প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / বেরেলবী বিদআতিদের শয়তানের প্রতি মোহাব্বতের চিত্র [শেষ পর্ব]

বেরেলবী বিদআতিদের শয়তানের প্রতি মোহাব্বতের চিত্র [শেষ পর্ব]

সংকলক– লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

২য় পর্বটি পড়ে নিন

মনে রাখবেন, রেজাখানীরা শুধু শয়তানের প্রতি এই ঈমানই রাখে না যে, শয়তান তাওহীদে বিশ্বাসী। আরো আগে বেড়ে বলে-

শয়তান পাক্কা মুআহহিদ তথা একত্ববাদী

মূর্তি পূজা, মূর্তি নির্মাণ, মূর্তির ব্যবসা সবই হারাম। অর্থাৎ শয়তান একাজ করায়। খেয়াল রাখুন, একাজ শয়তান নিজে করে না। অন্যদের দিয়ে করায়। সে নিজেতো মুআহহিদ তথা একত্ববাদে বিশ্বাসী। {নূরুল ইরফান-১৯৪}

বাহ! কি মোহাব্বত শয়তানের প্রতি। অন্যকে দিয়ে শিরক যে করায় সে মুশরিক নয়?

এর জবাব রেজাখানী হযরতদের জিম্মায় রেখে দিলাম।

শয়তান অন্যদের দিকে শিরক করায় লিখে বলেনঃ

শয়তান মুশরিক নয়!

শয়তান নিজে মুশরিক নয়। কিন্তু অন্যদের দিয়ে শিরক করায়। {নূরুল ইরফান-৮২২, নাঈমী কুতুবখানা}

কতটা নির্লজ্জভাবে শয়তানের সাফায়ী গাচ্ছে যে,

“শয়তান মুশরিক নয়”

আশা করি শয়তান রেজাখানীদের মাজার আর দরবারে এসে তার পক্ষে ওকালতকারীদের সাবাশ দিবে। কারণ শয়তান অন্যদের দিয়ে শিরক করালেও তাকে মুশরিক নয় পাক্কা একত্ববাদী সাব্যস্ত করে কী সুন্দর মোড়কে পেশ করল। শয়তানের উচিত তাদের মেডেল দেয়া।

শয়তান আলেম, আবেদ ও সুফী!

অথচ আমি [শয়তান] শত বছরের আবেদ, আলেম ও সুফী। {নূরুল ইরফান-৩৪৭}

আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন, শয়তান কোন স্থানে নিজেকে ইবাদতগুজার, আলেম ও সুফী বলে সম্বোধন করেছে!

শয়তান স্বীকার করুক আর না করুক, কিন্তু বেদআতিরা নিজের মনে লোকায়িত শয়তানের সমর্থন ও মোহাব্বতে এ তিনটি গুণই শয়তানের জন্য সাব্যস্ত করে দিল।

শয়তানের কাছে শক্তি ইলম ও ইবাদত বিদ্যমান!

এটাও জানা গেল যে, হেদায়াত নিজের ক্ষমতা, অথবা ইলম কিংবা ইবাদত দ্বারা পাওয়া যায় না। এটা আল্লাহ তাআলার খাস দান। নতুবা শয়তানের পাক্কা মুমিন হওয়ার দরকার ছিল। কেননা তার কাছে এসবই ছিল। {নূরুল ইরফান-১৮৭, নাঈমী কুতুবখানা}

রেজাখানীদের সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে শয়তানের কাছে ইলম, শক্তি ও ইবাদত ছিল। বাহ! কি সুন্দর সুক্ষèদৃষ্টি! আম্বিয়ায়ে কেরাম ও মানবতার দুশমনের ব্যাপারে রেজাখানীদের দৃষ্টিতে সে কত সৌন্দর্য আর মর্যাদা ও ক্ষমতার মালিক! [মাআজাল্লাহ!]

শয়তান মিথ্যা বলে না?

সে [শয়তান] নিজের জন্য মিথ্যা বলা পছন্দ করে না। {আহকামে শরীয়ত-১৩৫, শিব্বির ব্রাদার, লাহুর}

শয়তানের তাবেদারীর কি নজীর পেশ করছে যে, শয়তান থেকে মিথ্যার নিসবতও তোলে দিচ্ছে।

নবীগণ মিথ্যা বলতে পারেন?!

একদিকে শয়তান মিথ্যা বলা পছন্দ করে না বলে শয়তান থেকে মিথ্যা বলা হটাতে চাচ্ছে, অপরদিকে নবীগণ থেকে মিথ্যা প্রকাশ পাওয়া সম্ভব মর্মে ঘোষণা দিচ্ছে তাফসীরে নাঈমীর ১ নং খন্ডের ১৭২ পৃষ্ঠায়। একেই বলে শয়তানের একনিষ্ট ভক্ত ও চ্যালা।

শয়তান নামাযী?

আহমাদ রেজা খান সাহেব লিখেনঃ

রাস্তায় আমি দেখলাম, এক পাহাড়ে ইবলিস নামায পড়ছে। আমি তার এ নতুন সুরত দেখে বললামঃ “তোমার কাজতো নামায থেকে গাফেল করা। তাহলে তুমি নিজে কিভাবে নামায পড়ছো?” সে জবাব দিলঃ “হয়তো আল্লাহ তাআলা আমার নামায কবুল করবেন, আর আমাকে মাফ করে দিবেন”। {মালফুজাত-১/১৫, হামেদ ইন্ড কোম্পানী, লাহুর}

একটি মনগড়া বর্ণনা দিয়ে আহমাদ রেজা খান সাহেব শয়তানকে নামাযী প্রমাণ করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু এটি যে, একটি ব্যর্থ চেষ্টা তা সবার কাছেই স্পষ্ট।

শয়তান ও আহমাদ রেজা খান একই হুক্কায় মুখ লাগাতো

আহমাদ রেজা খান সাহেব লিখেনঃ

“আল্লাহর রহমাতে আমি [শয়তানকে] ক্ষুধার্তই রাখতাম। এমনকি পান খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলতাম, যখন ছালি মুখে দিতাম তখনও বিসমিল্লাহ শরীফ পড়তাম। হ্যাঁ তবে হুক্কা খাওয়ার সময় পড়তাম না। {মালফুজাতে আহমাদ রেজা-২০৩}

একটু ভেবে দেখুন! হুক্কাখোর আহমাদ রেজা খান সাহেব যখন হুক্কা খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ পড়তেন না। তখন এক টান আহমাদ রেজা দিতেন,আরেক টান দিত শয়তান। বাহ! কি চমৎকার বন্ধুত্বের প্রদর্শনী!

শয়তানও অদৃশ্য সাহায্য করতে পারে!

প্রশ্নঃ শয়তান কি অদৃশ্য সাহায্য করতে পারে?

উত্তরঃ অবশ্যই। {মিক্বয়াস হানাফিয়্যাত-৪৮৩, মৌলবী ওমর আচ্ছরবী বেরেলবী রেজাখানী}

শয়তানের প্রতি এ আক্বিদা রাখা যে, সে গায়েবানা সাহায্য করতে পারে, কি পরিমাণ ভয়ংকর ও জঘন্য আক্বিদা আপনারাই ভেবে দেখুন। আল্লাহই জানেন, কখন জানি ওরা আবার আল্লাহ তাআলা থেকে মুক্ত হয়ে শয়তান থেকেই অদৃশ্য সাহায্য চাওয়াকে জায়েজ বলতে শুরু করে। নাউজুবিল্লাহ।

আপনারা অবাক হবেন যে, বেরেলবী রেজাখানীরাতো কেবল বুযুর্গদের থেকে সাহায্য পাওয়ার প্রবক্তা, তারা আবার কখন শয়তান থেকে সাহায্য পাওয়ার প্রবক্তা হয়ে গেল? দেখুন, তাদের বুযুর্গদের তালিকায় কারা কারা আছে?

শয়তানের দুআয় তাক্বদীর পাল্টে যায়!

হ্যাঁ, বুযুর্গদের দুআয় তাক্বদীর পাল্টে যায়। আদম আঃ এর দুআর দ্বারা।ÑÑÑ শয়তানের দুআর দ্বারা তার বয়স বেড়ে গেছে। {নূরুল ইরফান-৩৮৭}

এ ইবারত দ্বারা একেতো বুঝা গেল যে, রেজাখানীদের কাছে শয়তানও বুযুর্গদের তালিকাভূক্ত। দ্বিতীয়ত একথাও বুঝা গেল যে, শয়তানের দুআয় তাক্বদীরও পাল্টে যায়।

রেজাখানীরা শয়তানকে যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে তা সবাই আশা করি বুঝতে পারছেন। আরো দেখুন প্রমাণ-

শয়তান নবী না ওলী?

প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের অনুরোধ করবো, আপনি আহমাদ রেজা খানের কানযুল ঈমান মাআ খাযায়েইন ইরফান গ্রন্থটি উর্দু অনুবাদটি উঠিয়ে দেখুন। কি লিখেছে তিনি? ১১৩৮ নং পৃষ্ঠা।

ফাযায়েলে আওলিয়ায়ে কেরাম শিরোনামে লেখা সূচি মুতালাআ করতে গিয়ে আপনার হুশ চলে যেতে পারে। আকল স্তব্ধ হয়ে যাবে। ঈমানের জোশ জেগে উঠবে। হাত পায়ে কাঁপুনী উঠতে পারে, চোখ কপালে উঠতে পারে যখন দেখবেন একটি শিরোনাম হল-

“নবীগণ ও ওলীগণ দূর থেকে শুনেন, দেখেন এবং সাহায্য করেন”।

তারপর আপনি এ দাবির দলিল দেখতে যাবেন,তাহলে দ্বিতীয় দলিল হিসেবে পাবেন কুরআনে কারীমের আয়াত-

إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ [٧:٢٧]

সে [শয়তান] এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না।{সূরা আরাফ-২৭}

এবার এর অনুবাদ আহমাদ রেজা খান সাহেবের ভাষায় শুনুন। আর বুঝে নিন এ আয়াত কাদের সম্পর্কে আর আহমাদ রেজা কাদের সম্পর্কে তা ফিট করেছে? আহমাদ রেজা উক্ত আয়াতাংশের অনুবাদে লিখেছেনঃ

“অবশ্যই আমি শয়তানদের তাদের বন্ধু বানিয়েছি। যারা ঈমান আনয়ন করে না। {কানযুল ঈমান মাআ খাযায়েউন ইরফান-১৮৩, সূরা আরাফ-২৭,মাকতাবায়ে রেজাইয়্যাহ,আরামবাগ করাচী}

এবার পাঠকদের অনুরোধ, কষ্ট করে প্রথমে শিরোনাম দেখুন। সেখানে লেখা আছে ”নবীগণ ও ওলীগণ” রা সব কিছু দেখেন শুনেন এবং সাহায্য করেন।  আর প্রমাণ হিসেবে যে আয়াত পেশ করা হল সেটি হল শয়তান ও তার চ্যালাদের ব্যাপারে।

এবার আপনি নিজের দিলের উপর হাত রেখে বলুনতো রেজাখানীরা শয়তানকে নবী অথবা ওলীর স্থান দেয়নি? কিংবা নবীদের শয়তানের স্থলাভিষিক্ত করে নি?

যদি তাই না হয়,তাহলে নবীগণ ওলীগণের সব কিছু দেখা ও সাহায্য করার বিষয় প্রমাণ করতে শয়তান সব কিছু দেখে, এসব দিয়ে দলিল দিল কেন?

জানি। এরপরও ওদের চোখ খুলবে না। নিজের ভুল স্বীকার করবে না। শুধু মাযহাবী আর দলের অন্ধ অনুসরণ তাদের ফিরিয়ে রাখবে এ অন্ধ গোমরাহী মতবাদ থেকে ফিরে আসতে। হাশরের ময়দানেও কি এমন করে পাড় পাওয়া যাবে যে, এ ভুল ধরে দিয়েছিল দেওবন্দীরা। তাই আমরা মানি নি। যদিও তা হক ছিল।

দেখুন সব কিছু দেখার কারণে শয়তানকে বেরেলবী রেজাখানীরা ওলী বানিয়ে দিল, অথচ সূরা আরাফের উক্ত আয়াতের শেষাংসই তাদের জ্ঞানের সকল তালা খুলে দিবে।

“নিশ্চয় আমি শয়তানদের তাদের দোস্ত [ওলী] বানিয়েছি, যারা ঈমান আনে না”। {কানযুল ঈমান}

এ আয়াত দ্বারাতো স্পষ্ট যে, শয়তান মুসলমানদের কাছে ওলী নয়। ওলী হল কাফেরদের।

রেজাখানীরা শয়তানকে নিজেদের ওলী বানিয়েছে। অথচ কুরআন বলেছে যে, “শয়তান হল কাফেরদের ওলী”।

এরকম ওলী রেজাখানীদেরই মানায়।

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত দেওবন্দীরা ওলী মানে না। হ্যাঁ, আমরা ওলী মানি। কিন্তু আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ যে ওলীকে কাফেরদের ওলী বলেছেন। এরকম ওলী রেজাখানী বেদআতিদের জন্য মুবারক!

নবুওয়ত ও ওলায়াত থেকে বাড়িয়ে শয়তানকে যে মর্যাদা রেজাখানীরা দিয়েছে। তাও একটু অবলোকন করুনঃ

শয়তান দুনিয়ার স্থপতি!

“শয়তান দুনিয়ার স্থপতি! যদি সে না হতো, তাহলে দুনিয়াতে কিছু হতো না। {ইসরারুল আহকাম-৩৭৯}

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত দেওবন্দ এর মাসলাক হল, পৃথিবী সৃজন, এবং সৃষ্টি জগত এর একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আর তিনিই এ সব কিছুর স্থপতি। তার আদেশেই সব কিছু সৃজিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন সাধারণ ব্যক্তিতো দূরে থাক কোন নবীকেও পৃথিবীর স্থপতি বলা আক্বিদার গুমরাহী ছাড়া আর কিছু নয়।

কিন্তু কি আশ্চর্য! রেজাখানীরা শয়তানকে বানিয়ে দিল দুনিয়ার স্থপতি! নাউজুবিল্লাহ।

আল্লাহ তাআলার তাওহীদ তথা একত্ববাদের সাথে বিদ্রোহ করে, আল্লাহ তাআলার সিফাতকে শয়তানের জন্য মেনে নেয়া কতটা ধৃষ্টতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এসব ভ্রান্ত আক্বিদা ও কথা রেজাখানীদের মূল এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের কিতাবেই কতটা স্পষ্ট শব্দে বর্ণিত।

এবার মিলাদ কিয়ামধারী বেদআতি ভাইদের প্রতি আমার উদাত্ব আহবান। এখনো সময় আছে এসব গোমরাহ আক্বিদা থেকে ফিরে আসুন। আপনাদের যারা গড়েছে তাদের কিতাবে এসব গুমরাহ আক্বিদা দেখেও কি ফিরে আসবেন না হক পথে? দয়া করে চোখ থেকে পর্দাটা নামান। “কোন কিছুই মানবেন না নিজের দলের লোকদের কথা ছাড়া” এ মানসিকতা দূর করে ফেলুন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত দেওবন্দী সহীহ আক্বায়েদে আহবান করছি গভীর মমতায়। আল্লাহ তাআলা সবাইকে হক গ্রহণের মানসিকতা দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

0Shares

আরও জানুন

ইসলামের দশ শতাংশে (নাজাত) দশ শতাংশ কোন কোন আমল?

প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম! মুহতারাম আমার একটা বিষয় বহুদিন থেকে জানার ইচ্ছে, একজন বক্তা বয়ানে বলেছিলেন …

No comments

  1. dhonnobad. AI rokom akta lekha upohar deyar jonno. Allah apnake ar boodle uttam kech dan korun. amen. ami pri shomoy apar lekha gulo pori and copy, paste ba share kore arekjon ke jananor chestsa kori. amar jonno dowa korben.

Leave a Reply to delowar hossen Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *