই নিজে নিজে অর্থ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলে সেটি তার মুর্খতার পরিচায়কই হবে। অন্য কিছু নয়।

তো, যাইহোক। প্রশ্নোক্ত “ফানাফিল্লাহ” শব্দটিও ইলমে তাসাওউফের একটি পারিভাষিক শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ করলে হয়, আল্লাহর মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়া”।

শাব্দিক অর্থের দিকে তাকালে আমরা এতে শিরকের গন্ধ খুঁজে পাবো এটা অবশ্যই স্বাভাবিক।

কিন্তু শব্দটা যারা ব্যবহার করেছেন। যেই সাবজেক্টের লোকেরা সেটি ব্যবহার করেছেন। সেই সাবজেক্টে থাকা অবস্থায় সেটি শিরক কি না? সেটি খতিয়ে দেখাও একজন বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীর কাজ। পারিভাষিক শব্দকে অনুবাদ থেকে হুকুম বলে দেয়া গণ্ড মুর্খতা ছাড়া আর কিছু হবে না।

এখন আমরা জানতে পারি যে, ইলমে তাসাওফে “ফানাফিল্লাহ” বলতে কি বুঝায়?

আসলে সুফিয়ায়ে কেরাম “ফানাফিল্লাহ” বলতে বুঝান, ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও নববী সুন্নাহ অনসরণে, আল্লাহর স্মরণে এতটাই নিমগ্নতার সাথে ইবাদতে লিপ্ত হন যে, ব্যক্তির সব কিছুই আল্লাহর আদেশের অনুকুল হয়ে যায়। সে কথা বললেও আল্লাহর আদেশের উল্টো বলে না। সে খাইলেও আল্লাহর আদেশের উল্টো করে না। তার কথা, তার আচরণ, তার চুপ থাকা, তার পারিবারিক জীবন, তার লেনদেন, তার রাষ্ট্রীয় জীবন এককথায় সর্বত্রই আল্লাহকে রাজি খুশি করাই তার মহান ব্রত হয়ে দাঁড়ায়। সে যেন আল্লাহর বিধান ও আনুগত্বের মাঝে লীন হয়ে যায়। তার নিজের কোন ইচ্ছে, খাহেশাত থাকে না। তার সব কিছুকে আল্লাহর রাহে, আল্লাহর সন্তুষ্টির সামনে কুরবান করে দেয়। শরীয়ত তার তবীয়তে পরিণত হয়। তাসাওউফের মেহনতের মাধ্যমে যে ব্যক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তাকে বলা হয়, সে “ফানাফিল্লাহ” এ পৌঁছে গেছে।

এভাবে আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গীন হতে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন।

ইরশাদ হচ্ছে-

صِبْغَةَ اللَّهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً ۖ وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ [٢:١٣٨

আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই এবাদত করি। [সূরা বাকারা-১৩৮]

যার সমঝ আছে। যাদের আল্লাহ তাআলা আকল দিয়েছেন। তারা উপরোক্ত আয়াতে কারিমায় সুফীয়ায়ে কেরামের নির্ধারিত “ফানাফিল্লাহ” শব্দের পারিভাষিক অর্থটির যথার্থতা পরিস্কার দেখতে পাবার কথা।

আল্লাহর আনুগত্বে ফানা হওয়া, আর তার রঙ্গে রঙ্গীন হওয়ার মাঝে কী পার্থক্য?

তাহলে পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াত পরিস্কারভাবেই সুফিয়ায়ে কেরামের “ফানাফিল্লাহ” শব্দের পারিভাষিক অর্থের যথার্থতা প্রমাণ করছে।

আর বুখারীর হাদীসেতো আরো পরিস্কারভাবে “ফানাফিল্লাহ” এর পারিভাষিক অর্থ প্রকাশিত। দেখুন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ: كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ المُؤْمِنِ، يَكْرَهُ المَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি। বান্দা আমার নৈকট্য অর্জনের জন্যে ফরয আদায়ের চাইতে প্রিয় কোন কাজ করেনি। আর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, এক পর্যায়ে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। আর আমি যখন তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার চোখ, কান, হাত ও পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখে, শোনে, ধরে ও চলে।

[যেহেতু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সকল কাজ-কর্ম আল্লাহ তাআলারই সন্তুষ্টি মোতাবেক প্রকাশ পায় এজন্যে একথা বলা হয়েছে যে, আমিই যেন তার চোখ, কান, হাতও পা হয়ে যাই। কেননা, যখন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির বিপরীত সে ব্যক্তি কান দ্বারা কিছু শুনে না, চোখ দ্বারা কোন কিছু দেখে না, তার বিধানের খেলাফ হাত পা চালায় না, বরং সব কিছু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি এবং তার হুকুমের আওতায় থেকে করে: তখন আর তার চোখ, কান হাত ও পা নিজের রইল কোথায়? কার্যত আল্লাহ তাআলারই হয়ে গেছে]

যদি সে আমার কাছে চায় তাহলে তাকে তা দিয়ে দেই, যদি আমার আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আশ্রয় দান করি। আমি কোন কাজ করতে কোন দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মু’মিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। [বুখারী, হাদীস নং-৬৫০২]

প্রশ্নকারী ভাইটা যেভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে কিয়ামত পর্যন্ত দলীল দিতে পারবো না বলে অপালাপ করলেন। তাচ্ছিল্য করলেন। আমাদের এ ভাইটা কি কোনদিন বুখারী শরীফের উক্ত হাদীসটি দেখেছেন। পড়েছেন? পড়লেও বুঝেছেন?

হাদীসটিতে কি বলা হচ্ছে?

একজন আল্লাহর প্রিয় বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে এমন হালাতে পৌঁছে যায়, যে, আল্লাহ তাআলা তাকে ভালবাসে ফেলেন। উক্ত ব্যক্তির চোখ, কান, হাত ও পা আল্লাহর হয়ে যায়।

ভাল করে পড়ুন। বুখারীর উক্ত হাদীস। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? নিজেই খুলে দেখুন।

এ হাদীস পরিস্কার প্রমাণ করছে। সুফিয়ায়ে কেরাম “ফানাফিল্লাহ” শব্দটি যে পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার করেছেন। তা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। কুরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

এটিকে যারা তাচ্ছিল্য করবে। শিরক বলবে, তারা কুরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীসকেই অস্বিকার করবে। সেই সাথে পারিভাষিক শব্দকে শাব্দিক অর্থের গণ্ডিতে ফেলে হুকুম আরোপিতকারী মুর্খ হিসেবেই পরিগণিত হবে।

আল্লাহ তাআলা এসব পণ্ডিত ব্যক্তিদের মুর্খতা থেকে উম্মতে মুসলিমার দ্বীন ও ঈমানকে হিফাযত করুন।

সতর্ক বার্তাঃ

কথিত ভন্ড সুন্নী নামধারী, মাজারপূজার, কবরপূজারী, ভন্ড সূফীরা উক্ত শব্দের শিরকী ব্যবহার করে থাকে। তাদের মতে ফানাফিল্লাহ মানে হল, আল্লাহর সত্মার মাঝে বান্দা বিলীন হয়ে যায়। নাউজুবিল্লাহ।

যদি কোন ব্যক্তি এ আকিদা রাখে যে, আল্লাহ আর বান্দা এক হয়ে গেছে, বান্দা আল্লাহর সাথে মিশে গেছে। একাকার হয়ে গেছেন। তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে জিন্দীক বলে ফাতওয়া দিয়েছেন হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহঃ। [শামায়েমে ইমদাদিয়্যাহ]

সেই সাথে কোন ব্যক্তি যদি একথাও বলে যে, ফানাফিল্লাহ এ পৌঁছলে কোন ইবাদত লাগে না। তখন ব্যক্তি আল্লাহর সাথে মিলে যায়, তাহলে একথাটিও একটি কুফরী কথা। যারা এ অর্থে ফানাফিল্লাহ শব্দের প্রয়োগ করে, তারা নিঃসন্দেহে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট।

তাই শুধু শব্দ দেখেই হুকুম বলা যাবে না। দেখতে হবে, কে বলছে? কি অর্থে বলছে। হক্কানী সুফিয়ায়ে কেরাম ও উলামায়ে দেওবন্দ যে অর্থে বলেন, তা কুরআন ও হাদীস সমর্থিত।

আর ভন্ড সুফীরা যে অর্থে বলে, তা গোমরাহী, শিরকী ও কুফরী। তাই বুঝে শুনে কথা বলতে হবে।

সুতরাং যারা ঢালাওভাবে উলামায়ে দেওবন্দের উপর অভিযোগ উত্থাপন করেন, তারা হয়তো মুর্খ নতুবা জ্ঞানপাপী ছাড়া আর কিছু নয়।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

শাতীমে রাসূল বিষয়ে কয়েকটি জরুরী মাসআলা

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। জনাব আমার প্রশ্ন শাতিমের শাস্তি কার্যকর প্রসঙ্গে। কিন্তু প্রাসঙ্গিক কয়েকটি প্রশ্ন: ১। কেউ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *