প্রচ্ছদ / জায়েজ নাজায়েজ / দাড়ি কতটুকু পরিমাণ রাখতে হবে? এক মুষ্টির চেয়ে কম দাড়ি রাখলে কী ব্যক্তি ফাসিক?

দাড়ি কতটুকু পরিমাণ রাখতে হবে? এক মুষ্টির চেয়ে কম দাড়ি রাখলে কী ব্যক্তি ফাসিক?

প্রশ্ন

Salam vaijan ami malaysia theke bolsi amar porosno holo akhane shov musolman shafi majhab to ara boro boro maolana mufti muhaddis ara shotkara 98`\. Lok  dari rakhe 1insi o hobena ta o abar chab dari rakhena to ara ki sobai fashek na ki ata jayez ase atar hukum ki amra musolman ara o mosolmar atar hukum ki??? pls vaijan

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحمن

যারা দাড়িকে ছোট করে রাখছে তাদের কাছে এর দলীল জানতে চান। সেই সাথে তারা যেহেতু শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। তাদের বলুন, শাফেয়ী মাযহাবের গ্রন্থে দাড়ি রাখার সূরত কি বলা হয়েছ? যদি তারা যেভাবে রাখছে, সেটি তিনি বলে থাকেন, তাহলে মুজতাহিদের দলীলভিত্তিক ফাতওয়ার অনুকূলে তারা এভাবে যদি দাড়ি রেখে থাকেন, তাহলে তাদের ফাসিক বলা যাবে না।

আর যদি তাদের শাফেয়ী মাযহাবের গ্রন্থের রেফারেন্স উপস্থাপন করতে না পারে, কেবলি তাদের মনের ইচ্ছেমত এভাবে দাড়ি রেখে থাকে, তাহলেই কেবল তারা ফাসিক বলে সাব্যস্ত হবে।

কারণ দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমাণ রাখাই ওয়াজিব।

عن ابن عمر  : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( خالفوا المشركين وفروا اللحى وأحفوا الشوارب  . وكان ابن عمر إذا حج أو اعتمر قبض على لحيته فما فضل أخذه

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।

আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}

দাড়ি লম্বা রাখার ব্যাপারে হাদীসে বিভিন্ন শব্দ এসেছে। যেমন-

১-إعفاء اللحى [ইফা] সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৪৭৫

২- وأعفوا اللحى [উফু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৪

৩-وَأَرْخُوا اللِّحَى [আরখু] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৬

৪-وَأَوْفُوا اللِّحَى [আওফু] সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৬২৫

৫- وَفِّرُوا اللِّحَى [ওয়াফফিরু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩
দাড়ি কেটে ফেলার নির্দেশ কোন হাদীসে নেই।

তাই এখানে লক্ষণীয় হল এ হাদীসের মর্মার্থ সাহাবায়ে কেরাম কী বুঝেছেন? মনগড়া বুঝলে হবে না। কারণ সাহাবারা হলেন রাসূল সাঃ এর হাদীসের আমলী নমুনা। আমরা বুখারীর হাদীসটির দিকে তাকালেই এ ব্যাপারে সমাধান পেয়ে যাই-

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।

আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}

এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে।
(ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)

কোন হাদীসেই সরাসরি দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখার কথা উল্লেখ নেই , শুধুমাত্র লম্বা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রামাণিত আছে । দাড়ি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরা ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখ গণ দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখতেন । তাই এ ব্যাপারে তাঁদের আমল আমাদের জন্য দলীল । এর কারণ হল – যে বিষয়ে হাদীসে সরাসরি পাওয়া যায় না সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কেননা তারা হলেন হাদীসে রাসূলের (সাঃ) আমলী নমুনা।
সুতরাং দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া প্রত্যক্ষভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত হলেও পরোক্ষভাবে তা রাসূল (সাঃ) থেকেই প্রমাণিত ।

হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)

ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পুঙ্খনুভাবে এবং পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে-শুনে করেছেন ।

উপরোক্ত দু’জন মহান সাহাবী ব্যতীত আবু হুরাইরা ,জাবির (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী থেকে ও দাড়ির এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলার কথা পাওয়া যায় । এ থেকে দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

দাড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে তার আমল নামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী ,যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (এক মুঠের চেয়ে ) সে ফাসিক।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. আসসালামোয়ালাইকুম,
    মুফতি সাব,এখানে আর একটি বিষয় সামনে আসছে দাড়ি বর্ধিত করতে বলা মানে কি পেট বা কোমর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।কেননা এক মুষ্টির ব্যাপারে আহলে হাদীস দের বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে।তারা বলছে পরিমান নির্ধারন টা ইবনে উমার রা এর ব্যাক্তি গত মত,আর রাসুল সা এর মত দাড়ি ছেড়ে দিবে।আমার প্রশ্ন হল দাড়ি সর্বোচ্চ কতদূর বর্ধিত রাখা সুন্নত??

    • ওয়াআলাইকুম আসসালাম।

      আমাদের কাছে সাহাবায়ে কেরাম হুজ্জত। শিয়ারাই কেবল সাহাবীদের অস্বিকার করে থাকে। নবীর আমল সাহাবায়ে কেরামই সঠিকভাবে বুঝেছেন। আর উক্ত হাদীসটি যিনি বর্ণনা করেছেন, সেই সাহাবী হাদীস দ্বারা যা বুঝেছেন সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর এসে কেউ এর চেয়ে ভাল বুঝতে কিছুতেই পারে না। যদি কেউ বেশি বুঝার দাবি করে তাহলে সে পথভ্রষ্ট এতে কোন সন্দেহ নেই। দাড়ী এক মুষ্টি রাখাই সুন্নত।

Leave a Reply to ashik iqubal Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *