প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / “ইমাম কিরাত পড়লে চুপ থাক” সহীহ মুসলিমে উদ্ধৃত হাদীসাংশর উপর উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব

“ইমাম কিরাত পড়লে চুপ থাক” সহীহ মুসলিমে উদ্ধৃত হাদীসাংশর উপর উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব

প্রশ্ন

আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

মুফতি সাহেব। মুসলিম শরীফের ৮০০ নং হাদিস সম্বন্ধে সেই আহলে হাদিস (Desh Bangla) নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছেঃ
Desh Bangla Mohammad Faisal এদিকে ইমাম দারা কুতনী তার “দারা কুতনীর” ভিতরে হাদীসের ঐ অংশটুকু বর্ণনা করার পর এভাবে মন্তব্য করেছেন:অর্থ: এভাবেই হাদীস খানা বর্ণনা করেছেন সুফিয়ানুস সাওরী। সুলায়মানুত তায়মী থেকে এবং বর্ণনা করেছেন হাদীস খানা হিসামুদ্দাস্তয়াই এবং সাঈদা।হাম্মাম, আবু আওয়ানাহ্ এবং আদী বিন আবী আম্মার প্রত্যেকেই কাতাদাহ থেকে। কিন্তু কেউই ঐ টুকরাটুকু বলেন নাই যে, و١ذ١ قرأ فانصتوا.”ইমাম যখন পড়ে তখন চুপ থাক” আর তারা সবাই কাতাদার সাথী ছিলেন।দেখুন: দারা কুতনী ১ম খ:, ৩২৩পৃ:।
** এরপর আবু দাউদেও দেখুন ঐ সূত্রে অতিরিক্ত অংশটুকু নাই। যে ইমাম যখন পড়ে তখন চুপ থাক। এ ব্যাপারে ইমাম আবু দাউদও পরবর্তীতে বলেন: قوله و انصتوا ليس بمحفوظ لم يجى به الاسليمان التيمى فى هذا الحديث অর্থ: ইমাম যখন পড়ে তখন চুপ থাক, কাথাটি সুরক্ষিত নয়। কেননা বর্ণনাকারী সুলায়মানুত তায়মী ব্যতীত আর কেউই উল্লেখ করেন নাই।
অতএব, সুলায়মানুত তায়মির সূত্রটি যেখানে আছে যে ইমাম যখন পড়ে তখন চুপ থাক, ওটা সম্পর্কে হাদীস সম্রাটগণ আপত্তি তুলেছেন। যেমন, আবু দাউদ বলেন ওটা সুরক্তিত নয়। ইমাম দারাকুতনী বলেন ঐ একটি মাত্র সূত্রে ছাড়া আর হাদীসটি যতগুলি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে ঐ অতিরিক্ত অংশটুকু নাই। আর যে একটি মাত্র সূত্রে ঐ অংশটুকু এসেছে তাও আবার যঈফ। দেখুন দারাকুতনী ১ম খ: ৩২৩পৃ:।

অপরদিকে ইমাম যায়লয়ী তার “নাছবুররায়া” গ্রন্থে এবং ইমাম বায়হাকী তার “মারেফাতুস সুনান” গ্রন্থে বলেছেন: وقد اجمع الفاظ على خطاء هذه اللفظة অর্থ: হাদীস শাস্ত্রবিদগণ সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঐ অংশ (ইমাম যখন পড়ে তখন চুপ থাক) টিকে ভুল বলেছেন। বলা বাহুল্য ইমাম যায়লয়ীকে আপনাদের হানাফী মাযহাবের একজন উচ্চ দরের মুহাদ্দেস বলে মানা হয়। অতএব সুলায়মানুত তায়মীল সূত্রে হাদীসের ভিতরে প্রক্ষিপ্ত অংশটুকু নিয়ে হাদীস সম্রাটগণ ঘোর আপত্তি তোলায় সেটা দলিল ও আমলের অযোগ্য বলে বিবেচিত।

উত্তর:

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

 ইমাম যখন পড়ে তখন চুপ থাকার বিধানটি কুরআন মাজীদের আয়াত ও অনেক সাহাবী-তাবেয়ীর ফতোয়া ও আমল দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত, যা মৌখিক সাধারণ বর্ণনা-সূত্রের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তারপরেও আপনি যেহেতু নির্ধারিত বর্ণনার উপর প্রশ্ন করেছেন তাই এখানে নির্ধারিত বর্ণনার উপর সনদগত আলোচনা উপস্থাপিত হল।

‘ইমাম যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাক’ কথাটি দুই সাহাবীÑ হযরত আবু মূসা আশআরী ও আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে সহীহ ও প্রমাণিত। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ ও মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ একে সহীহ বলেছেন। এবং ইবনে জারীর তবারী (৩১০হি.), ইবনুল মুনযির, ইবনে হাযম, ইবনে আবদুল বার, মুনযিরী, ইবনে তাইমিয়া, ইবনুত তুরকুমানী, ইবনে হাজার আসকালানী ও ইবনুল হুমাম প্রমুখ এ মতই পোষণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে, সুনানে আবু দাউদে উল্লেখিত হযরত আবু মূসা আশআরী ও আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রের হাদীসকে লামাযহাবীদের মান্যবর আলেম নাসিরুদ্দীন আলবানী সাহেবও সহীহ বলেছেন।  (সহীহ আবু দাউদ হাদীস নং ৬১৭, ৮৯৪)

আপনি সুনানে দারাকুতনীর উদ্ধতিতে যে হাদীসটির কথা বলতে চেয়েছেন তা হুবহু উল্লেখ করা হলো-

  ثنا علي بن عبد الله بن مبشر, ثنا أبو الأشعث أحمد بن المقدام، ثنا المعتمر بن سليمان , حدثنا أبي , عن قتادة , ح وحدثنا أحمد بن علي بن العلاء , ثنا يوسف بن موسى , ثنا جرير , عن سليمان التيمي , عن قتادة , عن أبي غلاب يونس بن جبير عن حطان بن عبد الله , قال: صلينا مع أبي موسى الأشعري صلاة العتمة فذكر الحديث بطوله , وقال فيه: فإن رسول الله صلى الله عليه وسلم خطبنا فكان يعلمنا صلاتنا ويبين لنا سنتنا , قال: ” أقيموا الصفوف ثم ليؤمكم أحدكم , فإذا كبر الإمام فكبروا , وإذا قرأ فأنصتوا “.

 অর্থাৎ হযরত আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নসীহত করলেন। আর তিনি আমাদের নামায শিক্ষা দিতেন এবং তিনি আমাদের সুন্নাহ বর্ণনা করতেন। তিনি ইরশাদ করেন, যখন তোমরা নামায পড়তে শুরু কর তখন (প্রথমে) কাতারগুলো সোজা কর। এরপর তোমাদের একজন ইমাম হবে। সে যখন তাকবীর দেয় তখন তোমরা তাকবীর দিবে। আর সে যখন পড়ে তখন তোমরা চুপ থাকবে।  ( সুনানে দারাকুতনী হাদীস নং ১২৫০)

হযরত আবু মূসা আশআরী রা. কর্তৃক বর্ণিত এ হাদীসটি  সহীহ মুসলিমেও রয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৪)  ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি একাধিক নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণনা করেছেন। আলোচিত বাক্যটিও এ হাদীসের অংশ এবং যে সনদে তা আছে তা-ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আর তা বর্ণনা করেছেন এভাবেÑ

“وَفِى حَدِيثِ جَرِيرٍ عَنْ سُلَيْمَانَ ، عَنْ قَتَادَةَ ، مِنَ الزِّيَادَةِ : وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا “

অর্থাৎ (এ হাদীসে) কাতাদা থেকে সুলায়মান তাইমীর বর্ণনায়, যা বর্ণনা করেছেন জারীর, এ কথাও রয়েছেÑ وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُو “(ইমাম) যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাকবে”। ইমাম মুসলিমের মতে হাদীসটি সহীহও বটে। একারণেই তিনি তা তাঁর ‘সহীহ’ তে এনেছেন। উপরন্তু একজনের প্রশ্নের উত্তরে তা স্পষ্ট ভাষায় বলেও দিয়েছেন। সেই কথোপকথনটিও সহীহ মুসলিমে আছে। আর তা এইÑ

قَالَ أَبُو إِسْحَاقَ : قَالَ أَبُو بَكْرِ ابْنُ أُخْتِ أَبِى النَّضْرِ فِى هَذَا الْحَدِيثِ ، فَقَالَ مُسْلِمٌ : تُرِيدُ أَحْفَظَ مِنْ سُلَيْمَانَ؟!…

অর্থাৎ আবু ইসহাক বলেন, আবু নাযরের ভাগ্নে আবু বকর এ হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে (ইমাম) মুসলিম বলেন, “তুমি কি সুলায়মান (তাইমীর) চেয়েও বড় হাফেয চাও?!… (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৪-এর আলোচনায়)

সুতরাং দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, ইমাম মুসলিম (২৬১হি.) এর বিচারে এ হাদীস অর্থাৎ ‘ইমাম যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাক’Ñ সহীহ।

হাদীসটির ব্যাপারে ইমাম দারাকুতনীর মন্তব্য ও একটি পর্যালোচনা:

সুনানে দারাকুতনীর  উপরে উল্লেখিত হাদীসটি (হাদীস নং ১২৫০) বর্ণনা করার পর ইমাম দারাকুতনী রহ. বলেন-

وكذلك رواه سفيان الثوري , عن سليمان التيمي . ورواه هشام الدستوائي , وسعيد , وشعبة , وهمام , وأبو عوانة , وأبان وعدي بن أبي عمارة , كلهم عن قتادة , فلم يقل أحد منهم: ” وإذا قرأ فأنصتوا ” , وهم أصحاب قتادة الحفاظ عنه

 ইমাম দারাকুনীর এ বক্তব্যের সারকথা হলো-  “কাতাদা থেকে হাদীসটি হিশাম দাস্তওয়ায়ী, সায়ীদ ইবনে আবী আরুবা, শুবা, হাম্মাম (ইবনে ইয়াহইয়া),আবু আওয়ানা ও আবান (ইবনে ইয়াযিদ) প্রমুখ বর্ণনাও করেছেন। তাদের বর্ণনায় ‘সে যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাক’ কথাটি নেই। শুধু সুলায়মান তাইমী তা বর্ণনা করেন”।

কাতাদার শিষ্যদের মধ্যে শুধু সুলায়মান আত তায়মী একাই এ অংশটি বর্ণনা করেছেন কিনা এ সম্পর্কিত আলোচনা সামনে আসছে।

তবে এখানে আরেকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। তাহলো, ইমাম দারাকুতনী তাঁর সুনানে দারাকুতনীতে নিজেই আবু মুসা আশআরী রা. এর সূত্রকে সহীহ বলেছেন।

শায়েখ মুহাম্মাদ হাশেম বিন আব্দুল গফুর সিন্ধী রহ. তাঁর তানকীহুল কালাম নামক গ্রন্থে বলেন-

অর্থাৎ “ইমাম দারাকুতনী রহ. তাঁর সুনানে দারাকুতনীতে আবু মুসা আশআরী রা.থেকে দুটি সূত্রে ইমাম মুসলিমের শব্দে বর্ণনা করেছেন। অত:পর বলেছেন এর সনদ সহীহ এবং রাবীগণ নির্ভরযোগ্য”।

উল্লেখ্য যে, একেকটি হাদীস গ্রন্থের অনেক সময় একাধিক নুসখা হয়ে থাকে। যদিও আমরা মুদ্রিত সুনানে দারাকুতনীতে  উক্ত কথাটি পাইনি। মুহাম্মাদ হাশেম সিন্ধী রহ. এর কাছে যে নুসখা ছিল সেখানে তিনি  তা পেয়েছেন বলেই উল্লেখ করেছেন।

কাতাদার শিষ্যদের মধ্যে শুধু সুলায়মান আত তায়মী একাই কি এ অংশটি বর্ণনা করেছেন? কিংবা তিনি কী ভূলের শিকার হয়েছেন।?

এ বিষয়ে নিম্নে ইমামদের মতামত উল্লেখ করা হলো-

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর বক্তব্য:

১.আবু বকর আছরাম বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (২৪১হি.) -কে জিজ্ঞাসা করলাম,  “وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا ” (সে যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাক) নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে কে বর্ণনা করে? উত্তরে বললেন, …জারীরের হাদীস, যা তিনি সুলায়মান তাইমী থেকে বর্ণনা করেছেন। তাদের ধারণা সুলায়মান তাইমী থেকে এটি মুতামিরও বর্ণনা করেছেন। বললাম, জ্বী, মুতামিরও বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন, তাহলে আর কি চাও? (আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ১১/৩৪)

قال أبو بكر الأثرم: قلت لأحمد بن حنبل: من يقول عن النبي صلى الله عليه وسلم من وجه صحيح “إذا قرأ الإمام فأنصتوا”؟ فقال: ৃ والحديث الذي رواه جرير عن التيمي ، وقد زعموا أن المعتمر رواه ، قلت: نعم ، قد رواه المعتمر ، قال: فأي شيء تريد؟

২.আবু তালেব বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে জিজ্ঞাসা করলাম, তারা বলে, আবু খালেদ এখানে ভুল করেছেন? উত্তরে বললেন, এটি সুলায়মান তাইমীর সূত্রে আবু মুসা আশআরী. রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলাম, তারা বলে, তাইমী  এখানে ভুল করেছেন? বললেন, এ কথা যে বলে আমি তাকে হতভম্ব করে দিব! (শরহে মুগলাতায় ৩/৪০৯)

وفي سؤالات أبي طالب : قلت له : يقولون: ان أبا خالد الأحمر أخطأ فيه فقال: رواه التيمي ، عن قتادة ، عن أبي غلاب ، عن حطان ، عن أبي موسي. قلت : يقولون: أخطأ التيمي قال : من قال هذا فقد بهته!

ইমাম ইবনে আবদুল বার রহ. এর বক্তব্য:

ইবনে আবদুল বার রহ. (৪৬৩হি.) বলেন, কেউ যদি এ প্রশ্ন করে যে, এটি (ইমাম যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাকবে) আবু হুরায়রা রা. এর হাদীসে ইবনে আজলান ছাড়া আর আবু মূসা আশআরী. এর হাদীসে সুলায়মান তাইমী ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেনি, তাহলে তাকে বলা হবে যে, এঁদের চেয়ে বড় হাফেয কেউ এঁদের বিরোধিতা করেনি। সুতরাং এঁদের বর্ণনা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। ইমাম আহমদ উভয় হাদীসকে সহীহ বলেছেন…। (আততামহীদ ১১/৩৪)

إن قال قائل: إن قوله “وإذا قرأ فأنصتوا” لم يقله أحد في حديث أبي هريرة غير ابن عجلان ، ولا قاله أحد في حديث أبي موسى غير جرير عن التيمي؟ قيل له: لم يخالفهما من هو أحفظ منهما ، فوجب قبول زيادتهما ، وقد صحح هذين الحديثين أحمد بن حنبل…

হাফেজ মুনযিরী রহ. এর ভাষায় ইমাম দারাকুতনীর আপত্তির খ-ন

আবু মুসা আশআরী রা. এর হাদীস এবং তাতে সুলায়মান তাইমীর মুতাবাআত না থাকা এবং হুফফাজুল হাদীস রাবীদের বিরোধিতা বিষয়ে  ইমাম দারাকুতনীর আপত্তি উদ্ধৃত করে মুনযিরী রহ. (৬৫৬হি.) বলেন, সুলায়মান তাইমী ছিকা ও হাফেযে হাদীস হওয়ায় তাঁর একক বর্ণনা ইমাম মুসলিমের কাছে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি। তাই তিনি একে সহীহ বলেছেন…। (মুখতাসারে সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৩)

…ولم يؤثر عند مسلم تفرد سليمان بذلك ، لثقته وحفظه ، وصحح هذه الزيادة…

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য:

ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮হি.) লেখেন, আবু মূসা আশআরী রা. এর হাদীসে বর্ণিত ‘ইমাম যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাক’ কথাটিকে ইমাম আহমদ, ইসহাক (২৩৮হি.) ও মুসলিম ইবনে হজ্জাজ প্রমুখ সহীহ বলেছেন। আর ইমাম বুখারী এর এ ইল্লত বের করেছেন যে, এতে রাবীদের ইখতিলাফ হয়েছে। এ বর্ণনাটির বিশুদ্ধতায় বিঘœ সৃষ্টি করে না। (মাজমূ ফাতাওয়া ২২/৩৪০)

وقوله في حديث أبي موسي : ” وإذا قرأ فأنصتوا ” صححه أحمد وإسحاق ومسلم بن الحجاج وغيرهم ، وعلله البخاري بأنه اختلف فيه ، وليس ذلك بقادح في صحته

ইমাম ইবনুল মুনযির (৩১৮হি.), ইবনুত তুরকুমানী (৭৪৫হি.), ইবনুল হুমাম (৮৬১হি.), ইবনে হাজার আসকালানী (৮৫২হি.) ও বদরুদ্দীন আইনী (৮৫৫হি.) প্রমুখও একই মত পোষণ করেছেন।-দেখুন : আলজাওহারুন নাকী, ইবনে তুরকুমানী ২/১৫৫-১৫৬ (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী’র সাথে মুদ্রিত); ফাতহুল কাদীর, ইবনুল হুমাম ১/৩৪১; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/২৮৩; উমদাতুল কারী ৬/১৫; ফাছলুল খিতাব ফী মাসআলাতি উম্মিল কিতাব পৃ. ৪২-৪৩

মোটকথা (ইমাম যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাকবে) এটি উক্ত হাদীসের অংশ হিসাবে প্রমাণিত। কারণ সুলায়মান তাইমী অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। তাছাড়া এ বর্ণনায় তিনি একা নন, তাঁর একাধিক মুতাবি (সমর্থনকারীও) রয়েছে।

হযরত আবু মুসা আশআরী রা. এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস এবং ইমাম আবু দাউদের দাবী ও বাস্তবতা:

উল্লেখ্য যে, ইমাম আবু দাউদ রহ.‘ইমাম যখন পড়ে তোমরা তখন চুপ থাক’ অংশটি হযরত আবু মুসা আশআরী রা. এর সূত্রেও এনেছেন (হাদীস নং ৯৭৫) আবার হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রেও এনেছেন (হাদীস নং ৬০৪)। আপনি প্রশ্নে যেহেতু হযরত আবু মুসা আশআরী রা. এর সূত্রের কথা বলতে চেয়েছেন, তাই নিম্নে এ বিষয়ে কিছু কথা আরজ করা হল-

ইমাম আবু দাউদ রহ. এর যে মন্তব্য আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন তার জওয়াব স্বয়ং মুনযিরী রহ. এর ভাষাতেই শুনুন।

ইমাম আবু দাউদ-এর উপরে উল্লেখিত বক্তব্য উদ্ধৃত করে মুনযিরী রহ. লিখেছেন, তাতে আপত্তি আছে। কারণ সুলায়মান ইবনে হাইয়্যান আহমার ছিকা রাবীদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের হাদীস ইমাম বুখারী ও মুসলিম সহীহ গ্রন্থে দলীলস্বরূপ এনেছেন। তাছাড়া এ বর্ণনায় তিনি একা নন, মুহাম্মাদ ইবনে সা’দ তাঁর সমর্থন করেছেন। আর তিনি (মুহাম্মাদ ইবনে সা’দ) ছিকা…। ইমাম নাসায়ী উভয় হাদীস তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে এনেছেন…। (মুখতাসারে সুনানে আবু দাউদ ১/৩১৩)

আরবী ইবারত হলো-

وفيما قاله نظر, فان أبا خالد هذا هو سليمان بن حيان الاحمر, وهو من الثقات, الذين احتج البخاري ومسلم بحديثهم في صحيحيهما , ومع هذا فلم ينفرد بهذه الزيادة , بل قد تابعه عليها ابو سعد محمد بن سعد الأنصاري …وهو ثقة , وثقه يحيى بن مَعِين و محمد بن عبد الله المخرمي , وابو عبد الرحمن النسائي. وقد خرج هذه الزيادة النسائي في سننه من حديث ابي خالد الاحمر, و من حديث محمد بن سعد هذا…

এ বর্ণনায় সুলায়মান তাইমীর মুতাবি (সমর্থনকারী)

আলোচিত হাদীসটি আবু মূসা আশআরী রা. এর সূত্রে সহীহ ও প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে কোনো কোনো ইমামের যে ভিন্নমত রয়েছে তার চেয়ে এ সিদ্ধান্তই অগ্রগণ্য। কারণ এ হাদীসের বর্ণনাকারী সুলায়মান তাইমী অতি উঁচু পর্যায়ের ছিকা ও হাফিযুল হাদীস, যাদের একক বর্ণনাও ইমামগণ কবুল করেন, তদুপরি এ বর্ণনায় তিনি একা নন, তিন জন সমর্থনকারী রাবী তাঁর রয়েছে।

এধরনের হাফেযে হাদীসদের একক বর্ণনাও ইমামগণ অনেক সময় কবুল করেন। অথচ   এ বর্ণনায় তাঁর তিন জন সমর্থনকারীও রয়েছে।

এক. উমর ইবনে আমের

বর্ণনাটি এই-

قال البزار: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى الْقُطَعِيُّ ، قَالَ: أَخْبَرَنَا سَالِمُ بْنُ نُوحٍ ، عَنْ عُمَرَ بْنِ عَامِرٍ ، عَنْ قَتَادَةَ ، عَنْ يُونُسَ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ حِطَّانَ ، عَنْ أبي موسى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِنَحْوِ حَدِيثِ التَّيْمِيِّ كَمَا رَوَاهُ التَّيْمِيُّ وَإِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا

-মুসনাদে বায্যার ৬/৬৬, হাদীস : ৩০৬০

আল্লামা মুগলতাঈ এ হাদীস সম্পর্কে বলেছেন-

ورواه البزار عن محمد بن يحيى القطعي عن سالم، وهو سند صحيح على شرط مسلم،

বাযযার এটি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া কুতায়ীর সূত্রে সালেম থেকে, এই শর্তটি মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। (শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ, আল্লামা মুগলতাঈ, বাবু সাকতাতায়িল ইমাম)

 দুই. সাঈদ ইবনে আবী আরুবা (সুনানে দারাকুতনী হাদীস নং-১২৪৯)

তিন. আবু উবায়দা মুজ্জাআ ইবনে যুবাইর। (মুসনাদে আবু আওয়ানা ২/১৩৩)

বর্ণনাটি এই-

قال أبو عوانة : حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ بَحْرٍ الْجُنْدَيْسَابُورِيُّ ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رُشَيْدٍ ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدَة َ، عَنْ قَتَادَةَ ، عَنْ يُونُسَ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ حِطَّانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الرَّقَاشِيِّ ، عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم -: إِذَا قَرَأَ الإِمَامُ فَأَنْصِتُوا، وَإِذَا قَالَ: {غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِين .

-মুসনাদে আবু আওয়ানা ২/১৩৩

এ সনদে সুলায়মান তাইমীর সমর্থনকারী রাবী হলেন আবু উবায়দা মুজ্জাআ। মুজ্জাআ ও তার শিষ্য আব্দুল্লাহ ইবনে রুশায়দকে ইবনে হিব্বান ছিকাত গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেন- مستقيم الحديث সঠিক হাদীস বর্ণনাকারী (আছ্ছিকাত- তরজামা নং ১১২৫৫,১৩৭৮৮)

উল্লেখ্য যে হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসটি ইমাম মুসলিম ‘সহীহ’ গ্রন্থে না-আনলেও এটি তাঁর মতে সহীহ। সহীহ মুসলিমে উল্লেখিত ইমাম মুসলিম ও আবু নাযরের ভাগ্নে আবু বকরের মধ্যকার কথোপকথনটিতে তার স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

আপনি প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে নাছবুর রায়ার উদ্ধৃতিতে যে কথা উল্লেখ করেছেন তা তো ইমাম যায়লায়ী রহ. ইমাম বায়হাকীর বক্তব্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এটি যায়লায়ী রহ.এর নিজস্ব কোন বক্তব্য নয়। আর ইমাম বায়হাকী রহ. এর উক্ত মতটি যে গ্রহণযোগ্য নয় তা তো তিনি আগের পৃষ্ঠাতেই (২/৬) আলোচনা করেছেন। অতএব ইমাম বায়হাকী রহ. এর বক্তব্যকে ইমাম যায়লায়ীর ঘাড়ে চাপানো বা যায়লায়ীর বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়া আমানতদারিতার পরিচয় নয়।

 والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

মাওলানা মুহসিনুদ্দীন খান

সহকারী গবেষক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

নিরীক্ষক

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

 

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. মোঃ ফায়সাল, যাত্রাবাড়ী।

    জাঝাকাল্লাহ খাইর।

Leave a Reply to মোঃ ফায়সাল, যাত্রাবাড়ী। Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *