প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / “তোর মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক হারাম হয়ে গেছে” বলার দ্বারা কি তালাক হয়?

“তোর মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক হারাম হয়ে গেছে” বলার দ্বারা কি তালাক হয়?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

আমার নাম: মনসুর আহমদ
সিলেট থেকে…

প্রশ্নঃ একজন ব্যক্তি কোন একটি কারণে প্রচন্ড রাগের মাথায় উপস্থিত ৬ জনের সামনে তাঁর স্ত্রীকে লক্ষ্য করে মেয়েকে বলেন- “তর মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক হারাম হয়ে গেছে। এই ছাদের নিচে যদি ভাত খাই তাহলে আমার মাকে আমি বিয়ে করবো।” এই বলে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। তিনি যে প্রচন্ড রাগের মাথায় বলেছেন এখন তিনি নিজেই স্বীকার করছেন। তবে তিনি স্বীকার করছেন এভাবে “এ বাসায় থাকলে তর মা আমার জন্য সম্পূর্ণ হারাম”। উপরের কথার স্বাক্ষী স্ত্রীসহ ৪জন ও নিম্নের কথার স্বাক্ষী ২জন, আবার ২জনের মধ্যে ১জন দু’মুখী। উল্লেখ্য যে, তাঁরা ভাড়াটিয়া বাসায় স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই থাকেন।
এখন প্রশ্ন হল- এই কথাগুলি দ্বারা কি তালাক হয়ে যাবে। হলে সমাধানের উপায় কি? জানতে চাচ্ছি যে, মীমাংসার জন্য বা একত্রে বসবাস করার জন্য এখন এর সমাধান কি? ক্বোরআন হাদীস ও ইজমা-ক্বিয়াসের আলোকে শরয়ী পন্থায় সম্পর্ক ঠিকে রাখার সুরাহা কি? জানালে উপকৃত হবো এবং আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো ইনশাআল্লাহ।

বিঃদ্রঃ ভ্রান্ত মতবাদ তথা আহলে হাদীসের এক ভাই বলছেন তালাক হবে না।
(তিনি পরিবারেরই সদস্য) কষ্ট করে একটু তাড়াতাড়ি দিলে খুশি হবো।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক কোন ভালবাসার শব্দ নয়। এটি রাগের শব্দই। স্বাভাবিকভাবে এরকম কখনোই পাওয়া যাবার কথা নয় যে, স্ত্রীকে বলছে যে, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি, যাও তোমাকে তিন তালাক।

এরকম কেউ করবে না। কারণ তালাক বিচ্ছেদের শব্দ। সম্পর্কহীনতার শব্দ। যে কোন বিবেকবান ব্যক্তিই বলবে তালাক দিবেই রাগের মাথায়। ক্ষিপ্ত হয়ে।

যদি রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক না’ই হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তালাক দিবেই কখন?

এটি বড়ই হাস্যকর কথা যে, রাগের মাথায় তালাক দিলে হবে না।

এখন প্রশ্ন হল, উপরোক্ত ব্যক্তির উক্ত কথার দ্বারা কী হুকুম আরোপিত হয়েছে?

যেহেতু লোকটি সুষ্পষ্টরূপে তালাক শব্দ উচ্চারণ করেনি। কিন্তু তালাকের হাকীকী অর্থবোধক হারাম শব্দ উচ্চারণ করেছে, তাই এ শব্দ উচ্চারণ করার দ্বারা এক তালাকে বাইন হয়ে গেছে। এখন উক্ত মহিলাকে আবার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হলে, নতুন করে মোহর ধার্য করে দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম সাক্ষ্যির সামনে নতুন করে বিয়ে করে নিতে হবে।

তবে পরবর্তীতে স্বামী আর দুই তালাকের মালিক থাকবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

وفي رد المحتار- ويقع طلاق من غضب خلافا لابن القيم الخ وهذا الموافق عندنا لما مر فى المدهوش، ( رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى طلاق المدهوش-4/452

(قَالَ لِامْرَأَتِهِ: أَنْتِ عَلَيَّ حَرَامٌ)……. وَيُفْتَى بِأَنَّهُ طَلَاقٌ بَائِنٌ (وَإِنْ لَمْ يَنْوِهِ) لِغَلَبَةِ الْعُرْفِ، (رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى قوله: انت على حرام-5/74-76

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *