প্রশ্ন
নামঃ সাবেত বিন মুক্তার
দেশঃ বাংলাদেশ
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। ছোট বাচ্চাদেরকে বড়দের সাথে কাতারে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কি কোন বাধ্যবাধকতা আছে?
এক ভাই বলেছেনঃ
বুখারী শরীফে এসেছে- রাসুল (সাঃ) তার নাতনী হযরত উমামা বিনতে যায়নাব (রাঃ) কে বহন করে (কোলে কিংবা কাঁধে) নামাজ আদায় করতেন। যখন তিনি দন্ডায়মান হতেন তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন আর সিজদাহ করার সময় নামিয়ে রাখতেন ।
আমরা একদা যুহর কিংবা আসর নামাজের জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম। বেলাল (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে নামাজের জন্য ডাকলেন। রাসুল (সাঃ) তার নাতনী হযরত উমামাহ (রাঃ) কে কাঁধে করে নিয়ে আমাদের কাছে আসলেন। রাসুল (সাঃ) ইমামতির জন্য নামাজের স্থানে দাড়ালেন আমরা তার পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম অথচ, সে (উমামাহ রা.) তার স্থানে তথা রাসুল (সাঃ) এর কাধেই আছে। রাসুল (সাঃ) নামাজের তাকবির দিলেন আমরাও তাকবীর দিলাম। রাসুল (সাঃ) রুকু করার সময় তাকে পাশে নামিয়ে রেখে রুকু ও সিজদাহ করলেন। সিজদাহ শেষে আবার দাড়ানোর সময় তাকে আগের স্থানে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে নামাজের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাকাতেই তিনি এমনটি করে যেতেন।
(সুনান আবু দাউদ ৯২০)
এ ছাড়াও রাসুল (সাঃ) এর খুতবা দেয়ার সময় তার নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আসলে তিনি খুতবা দেয়া বন্ধ রেখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন, কোলে তুলে নিতেন চুম্বন করতেন আর বলতেন খুতবা শেষ করা পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তাই, আমি খুতবা দেয়া বন্ধ করেই এদের কাছে চলে এসেছি।
(নাসায়ী শরীফ)
মুহাম্মাদ সঃ নিজে বাচ্চাদেরকে কোলে রেখে নামায পড়িয়েছেন। আর আমাদের বুজুর্গ-মুসল্লিরা মসজিদেই তাদের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না।
রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন
যে আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করতে জানে না সে আমার দলভুক্ত নয়।
(আবু দাউদ, তিরমীজি, মুসনাদে আহমদ)
*** আমার প্রশ্ন বাচ্চার বয়স ৭ বছর হয়ে গেলে তাকে মসজিদে নিয়ে পাশে দাড় করালে কি কোন সমস্যা হবে? ৭ বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাচ্চাদেরকে নামাজের তাকিদ দিতে বলেছেন, ১০ বছর বয়সে না পড়লে শাসন করতে বলেছেন। তাই ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজ শিখানোর জন্য বাচ্চাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া কি উচিত নয় যদিও তারা কিছু দুষ্টামি করে বা নামাজের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায়?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কে কি বলল, কে অনুমতি দিল আর কে দিল না? এর উপর ইসলামী বিধান নির্ভর নয়। বরং ইসলামের বিধান নির্ভর করে কুরআন সুন্নাহ এবং কুর্আন ও সুন্নাহ থেকে উৎসারিত ইসলামী ফিক্বহ।
হাদীসের মাঝে যেমন নাবালেগ শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসার কথা এসেছে, তেমনি কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা ও সুবিন্যস্ত রূপ ইসলামী ফিক্বহের কিতাবেও তা এসেছে।
হাদীসের আলোকে ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন, নামাযের কাতারে প্রথমে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষরা থাকবে। আর পিছনে থাকবে শিশুরা। কিন্তু তারা একসাথে থেকে দুষ্টুমি করার সম্ভাবনা থাকলে তাদের বড়দের কাতারের মাঝখানে মাঝখানে দাঁড় করাবে।
শিশুদের নামাযের প্রশিক্ষণের জন্য মসজিদে নিয়ে আসা উচিত। তবে খেয়াল রাখা উচিত দুষ্টুমি করে যেন অন্যদের নামাযের বিঘ্ন না ঘটায়।
فى رد المحتار- ويصح الرجل ثم الصبيان ظاهرة تعددهم فلو واحد دخل الصف (ردالمحتار-2/312-313
وفى تقريرات الرافعى- قال الرحمتى ربما يتعين فى زماننا ادخال الصبيان فى صفوف الرجال لأن المعهود منهم اذا اجتمع صبيان فاكثر فيبطل صلاة بعضهم ببعض وربما بعدى ضررهم الى افساد صلاة الرجال (رد المحتار-2/73
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]