প্রচ্ছদ / কসম ও মান্নত / ‘এই মেয়েকে বিয়ে করলে তালাক দিবো’ বলার পর উক্ত মেয়েকে বিবাহ করলে কি তালাক হয়ে যাবে?

‘এই মেয়েকে বিয়ে করলে তালাক দিবো’ বলার পর উক্ত মেয়েকে বিবাহ করলে কি তালাক হয়ে যাবে?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমি।

একজন ছেলে বিয়ের আগেই বলেছিলেন যে, “আল্লাহর কসম আমি তাকে বিয়ে করবো না।  এখন আল্লাহ যদি আমাদের পারিবারিক ভাবেও বিয়ে দেন তাহলেও আমি এই মেয়ে কে তালাক দিবো/দিবই।” ( কথাটা এমনই)

প্রশ্ন হলো : যদি সে এই কথা বিয়ের আগে ২ এর অধিক / অনেক পরিমাণে বলে /২,৩,৪/৫ (খুব সম্ভবত ১ বার/ ২ বার বলেছেন) বারও বলে তাহলে কি এক তালাক ই হবে?? ( তালাকে রজয়ী)??

তাদের বিয়ে হয়েছে অনেক দিন পরে, সে ছেলেটা এক তালাক ভেবে সেই কথা প্রত্তাহার করেছে(আমি তাকে তালাক এর বিষয়ে যা কিছুই বলছিলাম তা  প্রত্যাখ্যান করলাম (প্রত্তাহার এর যায়গায় ভুলে প্রত্যাখ্যান বলছেন), তার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই) সে যে ভুল করছে তালাক বলে এটাই বুঝাইতে চাইছিল এখন তারা সংসার করছেন।

প্রশ্ন ঃ কয় তালাক হয়েছে?? এক তালাক?? তারা কি সংসার করতে পারবেন??

যদি উত্তর দিতেন খুব উপকার হতো।

#তারা এক সাথে থাকেনা পড়াশুনা করে ২ জনই।

জাযাকাল্লাহ খাইরান।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

‘বিয়ে করলে তাকে তালাক দিবোই’ বলার দ্বারা বিয়ের পর কোন তালাকই পতিত হবে না।

সুতরাং পেরেশান হবার কোন কারণ নেই।

তবে ‘বিয়ে না করার’ কসম করার পর উক্ত মেয়েকে বিয়ে করার কারণে কসম ভঙ্গ হয়েছে, তাই কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে। কসমের কাফফারা হলো:

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٥:٨٩

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। {সূরা মায়িদা-৮৯}

উক্ত আয়াতের আলোকে কসমের কাফফারা হল-

ব্যক্তি তার পরিবারকে নিয়ে মধ্যম ধরণের যে খাবার গ্রহণ করে এমন খাবার দশজন মিসকিনকে দুই বেলা খাইয়ে দিবে। অথবা দুই জোড়া কাপড় দিয়ে দিবে। যা সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা একদিন খরচ ধরা হবে। সেই হিসেবে সদকায়ে ফিতর পরিমাণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যত টাকা হয়, তাই হবে কসমের কাফফারা। যেমন গত রোযায় সদকায়ে ফিতির ছিল ১০০ টাকা। তো সেই হিসেবে ১,০০০/= [ এক হাজার টাকা] হবে কসমের কাফফারা। এটি উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়েছে। সময় অনুপাতে পরিবর্তিত হতে পারে।

যে ব্যক্তি এর সামর্থ রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে।

ولو قال: أطلقك لم يقع (الدر المنتقى، كتاب الطلاق، باب إيقاع الطلاق، قديم-1/389، جديد دار الكتب العلمية بيروت-2/14)

بخلاف كنم، لأنه استقبال فلم يكن تحقيقا بالتشكيك… ولو قال بالعربية: أطلق لا يكون طلاقا (الفتاوى الهندية، قديم-1/384، جديد-1/452)

وفى الدر المختار، بخلاف قوله طلقى نفسك فقالت أنا طالق، أو أنا اطلق نفسى، لم يقع لأنه وعد، (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق، زكريا-4/559، كرتاشى-3 /319)

صيغة المضارع لا يقع بها الطلاق الا اذا غلب فى الحال كما صرح به الكمال بن الهمام (الفتاوى الحامدية، كتاب الطلاق-38، رشيدة(

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected] 

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *