প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / মুযিজা দেখানোর জন্য নবী নেই তাই এখন ইসলাম সত্য ধর্ম বুঝবো কিভাবে?

মুযিজা দেখানোর জন্য নবী নেই তাই এখন ইসলাম সত্য ধর্ম বুঝবো কিভাবে?

প্রশ্ন

জনাব মুফতি সাহেব (দা.বা.),

আসসালামুআলাইকুম। আমার নাম মোঃ আলশাহারিয়ার। আমার পরিচিত খুব কাছের একজন বন্ধু আমাকে প্রায়ই কিছু প্রশ্ন করে, যেই প্রশ্নগুলো আমাকে সবসময় পেরেশানিতে ডুবিয়ে রাখে। এমনকি আমার ঈমান ও আমলের ব্যাঘাত ঘটায়। প্রশ্নগুলো হলঃ (প্রশ্নগুলো আমার নিজের ভাষায় ব্যক্ত করলাম)

নবী (সঃ) যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন, তখন মানুষ তাঁর কাছে নানা কেরামত ও অলৌকিক ঘটনা দেখতে চাইত, এইটা প্রমাণ করার জন্য যে, তিনি আসলেই নবী কিনা এবং ইসলাম ধর্ম সত্যি কিনা। কিন্তু বর্তমানে তো নবী বেঁচে নেই। তাই আমাদের তো আর অলৌকিক কিছু দেখার সৌভাগ্য নেই। তাহলে এখন আমরা কিভাবে প্রমাণ করবো যে, নবী সত্যি কথাই বলেছিলেন। অর্থাৎ, তিনিই যে আল্লাহ্‌র নবী এবং আল্লাহ্‌ যে এই সৃষ্টি জগতের স্রস্টা এই কথা আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

অলৌকিক ঘটনা দেখেই ঈমান আনতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং বাস্তবতা হিসিবে ঈমান আনাই শরীয়তের মূল মাকসাদ।

হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত খাদিজা রাঃ, হযরত আলী রাঃ, কোন আশ্চর্য ঘটনা দেখে ঈমান আনেননি। রাসূল সাঃ এর কাছে আসা ওহীর বাস্তবতা বুঝে ঈমান এনেছেন।

তাই অলৌকিক ঘটনা দেখে ঈমান আনতে হবে আপনার এ ধারণাটি ঠিক নয়।

সাহাবায়ে কেরামের সামনে যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সেই কুরআন অবিকৃত অবস্থায় এখনো বাকি আছে। বাকি আছে নবীজী সাঃ এর ইশারায় দ্বিখন্ডিত হওয়া চাঁদ এখনো দ্বিখন্ডিত অবস্থায়।

এ দু’টি ছিল প্রকাশ্য মুজিযা। যা এখনো বিদ্যমান।

আর একজন স্রষ্টা  ছাড়া কোন কিছু সৃষ্টি হতে পারে না এটি স্বাভাবিক আকলের বিষয়। পাগল ছাড়া এমন কথা কেউ বলতে পারবে না যে, বিমান এমনিতেই চলছে, কিন্তু চালক কেউ নেই। গাছের একটি পাতা, বাতাসের ধাক্কা কিংবা কারো গাছ ঝাঁকানো ছাড়া নড়া অসম্ভব।

যদি সামান্য গাছের পাতা এমনিতে নড়তে না পারে, কেউ না নড়ালে, তাহলে এ বিশাল ভূবন এমনিতেই চলছে? কোন চালক নেই?

সারা বিশ্ব জাহান এমনিতেই চলছে কিন্তু একে পরিচালকারী কেউ নেই এমনটি ধারণা করা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। তাই আল্লাহ তাআলার দেয়া বিবেক বুদ্ধিই মানুষকে স্রষ্টা চিনতে সহায়ক হবে।

যখন মানুষ তার স্বাভাবিক ব্রেইন দিয়ে চিন্তা করবে, তখনি সে একজন স্রষ্টর অস্তিত্ব অনুভব করে নিবে। সেই সাথে দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে যাবে একজন স্রষ্টা আছেন, যিনি সব কিছু সৃজন করেছেন। যিনি সব কিছুকে পরিচালনা করছেন।

তারপর প্রশ্ন হল, সেই স্রষ্টাটা কে?

তা যখন মানুষ যাচাই করবে, থুঁজবে স্রষ্টার বাণী সম্বলিত গ্রন্থ। তখন একজন সুস্থ্য বিবেক সম্পন্নের কাছে পবিত্র কুরআনই সর্বোৎকৃষ্ট মনে হবে। কারণ-

১-

পবিত্র কুরআনই একমাত্র অবিকৃত ঐশী কিতাব। যা তার বর্ণনাভঙ্গি এবং গোটা বিশ্বে একই ধরণের কুরআন পাওয়া পরিস্কার প্রমাণ করে। পৃথিবীর সমস্ত স্থানে কুরআনের সব কপি একই। কোটি হাজারো হাফেজ একইভাবে কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্ত তিলাওয়াত করে। এর কোন নজীর আর কোন আসমানী গ্রন্থের নেই।

কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা সবার জন্য নাজীল হয়েছে মর্মে ঘোষণা আছে। আর ইঞ্জিল তাওরাত ও জবুরের কোথাও একথা নেই।

কুরআনই একমাত্র আসমানী গ্রন্থ, যা যে নবীর উপর নাজিল হয়েছে, সেই নবীর আদ্যোপান্ত জীবনী এবং উক্ত নবীর পরিবারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, ইবাদত পালন পদ্ধতি, মোটকথা সর্বাঙ্গীন জীবনের যাবতীয় বিষয়ের সমাধান সরাসরি নবী থেকে সংরক্ষিত অবস্থায় সূত্রসহ লিপিবদ্ধ আছে।

যা আর কোন নবী বা রাসূলের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। খৃষ্টানরাতো তাদের নবী নামাযে দাঁড়িয়ে কী পড়তেন, তাও জানে না। জানে না ইহুদীরাও। কিন্তু ইসলামের নবী পেশাব করতে কিভাবে প্রবেশ করতেন, কি দুআ করতেন তাও লিপিবদ্ধ আকারে সূত্রসহ রয়েছে।

কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা মানুষের জীবন চলার যাবতীয় বিধান এবং কুরআন যে নবীর উপর নাজিল হয়েছে, তার হাদীসের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে।

আর কোন নবীর উপর নাজিলকৃত ঐশী গ্রন্থে এর কোন নজীর নেই। দুই একটা বিধান ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না গোটা বাইবেল তন্ন তন্ন করে খুজলেও।

এরকম অসংখ্য বৈশিষ্ট্য পবিত্র কুরআনকে ঐশী গ্রন্থের স্বীকৃতি প্রদান করবে।

যে কুরআন হল এক জীবন্ত মুযিজা। যাতে এমন সব বৈজ্ঞানিক কথা রয়েছে যা একজন স্রষ্টা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। যে কুরআন মানুষকে সঠিক স্রষ্টা মহান আল্লাহকে চিনতে সহায়ক হবে।

আর কুরআনকে চিনে গেলে মহানবীকে চিনা আরো সহজ হয়ে যাবে। অসংখ্য হাদীসের ভান্ডার। সূত্রসহ সূত্রের প্রতিটি ব্যক্তির জীবনীসহ যে মহান ব্যক্তিত্বের প্রতিটি কথা, কাজকর্ম মুহাদ্দিসরা রেকর্ড করে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন, তা দেখে একজন স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেক সম্পন্ন মানুষ এখনো আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর পরিচয় খুঁজে পাচ্ছে। পাবেও কিয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ।

এভাবে একজন সুস্থ্য বিবেক সম্পন্ন মানুষ একটু চিন্তা করলেই আল্লাহ তাআলা এবং তার শেষ নবী মুহাম্মদ সাঃ কে চিনতে পারবেন।

সুতরাং মুজিজা দেখতে পাই না, এমন খোড়া যুক্তি দেখিয়ে ইসলাম থেকে বিমুখ থাকার কোন সুযোগ নেই।

মানুষ সর্বশ্রেষ্টই হয়েছে আকল তথা বুদ্ধি বিবেকের কারণে। সেই বিবেক বুদ্ধি না থাকলে পশু আর মানুষে কোন তফাৎ থাকে না। আর এ বুদ্ধি বিবেক দেয়াই হয়েছে আল্লাহকে চিনার জন্য। আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হবার শিক্ষা অর্জনের জন্য। তা’ই বাহ্যিক মুযিজা নয়, প্রকাশ্য নিদর্শনই হল আল্লাহ ও তার রাসূলকে চিনার মূল মাধ্যম। যা এখনো পুরো মাত্রাই বিদ্যমান। এসব দেখে ও ফিকির করে আমরা আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ কে চিনে নিতে পারি।

قَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا أَنزَلَ هَٰؤُلَاءِ إِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ بَصَائِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَا فِرْعَوْنُ مَثْبُورًا [١٧:١٠٢]

তিনি বললেনঃ তুমি জান যে, আসমান ও যমীনের পালনকর্তাই এসব নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ নাযিল করেছেন। হে ফেরাউন, আমার ধারণায় তুমি ধ্বংস হতে চলেছো। [সূরা ইসরা-১০২]

رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ ۚ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا [١٩:٦٥]

তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডলে এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবার পালনকর্তা। সুতরাং তাঁরই বন্দেগী করুন এবং তাতে দৃঢ় থাকুন আপনি কি তাঁর সমনাম কাউকে জানেন? [সূরা মারইয়াম-৬৫]

قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ ۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ [٦:١٦٤]

আপনি বলুনঃ আমি কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য প্রতিপালক খোঁজব, অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক? যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অনন্তর তিনি তোমাদেরকে বলে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা বিরোধ করতে। [সূরা আনআম-১৬৪]

قَالَ بَل رَّبُّكُمْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا عَلَىٰ ذَٰلِكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ [٢١:٥٦]

তিনি বললেনঃ না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা। [সূরা আম্বিয়া-৫৬]

رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ [٥٥:١٧]

তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।

فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ [٥٥:١٨]

অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? [সূরা আররহমান-১৭,১৮]

 

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [٣٤:٢٨]

আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। [সূরা সাবা-২৭]

ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম হওয়া বিষয়ে এ বয়ান দু’টি শুনতে পারেন-

ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম

ইসলামই একমাত্র মুক্তির ধর্ম

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. আল্লাহর পথে দাওয়াত এর কাজ করার ফজিলত গুলি লিখলে ভালো হয়।

Leave a Reply to Abu Bakar Rasel Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *