প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ ছাড়া আর কেউ রফউল ইয়াদাইন করতেন না?

সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ ছাড়া আর কেউ রফউল ইয়াদাইন করতেন না?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম

শহীদুল্লাহ খান মাদানী রচিত “সহীহ মাসনূন সালাত ও দোয়া শিক্ষা” বইয়ের

৮০ নম্বর পৃষ্ঠার ২৭৯ টীকার আলোকে লেখক লিখেছেন-

“মহনবী (সঃ) এর প্রায় ১লক্ষ ২৪ হাজার সাহাবীর মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) ছাড়া সমস্ত সাহাবী রাফউল ইয়াদাইন করতেন।।”

[ফাতহুল বারী- ২/২৫৭ পৃষ্ঠা]

আসলেই কি আর কোন সাহাবী রাফউল ইয়াদাইন ছাড়তেন না??

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ফাতহুল বারীতে ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ উপরোক্ত বক্তব্যটিকে কোন হাদীসের আলোকে উপস্থাপন করেননি। বরং এটি ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহঃ এর একটি উক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যার কোন ভিত্তি নেই।

অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে রফউল ইয়াদাইন না করা প্রমাণিত।

হযরত উমর রাঃ- এর আমল

আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
আমি হযরত ওমর রা.-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।’ (তাহাবী: ১/১৬৪)

আল্লামা যায়লায়ী রহ. এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।

ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, হযরত ওমর রা. এর আমল এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কোনরূপ বিরোধিতা না থাকায় প্রমাণ করে যে, সেই সঠিক পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতির বিরোধিতা করা কারও জন্য উচিত নয়।’
(তাহাবী : ১/১৬৪)

হযরত আলী (রা) এর আমল

হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০)

আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ-এর আমল

মুজাহিদ রহ. বলেন-
আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।
(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)

আল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ সহীহ
(আল-জাওহারুন নাকী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ-এর আমল

আসওয়াদ রহ. বলেছেন-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।
(জামউল মাসানীদ)

খুলাফায়ে রাশেদীন ও রাফয়ে ইয়াদাইন

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নামাভী রহ. খুলাফায়ে রাশেদীনের কর্মধারা বিষয়ক বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে-
খুলাফায়ে রাশেদীন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না।
(আছারুস সুনান)

খুলাফায়ে রাশেদীন হলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.-এর পর মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন রাসূলুল্লাহর সত্যিকারের অনুসারী। রাসূলুল্লাহ স. তাদের সুন্নাহকেও নিদের সুন্নাহর মতো অনুসরণীয় ঘোষনা করেছেন। কেননা, তাদের সুন্নাহ ছিল নবীর সুন্নাহ থেকেই গৃহীত। তাই তারা যখন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না তখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের কাছেও নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম। আর এটি নবী সাঃ-এর সুন্নাহ।

সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারা

ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।
(জামে তিরমিযী : ১/৩৫)

আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা করেছেন-
হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)
মদীনাবাসী ও রাফয়ে ইয়াদাইন

উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন ইমাম মালিক রহঃ জন্মগ্রহন করেন ৯৩ হিজরীতে। ইলমের অন্যতম কেন্দ্রভূমি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর জীবন কেটেছে। সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং হাদীস শরীফের বিশাল ভান্ডার তার সামনে ছিল। তিনি শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মদীনাবাসীর কর্মকে বুনিয়াদী বিষয় বলে মনে করতেন।

তাঁর প্রসিদ্ধ সাগরিত আল্লামা ইবনুল কাসিম রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে তাঁর যে সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন তা এই-
ইমাম মালিক রহ. বলেছেন,নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য তাকবীরের সময়, নামায়ে ঝুঁকার সময় কিংবা সোজা হওয়ার সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করার নিয়ম আমার জানা নাই।

ইবনুল কাসিম রহ. আরো বলেন,
ইমাম মলিক নামাযের প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফয়ে ইয়াদাইন করার পদ্ধতিকে (দলীলের বিবেচনায়) দুর্বল মনে করতেন।
(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা)

ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ-এর ফতোয়া

ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন-
নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না
(জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)

এত সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে সহীহ সূত্রে রফউল ইয়াদাইন না করার প্রমাণ থাকা সত্বেও শুধু আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ ছাড়া বাকি এক লাখ তেইশ হাজার নয় শত নিরান্নব্বই জন সাহাবীই রফয়ে ইয়াদাইন করেছেন বলা পাগলামী ছাড়া আর কিছু নয়।

আল্লাহ তাআলা এসব ধোকাবাজ শায়েখদের মিথ্যাচার থেকে উম্মতে মুসলিমাকে হিফাযত করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. মোঃ ফায়সাল, যাত্রাবাড়ী।

    জাঝাকাল্লাহ খাইর।

Leave a Reply to মোঃ ফায়সাল, যাত্রাবাড়ী। Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *