প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / তালাকের ইদ্দত পালন না করেই না জেনে বিবাহ করলে করণীয় কী?

তালাকের ইদ্দত পালন না করেই না জেনে বিবাহ করলে করণীয় কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।  

আমার ১ম স্বামীর সাথে বিয়ের ১ বছর পর খোলা তালাকের পর তিন হায়েজ পার না করেই ২য় বিয়ে করি।

২য় স্বামী ১ম বিয়ের কথা আর তালাকের কথাও জানতেন। তবে আমি বা আমার ২য় স্বামী আমরা কেউ জানতামনা তালাকের পর ২য় বিয়ে করতে ইদ্দত পালন করতে হয়।

ইদ্দত শব্দটাই আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল তখন।

অনেক বছর হয়ে গেছে। এখন আমাদের সন্তানও আছে। এর মধ্যে আমার ২য় স্বামী আমাকে রাগ করে তিন তালাক দেয়। সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে তালাকের পর বিয়ে করতে তিন হায়েজ ইদ্দত লাগে এটা জানতে পারি।

এবং কিছু আলেমদের কাছে জানি যে তিন হায়েজ ইদ্দত পালন না করায় আমাদের বিয়েটাই সহীহ ছিলনা। তাই তালাকও হয়নি।

তারপর একজন মুফতি হুজুরের পরামর্শ মতে আমরা মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব এর মাধ্যমে দুজন স্বাক্ষী সামনে রেখে নতুন মোহর ধার্য করে বিয়ে করি।

তারপরও মনে সন্দেহ থাকায় স্হানীয় এক মাদ্রাসায় যাই। সেখানেও বলা হয় বিয়ে সহীহ ছিলনা। তবে যেহতু ইদ্দতের জ্ঞান ছিলনা, না জেনে করেছি তাই ফাসেদ বিয়ে হবে। এক্ষেত্রে পুরোপুরি যেনা হবেনা।  আর নতুন বিয়ে করতে ইদ্দত লাগবে এমনকি বর্তমান স্বামীকেই আবার পুনরায় বিয়ে করতে তিন হায়েজ ইদ্দত লাগবে।

এখন আমার প্রশ্ন

ইদ্দত ছাড়া বিয়ে টা কি সহীহ  ছিল?

তারপর তিন তালাক টা কি তালাক ধরা হবে?

মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেবের মাধ্যমে আমাদের বিয়ে টা কি সঠিক ছিল?

অন্যান্য  মুফতি হুজুর বলেছেন বর্তমান ২য় স্বামী কে পুনরায় বিয়ে করতে নতুন ইদ্দত লাগবে না। তবে অন্য ৩য় পুরুষ কে বিয়ে করতে লাগবে।

কিন্তু স্হানীয় মাদ্রাসা য় বললেন বর্তমান ২য় স্বামী কেই পুনরায় বিয়ে করতে হলে নতুন করে তিন হায়েজ ইদ্দত পালন করা লাগবে।

কোনটা সঠিক?

এখন আমার করণীয় কি অনুগ্রহ করে আমাকে অতি শীঘ্রই পরামর্শ দিয়ে বাধিত করবেন।

বর্তমান স্বামী র সাথে সংসার করতে চাইলে কি তিন হায়েজ ইদ্দত লাগবে? আর অন্যত্র বিয়ে করতে চাইলে কি হুকুম?!

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

তালাকের পর ইদ্দত পালন করা ছাড়া বিয়ে শুদ্ধ হয় না।

সুতরাং তালাকের ইদ্দত পালন না করেই দ্বিতীয় স্বামীর সাথে যে বিয়ে করা হয়েছে, সেই বিয়ে শুদ্ধ হয়নি।

তাই দ্বিতীয় স্বামীর দেয়া তালাকও পতিত হয়নি।

ইদ্দতপালনকালীন সময়ে না জেনে বিয়ে করলে তা নিকাহে ফাসিদ হয়।

আর এমন বিবাহের ক্ষেত্রে বিয়ে শুদ্ধ না হলেও সহবাস বা একান্ত নির্জনবাস করলে মাসআলা জানার পর পৃথক হয়ে ইদ্দত পালন করা আবশ্যক।

সুতরাং কথিত দ্বিতীয় স্বামীকে বিয়ে করার জন্য কিংবা অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার জন্য সহবাস ও একান্ত নির্জনবাস বন্ধ করে ইদ্দত শেষ করার পর তাকে শরয়ী শর্তাবলীসহ বিয়ে করা যাবে।

অর্থাৎ বৈধ যে কাউকে বিয়ে করার জন্যও সহবাস ও একান্ত নির্জনবাস বন্ধ করার পর থেকে ইদ্দত পালন শেষে করতে হবে।

এমন সময় অতিক্রান্ত করা ছাড়া তাকে বিয়ে করলে তা শুদ্ধ হবে না ।

সুতরাং বুঝা গেল যে, স্থানীয় মাদরাসার মুফতী সাহেবদের ফাতওয়া সঠিক।

أَمَّا نِكَاحُ مَنْكُوحَةِ الْغَيْرِ وَمُعْتَدَّتِهِ فَالدُّخُولُ فِيهِ لَا يُوجِبُ الْعِدَّةَ إنْ عُلِمَ أَنَّهَا لِلْغَيْرِ لِأَنَّهُ لَمْ يَقُلْ أَحَدٌ بِجَوَازِهِ فَلَمْ يَنْعَقِدْ أَصْلًا، قال فعلى هذا يفرق بين فساده وباطله فى العدة…………. أَنَّ الدُّخُولَ فِي النِّكَاحِ الْفَاسِدِ مُوجِبٌ لِلْعِدَّةِ وَثُبُوتِ النَّسَبِ، وَمَثَّلَ لَهُ فِي الْبَحْرِ هُنَاكَ بِالتَّزَوُّجِ بِلَا شُهُودٍ وَتَزَوُّجِ الْأُخْتَيْنِ مَعًا، أَوْ الْأُخْتِ فِي عِدَّةِ الْأُخْتِ، وَنِكَاحِ الْمُعْتَدَّةِ وَالْخَامِسَةِ فِي عِدَّةِ الرَّابِعَةِ وَالْأَمَةِ عَلَى الْحُرَّةِ (رد المحتار، زكريا-4/274، كرتاشى-3/516، البحر الرائق،  زكريا-4/242، كويته-4/144، دار الكتاب الإسلامي-4/156)

لا يجوز للرجل أن يتزوج زوجة غيره، وكذالك المعتدة سواء كانت العدة عن طالق، أو وفاة (الفتاوى الهندية، كِتَابُ النِّكَاحِ وَفِيهِ أَحَدَ عَشَرَ بَابًا، الْبَابُ الثَّالِثُ فِي بَيَانِ الْمُحَرَّمَاتِ وَهِيَ تِسْعَةُ أَقْسَامٍ، الْقِسْمُ السَّادِسُ الْمُحَرَّمَاتُ الَّتِي يَتَعَلَّقُ بِهَا حَقُّ الْغَيْرِ-1/280، جديد-1/346، بدائع الصنائع، كتاب النكاح عدم جواز منكوحة الغير، زكريا-2/549، البحر الرائق، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/108)

وأما احكام العدة: فمنها: أنه لا يجوز للأجنبى نكاح المعتدة لقوله تعالى: ولا تعزموا عقدة النكاح حتبى يبلغ الكتاب أجله (بدائع الصنائع، زكريا-3/322-323، خانية على الهامش الهندية-1/366، جديد-1/366)

وإذا وطئت المعتدة بشبهة ولو من المطلق وجبت عدة أخرى لتجدد السبب (رد المحتار، زكريا-5/200، كرتاشى-3/519)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

অবৈধ কাজে লিপ্ত এমন ব্যক্তির কোচিং সেন্টারে চাকুরী করে বেতন নেয়া কি জায়েজ?

প্রশ্ন মুহতারাম মুফতি সাহেব। আমি একজন গণিত টিচার। আমার কোচিং সেন্টারের মালিক অবৈধ কাজকারবার করে। …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস