প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / জাল হাদীসের হুকুম এবং প্রচলিত একটি হাদীসের হুকুম প্রসঙ্গে

জাল হাদীসের হুকুম এবং প্রচলিত একটি হাদীসের হুকুম প্রসঙ্গে

প্রশ্ন:

From: Dr.Tanvir Ahammed

Subject:

Country : বাংলাদেশ
Mobile :
Message Body:

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জাল হাদীস কাকে বলে?

একটি হাদীস যার অর্থ মুটামুটি এ রকম, কমবেশি হলে আল্লাহ পাক মাফ করুন। “যে ব্যক্তি হুজুর সাঃ এর একটি সুন্নাতকে যিন্দা করবে, সে কিয়ামতের দিন একশত শহীদের মর্যাদা পাবে”।

এ হাদীস কি জাল হাদীস? অনুগ্রহ পূর্বক রেফারেন্স সহ অতি সত্বর জানালে কৃতজ্ঞ হতাম।

জবাব:

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

 

১ম প্রশ্নের জবাব

 

জাল হাদীস সম্পর্কে ইসলামের মূলনীতি

জাল হাদীস, যাকে আরবী ভাষা এবং মুহাদ্দিসীনদের পরিভাষায় মওজু বলা হয়। সহজ কথায় যেটি রাসূল সাঃ এর হাদীস নয়, তাকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলার নামই জাল বানোয়াট হাদীস।

রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়, এমন কোন কথাকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলার নাম জাল হাদীস। আসলে এসবকে হাদীস বলাই উচিত নয়। কিন্তু যেহেতু এসবের নিসবত জাল বর্ণনাকারীরা রাসূল সাঃ এর দিকে করেছে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে, তাই ¯্রফে নিসবতের কারণে ওসব বাতিল বর্ণনার সাথেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীস শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর মানে এটা নয় যে, ওসব বর্ণনা আসলে হাদীস। যেমন মিথ্যা নবী শব্দ। আসলে যে মিথ্যা নবী দাবি করে সেতো নবীই নয়। তবু আমরা বলি মিথ্যা নবী কাদিয়ানী, মুসায়লামায়ে কাজ্জাব। ঠিক জাল হাদীসের ক্ষেত্রেও তা হাদীস না হওয়া সত্বেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম জাল হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন।

 

জাল হাদীসের হুকুম

 

যেহেতু জাল হাদীস হাদীস নয়। তাই সুনিশ্চিতভাবে জাল ও বানোয়াট জানার পরও উক্ত বক্তব্যটিকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। হারাম। তবে এটি জাল হাদীস তা জানানোর জন্য বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন কুফরী কথা বলা জায়েজ নয়। কিন্তু কথাটি কুফরী সেটি বুঝানোর জন্য কুফরী কথা উল্লেখ করা জায়েজ আছে।

জাল হাদীসকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে প্রচার করা মানে হল রাসূল সাঃ এর নামে মিথ্যা কথা বলা। আর রাসূল সাঃ এর নামে মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী এসেছে হাদীসে। যেমন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-১২০০, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-১৪৮০, মুসনাদে দারেমী, হাদীস নং-৬১৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩}

عَنِ المُغِيرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ، مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

হযরত মুগীরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল ইরশাদ করেছেন, আমার উপর মিথ্যারোপ করা অন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১২৯১, ১২২৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-১২৭৬}

উল্লেখিত দু’টি হাদীস ছাড়াও অনেক হাদীস আছে রাসূল সাঃ এর দিকে মিথ্যার নিসবত করে কোন কিছু বলা সম্পর্কে। এখানে লক্ষ্যনীয় হল, প্রতিটি হাদীসেই রাসূল সাঃ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যিনি জেনে-শুনে ইচ্ছেকৃত মিথ্যা কথাকে রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করে থাকে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, না জেনে যদি কোন ব্যক্তি কোন মিথ্যা কথাকে রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করে তাহলে উক্ত ব্যক্তি এ হুশিয়ারী ও শাস্তির আওতাভুক্ত হবে না। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি অজ্ঞতার কারণে গোনাহগার হবে না।

সুতরাং কেউ যদি না জেনে জাল হাদীস বর্ণনা করে, তাহলে সে গোনাহগার হবে না। তবে যদি জাল জানার পরও রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করা উক্ত জাল বর্ণনাটিকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে প্রচার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি হাদীসে উল্লেখিত ধমকীর আওতাভুক্ত হবে। লোকটি খুবই ঘৃনিত এবং মারাত্মক গোনাহের কাজ করল বলে সাব্যস্ত হবে।

তবে মানুষকে বুঝানোর জন্য বা জানানোর জন্য জাল হাদীসকে জাল বলে উল্লেখ করার দ্বারা গোনাহগার হবে না। যেমন কুফরী কথাকে কুফরী কথা প্রমাণের জন্য কুফরী কথা উল্লেখ করে তার হুকুম বলে দেয়া গোনাহের কাজ নয়। {দ্রষ্টব্য-কাওয়ায়েদুত তাহদীস-জামাল উদ্দীন কাসেমীকৃত-১৫, ফাতহুল মুলহিম-১/৬১}

 

২য় প্রশ্নের জবাব

 

আপনি সম্ভবত নিম্নের হাদীসটি বলতে চাচ্ছেন। যার আরবী পাঠ হল,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُتَمَسِّكُ بِسُنَّتِي عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِي لَهُ أَجْرُ شَهِيدٍ

ذكر الحديث ابن عدي في كتابه الكامل، ورواه البيهقي في كتابه الزهد الكبير، وذكره الذهبي في كتابه ميزان الاعتدال.

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, উম্মতের বিশৃংখলার সময় যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে, সে ব্যক্তি একশত শহীদের সওয়াব পাবে। [আজ জুহদুল কাবীল লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২০৭, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-৬৫,মেশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১৭৬}

 

এছাড়া হাদীসটি ইবনে আদী তার আলকামেল গ্রন্থে এবং আল্লামা যাহাবী রহঃ তার মীযানুল ইতিদাল গ্রন্থে এনেছেন।

 

এ হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনে কেরামের মন্তব্য

আল্লামা মুনজিরী রহঃ বলেন, এর সনদ সহীহ বা হাসান এর দুয়ের কাছাকাছি। {আততারগীব ওয়াত তারহীব-১/৬১}

আল্লামা ইবনে আদী রহঃ বলেন, যদিও এর সনদে হাসান বিন কুতাইবা রয়েছে, তবু মনে হচ্ছে এতে কোন সমস্যা নেই। {আলকামেল ফিজ জুআফা-৩/১৭৪}

 

এ বক্তব্যের কাছাকাছি বক্তব্যের আরেকটি হাদীস রয়েছে। যা গ্রহণযোগ্য হাদীস।

كثير بن عبد الله عن أبيه عن جده قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول ( من أحيا سنة من سنتي قد أميتت بعدي فإن له من الأجر مثل أجر من عمل بها من الناس لا ينقص من أجور الناس شيئا . ومن ابتدع بدعة لا يرضاها الله ورسوله فإن عليه مثل إثم من عمل بها من الناس لا ينقص من آثام الناس شيئا

অনুবাদ-হযরত কাসীর বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা,তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,তিনি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছেন যে,যে ব্যক্তি আমার পর আমলহীন আমার কোন সুন্নাতকে জিন্দা করবে, তাহলে তাকে দেখে যারা আমল করবে তাদের আমলের সওয়াবের মতই সে সওয়াব প্রথম ব্যক্তিকে দেয়া হবে। দ্বিতীয় আমলকারীর সওয়াবের মাঝে কোন কমতি ছাড়াই। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২১০, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৭৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৩৮৫, মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-২৮৯}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *