প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / মোবাইলে তিন তালাক দিলে হুকুম কি?

মোবাইলে তিন তালাক দিলে হুকুম কি?

প্রশ্ন

আসসালামুআলাইকুম । হযরত কেমন আছেন । অত্যন্ত ব্যাথীত এবং ভারাক্রান্ত মনে আপনার কাছে একটি মাসআলা জানতে চাচ্ছিলাম । অনুগ্রহ করে আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট করে এই অধমকে মাসআলা টি জানিয়ে বাধিত করবেন ।
রাগের মাথায় যদি কোন লোক তার স্ত্রীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৩ তালাক একবারে প্রধান করে এবং তালাক প্রধান করার সময় স্বামী এবং স্ত্রী ব্যাতিত অন্য কেউ উপস্থিত না থাকে তাহলে কি তালাক হয়ে যায় । আর তালাক হলে যদি ওই
স্ত্রী কে নিয়ে যদি স্বামী আবার সংসার করতে চায় তাহলে কি করনীয়? দয়া করে জানাবেন ।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক কোন মোহাব্বতের শব্দ নয়। এটি বিবাদের শব্দ। বিচ্ছেদের শব্দ। সম্পর্কচ্ছেদের শব্দ। আর বিবাদ, বিচ্ছেদ ও সম্পর্কচ্ছেদ মানুষ মোহাব্বত করে করে না। করে রাগ করেই। তাই রাগের বশে তালাক দিলে হবে কি না? এ প্রশ্নটিই আসলে অবান্তর প্রশ্ন। কারণ তালাক মানুষ রাগের বশেই দিয়ে থাকে।

 

তালাক সবাইকে জানিয়ে দেয় জরুরী নয়। কাউকে না জানিয়ে তালাক দিলেও তালাক পতিত হয়ে যায়।

আমরাও অতি দুঃখের সাথে আপনাকে জানাচ্ছি যে, আপনার একাজটি খুবই অন্যায় হয়েছে। খুবই খারাপ হয়েছে। কিছু ভুল শুধরানোরা অযোগ্য হয়। একেবারে তিন তালাক দিয়ে দেয়াটাও তেমনি।

তিন তালাক আসলে ইসলামে জায়েজই না। তালাক দিতে চাইলে দিতে হয় এক তালাক। দুই বা তিন তালাক দেয়া জায়েজ না।

কিন্তু জায়েজ না হলেও কেউ যদি করে তাহলে তালাক পতিত হয়ে যায়। যেমন কাউকে খুন করা জায়েজ নয়, কিন্তু যদি খুন করে ফেলে তাহলে খুনতো ঠিকই হয়ে যায়।

তেমনি একবারে তিন তালাক দেয়া জায়েজ নয়, কিন্তু দিয়ে দিলে হয়ে যায়।

তিন তালাক দেয়াকে শরয়ী পরিভাষায় তালাকে মুগাল্লাযা বলে। তাহলে হালালায়ে শরয়্যিয়্যাহ ছাড়া স্ত্রীকে রাখা জায়েজ নয়। ইসলামী শরীয়তে যা স্বাভাবিকভাবে কাম্য নয়। তাই এ থেকে বেঁচে থাকাটাই উত্তম।

কেননা, হাদিসের মধ্যে এসেছে যে, “হালালকারী ও যার জন্য হালাল করা হল এবং যাকে হালাল করা হল সবার উপর আল্লাহর লানত”। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-১৭৩৬৪)

সুতরাং এ পথে না যাওয়াই ভাল। বরং তালাক দেবার সময় শরয়ী বিধানের প্রতি খেয়াল করার মানসিকতা তৈরী করা।

তিন তালাকপ্রাপ্ত মহিলাকে যদি অন্য কোন পুরুষ বিয়ে করে। তারপর তার ঘর-সংসার করতে থাকে। অর্থাৎ তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক হয়। তারপর উক্ত স্বামী মারা যায়, বা সে কোন কারণে তালাক দেয়। তাহলে কেবল প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত মহিলাকে বিবাহ করা জায়েজ হয়। অন্যথায় নয়।

দলিল:

وفى مصنف ابن ابى شيبة- – حَدَّثَنَا ابْنُ عُلَيَّةَ , عَنْ خَالِدٍ الْحَذَّاءِ , عَنْ أَبِي مَعْشَرٍ , عَنْ رَجُلٍ , عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ : لَعَنِ اللَّهُ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ وَالْمُحَلَّلَةَ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب النكاح، في الرجل يُطَلِّقُ امْرَأَتَهُ فَيَتَزَوَّجُهَا رَجُلٌ لِيُحِلَّهَا لَهُ، رقم الحديث-17364)

وفي رد المحتار- ويقع طلاق من غضب خلافا لابن القيم الخ وهذا الموافق عندنا لما مر فى المدهوش، ( رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى طلاق المدهوش-4/452)

وفى سنن الترمذى- حدثنا قتيبة حدثنا حاتم بن إسماعيل عن عبد الرحمن بن أدرك ( في التقريب والخلاصة أدرك ) عن عطاء عن ابن ماهك عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ثلاث جدهن جد وهزل جد النكاح والطلاق والرجعة (سنن الترذى، كتباب الطلاق، باب ما جاء في الجد والهزل في الطلاق، رقم الحديث-1184)

وفى موطا مالك-  – حدثني يحيى عن مالك عن المسور بن رفاعة القرظي عن الزبير بن عبد الرحمن بن الزبير أن رفاعة بن سموال طلق امرأته تميمة بنت وهب في عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثا فنكحت عبد الرحمن بن الزبير فاعترض عنها فلم يستطع أن يمسها ففارقها فأراد رفاعة أن ينكحها وهو زوجها الأول الذي كان طلقها فذكر ذلك لرسول الله صلى الله عليه وسلم فنهاه عن تزويجها وقال لا تحل لك حتى تذوق العسيلة (موطأ مالك، كتاب النكاح، باب نكاح المحلل وما أشبهه، رقم الحديث-1942)

قوله تعالى : ( فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ ( . (البقرة: من الآية230)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম

    সম্মানিত মুফতি সাহেব, উপরের
    উত্তরটা কি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তালাক
    দিলে করণীয়?নাকি মোবাইল ফোনের
    মাধ্যমে তালাক দিলে অন্য কোন
    মাসয়ালা রয়েছে? “

    • সকল ক্ষেত্রে একই হুকুম। তালাক স্ত্রীকে লক্ষ্য করে দিলেই তা তালাক হিসেবে পরিগণিত হয়ে যায়।

  2. apnar site a questions korbo ki vabe

Leave a Reply to মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *