প্রশ্ন
From: আখতার
বিষয়ঃ দেনমোহর ও কোরবানি
প্রশ্নঃ
আমি স্ত্রী কর্তৃক তাফভিযে তালাকের নোটিস পাই, যদিও ১৮ নং ধাঁরা ফাঁকা অবস্থায় কাবিন নামায় সাইন করি।কাজী সাহাব বিনা অনুমতিতে আমার অজ্ঞাতসরে পরবর্তীতে “হ্যাঁ অর্পণ করিয়াছেন” লিখেন। তারপর আমরা ঘর সংসার করতে থাকি। বিয়ের পর এক পর্যায়ে শাশুড়ির সাথে বেফাঁস কথার জের ধরে মনোমালিন্নের সূত্রপাত হলে উনারা আমার স্ত্রীকে আমার থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে তাকে তালাক গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করলে সে সম্মত হয়। সরকারি ভাবে তালাক কার্যকর হওয়ার পর আমার দেওয়া ডায়মন্ডের অলঙ্কার (দেনমহর বাবদ) শ্বশুর ফেরত পাঠান।এর আগে আমি উনাকে তালাক সহি না হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া দেখাতে চাই কিন্তু উনার কথা হল কাবিন নামায় স্ত্রী তালাকের অনুমতি যেহেতু দেওয়া আছে তাই তালাক গ্রহন অবশ্যই সহি হবেই। এ ব্যাপারে তিনিও নাকি ফতোয়া আনেন। মাসোয়ারা সাপেক্ষে আমি খামুশি এখতিয়ার করি। সামনে কোরবানি ঈদ। প্রশ্ন (১) আমাদের দ্বিপাক্ষিক অবস্থান পর্যালোচনা করে শরীয়তে তালাকের সহি অবস্থা জানতে চাই। প্রশ্ন (২) উনাদের বিশ্বাস শরীয়তে তালাক হইয়াছে ফলে আধা দেনমহর বাবদ কেনা ডায়মন্ডের অলঙ্কার যে ফেরত দেন, এর মালিকানা কে ? অর্থাৎ উক্ত মালিকানা বলে আমার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে কি ?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
১ম প্রশ্নের জবাব
যদি উপরোক্ত বক্তব্য সহীহ হয়। অর্থাৎ স্বামীর অজ্ঞাতসারে কাযী নিজে তালাকের অধিকার প্রদান করে থাকে, তাহলে এর দ্বারা তালাকের অধিকার স্ত্রীকে প্রদান করা হয় না। সুতরাং কাযীর দেয়া অধিকার বলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করলে তালাক হবে না।
এক্ষেত্রে যেহেতু স্ত্রী পক্ষ আপনার কাছে স্ত্রীকে রাখতে চাচ্ছে না। তাই আপনার উচিত স্ত্রীকে এক তালাক প্রদান করে আলাদা করে দেয়া। পরে যদি শ্বশুরবাড়ী কর্তৃপক্ষ বা আপনার স্ত্রী আপনার কাছে ফেরত আসতে রাজি হয়, তাহলে আবার বিয়ে করে নিতে পারবেন।
এখন এ ঝগড়া মিটাতে হয়তো সমঝোতা করার চেষ্টা করুন। নতুবা এক তালাক দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে দিন।
كُلُّ كِتَابٍ لَمْ يَكْتُبْهُ بِخَطِّهِ وَلَمْ يُمِلَّهُ بِنَفْسِهِ لَا يَقَعُ بِهِ الطَّلَاقُ إذَا لَمْ يُقِرَّ أَنَّهُ كِتَابُهُ كَذَا فِي الْمُحِيطِ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)
وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِن بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًا ۚ وَالصُّلْحُ خَيْرٌ ۗ وَأُحْضِرَتِ الْأَنفُسُ الشُّحَّ ۚ وَإِن تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا [٤:١٢٨]
যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন। [সূরা নিসা-১২৭]
২য় প্রশ্নের জবাব
যেহেতু আপনি বিয়ে করার পর স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করেছেন, তাই শরয়ী নীতিমালা অনুপাতে তালাক হয়ে গেলেও মোহর বাবদ দেয়া কোন কিছু ফেরত নেয়ার অধিকার স্বামীর নেই। সেই হিসেবে মোহর বাবদ দেয়া ডায়মন্ড আপনার স্ত্রীর কাছে ফেরত দেয়া উচিত।
হ্যাঁ, যদি তালাকটি খোলা তালাক হয়ে থাকে, তাহলে উভয়ের সম্মতিক্রমে মোহরের যে অংশ ফেরত নেবার বিষয়টি নির্ধারিত করে তালাক দেয়া হয়, ততটুকু মোহর ফেরত স্বামী নিতে পারে।
কিন্তু আপনার উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে এখানে মূলত তালাকই হচ্ছে না। তাই উপরোক্ত মোহর বাবদ প্রদত্ব বস্তুর মালিকানা স্ত্রীরই রয়ে যাচ্ছে। তা ফেরত নেয়া আপনার জন্য উচিত হবে না।
তারপরও যদি স্ত্রী সেচ্ছায় আপনাকে তা প্রদান করে, তাহলে তা হাদিয়া হিসেবে গণ্য হবে। আর হাদিয়া প্রাপ্ত ব্যক্তি উক্ত বস্তুর মালিক হয়ে যায়। সেই হিসেবে এর মূল্যের উপর কুরবানী আসবে।
الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ ۖ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ ۗ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَن يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩]
তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে,না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]