প্রশ্নঃ
মুহতারাম, আমি কাফিয়া জামাতে পড়ি, আমার বোনের বিবাহ হয় ২০ বছর আগে। বর্তমানে তার বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে ও ছেলে আছে। আমার দুলাভাই আমার বোনকে বিয়ে করার কিছুদিন পর খুব নির্যাতন করে। ওই নির্যাতনের কিছু দাগ আজও তার শরীরে রয়ে গেছে। এবং ওনার আত্মীয় স্বজনের সামনে তাকে খুব অপমান করতো। কিন্তু আমার বোন তখন কিছুই বলতো না। কারণ তার কোন দোষ ছিলো না। পরিবারের অন্য সদস্যের কান পড়ায় এমনটি হয়েছে।
মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার বোন আজও সেই কষ্ট ভুলতে পারছেনা। এবং আমার ভগ্নিপতিদেরও মাঝে মাঝে বলে। এসব শুনে দুলাভাই খুব কষ্ট পায় এবং বার বার তার কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু পূর্বের কষ্ট মনে আসাতে মাফ করতে চায় না। অনিচ্ছাকৃত তা মনে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় আমার বোনের কোন গুনাহ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তরঃ
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا ومصليا ومسلما
ইসলামে অন্যের ভুল এড়িয়ে যাওয়ার এবং ক্ষমা করে দেয়ার ব্যাপারে অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের অপরাধ এড়িয়ে যাওয়ার ও ক্ষমা করে দেয়ার তাকিদ দিয়েছেন।
সূরা আলে ইমরান ১৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালোবাসেন।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও আর অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল।
আল আ’রাফ – ১৯৯।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বোনের আপত্তি বা কষ্ট যে ব্যাক্তির সাথে তিনি হলেন তার স্বামী এবং লজ্জিত হয়ে বারবার ক্ষমাও চেয়েছে, এজন্য তিনি ক্ষমা পাওয়ার হকদার। সুতরাং আপনার বোনের উচিত তার ঐ অপারগতা ও অক্ষমতার দিকে তাকিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া।
কেননা হাদিসের মধ্যে আসছে, জূওদান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের নিকট ওযর বা অপারগতা প্রকাশ করলে এবং সে তা গ্রহণ না করলে, সে কর আদায়কারীর অপরাধের সমান অপরাধী গণ্য হবে। গায়াতুল মারাম ২৩৬ নং পৃষ্ঠা।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭১৮।
শরয়ী দলীলঃ
القرآن الکریم: (آل عمران، الآیة: 143)
الَّذِيۡنَ يُنۡفِقُوۡنَ فِى السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالۡكٰظِمِيۡنَ الۡغَيۡظَ وَالۡعَافِيۡنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡنَۚ o
و قوله تعالی: (الاعراف، الآیة: 199)
خُذِ الۡعَفۡوَ وَاۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَاَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰهِلِيۡنَ o
سنن ابن ماجة: (رقم الحدیث: 3718)
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ ابْنِ مِينَاءَ، عَنْ جُودَانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنِ اعْتَذَرَ إِلَى أَخِيهِ بِمَعْذِرَةٍ فَلَمْ يَقْبَلْهَا، كَانَ عَلَيْهِ مِثْلُ خَطِيئَةِ صَاحِبِ مَكْسٍ۔
والله أعلم بالصواب
উত্তর লিখনে,
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।
সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.
পরিচালক– তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস Ahle Haq Media
