প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / চ্যাটিং ও মোবাইলে বিবাহ করার হুকুম কী?

চ্যাটিং ও মোবাইলে বিবাহ করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ,

১ no প্রশ্ন:

আমরা কয়েকজন বন্ধু আর বান্ধবী মিলে ইন্টারনেট এ  এক সাথে বসে আড্ডা দেই।  সেখানে ভয়েস এন্ড টেক্সট চ্যাট  এর মাধ্যমে।

একদিন এইরকম আড্ডা মাঝে আমার এ এক বন্ধু মজা করে আমার আরেক বান্ধবীর সাথে বিয়ে পরিয়ে দিল,

প্রথমে আমার ছেলে বন্ধুটি  মেয়েটির উকিল হলো, তারপর সে মাইক্রোফোন  নিয়ে অমুকের মেয়ের সাথে এত টাকা দেনমোহরের  বিনিময়ে মাধ্যমে আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করলো। আমিও মজা করে ৩ বার কবুল বলে ফেললাম  মাইক নিয়ে, তখন সেখানে আরো ১০/১২ জন বন্ধু বান্ধব ছিল চ্যাট  রুমে , তারাও  শুনলো।

আর মেয়ে টিকে ও প্রস্তাব জানানো হলো. কিন্তু মেয়েটি তেমন কিছু বলল না।  টাইপ করে হুম হা লিখল।  কিন্তু  একই সময়ে মেয়েটি আমার সাথে skype এর মাধ্যমে কল এ ছিল।  সেখানে সে কবুল কবুল বলল.যা অন্যরা শুনতে পায়নি , শুধু আমি শুনেছি।

এখন এই মজার মাধ্যমে কি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে?

২ ন প্রশ্ন:

আমরা ২ জন ২ দেশে অবস্থান করছি। আমরা অতি সত্তর বিয়ে করতে  চাই , আল্লাহকে আমরা ভয় করি, তাই বিয়ে ছাড়া  দুইজনের কথা বার্তা বলেও ঠিক হচ্ছে না , এইটাও জানি। কিন্তু আমাদের কেউ বাংলাদেশে আপাতত আসতে পারছিনা  পারলে বাংলাদেশেই বিয়ে করে ফেলতাম আল্লাহর ইচ্ছায়।

যেহেতু আপাতত বাংলাদেশে আসতে পারছিনা , আমি চাসসী ফোন এর মাধ্যমে বিয়ে তা করে রাখি। মেয়ের মা  আর ভাই জীবিত,তাদের কে না জানিয়ে ফোনের মাধ্যমে কি বিয়ে করা সম্ভব? না হলে কি ভাবে  শরীয়াত মোতাবেক ফোনের মাধ্যমে বিয়ে করব , বিস্তারিত জানালে , উপকৃত হব, আল্লাহ আপনাকে জাজাখায়ের দিন,

বিশেষ দ্রস্টব্য : আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়ে আছে আগের থেকে  যে আমরা একে অপরকে বিয়ে করব. আমরা দুজনেই রাজি আছি এই বিয়েতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১ নং এর জবাব

যদি ঘটনা তাই হয় যা প্রশ্নে বর্ণিত হয়েছে। তাহলে এসবের দ্বারা বিয়ে সম্পন্ন হয়নি। বিয়ে সম্পন্ন হবার জন্য সরাসরি বা উকীলের মাধ্যমে মেয়ে বা ছেলে প্রস্তাব প্রদান করতে হয়। আর উভয়ের প্রস্তাব ও কবুল বলাটি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম সাক্ষ্য শ্রবণ করতে হয়।

এখানে এ দু’টি বিষয়ের কোনটিই পাওয়া যায়নি।

মেয়েটির উকীল সরাসরি নয় চ্যাটিং এর মাধ্যমে প্রস্তাব করেছে তাই প্রথম শর্ত পাওয়া যায়নি। আর প্রস্তাব ও গ্রহণ দুইজন সাক্ষ্যি স্বকর্ণে শ্রবণও করেনি। তাই বিয়ে হবার কোন প্রশ্নই উঠে না।

এসব ফালতু কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। সেই সাথে বিয়ে পূর্ব ছেলে মেয়ের অবাধ কথোপথন শরীয়তে জায়েজ নয়। এর প্রতিটির জন্য জিনার গোনাহ হবে। তাই এসব বর্জন করা আবশ্যক।

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

২ নং এর  জবাব

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল দু’জন আযাদ প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান দুই জন মুসলিম স্বাক্ষের সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষে পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। আর শরয়ী এ শর্তাবলী পরিপূর্ণভাবে টেলিফোনে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করা জায়েজ নয়। {ফাতওয়ায় উসমানী-২/৩০৪,৩০৫}

টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করার পদ্ধতি হল-উভয় পক্ষ থেকে এক পক্ষ অপরপক্ষ যেখানে থাকে সেখানের কোন ব্যক্তিকে ওকীল বানাবে। তারপর সে অকীল দু’জন সাক্ষীর সামনে বিবাহ করিয়ে দিবে। তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া সরাসরি মোবাইলে বা টেলিফোনে প্রস্তাব ও কবুল করার দ্বারা বিবাহ সহীহ হবে না।

فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)

অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল  বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। {আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

 

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *