প্রশ্ন
আমি ফরিদপুর থেকে মো: ফাহিম পাঠান বলছিলাম৷
আমার প্রশ্নটি হলো, আমি কিছু আলেমদের মুখে শুনেছি যে হাদিসে এসেছে পৃথিবী থেকে ১ম আসমানের দুরত্ব পাচশত বছরের৷ আবার ১ম আসমান থেকে ২য় আসমানের দুরত্ব পাচশত বছরের৷ এবং এভাবে ৭টি আসমানই তার পূর্ববর্তী আসমানের থেকে পাচশত বছরের দুরত্বে অবস্থিত৷ তেমনি পৃথিবীর ক্ষেত্রেও অনুরুপ৷ পাচশত বছরের নিচে ২য় পৃথিবী এবং এভাবেই পর্যায়ক্রমে ৭ম পৃথিবী৷
আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই হাদিসটি কি সহীহ?? আল্লাহর রাসূল কি এই কথা বলেছেন নাকি এটা একটা বানোয়াট হাদিস৷
আমার প্রশ্নটা করার কারণ হচ্ছে যে এটা পরিষ্কার বিজ্ঞান বিরোধী৷
উত্তর জানালে অত্যন্ত উপকৃত হব৷
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
এরকম বক্তব্য নির্ভর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি হলো:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: بَيْنَمَا نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ وَأَصْحَابُهُ إِذْ أَتَى عَلَيْهِمْ سَحَابٌ، فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا هَذَا؟» فَقَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «هَذَا العَنَانُ هَذِهِ رَوَايَا الأَرْضِ يَسُوقُهُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْكُرُونَهُ وَلَا يَدْعُونَهُ» ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا فَوْقَكُمْ»؟ قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّهَا الرَّقِيعُ، سَقْفٌ مَحْفُوظٌ، وَمَوْجٌ مَكْفُوفٌ»، ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ كَمْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا مَسِيرَةُ خَمْسِ مِائَةِ سَنَةٍ». ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّ فَوْقَ ذَلِكَ سَمَاءَيْنِ، مَا بَيْنَهُمَا مَسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ عَامٍ» حَتَّى عَدَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ، مَا بَيْنَ كُلِّ سَمَاءَيْنِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّ فَوْقَ ذَلِكَ العَرْشَ وَبَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ بُعْدُ مَا بَيْنَ السَّمَاءَيْنِ». ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا الَّذِي تَحْتَكُمْ»؟ قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّهَا الأَرْضُ». ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا الَّذِي تَحْتَ ذَلِكَ»؟ قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّ تَحْتَهَا أَرْضًا أُخْرَى، بَيْنَهُمَا مَسِيرَةُ خَمْسِ مِائَةِ سَنَةٍ» حَتَّى عَدَّ سَبْعَ أَرَضِينَ، بَيْنَ كُلِّ أَرْضَيْنِ مَسِيرَةُ خَمْسِ مِائَةِ سَنَةٍ. ثُمَّ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّكُمْ دَلَّيْتُمْ بِحَبْلٍ إِلَى الأَرْضِ السُّفْلَى لَهَبَطَ عَلَى اللَّهِ». ثُمَّ قَرَأَ {هُوَ الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ} [الحديد: 3]
আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ এক সাথে বসা ছিলেন। হঠাৎ তাদের উপর মেঘরাশি প্রকাশিত হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রশ্ন করেনঃ তোমরা জান এটা কি? তারা বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এটা হল যমিনের পানিবাহী উট। আল্লাহ তা’আলা একে এমন জাতির দিকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যারা তার কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না এবং তার কাছে মুনাজাতও করে না। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ তোমাদের উপরে কি আছে তা জান? তারা বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসূলই বেশি ভালো জানেন।তিনি বলেনঃ এটা হল সুউচ্চ আকাশ, সুরক্ষিত ছাদ এবং আটকানো তরঙ্গ।
তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ তোমাদের এবং এর মাঝে কতটুকু ব্যবধান তা তোমাদের জানা আছে কি? তারা বললেন, আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ তোমাদের ও এর মাঝে পাঁচ শত বছরের পথের ব্যবধান। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ এর উপরে কি আছে তা তোমরা জান কি? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এর উপরে দুইটি আকাশ আছে যার মাঝে পাঁচ শত বছরের দূরত্ব, এমনকি তিনি সাতটি আকাশ গণনা করেন এবং বলেনঃ প্রতি দুটি আকাশের মাঝে পার্থক্য আকাশ ও যমিনের ব্যবধানের সমপরিমাণ।
তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ এর উপরে কি আছে তা কি তোমরা জান? তারা বললেন আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ এগুলোর উপরে আছে (আল্লাহর) আরশ। আরশ ও আকাশের মাঝের পার্থক্য দুই আকাশের মধ্যকার দূরত্বের সমান।
তিনি আবার বললেনঃ তোমরা কি জান তোমাদের নিচে কি আছে? তারা বললেনঃ আল্লাহ ও তার রাসূলই বেশি ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ উহা হল যমিন, তারপর আবার বললেন, তোমরা কি জান এর নিচে কি আছে? তারা বলল আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এর নিচে আরো এক ধাপ যমিন আছে এবং এতদুভয়ের মধ্যে পাঁচ শত বছরের দূরত্ব। তারপর সাত স্তর যমিন গুণে বলেনঃ প্রতি দুই স্তরের মাঝে পাঁচ শত বছরের দূরত্ব বর্তমান।
তিনি আবার বললেনঃ সেই সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন! তোমরা যদি একটি রশি নিম্নতম যমিনের দিকে ছেড়ে দাও তাহলে তা আল্লাহ তা’আলা পর্যন্ত গিয়ে পৌছবে। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ তিনিই প্রকাশ্য এবং তিনিই গুপ্ত। তিনিই সর্ববিষয়ে সর্বশেষ পরিজ্ঞাত” (সূরাঃ আল-হাদীদ- ৩) [জামে তিরমিজী, হাদীস নং-৩২৯৮, আলমু’জামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৮৯৮৭, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৩১৩৭, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১১৪০২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৭০]
হাদীসটি জঈফ হলেও জাল বা বানোয়াট নয়।
আর আপনার কাছে এটি বিজ্ঞান বিরোধী কেন মনে হলো? বিজ্ঞানতো এখন পর্যন্ত আসমানই আবিস্কার করতে পারেনি। এ কারণে কি আসমান নেই?
যেহেতু এখনো আসমান কোথায় এটিই আবিস্কার বিজ্ঞান করতে পারেনি, সুতরাং জমিন থেকে সেই আসমানের দূরত্ব কতটুকু সেটিতো বিজ্ঞান জানারই কথা না। যে বিষয় সম্পর্কে এখনো তারা কোন কিছু জানতেই পারেনি, সেটি কিভাবে বিরোধী হয়ে গেল?
যদি আসমান আবিস্কার করতে পারতো, তাহলে জমিন থেকে আসমানের দূরত্ব যদি হাদীসে বর্ণিত দূরত্বের চেয়ে কম বা বেশি হতো, তাহলে একথা সত্য হতো যে, উক্ত হাদীস বিজ্ঞান বিরোধী।
সুতরাং উক্ত হাদীসকে বিজ্ঞান বিরোধী বলার কোন সুযোগ নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com