প্রশ্ন
মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেয়া, পূজামণ্ডপ পাহারা দেয়া, তাদের মূর্তি বানাতে সহযোগিতা করা এবং তা পাহারা দেবার দায়িত্ব নেয়া কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেয়া, পূজামণ্ডপ পাহারা দেয়া, তাদের মূর্তি বানাতে সহযোগিতা করা এবং তা পাহারার দায়িত্ব পালন করা কোনটাই জায়েজ নেই। এটা শিরকের পাহারাদারীর নামান্তর। যা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের জন্য বিধর্মীদের ধর্মোৎসব পালনে নিরাপত্তা দেয়া জায়েজ আছে। তাই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য মুসলমান হবার পরও পূজামণ্ডপ পাহারা দেয়া জায়েজ আছে। কিন্তু আম মুসলমানদের জন্য এটা করা জায়েজ নেই।
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ﴿المائدة: ٢
“وقَوْله تَعَالَى: {وَتَعاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوى} يَقْتَضِي ظَاهِرُهُ إيجَابَ التَّعَاوُنِ عَلَى كُلِّ مَا كان تَعَالَى؛ لِأَنَّ الْبِرَّ هُوَ طَاعَاتُ اللَّهِ وقَوْله تعالى: {وَلاتَعاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوانِ} نَهْيٌ عَنْ مُعَاوَنَةِ غَيْرِنَا عَلَى مَعَاصِي اللَّهِ تَعَالَى”. (احكام القرآن للجصاص، سورة المائدة: آية: ٢، ٣ / ٢٩٦، ط: دار إحياء التراث العربي)
“وقوله : {وتعاونوا على البر والتقوى ولاتعاونوا على الإثم والعدوان} يأمر تعالى عباده المؤمنين بالمعاونة على فعل الخيرات، وهو البر، وترك المنكرات وهو التقوى، وينهاهم عن التناصر على الباطل، والتعاون على المآثم والمحارم” (تفسير ابن كثير، سورة المائدة، رقم الأية: ٢)
عَنْ الْإِمَامِ الْقَرَافِيِّ أَنَّهُ أَفْتَى بِأَنَّهُ لَا يُعَادُ مَا انْهَدَمَ مِنْ الْكَنَائِسِ، وَأَنَّ مَنْ سَاعَدَ عَلَى ذَلِكَ فَهُوَ رَاضٍ بِالْكُفْرِ وَالرِّضَا بِالْكُفْرِ كُفْرٌ (رد المحتار، زكريا-6/330، كرتاشى-4/205)
(قَوْلُهُ، وَلَا يَحْلِفُونَ فِي بُيُوتِ عِبَادَتِهِمْ) ؛ لِأَنَّ الْقَاضِيَ لَا يَحْضُرُهَا بَلْ هُوَ مَمْنُوعٌ عَنْ ذَلِكَ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ، وَلَوْ قَالَ الْمُسْلِمُ لَا يَحْضُرُهَا لَكَانَ أَوْلَى لِمَا فِي التَّتَارْخَانِيَّة يُكْرَهُ لِلْمُسْلِمِ الدُّخُولُ فِي الْبِيعَةِ وَالْكَنِيسَةِ، وَإِنَّمَا يُكْرَهُ مِنْ حَيْثُ إنَّهُ مَجْمَعُ الشَّيَاطِينِ لَا مِنْ حَيْثُ إنَّهُ لَيْسَ لَهُ حَقُّ الدُّخُولِ وَالظَّاهِرُ أَنَّهَا تَحْرِيمِيَّةٌ؛ لِأَنَّهَا الْمُرَادَةُ عِنْدَ إطْلَاقِهِمْ، وَقَدْ أَفْتَيْت بِتَعْزِيرِ مُسْلِمٍ لَازَمَ الْكَنِيسَةَ مَعَ الْيَهُودِ (البحر الرائق، كتاب الدعوى، زكريا-7/364)
তবে যদি হিন্দুদের মন্দিরে হামলা হবার শংকা থাকে, যার ফলে মুসলমানদের জানমালের নিশ্চিত ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাদের ইবাদত করার সুযোগ করে দেয়া বা মূর্তি হেফাজতের নিয়তে নয়, বরং নিজেদের জানমাল রক্ষার নিয়তে পূজামণ্ডপ বা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেবার সুযোগ রয়েছে। যেমন জুলম থেকে বাঁচতে ঘুষ দেয়া জায়েজ আছে।
أما إذا أعطى….ليدفع به عن نفسه ظلما فلا بأس به (مرقاة المفاتيح، كتاب الامارة والقضاء، باب رزق الولاة وهداياهم، امدادية ملتان-7/248، تحت رقم الحديث-3753)
কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে যেহেতু প্রশাসন আছে, তাই সাধারণ মুসলমানদের জন্য এভাবে হিন্দুদের মন্দির পাহারা, তাদের মূর্তি পাহারা এবং পূজা করতে পাহারাদারী করা জায়েজ নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com