প্রশ্ন
১। ছেলে বড় হলে বিবাহ দেয়ার পর কি ঐ সন্তানের উপর থেকে পিতা-মাতার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?
২। একান্নভুক্ত পরিবারে থাকার কারনে যদি স্ত্রীর হক্ব নষ্ট হয়,ও বেপর্দা হয়,তাহলে কী পিতা-মাতা অসুন্তষ্ট থাকা সত্তেও কি স্ত্রীকে নিয়ে ভিন্ন জায়গায় যাওয়া যাবে? দয়া করে জানাবেন।
মোঃ শরীফুল ইসলাম। হুলহুলিয়া, সিংড়া, নাটোর।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
১ নং এর জবাব
পুরুষ প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলেই তার সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপরই বর্তায়। অন্য কারো উপর মৌলিকভাবে কোন দায়িত্ব থাকে না। তবে কারো অধীন থাকলে উক্ত ব্যক্তির উপর দেখভাল অর্পিত হয় অভিভাবক হিসেবে।
فى القواعد الفقهية للزرقا- لا يجوز لأحدٍ ما ولو والداً أو ولداً أو زوجاً أن يأخذ جاداً أو لاعباً مال أحدٍ ما ولو ولده أو والده أو زوجته بلا سبب شرعي يسوغ له الأخذ- 465)
عن عبد الله بن عمر أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال « ألا كلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته فالأمير الذى على الناس راع عليهم وهو مسئول عنهم والرجل راع على أهل بيته وهو مسئول عنهم والمرأة راعية على بيت بعلها وولده وهى مسئولة عنهم والعبد راع على مال سيده وهو مسئول عنه فكلكم راع وكلكم مسئول عن رعيت (سنن ابى داود،كتاب الخارج، باب ما يلزم الإمام من حق الرعية، رقم الحديث- 2930
২ নংএর জবাব
স্ত্রীকে আলাদা বাসস্থান দিয়ে পর্দার সাথে রাখা স্ত্রীর অধিকার। পর্দায় সমস্যা হলে পিতা-মাতার হক আদায় করে স্ত্রীকে আলাদাভাবে রাখা জায়েজ আছে।
পর্দার সমস্যা হলে পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট হলেও আলাদা রাখা জরুরী। এক্ষেত্রে পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির চেয়ে আল্লাহর ফরজ হুকুম পর্দা লঙ্ঘন করে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচা জরুরী।
وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ (15
আর তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সাথে শিরক করতে, যে বিষয়ে তোমা কোন জ্ঞান নেই,তুমিতাদের কথা মেনো না,তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাব রেখে এবং যে বিশুদ্ধচিত্তে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর। তারপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমার নিকট এবং তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আমি তোমাদের অবহিত করব। {সূরা লুকমান-১৫}
عن ابن عمر قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم السمع والطاعة على المرء المسلم فيما أحب وكره ما لم يؤمر بمعصية فإن أمر بمعصية فلا سمع عليه ولا طاعة
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির উপর কারো আনুগত্ব ও অনুগামিতা খুশি মনে করুক বা বাধ্য হয়ে করুক ততক্ষণ পর্যন্ত করতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকটি তাকে গোনাহের নির্দেশ না দেয়, যদি গোনাহের নির্দেশ দেয়, তাহলে তার আনুগত্ব ও অনুগামিতা বৈধ নয়। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৭০৭}
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার বাহ্যিক নিদর্শন প্রকাশ না পেলেও চন্দ্রবর্ষ হিসেবে ছেলে বা মেয়ের বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হলেই শরীয়তের দৃষ্টিতে সে বালেগ। সুতরাং তখন থেকেই তার জন্য নামায-রোযাসহ শরীয়তের অন্যান্য বিধিবিধান আরোপিত হবে। {সহীহ বুখারী হাদীস : ২৬৬৪, ৪০৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩; আললুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।