প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ওমরী কাযা কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?

ওমরী কাযা কি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?

প্রশ্ন

From: Md Salim Hossain

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

আমি জেনারেল লাইনে পড়ুয়া একজন ছাত্র। আমি জানতাম দুর্ভাগ্যবশত যদি কেউ জীবনের কোন সময় শয়তানের ধোঁকায় পরে আল্লাহর হুকুম পালনে গাফেল থাকে আবার যখন আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে দ্বীনী বুঝ পায় তখন তার করনীয় হল পূর্বেকার পাপের জন্যে আল্লাহর দরবারে মাফ চাওয়ার সাথে সাথে নেক আমল করা এবং বিগত দিনের ছেরে দেয়া ফরজ নামাজের ক্বাজা আদায় করা। কিন্তু আমি এক জায়গায় দেখলাম তারা বলছে কাজা (উমরী কাজা) বলতে কিছু নেই এবং তার ছেরে দেয়া নামাজ আর আদায় করতে হবে না শুধু তওবা করে নিলেই চলবে। এই তথ্যটি পাওয়ার পর আমি চরম বিভ্রান্তিতে পরেছি,এখন আমার
প্রশ্ন
হচ্ছে উমরী কাজা সম্পর্কে আমার জানা ভুল নাকি তাদের বক্তব্য ভুল? যদি মেহেরবানী করে উত্তর দিনেন
তাহলে অনেক অনেক উপকৃত হতাম।

জবাব

وعليكم السلام  ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ওমরী কাযা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এটাকে অস্বিকার করা হাদীস অস্বিকার করার নামান্তর।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى

অনুবাদ-যখন তোমাদের কেউ নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, বা নামায থেকে গাফেল হয়ে যায়, তাহলে তার যখন বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬০১

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৩২

সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪১৮২

عن جابر بن عبد الله  : أن عمر بن الخطاب جاء يوم الخندق بعدما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب قال النبي صلى الله عليه و سلم ( والله ما صليتها ) . فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلى العصر بعدما غربت الشمس ثم صلى بعدها المغرب

 [ 573 ، 615 ، 903 ، 3886 ]

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত-ওমর বিন খাত্তাব রা. খন্দকের দিন সূর্য ডুবার পর কুরাইশ কাফেরদের তিরস্কার করতে করতে এলেন। নবীজী সাঃ কে বললেন-“হে আল্লাহর নবী! আমি আসরের নামায পড়তে পারিনি এরই মাঝে সূর্য ডুবে গেছে”।

নবীজী সাঃ বললেন-“হায় আল্লাহ! আমরাওতো পড়তে পারিনি! তারপর আমরা সমতল ভূমিতে দাঁড়ালাম। আর তিনি নামাযের জন্য অযু করলেন। আর আমরাও নামাযের জন্য অযু করলাম। তারপর সূর্য ডুবে গেলেও প্রথমে আমরা আসর পড়লাম। তারপর মাগরিব পড়লাম।(বুখারী শরীফ-হাদিস নং-৫৭১,৫৭৩,৬১৫,৯০৩,৩৮৮৬,)

عن أنس بن مالك قال : سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الرجل يرقد عن الصلاة أو يغفل عنها قال : كفارتها يصليها إذا ذكرها

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কে নামায রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও নামায সম্পর্কে গাফেল ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-এর কাফফারা হল যখনই নামাযের কথা স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে।

সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯৯১

মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১০৪১

মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩০৬৫

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩২৬২

সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৫৮৫

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُولُمَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلَمْ يَذْكُرْهَا إِلَّا وَهُوَ مَعَ الْإِمَامِ فَإِذَا سَلَّمَ الْإِمَامُ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ الَّتِي نَسِيَ ثُمَّ لِيُصَلِّ بَعْدَهَا الْأُخْرَى

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ বলতেন-যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় তারপর তা স্মরণ হয় ইমামের সাথে জামাতে নামাযরত অব্স্থায়, তাহলে ইমাম সালাম ফিরানোর পর যে নামায ভুলে পড়েনি, তা আদায় করবে, তারপর অন্য নামায পড়বে।

মু্য়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৫৮৪

সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩০১২

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর ফাতওয়াও তাই-

المسارعة الى قضاء الفوائت الحثيرة اولى من الأشتغال بالنوافل، واما مع قلة الفوائت فقضاء السنن معها احسن،

অনুবাদ-যদি কাযা নামাযের পরিমাণ অনেক বেশি হয়,ম তবে সুন্নাত নামাযে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে ফরয নামাযসমূহ আদায় করাই উত্তম। আর যদি কাযা নামাযের পরিমাণ কম হয়,তবে ফরযের সাথে সুন্নাত নামায আদায় করলে তা একটি উত্তম কাজ হবে। {ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-২২/১০৪}

উল্লেখিত বর্ণনা প্রমাণ করে নামায মূলত জিম্মা থেকে মাফ হয়না। তাই সময় সুযোগ পেলেই পূর্বের কাযা নামায আদাই করাই বাঞ্ছনীয়। নামাযের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কাযা হবার পর তাকে গাফলতীর সাথে অনাদায় রাখাটা চরম উদাসীনতা। আর নিজে সে ইবাদত কাযা না করাটা এক ধরণের গাফলতী, সেই সাথে অন্যকে ফাতওয়া দিয়ে কাযা আদায় করতে বিরত রাখাটা চরম পর্যায়ের ইবাদত বিদ্বেষী মনোভাবের প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়। তাই এসব বাতিলপন্থী চিন্তার ধারকদের থেকে দূরে থাকা জরুরী।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

0Shares

আরও জানুন

বিতর নামাযের পর নফল পড়লে কোন সওয়াব হবে না?

প্রশ্ন আস-সালামু আলাইকুম, মুহতারাম, একজন শায়েখ ভক্ত বলতেছেন, বিতরের পর নফল নামাজ আদায় করা যাবে …

No comments

  1. যাযাকাল্লাহ। আপনার ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে এক আহলুল হাদীছকে উওর দিয়ে দিলাম।অাল্লাহ আপন আরো বেশী দ্বীন ও দুনিয়াতে কামিয়াবী দান করুন।

    নূর মাহবুব

  2. Md Rakibul Islam

    Jazakallah Hujur