প্রচ্ছদ / ওয়াকফ/মসজিদ/ঈদগাহ / মৌখিক ওয়াকফ করা এবং মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত স্থান বিক্রি করার হুকুম কী?

মৌখিক ওয়াকফ করা এবং মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত স্থান বিক্রি করার হুকুম কী?

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় প্রায় ৭০ বছর আগে একজন ব্যক্তি মৌখিকভাবে ৯ শতক জমি ‘কানু পাটোয়ারী জামে মসজিদ’ কে দান করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে মসজিদ কমিটির সভাপতি/সেক্রেটারী এক ব্যক্তির নিকট উক্ত দানকৃত জমিটি বিক্রি করে দিয়েছেন। (উনারা বলেছিলেন মসজিদের কাজের জন্য বিক্রি করা হয়েছে যাহার সত্যতা নেই)। জমিটি বিক্রি করার পর ক্রেতাকে রেজিস্ট্রি দলিল দিতে পারেননি। সেই থেকে জমিটি ক্রেতার দখলে আছে। কিন্তু বর্তমানে বি.আর.এস জরিপে উক্ত জমিটি আমাদের এলাকার পার্শবর্তী মসজিদ “সড়ক বাজার জামে মসজিদ” নামে ৯ শতক জমি রেকর্ড হয়েছে। আরও দুঃখের বিষয় জমিটি বর্তমান সময় পর্যন্ত ঐ ক্রেতার ওয়ারিশদের দখলে আছে। শুধুমাত্র দখল স্বত্ব বুঝানোর জন্য অন্য মসজিদের নামে খতিয়ান রেকর্ড করা আছে। উক্ত বিষয়টি “সড়ক বাজার জামে মসজিদ” এর সভাপতি/সেক্রেটারীসহ আমাদের মসজিদের সবাই অবগত আছেন।

আমার প্রশ্ন:

ক) ৯ শতক জমি মৌখিকভাবে দান করাতে কি এটি মসজিদের জমি?

খ) মসজিদের জমি মসজিদের কাজে খরচ হবে বলে বিক্রয় করা জায়েজ হয়েছে কি না?

গ) মসজিদ কমিটির সভাপতি কিংবা সেক্রেটারীর উক্ত জমি বিক্রয়ের ক্ষমতা আছে কি না?

ঘ) যিনি দখলে আছেন তার বিষয়ে শরীয়তের বক্তব্য কী?

ঙ) বর্তমান খতিয়ানে উক্ত জমি অন্য মসজিদের নামে রেকর্ডকৃত। যে মসজিদের নামে রেকর্ডকৃত সেই মসজিদের কর্তৃপক্ষের করনীয় কী?

শ্রদ্ধেয় হুজুর সমীপে আরজ, উপরোল্লিখত বিষয়টির উত্তর জানালে খুবই উপকৃত হতাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

ক এর উত্তর

মৌখিকভাবে দান করে যায়গার দখলসত্ত্ব বুঝিয়ে দিলেই তা ওয়াকফ হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে যায়।

খ ও গ এর উত্তর

মসজিদের জমি মসজিদের নামে খরচ করার কথা বলে বিক্রি করা জায়েজ নেই। বিক্রি করার অধিকার সভাপতি ও সেক্রেটারীর নেই।

ঘ ও ঙ এর উত্তর

মসজিদের যায়গা যার দখলে আছে, তার জন্য তা ব্যবহার করা কোনভাবেই জায়েজ নয়। তার উচিত তা দ্রুত খালি করে মসজিদকে ফেরত দেয়া।

এক মসজিদের জায়গা উক্ত মসজিদের জন্য প্রয়োজন থাকা অবস্থায় অন্য মসজিদের জন্য ব্যবহার করা জায়েজ নেই।

সুতরাং যদি প্রশ্নোক্ত মসজিদের জন্য উক্ত জমি দরকারী হয়, তাহলে তা অন্য মসজিদের জন্য ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। বরং তা ওয়াকফকৃত মসজিদকে ফেরত দিতে হবে এবং সেই মসজিদের প্রয়োজনেই তা ব্যবহার করা যাবে। অন্য মসজিদের জন্য ব্যবহার জায়েজ নয়।

 

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ تَصَدَّقَ بِمَالٍ لَهُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ يُقَالُ لَهُ ثَمْغٌ وَكَانَ نَخْلًا فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ اسْتَفَدْتُ مَالًا وَهُوَ عِنْدِيْ نَفِيْسٌ فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم تَصَدَّقْ بِأَصْلِهِ لَا يُبَاعُ وَلَا يُوْهَبُ وَلَا يُوْرَثُ وَلَكِنْ يُنْفَقُ ثَمَرُهُ فَتَصَدَّقَ بِهِ عُمَرُ

আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ে ‘উমার (রাঃ) নিজের কিছু সম্পত্তি সদাকাহ করেছিলেন, তা ছিল, ছামাগ নামে একটি খেজুর বাগান। ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি সম্পদ পেয়েছি, যা আমার নিকট খুবই পছন্দনীয়। আমি সেটি সদাকাহ করতে চাই।’ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মূল সম্পদটি এ শর্তে সদাকাহ কর যে তা বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না এবং কেউ ওয়ারিস হবে না, বরং তার ফল দান করা হবে। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) সেটি এভাবেই সদাকাহ করলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৭৬৪]

وركنه الألفاظ الخاصة كأرضى هذه صدقة موقوفة مؤبدة على المساكين ونحوه من الألفاظ كموقوفة لله تعالى، أو على وجه الخير والبر (رد المحتار، زكريا-6/522-523، كرتاشى-4/340، الموسوعة الفقهية الكيويتية-44/114)

فأما ركنه فالألفاظ الخاصة الدالة عليه (الفتاوى الهندية-2/352، جديد-2/347)

 

فإذا تم ولزم لا يملك ولا يملك ولا يعار ولا يرهن (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-6/539، كرتاشى-4/352)

إذا صح الوقف لم يجز بيعه ولا تمليكه (هداية، اشرفى-2/640، الفتاوى الهندية-2/350، جديد-2/346، مجمع الأنهر، بيروت-2/571، بدائع الصنائع، زكريا-5/326، فتاوى خانية على هامش الهندية-3/285، جديد-3/199)

والمعلوم بالوقف من شرطه عدم البيع ونحوه (فتح القدير، كتاب الوقف، زكريا-6/190، دار الفكر-6/204، كويته-5/419)

وإذا خربت أرض الوقف وأراد القيم أن يبيع بعضا منها ليرم الباقى بثمن ما باع، ليس له ذلك (الفتاوى التاتارخانية-8/66، رقم-11221)

الوقف حبس العين وإزالة ملك المالك المجازى مقتصرة على حكم ملك الله تعالى المالك الحقيقى (مجمع الأنهر، كتاب الوقف، بيروت-2/571، مصرى قديم-1/740)

حبس العين على حكم ملك الله تعالى على وجه تعود منفعة إلى العباد (الفتاوى الهندية-2/350، جديد-2/346)

وقال أبو يوسف: هو مسجد أبدا إلى قيام الساعة، لا يعود ميراثا ولا يجوز نقله ونقل ماله إلى مسجد آخر (رد المحتار، زكريا-6/549)

شرط الواقف كنص الشارع أى فى المفهوم والدلالة، ووجوب العمل به (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-6/649-650، كرتاشى-4/366)

مراعة غرض الواقفين واجبة (رد المحتار، زكريا-6/665، كرتاشى-4/445)

شرط الواقف كنص الشارع فيجب اتباعه (رد المحتار، زكريا-6/735، كرتاشى-4/495، البحر الرائق، زكريا-7/24، كويته-7/14)

وقد علم منه أنه لا يجوز لمتولى الشيخونية بالقاهرة صرف أحد الواقفين للآخر (البحر الرائق، زكريا-5/362، كويته-5/217)

القضاء بخلاف شرط الواقف كالقضاء بخلاف النص، لا ينفظ لقول العلماء، شرط الواقف كنص الشارع (الأشباه والنظائر، قديم-169، جديد زكريا-1/300)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com 

আরও জানুন

মহিলাদের এনআইডি কার্ড করার জন্য পর পুরুষের সামনে ছবি তুলতে মুখ খোলার হুকুম কী?

প্রশ্ন আসসালামুআলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ৷ আহলে হক্ব মিডিয়া কর্তৃৃৃপক্ষ কে আসন্ন রমজানের শুভাচ্ছে রইল ৷ আমার প্রশ্নটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *