প্রশ্ন
I am one of the regular reader of your blog By the grace of Allah, All are you in happiness.
Actually, I am here to know about Provident Fund. My company is going to start Provident Fund program from this month and they decided to implement some rules that I confused about.
I uploaded a MS Word sheet with their condition of Provident Fund. Could you please read and give me a suggestion ?
Jajak Allah
দয়া করে বলবেন কি এই নিয়মগুলি শরীয়ত সম্মত কি না ?
১। প্রতিমাসে মূল বেতন (বেসিক স্যালারী) হতে ১০% হারে এবং একজন সদস্যের সবোর্চ্চ ৪০০০ টাকা (যে সকল সদস্যের মূল বেতন ৪০,০০০ টাকা বা তার বেশী) প্রভিডেন্ট ফান্ড হিসাবে কর্তন করা হবে।
২। প্রভিডেন্ড ফান্ড এর মেয়াদ কাল ঃ
(ক) ৩ বছরের কম হলে সদস্যের জমাকৃত টাকার ১০০%+ লভ্যাংশ।
(খ) ৩ বছর বা ৩ বছরের বেশী কিন্তু ৫ বছরের কম হলে সদস্যের জমাকৃত টাকার ১০০%+ প্রতিষ্ঠানের ৫০%+ লভ্যাংশ।
(গ) ৫ বছর বা তার বেশী হলে সদস্যের জমাকৃত টাকার ১০০%+ প্রতিষ্ঠানের ১০০%+ লভ্যাংশ।
(ঘ) ৩ বছরের কম সময়ে কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করলে (আত্মহত্যা ছাড়া), তার যত টাকা জমা হবে তার দিগুন হারে উক্ত সদস্যের নমিনীকে/নমিনীদেরকে প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য যে কোন সদস্য স্বেচ্ছায় চাকুরী হতে ইস্তফা দিলে বা চাকুরীচ্যুত হলে উপরোক্ত নিয়মানুযায়ী সে প্রভিডেন্ট ফান্ড এর টাকা উত্তোলন করতে পারবে।
৩। প্রভিডেন্ড ফান্ড পরিচালনার জন্য একটি ট্রাষ্টি বোর্ড থাকবে। প্রতি বছর শেষে প্রভিডেন্ড ফান্ড এর জমাকৃত অর্থ এবং লভ্যাংশের হিসাব প্রত্যেক সদস্যকে প্রতিবেদন আকারে জানানো হবে।
৪। প্রভিডেন্ড ফান্ড এর জমাকৃত টাকা বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও প্রচলিত নিয়ম অনুসারে আয়কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হিসাবে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।
৫। প্রভিডেন্ড ফান্ডের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক না।
প্রশ্নকর্তা- Biju toha
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
উপরোল্লিখিত বিবরণ অনুপাতে উক্ত প্রভিডেন্ড ফান্ডে অর্থ বিনিয়োগ শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ হবে না। কয়েকটি কারণে। যা এখানে উদ্ধৃত করার প্রয়োজন মনে করছি না।
তবে যদি কয়েকটি বিষয় উক্ত চুক্তিতে সংযুক্ত করা হয়, তাহলে তা ইসলামী শরীয়া মুতাবিক বৈধতা পাবে। সেই সাথে তাতে টাকা রাখা ও লভ্যাংশ গ্রহণ বৈধ হবে। যথা-
১- কর্তৃপক্ষ প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে যে অর্থ কেটে নিবে তা দিয়ে শরীয়ত অনুমোদিত ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
২- অর্থ জমা দেয়ার সময় বা প্রভিডেট ফান্ডে অর্থ রাখবে এ চুক্তি করার সময় কর্তৃপক্ষের সাথে মুদারাবা বা মুশারাকা চুক্তি সম্পন্ন করেছে বলে উল্লেখ করতে হবে।
উল্লেখ্য
এ ক্ষেত্রে মুদারাবা ও মুশারাকার শরয়ী শর্তাবলীর প্রতি খেয়াল করে কর্তৃপক্ষ ব্যবসা পরিচালনা করবে।
মুদারাবা চুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য মোট ৭টি শর্ত। যথা-
১- চুক্তিকারী ব্যক্তি বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। আর কর্তৃপক্ষের লোকজনের ব্যবসা বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে অন্যের প্রতিনিধি হওয়ার মত যোগ্য হতে হবে। তথা ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞ, কার্য সম্পাদনে সক্ষম ইত্যাদি।
২- কর্তপক্ষের কাছে যে সম্পদ জমা রাখা হবে সেটি নগদ মুদ্রা হতে হবে। বস্তু বা পণ্য হলে চুক্তি সহীহ হবে না।
৩- কত টাকা জমা দেয়া হচ্ছে তা পরিস্কার ভাষায় চুক্তিনামায় বা কাগজপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে।
৪- নগদ অর্থ জমা দিতে হবে। ঋণ জমা দিলে হবে না। তথা বেতন পাওনা কর্তৃপক্ষের কাছে তা না তুলেই বলা সেটি মুদারাবা হিসেবে যেন কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয়। তবে যদি কর্তৃপক্ষ থেকে তা তুলে ফেলেছে এরকম সাইন করার পর তা জমা নিয়ে নিতে বলে তাহলে চুক্তি সহীহ হবে।
৫- মুদারাবা হিসেবে প্রদত্ব অর্থ সম্পূর্ণ আলাদা করে কর্তৃপক্ষ দিয়ে দিতে হবে। মালিকানা অর্থদাতার থাকতে পারবে না। অর্থাৎ টাকাটি আলাদা করে কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিতে হবে।
৬- একথা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখিত থাকতে হবে যে, লভ্যাংশের মাঝে কর্তৃপক্ষ ও অর্থজমাদাতা শরীক থাকবে। একজনের পুরো লভ্যাংশ নির্ধারিত করে নিলে মুদারাবা চুক্তি সহীহ হবে না।
৭- কর্তৃপক্ষ ও অর্থজমাদাতার মাঝে লভ্যাংশ পার্সেন্টিস হিসেবে বন্টিত হবে মর্মে চুক্তি হতে হবে, সুনির্দিষ্ট অর্থের নয়। যেমন একথা বলা যে, এক লাখ টাকা জমা দিলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা দেয়া হবে। এমন চুক্তি করলে চুক্তিটি নাজায়েজ হবে।
তবে যদি এমন বলে যে, এক মাসে যা লাভ আসবে, তার নির্দিষ্ট এত পার্সেন্ট পাবে অর্থদাতা আর এত পার্সেন্ট পাবে কর্তৃপক্ষ তাহলে উক্ত চুক্তিটি জায়েজ হবে।
আর নমীনী ততটুকুই পাবে যতটুকু মূল অর্থজমাদাতা জীবিত থাকলে তার জমাকৃত অর্থের পার্সেন্টিস হিসেবে পেত। অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার চুক্তি করলে তা জায়েজ হবে না।
উপরোল্লিখিত সাতটি শর্ত পাওয়া গেলে মুদারাবার ভিত্তিতে চুক্তিটি সহীহভাবে সম্পাদিত হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। নতুবা হবে না।
সুতরাং আপনাদের কোম্পানীর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা রাখা ও লভ্যাংশ পাওয়ার চুক্তিটি জায়েজ করতে হলে উপরোক্ত শর্ত মেনে চুক্তি কর”ন। তাহলে আপনাদের চুক্তিটি জায়েজ হবে। অর্থ জমা রাখা এবং লাভ নেয়া সবই জায়েজ হবে।
যদি উপরোক্ত শর্তের প্রতি খেয়াল না করে প্রভিডেট ফান্ডে অর্থ জমা করা হয়, আর তার লভ্যাংশ নেয়া হয়, তাহলে তা সুদ বলে গণ্য হবে, এবং তা হারাম চুক্তি হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
দ্রষ্টব্য
হিন্দিয়া-৪/২৯৬, ৬/৮১, ৪/২৮৬, বাদায়েউস সানায়ে-৬/৮৩, ৮৪, আলফিক্বহুল ইসলামী-৪/৮৪৬, হিন্দিয়া-৪/২৮৫, ২৮৭, বাদায়ে-৬/৮৫, কামূসুল ফিক্বহ-৫/১১৯-১২০, ইতরে হিদায়া-২১৫-২১৬, মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ-৩৬২-৩৬৩, মাদ্দা-১৪০৮-১৪১২।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।