মুফতী ইজহারুল ইসলাম কাউসারী
আল্লাহর বাম হাত:
সালাফীদের নিকট আল্লাহর হাত রয়েছে। আল্লাহর হাতের সংখ্যা দু’টি। একটি ডান হাত, আরেকটি বাম হাত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর হাতের কথা রয়েছে, এজন্য তারা হাত সাব্যস্ত করে। আমি এক সালাফীকে প্রশ্ন করেছিলাম, পবিত্র কুরআনে আল্লাহর হাতের কথা আছে। আপনি এটি হাত বলেই নিবেন। কোন ব্যাখ্যা করবেন না। আল্লাহর হাতের সংখ্যা কয়টি? সে বলে দু’টি। আমি বললাম, কুরআনে তো তিন থেকে অসংখ্য হাতের কথা রয়েছে। সূরা যারিয়াত (৪৭ নং আয়াত) ও সূরা ইয়াসিনে (৭১ নং আয়াত) আল্লাহর অসংখ্য হাতের কথা আছে। আপনি কেন শুধু দু’টি হাতে বিশ্বাস করেন? মানুষের দু’টি হাত সেই জন্য?
সেই সালাফী ভাই কোন উত্তর দেননি। এবার আসুন, আমরা সালাফীদের দু’টি হাতের বিতর্ক সম্পর্কে জানি। সালাফীদের একদল আলেমের বক্তব্য হলো, আল্লাহর দু’টি হাতের একটি হলো ডান হাত, আরেকটি হলো বাম হাত। আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য উল্লেখ করছি।
ইবনে বাজের বক্তব্য:
“ইবনে বাজের মতে, আল্লাহর দু’টি হাত রয়েছে। একটি হাত ডান ও অপরটি বাম। তবে বাম হাত ও ডান হাতের মর্যাদা একই। একটা থেকে আরেকটা শ্রেষ্ঠ নয়।”
[মাজমুউ ফাতাওযা, খ.২৫, পৃ.১২৭]
স্ক্রিনশট:
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
শায়খ ইবনে উসাইমিন বলেন,
“নি:সন্দেহে আল্লাহর দু’টি হাত রয়েছে। একটা হাত অন্যটির বিপরীত। আমরা যখন আল্লাহর অপর হাতকে বাম হাত বলি, এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে আল্লাহর বাম হাত থেকে ডান হাত কম শক্তিশালী। বরং উভয় হাতই সমান শক্তিশালী”
[মাজমুউ ফাতাওয়া ও রসাইল, খ.৯,পৃ.১১২৩]
স্ক্রিনশট:
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
সালেহ আল-ফাউজানের মতে আল্লাহর দু’টি হাত রয়েছে। একটি ডান হাত ও অপরটি বাম হাত। তবে আল্লাহর বাম হাতও আল্লাহর ডান হাত।
[ইয়ানাতুল মুস্তাফীদ, খ.২, পৃ.৪৬১]স্ক্রিনশট:
বিরোধী বক্তব্য:
শায়খ সালেহ ইবনে আব্দুল আজিজ আলুশ শায়খ এর নিকট আল্লাহর হাতকে বাম বলা ঠিক নয়।
তিনি বলেন,
” আমার নিকট সঠিক মত হলো, আল্লাহর বাম হাত সাব্যস্ত না করা”
[শরহুল আকিদাতি ত্বহাবিয়া, খ.২, পৃ.১০৫৪]
স্ক্রিনশট:
আলবানী সাহেবের বক্তব্য:
শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন,
” আমরা কীভাবে আল্লাহর বাম হাত সাব্যস্ত করবো, তিনি তো আমাদের থেকে অদৃশ্য?………….আমি সহীহ হাদীস ব্যতীত আল্লাহর জন্য বাম হাত সাব্যস্ত করতে পছন্দ করি না। “
স্ক্রিনশট:
আল্লাহ তায়ালা দৌড়ান:
পূর্বের আলোচনায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, সালাফীদের আকিদা হলো আল্লাহ তায়ালা আরশে বসে আছেন। এরা আল্লাহর জন্য উঠা, নামা, দৌড়ানো, স্থানান্তর হওয়া সব কিছুই সাব্যস্ত করে। এ পর্বে আল্লাহর দৌড়ানো সম্পর্কে আলোচনা করবো।
হাদীসে রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমার নিকট যে হেটে হাসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যায়। ” এই হাদীস থেকে তারা প্রমাণ দিয়েছে যে আল্লাহ পাক দৌড়ান। অথচ সহীহ আকিদার একজন শিশুও বুঝবে যে, এখানে দৌড়ানো দ্বারা আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য ও কবুল করা উদ্দেশ্য। যাই হোক, কতো বড় আশ্চর্যের বিষয়, এজাতীয় ভ্রান্ত বিশ্বাস রাখার পরেও এরা সহীহ আকিদার দাবী করে?
সউদি মুফতী বোর্ডের ফতোয়া:
সউদি মুফতী বোর্ডে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহ তায়ালার কী দৌড়ানোর গুণ রয়েছে। তারা উত্তর দেয়, হ্যা আল্লাহর জন্য দৌড়ানোর গুণ রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা দৌড়ান। এ ফতোয়ায় সাক্ষর করেছে, ইবনে বাজ, আব্দুর রাজ্জাক আফিফী, আব্দুল্লাহ ইবনে গাদইয়ান, আব্দুল্লাহ বিন কুউদ।
ফতোয়া নং-৬৯৩২, [খ.৩, পৃ.১৪২]
ইবনে উসাইমিনের বক্তব্য:
ইবনে উসাইমিন বলেন,
“আল্লাহ তায়ালার জন্য দৌড়ানোর গুণ প্রমাণিত। …….সুতরাং এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক”
[মাজমুউ ফাতাওয়া ও রসাইল, খ.১, পৃ.১৮২]
স্ক্রিনশট:
বিরোধী বক্তব্য:
ইবনে জিবরীনের বক্তব্য:
ইবনে জিবরীন বলেন, ” দৌড়ানো আল্লাহর গুণ নয়। বরং দৌড়ানো দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বান্দার প্রয়োজন পূরণে বিলম্ব না করা।”
সালেহ আল-ফাউজানের বক্তব্য:
শায়খ সালেহ আল-ফাউজানের মতে, দৌড়ানো আল্লাহর কোন গুণ নয়।
আলবানী সাহেবের আশ্চর্যজনক উত্তর:
আলবানী সাহেব দৌড়ানোর বিষয়ে আশ্চর্যজনক স্ববিরোধীতার আশ্রয় নিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,
” আল্লাহর তায়ালার অবতরণ ও আসার মতো দৌড়ানো আল্লাহর একটি গুণ”
[মাউসুয়াতুল আলবানী, খ.১, পৃ.২৫৮]স্ক্রিনশট:
আলবানী সাহেবকে একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
প্রশ্ন: যে আমার কাছে হেটে আসবে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাবো। এই হাদীস থেকে আল্লাহ দৌড়ান একথা বলা যাবে?
উত্তর: আমাকে বহুবার এই প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি এর উত্তর জানি না।
Great, important information, thanks