প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / উমরা করার পূর্ণ তরীকা কী?

উমরা করার পূর্ণ তরীকা কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেব। আমি এবার উমরা করার নিয়ত করেছি। উমরা করার পূর্ণ পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে লিখে দিলে খুবই উপকার হতো।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উমরা করার পদ্ধতি

উমরা করতে  চারটি কাজ করতে হয়। যথা-

১-মিকাত থেকে উমরার ইহরাম বাঁধা।[ফরজ]

২- মক্কায় পৌঁছে খানায় কাবা তওয়াফ করা। {ফরজ]

৩-সাফা মারওয়ায় সা’ঈ করা। [ওয়াজিব]

৪-মাথার চুল মুন্ডানো বা কাটা। [ওয়াজিব]

তাওয়াফ করার পদ্ধতি

মসজিদে হারামে প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদ যেখানে তার নিকটে চলে আসবে। তখন তওয়াফের নিয়ত করে নিবে। পুরুষেরা ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধে ফেলে নিবে। তারপর হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে হাজরে আসওয়াদের দিকে হাতের তালুকে করে নামাযের মত উভয় হাতকে কান পর্যন্ত উঠাবে আর মুখে উচ্চারণ করবে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ”। তারপর হাত ছেড়ে দিবে।

তারপর যদি সুযোগ থাকে, তাহলে হাজরে আসওয়াদ চুমু খাবে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আপন স্থানে থেকে উভয় হাতের তালুকে হাজরে আসওয়াদের দিকে করে হাত চুমু খাবে। তারপর কাবাকে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ শুরু করবে। তাওয়াফ শুরু করতেই তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিবে। পুরুষরা সম্ভব হলে প্রথম তিন চক্করে রমল করবে। তথা কিছুটা মাথা হেলিয়ে তেজ চলবে। তওয়াফ করার সময় দৃষ্টি সামনে রাখবে। খানায়ে কাবার দিকে সিনা বা পিঠ দিবে না। অর্থাৎ কাবা শরীফ বাম দিকে থাকবে। তাওয়াফ করার সময় হাত উঠানো ব্যতিত দুআ করতে থাকবে। হাতীমে কা’বা ও কাবার পিছন দিক হয়ে যখন রুকনে ইয়ামানিতে পৌছবে তখন সম্ভব হলে রুকনে ইয়ামানিতে উভয় হাত বা ডান হাত এর উপর বুলিয়ে নিবে। যদি হাত লাগানো সম্ভব না হয়, তাহলে তার দিকে ইশারা করে অতিক্রান্ত হয়ে যাবে। রুকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে চলার সময় এ দুআ পড়বে “রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকি না আজাবান নার”।

তারপর হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌছে তার দিকে হাতের তালুর রুখ করবে। আর বলবে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার”। তারপর হাতকে চুম্বন করবে। এবার প্রথম চক্কর পূর্ণ হবে।

এরপর বাকি ছয় চক্কর এভাবেই পূর্ণ করবে। সপ্তম চক্কর এভাবেই পূর্ণ করবে। তবে শেষ চক্কর শেষে সক্ষম হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করবে। নতুবা হাতের তালু সেদিকে ইশারা করে চুমু খেয়ে নিবে।

পূর্ণ তওয়াফ পবিত্র অবস্থায় করতে হবে। অজু ছুটে গেলে পুনরায় অজু করে যেখানে অজু ভেঙ্গেছিল সেখান থেকে বাকিটা পূর্ণ করবে।

হাজরে আসওয়াদ দেখে কান পর্যন্ত হাত উঠানোর বিধান তাওয়াফ শুরুর সময় করতে হয়, বাকি চক্করের শুরুতে করতে হয না। সে সময় হাজরে আসওয়াদ চুমু খাবে এতে সক্ষম না হলে সেদিকে উভয় হাত বা শুধু ডান হাত লাগিয়ে চুমু খাবে। এতেও সক্ষম না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে হাত চুমু খাবে।

দুই রাকাত নামায

তাওয়াফ শেষ করে মাকামে ইবরাহীমের কাছে আসবে। সে সময় এ আয়াত পড়া উত্তম “ওয়াত্তাখিজূ মিন মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা”।

যদি যায়গা পাওয়া যায় তাহলে মাকাম্ ইবরাহীমের পিছনে নতুবা মসজিদে হারামে যেখানে সুযোগ হয় দুই রাকাত ওয়াজিব নামায পড়ে নিবে। নামায শেষে খুশুখুজুর সাথে দুআ করবে।

মুলতাযিম

তওয়াফ শেষের দুই রাকাত পরবর্তী দুআ শেষে সক্ষম হলে মুলতাযিমে আসবে।যা হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মাঝামাঝি স্থান।এটি দুআ কবুলের একটি স্থান। এখানে এসেও দুআ করবে।এ দুআ করা সুন্নত। কিন্তু যদি ভীর বেশি হয়, তাহলে ছেড়ে দিবে।

আবে যমযম

তারপর আবে যমযমের কাছে আসবে। কিবলামুখী হয়ে বিসমিল্লাহ বলে তিন শ্বাসে যমযমের পানি পান করবে। তারপর আলহামদুলিল্লাহ বলে দুআ পড়বে- “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান নাফিয়া ওয়া রিযকান ওয়াসিআ ওয়াশিফাআম মিন কুল্লি দায়িন”।

যমযমের পানি পান করে হাজরে আসওয়াদের সামনে আসবে। সক্ষম হলে হাজরে আসওয়াদ চুমু খাবে। সক্ষম না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে চুমু খেয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে রওয়ানা হবে।

সাফা মারওয়ায় সাঈ

সাফা পাহাড়ে পৌছে মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবে “আবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহী, ইন্নাস সাফা ওয়ালমারওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহি”।

তারপর খানায়ে কাবার দিকে দুআর মত দুই হাত তুলবে। তিনবার বলবে “আল্লাহু আকবার”। আর যদি এ দুআ মনে থাকে, তাহলে এটি তিনবার পড়বে। দুআটি হল এই “লা=-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুলমুলকু, ওয়ালাহুলহামদু, ওহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনযাজা ওয়া’দাহু ওয়ানাছারা আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু”।

এরপর দাঁড়িয়ে খুব দুআ করবে। এটি দুআ কবুলের স্থান ও সময়। দুআ শেষে নিচে নেমে স্বাভাবিক হেটে মারওয়ার দিকে হাটতে থাকবে। হাত উঠানো ছাড়া মুখে মুখে দুআ পড়তে থাকবে, কিংবা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকবে। কোন বিশেষ দুআ জরুরী নয়। যা ইচ্ছে পড়তে পারে। তবে এ দুআটিও পড়তে পারেন “রাব্বীগফির ওয়ারহাম, ওয়াতাযাওয়াজ আম্মা তা’আলাম, ইন্নাকা আনতা আআয্যুল আকরাম”।

যখন সবুজ পিলারের নিকটে পৌছবে, তখন পুরুষের কিছুটা দৌড়ে চলবে, কিছুদূর পর আবার এমন সবুজ পিলার দৃষ্টিগোচর হবে, সেখানে পৌছে আবার আগের মত স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকবে।

মারওয়ায় পৌঁছে কাবার দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে দুআ করবে।

এভাবে সাঈর প্রথম চক্কর পূর্ণ হল। এভাবেই আবার মারওয়া থেকে সাফার দিকে চলবে। এভাবে সপ্তম চক্কর মারওয়াতে সমাপ্ত হবে। প্রতিবার সাফা ও মারওয়ায় পৌছে কাবার দিকে মুখ করে হাত তুলে দুআ করবে।

সাঈর সময় অজু থাকা জরুরী নয়। তবে অজু থাকা উত্তম। হায়েজ নেফাস থাকা অবস্থায়ও মহিলারা সাঈ করতে পারবেন।

কিন্তু তওয়াফ নাপাক অবস্থায় কিছুতেই জায়েজ নয়।

সাঈ শেষ করার পর মাতাফ বা মসজিদে হারামের যেকোন স্থানে দুই রাকাত নামায পড়বে।

তারপর পুরুষেরা মাথা মুন্ডাবে আর মহিলারা চুলের গুছার নিচ থেকে কিছু অংশ কেটে ফেলবে।

এভাবে উমরা পূর্ণ হয়ে যাবে।

সুতরাং ইহরাম খুলে ফেলা। সেলাই করা জামা ব্যবহার করা সবই জায়েজ হয়ে যাবে। [হজ্জে মাবরূর-৫০-৫৬, সংকলক মাওলানা নজীব সম্ভূলী কাসেমী]

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *